ন্যাটোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামরিক সংঘাত এড়াতে রাজি হলো তুরস্ক ও গ্রিস।
বিজ্ঞাপন
দুইটি দেশই ন্যাটোর সদস্য। সম্প্রতি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অপরিশোধিত তেল উত্তোলন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ অনেক দূর গড়িয়েছে। তুরস্ক গ্রিসের তেল ও গ্যাস উত্তোলন বন্ধ করতে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও তেল অনুসন্ধানকারী জাহাজ পাঠিয়েছিল। প্রস্তুত রেখেছিল বিমানবাহিনীকেও। গ্রিসওসমরসম্ভার সাজাচ্ছিল। চিন্তা বাড়ছিল গোটা বিশ্বের। এই অবস্থায় ন্যাটোর মহাসচিব স্টল্টেনব্যার্গ জানিয়েছেন, গ্রিস ও তুরস্ক বিরোধ মেটাতে একটি ‘মেকানিজম’ তৈরিতে রাজি হয়েছে। এর ফলে সামরিক সংঘাত এড়ানো যাবে।
ন্যাটো জানিয়েছে, কোনো বিরোধ দেখা দিলে দুই দেশের প্রতিনিধি সঙ্গে সঙ্গে হটলাইনে কথা বলবেন, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে বিরোধ আর সামরিক সংঘাতের দিকে এগোবে না।
ইস্তানবুলেই শেকড় এর্দোয়ানের
ইস্তানবুলের মেয়র পুনর্নির্বাচনেও জয় পেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের বিরোধীরা৷ কিন্তু তাই বলে তুর্কি প্রেসিডেন্ট ইস্তানবুলে প্রভাব হারিয়েছেন মনে করলে ভুল হবে৷ জন্মস্থান কাসিমপাসা এখনও তাঁর পক্ষেই আছে৷
এর্দোয়ানের শহর
বিখ্যাত গালাটা টাওয়ার থেকে হাঁটা দূরত্বে ইস্তানবুলের ইউরোপ অংশে ইসতিকলাল অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত কাসিমপাসা৷ ৬৫ বছর আগে এখানেই জন্মেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ ইস্তানবুলের এই অংশেই তাঁর কট্টর সমর্থকদের বাস৷
ছবি: Demetrios Ioannou
নতুন যুগ
গত গ্রীষ্মেই আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়৷ ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷ দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি৷ শপথ নেয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এর্দোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’৷
ছবি: Demetrios Ioannou
ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক৷ এর ফলে একই সঙ্গে সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন এর্দোয়ান৷ ১৯২৩ সালে দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক তুর্কি রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটিই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন৷
ছবি: Demetrios Ioannou
পরিবারের সদস্য
এর্দোয়ানের মুখ ও একেপির দলীয় পতাকায় ছেয়ে আছে কাসিমপাসা৷ দেয়ালে টানানো পোস্টার বা ব্যালকনিতে ঝুলছে ব্যানার৷ কাসিমপাসার মানুষ কাকে সমর্থন করছে, সেটি স্পষ্ট৷ বিরোধী দলের ও প্রার্থীর পোস্টার প্রায় নেই বললেই চলে, যা আছে, তাও ছেঁড়া৷ কাসিমপাসার মানুষ এর্দোয়ানকে নিজের পরিবারের সদস্য বলেই মনে করেন৷
ছবি: Demetrios Ioannou
সাধাসিধে জীবন
এর্দোয়ান একটি রক্ষণশীল, খেটে খাওয়া পরিবারের অংশ হয়ে বড় হয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকদের অনেকেই এমন জীবনের সঙ্গে পরিচিত৷ জীবনের বেশিরভাগ সময় কাসিমপাসাতেই কাটিয়েছেন তিনি৷ এখানেই শুরু তাঁর রাজনৈতিক জীবন৷ ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম ইস্তানবুলের মেয়র হন, ২০০৩ সালে হন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট হন ২০১৪ সালে৷
ছবি: Demetrios Ioannou
5 ছবি1 | 5
স্টল্টেনব্যার্গ বিবৃতি দিয়ে জানিয়োছেন, ‘‘এই সেফটি মেকানিজম কূটনৈতিক স্তরে বিরোধ মেটানোর জায়গা তৈরি করবে। পরে এই মেকানিজমকে আরো উন্নত করা হবে।’’
দুই দেশের মধ্যে এই মেকানিজম তৈরির কাজ সহজ ছিল না। কারণ, গ্রিস দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কের সঙ্গে কথা বলতেই রাজি ছিল না। তুরস্ক অবশ্য বারবার আলোচনায় বসার কথা বলেছিল। সেই জায়গা থেকে দুই পক্ষকে নিয়ে এই মেকানিজম তৈরি করা ন্যাটোর পক্ষে সহজ হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত দুই দেশই রাজি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা প্রথম ধাপ মাত্র। দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে আরো পদক্ষেপ নেয়া দরকার।