কোরআন পোড়ানোর পর এর্দোয়ান বলেছেন, সন্ত্রাসীদের তার হাতে তুলে না দিলে তিনি সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে দেবেন না।
বিজ্ঞাপন
কোরআন পোড়ানোর পর এর্দোয়ান বলেছেন, সন্ত্রাসীদের তার হাতে তুলে না দিলে তিনি সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে দেবেন না।
কিন্তু ফিনল্যান্ডের ক্ষেত্রে তার কোনো আপত্তি নেই। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড দুই দেশ একসঙ্গে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আবেদন করেছে। এর্দোয়ান বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফিনল্যান্ড আলাদাভাবে আগে যদি ন্যাটোর সদস্য হতে চায়, তাতে তিনি আপত্তি জানাবেন না। কিন্তু সুইডেন যতক্ষণ তার দাবিপূরণ না করছে, ততক্ষণ তিনি তাদের সমর্থন করবেন না। আর ন্যাটোর নিয়ম হলো, সব সদস্য দেশ একমত না হলে নতুন কোনো দেশ সদস্য হতে পারে না।
আগামী জুলাইয়ে লিথুয়ানিয়ার রাজধানীতে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্য হওয়ার আবেদনে এখনো তুরস্ক ও হাঙ্গেরি সায় দেয়নি।
ফিনল্যান্ড নিয়ে এর্দোয়ান কী বলেছেন?
রোববার এর্দোয়ানের একটা রেকর্ড করা বার্তা প্রচারিত হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তিনি তরুণদের সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন। এর্দোয়ান বলেছেন, তুরস্ক কিছুতেই সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে দেবে না। ফিনল্যান্ডকে সদস্য করার ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই।
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ইসলামপন্থি তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট– রাজনীতিতে নিজের ক্যারিয়ার ভালোভাবেই গড়েছেন রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তবে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
এর্দোয়ানের উত্থান
তুরস্কে এবং বিদেশে রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত রয়েছে৷ তাঁকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবে যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি কারো কারো চোখে তিনি একজন স্বৈরাচারী নেতা৷ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি৷ পাশাপাশি ন্যাটোতে তাঁর নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক৷ এর্দোয়ানের উত্থান নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
ইস্তানবুলের কারাবন্দি মেয়র
তুরস্কে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দল ওয়েলফেয়ার পার্টিতে নিজের অবস্থান দ্রুতই পাকাপোক্ত করেছিলেন এর্দোয়ান৷ ১৯৯৪ সালে তিনি সেই দল থেকে ইস্তানবুলের মেয়রও নির্বাচিত হন৷ কিন্তু এর্দোয়ান মেয়র হওয়ার চার বছরের মাথায় সেই দলটিকে সে দেশের সরকার তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে৷ এরপর জনসমক্ষে বিতর্কিত কবিতা আবৃত্তির দায়ে জেলে যান এর্দোয়ান৷ চার মাস জেল খাটেন৷
তুরস্কের একেপি পার্টির সহপ্রতিষ্ঠাতা এর্দোয়ান৷ ২০০২ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে৷ আর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন৷ দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরগুলোতে এর্দোয়ান দেশবাসীকে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে মনোযোগী হন৷ তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণ ঘটানোয় ভূমিকা রেখেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Ozbilici
ইসলামপন্থিদের স্বার্থ রক্ষা
যদিও তুরস্কের সংবিধান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করে, তারপরও এর্দোয়ান কট্টর ইসলামপন্থিদের মন জয়ের নানা চেষ্টা করেছেন৷ তুরস্কের এই শীর্ষনেতা একসময় বলেছিলেন যে, তাঁর লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে এক ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলা৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা এই লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, কেননা, তাঁরা মনে করেন, ধর্মচর্চা করা মুসলমানরা তুরস্কে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AA/C. Ozdel
ক্যু থেকে রক্ষা
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়৷ তবে সেই ঘটনায় দু’শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা সদস্য নিহত হন৷ সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এর্দোয়ান আরো ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/AA/K. Ozer
দেশজুড়ে অভিযান
ব্যর্থ সেই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ৷ এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, স্কুল এবং গণমাধ্যম থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এর্দোয়ান সেই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা এবং তাঁর প্রাক্তন সঙ্গী ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Gurel
বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ
যদিও নিজের দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত তুর্কিদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে এর্দোয়ানের প্রতি, তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর কঠোর নীতি এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোয় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে আফরিনে মারাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করেন এর্দোয়ান, যার সমালোচনা করে মানবাধিকা সংস্থাগুলো৷
ছবি: picture- alliance/ZUMAPRESS/Brais G. Rouco
ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক৷ ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি৷ শপথ নেয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এর্দোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’৷
ছবি: picture-alliance/abaca
8 ছবি1 | 8
এর্দোয়ান বলেছেন, ''যদি দরকার হয় তো আমরা ফিন্যান্ডকে আলাদা বার্তা দিতে পারি। তাহলে সুইডেন স্তম্ভিত হয়ে যাবে।''
তার দাবি, ''সুইডেন যদি ন্যাটোর সদস্য হতে চায় তো, সন্ত্রাসীদের আমাদের হাতে তুলে দিক।''
গত সপ্তাহে ফিনল্যান্ড ইঙ্গিত দিয়েছিল, তারা সুইডেনকে ছাড়াই ন্যাটোর সদস্য হতে প্রস্তুত। ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আমরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। আমরা দেখছি, সুইডেনের ন্যাটো সদস্য পেতে গেলে কতটা সময় লাগবে।
এর্দেয়োন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, কুর্দ নেতাদের তুরস্কের হাতে তুলে দিতে হবে। তার দাবি, এই কুর্দ নেতারাই ২০১৬ সালে তুরস্কে অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করেছিল। এছাড়াও স্টকহোমে কোরআন পোডজ়ানোর পরই এর্দোয়ান জানিয়েছিলেন, তিনি এই ঘটনা কোনোভাবেই বরদাস্ত করবেন না। তিনি সুইডেনকে ন্যাটো সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন জানাবেন না।