পূর্ব ইউরোপে সদস্য দেশগুলিতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার কথা ভাবছে ন্যাটো৷ এমন পরিকল্পনা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছে রাশিয়া৷ ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য প্রত্যাহারের ইঙ্গিতও দিয়েছে মস্কো৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা জগতের সম্পর্কের ভিত্তি কেঁপে গেছে৷ প্রাতিষ্ঠানিক স্তরেও দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে৷ সামরিক জোট ন্যাটো মস্কোর সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে৷ সেইসঙ্গে পূর্ব ইউরোপে সদস্য দেশগুলির নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে চায় ন্যাটো৷ আপাতত কাগজে-কলমে এমন পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে৷ তবে পোল্যান্ডের দাবি অনুযায়ী অবিলম্বে আরও সৈন্য মোতায়েনের পথে যাচ্ছে না ন্যাটো৷ প্রয়োজনে দ্রুত সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো এবং আরও সামরিক মহড়ার মতো ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে৷ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বিভিন্ন সম্ভাবনার খসড়া প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে শোনা যাচ্ছে৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ৪০,০০০ রুশ সৈন্যের উপস্থিতি ন্যাটোকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে৷ ক্রাইমিয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশকেও বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কিছু মহল৷ রাশিয়া অবশ্য নিজস্ব সীমানার মধ্যে সৈন্য মোতায়েন নিয়ে কোনোরকম আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, সামরিক মহড়ার কারণে সৈন্যরা সেখানে সমবেত হয়েছে৷ মহড়া শেষ হলে তারা নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে যাবে, যদিও তার কোনো সময়সীমার উল্লেখ তিনি করেন নি৷ এই অবস্থায় ন্যাটোর কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন তিনি৷ তাঁর মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তেজনা কমানোই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত৷
এ প্রসঙ্গে লাভরভ বলেছেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর স্থায়ী সৈন্য সংখ্যা বাড়ালে ১৯৯৭ সালের চুক্তি লঙ্ঘিত হবে৷ তাঁর আশা, ন্যাটো এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেবে৷
এদিকে রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ক্রাইমিয়ার রাশিয়ায় যোগদানের ঘটনা মেনে নেওয়া৷ কিছুটা হালকা মেজাজে তিনি বলেন, মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উচিত আরও যোগাসন করা, খোলা আকাশের নীচে সময় কাটানো, টেলিভিশনে কমেডি শো দেখা ইত্যাদি৷ তাঁর মতে, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় পুরোপুরি ছিন্ন করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষতি হবে৷