ন্যাটোর সদস্য হতে আর ইচ্ছুক নন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়েও আলোচনায় রাজি।
বিজ্ঞাপন
এবিসি টেলিভিশনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি আর ন্যাটোর সদস্য হতে ইচ্ছুক নন। তিনি বুঝে গেছেন, ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে ন্যাটো প্রস্তুত নয়। দোভাষীর মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছেন, ''আমি এমন একটা দেশের প্রেসিডেন্ট থাকতে চাই না, যারা হাঁটু গেড়ে ভিক্ষা চায়।''
জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি বুঝেছেন যে, ন্যাটো রাশিয়াকে চটাবে না। তারা এই বিতর্কিত বিষয়ের মধ্যে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে।
যুদ্ধ থামাবার জন্য রাশিয়া যে দাবিগুলো করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, ইউক্রেন ন্যাটো এবং ইইউ-র সদস্য হতে পারবে না। তাছাড়া রাশিয়া দাবি করেছে, দনেৎস্ক ও লুহানস্ক-এর স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিতে হবে। জেলেনস্কি জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে না। দ্বিতীয় দাবি নিয়েও তিনি নরম হয়েছেন।
কমেডিয়ান থেকে যুদ্ধকালীন নেতা জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একসময় অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ এখন যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরদিন শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ তিনি তার পদ ছেড়ে দিয়েছেন বলে ওঠা গুজব মিথ্যা প্রমাণ করতে ভিডিওটি করেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
ছবি: FACEBOOK/@Volodymyr Zelensky/AFP
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট নেই
রাশিয়া তাকে হত্যা করতে চায় - এমন সতর্কবাণী থাকার পরও জেলেনস্কি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা হেলমেট ছাড়াই ভিডিওতে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি ঠিকমতো ঘুমাননি৷ মাঝেমধ্যে তাকে হাসতেও দেখা গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাই এখানে আছি৷ আমাদের সামরিক বাহিনী এখানে৷ সমাজের নাগরিকরা এখানে৷ আমরা সবাই আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করছি, এবং এটা এভাবেই থাকবে৷’’
ছবি: Ukrainian Presidential Press Service/REUTERS
মিশ্র বার্তা
এই ছবিটি শনিবারের ভিডিও থেকে নেয়া৷ সামরিক স্টাইলের খাকি টি-শার্টের ওপর হালকা সবুজ জ্যাকেট পরে জেলেনস্কি নাগরিকদের আশ্বস্ত করছেন যে, তিনি কিয়েভেই আছেন৷ এর বাইরে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরেও সংবাদ সম্মেলন করেছেন৷ তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি একইসঙ্গে নাগরিকদের চাঙা রাখার পাশাপাশি তাদের আসন্ন বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি ইউক্রেনীয়দের ‘অদম্য’ বৈশিষ্ট্য নিয়েও কথা বলেছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেলেনস্কির কিয়েভ ছাড়ার প্রয়োজন হলে তাকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ কিন্তু জেলেনস্কি বাইডেনকে বলেন, ‘‘আমার অস্ত্র দরকার, উড়ান নয়৷’’ ব্রিটেনের ইউক্রেন দূতাবাসের টুইটে এই তথ্য জানানো হয়েছে৷
ছবি: AFP
আবেগী বার্তা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কলে জেলেনস্কি বলেন, ‘‘আমাকে হয়ত আপনারা শেষবারের মতো জীবন্ত দেখছেন৷’’ এরপর তিনি তাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা কামনা করেন৷
ছবি: EU Council/Pool /AA/picture alliance
চার্চিলের সঙ্গে মিল
জেলেনস্কির সঙ্গে ব্রিটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মিল খুঁজে পেয়েছেন চার্চিলের জীবনী লেখক অ্যান্ড্রু রবার্টস৷ তিনি জেলেনস্কির ‘অভাবনীয় ব্যক্তিগত সাহসিকতা’, ‘মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের দক্ষতা’ এবং ‘জয় সম্পর্কে তার অটল বিশ্বাসের’ প্রশংসা করেন৷ চার্চিল একসময় বলেছিলেন, মানুষের অনেকগুলো গুণের মধ্যে প্রথম হচ্ছে সাহস, কারণ এটা এমন একটা গুন, যা অন্যগুলো নিশ্চিত করে৷
অভিনেতা ও কমেডিয়ান
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে জেলেনস্কি একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ একটি শোতে তিনি স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন৷ শোতে দেখা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেয়া তার জ্বালাময়ী এক বক্তব্য একজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়৷ পরে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বলে শোতে দেখানো হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Ukrainian Presidential Press Office via AP
পোরোশেঙ্কোর মন্তব্য
২০১৯ সালে যখন জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো (ছবি) তার ইউক্রেনিয়ান ভাষা নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন (কারণ জন্মসূত্রে জেলেনস্কির প্রাথমিক ভাষা হচ্ছে রুশ)৷ এছাড়া পুটিনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মতো রাজনৈতিক মর্যাদা তার নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পোরোশেঙ্কোকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে যান জেলেনস্কি৷
ছবি: Anna Marchenko/dpa/TASS/picture alliance
জেলেনস্কির উত্তর
নির্বাচনি প্রচারণার সময় জেলেনস্কির সমালোচকরা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে ধরনের গাম্ভীর্য ভাব দরকার, সেটা তার নেই৷ এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘আমি রাজনীতিবিদ নই৷ আমি একজন সাধারণ মানুষ যে সিস্টেম ভাঙতে এসেছে৷’’
ছবি: Daniel Leal-Olivas/AFP
শপথ অনুষ্ঠানে অঙ্গীকার
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘এতদিন ইউক্রেনীয়দের হাসানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, আর এখন এমন চেষ্টা করবো যেন ইউক্রেনীয়দের কাঁদতে না হয়৷’’
ছবি: Irina Yakovleva/TASS/dpa/picture alliance
10 ছবি1 | 10
সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি দনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। তার দাবি, ইউক্রেনকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে। জেলেনস্কি বলেছেন, ''ওই দুইটি অঞ্চলকে শুধুমাত্র রাশিয়াই স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে আমরা অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছতে পারি।''
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ''আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওই অঞ্চলে মানুষ কীভাবে বসবাস করবে। তারা ইউক্রেনের অংশ থাকতে চায়। ইউক্রেনের মানুষ তাদের ছেড়ে দিতে রাজি কিনা সেটাও দেখতে হবে। তাই প্রশ্নটা শুধু তাদের স্বীকৃতি দেয়া নিয়ে নয়, বিষয়টি বেশ জটিল।''
জেলেনস্কি বলেছেন, ''আমরা হুমকি মেনে নিতে প্রস্তুত নই। যেটা দরকার, তা হলো, প্রেসিডেন্ট পুটিন আমাদের সঙ্গে কথা বলুন।''