ট্রাম্প সৈন্য সরানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু ন্যাটো আপাতত আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তান থেকে এখনই সরছে না সৈন্য। জানিয়ে দিলেন ন্যাটোর প্রধান। ন্যাটোর মিলিটারি অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যৌথ বাহিনী কবে আফগানিস্তান থেকে সরবে, তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০২০ সালে অ্যামেরিকা এবং তালেবানের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তা মেনে চললে ১ মে-র মধ্যে ন্যাটোর সৈন্য আফগানিস্তানের মাটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু ন্যাটোর বক্তব্য, তালেবান ওই চুক্তির সমস্ত বিষয় মেনে চলেনি। ফলে সৈন্য সরানোর মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।
আফগানিস্তানে বোমা হামলায় অনেক হতাহত
প্রথমে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির নির্বাচনি সভায় বোমা হামলা, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের কাছের এলাকা৷ দুটি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ জন নিহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তৎপর তালেবান
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ জঙ্গি সংগঠন তালেবান আগেই ঘোষণা দিয়েছে এ নির্বাচন হতে দেয়া হবে না৷ ভোটারদের ভোট দেয়ায় বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে আরো বলেছে, নির্বাচন হলে ভোট কেন্দ্রে এবং নিরাপত্তাবাহিনির ওপর হামলা চালানো হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Khan
প্রেসিডেন্টের নির্বাচনি সভায় আত্মঘাতী হামলা
মঙ্গলবার আফগানিস্তানের উত্তরের রাজ্য পারওয়ানে নির্বাচনি সভায় হাজির ছিলেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি৷ কঠোর নিরাপত্তায় অনেক সাধারণ মানুষ গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের ভাষণ শুনতে৷ কিন্তু সভা শুরুর আগেই মোটর সাইকেল চালিয়ে সভায় ঢুকে পড়ে এক যুবক৷ তার শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
হামলার লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তা কর্মীরা
আত্মঘাতী হামলাকারী মোটর সাইকেল চালিয়ে দেন নিরাপত্তাবেষ্টনির ওপর দিয়ে৷ ফলে হতাহতদের মধ্যে নিরাপত্তাবাহিনির সদস্যদেরও থাকার কথা৷ এ হামলায় মোট ২৬ জন নিহত এবং ৪২ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
একই দিনে দ্বিতীয় হামলা
পরের হামলাটি হয় রাজধানী কাবুলে৷ সেই এলাকায় মার্কিন দূতাবাস ও ন্যাটোর কার্যালয় রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এ হামলায় অন্তত ২২ জন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images/W. Kohsar
তালেবানের দায়িত্ব স্বীকার
দুটি হামলারই দায় স্বীকার করেছে তালেবান৷ হামলার জায়গার আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
5 ছবি1 | 5
প্রেসিডেন্ট কালের একেবারে শেষ পর্বে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই অ্যামেরিকা তাদের সৈন্য আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেবে। যদিও ট্রাম্পের ওই ঘোষণার সঙ্গে সহমত পোষণ করেনি ন্যাটো। ন্যাটো জানিয়েছিল, যৌথ বাহিনীতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সৈন্য অ্যামেরিকার। তারা সৈন্য সরিয়ে নিলে এতদিনের মিশন বিফল হবে। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে অবশ্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। তারই মধ্যে ইউরোপের একাধিক দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যাটো প্রধান এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন স্টোলটেনবার্গ। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ন্যাটো অনেকগুলি বিষয় নিয়ে চিন্তিত। দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপনের জন্য এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করেছে ন্যাটো। সে কারমেই সেখানে যৌথ বাহিনীর সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। গত দুই দশকে লাখ লাখ অর্থ খরচ হয়েছে। এখন যদি দ্রুত সেনা ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে মিশন সফল হবে না। এতদিনের পরিশ্রম বিফলে যাবে। সে কারণেই সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আফগান যুবারা
প্রায় দুই দশক তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক শক্তির উপস্থিতিতে বেড়ে উঠেছে এখনকার আফগান তরুণ প্রজন্ম৷ সরকার-তালেবান সংলাপ ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনায় নানা উদ্বেগ দানা বাঁধছে তাঁদের মনে৷ শান্তি ফিরবে তো?
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সুলতান কাসিম সায়েদি, মডেল
কাবুলের এই ১৮ বছর বয়সি মডেল স্পোর্টস হেয়ারস্টাইল করতে পছন্দ করেন৷ তাঁর পছন্দের মডেল সৌদি আরবের ওমর বোরকান এবং ক্যানাডিয়ান পপস্টার জাস্টিন বিবার৷ তাঁর ভয়, ‘‘তালেবান ক্ষমতায় আসলে, আমরা হয়তো আর শো করতে পারবো না৷’’ কিন্তু তারপরও যুদ্ধের বদলে শান্তি চান সুলতান৷
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
হুসাইন, হেয়ারড্রেসার
লক্ষ লক্ষ আফগানের মতো, যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে ছোট্ট হুসাইনকে নিয়ে তাঁর পরিবারও পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ইরানে৷ তবে এখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হেয়ারড্রেসারের কাজ করেন ১৯ বছরের হুসাইন৷ তালেবানের সাঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ায় তিনি খুশি৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে যুদ্ধ ও সংঘাত শেষ হওয়া দরকার৷ আমি চাই তালেবান আগের মতো আচরণ না করে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনুক৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মাহদি জাহাক, আর্টিস্ট
গত ১৭ বছর থেকে তালেবানেরও শিক্ষা নেয়া উচিত বলে মনে করেন ২৫ বছর বয়সি আর্টিস্ট সাহদি জাহাক৷ তিনি বলছেন, ‘‘শান্তি ফিরে আসার একটা আশা রয়েছে৷ কিন্তু গত ১৭ বছরে দেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা তাদের স্বীকার করতে হবে এবং সবাইকে তাঁদের জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
কাওসার শেরজাদ, অ্যাথলিট
মুয়ায় থাই অ্যাথলিট কাওসার শেরজাদ৷ তাঁর বয়স ১৭ বছর৷ নারীদের ব্যাপারে তালেবানের অতীত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি৷ কাওসার বলছেন, ‘‘আফগান নারীরা খেলাধুলায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন৷ আমি আশাবাদী, এই সাফল্যগুলো মেনে নিবে তালেবান৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সোহাইল আতাই, ব্যবসায়ী
মাত্র ২২ বছর বয়সেই একটি বিলাসবহুল কাপড়ের দোকানের মালিক সোহাইল৷ বুঝতে শেখার পর থেকেই দেশজুড়ে সহিংসতা, যুদ্ধ, বোমা দেখে বড় হয়েছেন৷ এখন যে-কোনো প্রকারেই হোক, এই যুদ্ধের সমাপ্তি চান তিনি৷ সোহাইল বলছেন, ‘‘আমরা যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে গেছি৷ এখন ভালো একটা জীবনযাপনের জন্য আমরা শান্তি চাই৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মারাম আতায়ী, পিয়ানোবাদক
কাবুলের এক মিউজিক স্কুলে পিয়ানো বাজানো শিখছেন ১৬ বছরের মারাম৷ তাঁর জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তালেবান আবার ক্ষমতায় এলে তাঁকে আর পিয়ানো বাজাতে দেবে কিনা৷ মারাম বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভালো হয় সরকার ও তালেবানের মধ্যে সমঝোতা হলে৷ গানবাজনার অধিকার ও নারী অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
ওমিদ আরমান, মডেল
কাবুলের এক কাপড়ের দোকানে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন ২১ বছর বয়সি মডেল ওমিদ৷ যুদ্ধ-সংঘাত ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে মনে করেন তিনি৷ ওমিদ বলেন, ‘‘এই দেশের সবাই শান্তি চায়৷ আমরা অনেক সংঘাতের সাক্ষী হয়েছি৷ যথেষ্ট হয়েছে, আর না৷ আমরা আর কোনো বিপর্যয় দেখতে চাই না৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
নাদিম কোরায়শী, ব্যবসায়ী
কাবুলে একটি গেম শপের মালিক ১৯ বছরের নাদিম৷ এত বছরের সংঘাত শেষে শান্তির সুবাতাস ভালো ফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা তাঁর৷ নাদিম বলছেন, ‘‘সরকার ও তালেবানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতা দেখতে চাই আমরা৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
জারঘোনা হাইদারি, চাকরিজীবী
একটি বইয়ের দোকানে কাজ করেন জারঘোনা৷ তাঁর বয়স ২২ বছর৷ শান্তি প্রক্রিয়ায় তেমন একটা আশার কিছু দেখছেন না জারঘোনা৷ তিনি বলছেন, ‘‘এই দেশে শিগগিরই শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি না৷ আমার ধারণা, তালেবান শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় আসবে না৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
9 ছবি1 | 9
ন্যাটো প্রধানের বক্তব্য, ২০২০ সালে অ্যামেরিকার সঙ্গে আফগানিস্তানের শান্তি চুক্তি সই হয়েছিল। সেখানে ২০২০১ সালের ১ মে-র মাধ্যমে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল। তালেবান জানিয়েছিল, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। দেশে যাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সে বিষয়েও তারা আগ্রহ দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। গত ডিসেম্বরে কাবুলে শেষ বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটায় তালেবান। যেখানে মৃত্যু হয় ডেপুটি গভর্নরের। তারপরেই মার্কিন ফোর্স প্রত্যাহারের বিষয়টিও সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়। ন্যাটোর বক্তব্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিস্থিতি এখনো আসেনি আফগানিস্তানে। শান্তিও সুরক্ষিত হয়নি। ফলে আপাতত ফোর্স সরানো হবে না।
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ন্যাটোর প্রধানকে সমর্থন করেছেন। ডিডাব্লিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এখন সেনা সরিয়ে নিলে ইউরোপে জঙ্গি আক্রমণের সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে। ফলে আপাতত সেনা সরানোর প্রশ্নই ওঠে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, বৈঠকে দুই দেশই জানিয়েছে, আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সে জন্য যৌথ বাহিনী কাজ চালিয়ে যাবে। রাজনৈতিক সমাধানসূত্রও খোঁজা হবে।
তবে ১ মে-র মধ্যে ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরে না গেলে তালেবান ফের আক্রমণাত্মক হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ন্যাটো প্রধান জানিয়েছেন, সেই আশঙ্কা মাথায় রেখেই পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা করা হবে।