ইউক্রেন ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সহজ সমাধান কঠিন। তবে রাশিয়া সবসময়ই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার পক্ষপাতি। যদিও একইসঙ্গে একথাও সত্য যে, সমাধানসূত্রে পৌঁছানো কঠিন। প্রায় একমাস পর সাংবাদিকদের সামনে ইউক্রেন সংকট নিয়ে মুখ খুললেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন। তার কথায়, ''ন্যাটো-সহ পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আদৌ উৎসাহী নয়। ফলে তারা কেবলই রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।'' পুটিনের বক্তব্য, একতরফা ইউক্রেন সমস্যার সমাধান হবে না। সবপক্ষকে সকলের নিরাপত্তা নিয়ে আগ্রহ দেখাতে হবে।
ইউক্রেন অস্ত্র পাচ্ছে, আরও চায়
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পর সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে ইউক্রেন৷ সম্প্রতি রাশিয়া সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে৷ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে৷ তবে আরও দরকার, বলছে ইউক্রেন৷
২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে৷ এর মধ্যে আছে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল (ছবি), টহল বোট, হামভি, স্নাইপার রাইফেল, ড্রোন, রাডার সিস্টেম, নাইট ভিশন ও রেডিও ইকুইপমেন্ট৷
কয়েক ব্যাচ বায়রাকটার টিবিটু ড্রোন বিক্রি করেছে৷ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডনবাস এলাকায় রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এগুলো ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Murat Cetinmuhurdar/Turkish Presidency/handout/picture alliance / AA
জার্মানি
ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ তবে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে যে ৫১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে তার একটা অংশ দিচ্ছে জার্মানি৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
ইউক্রেন আরও যা চায়
যুক্তরাষ্ট্র থেকে হেলিকপ্টার, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও হালকা সাঁজোয়া যান চায়৷ নরওয়ে থেকে চায় সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম৷ এছাড়া মাঝারি ও স্বল্প রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও চায় ইউক্রেন৷
ছবি: DARKO BANDIC/AFP via Getty Images
6 ছবি1 | 6
এদিন ন্যাটো এবং অ্যামেরিকার দেওয়া চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন পুটিন। জানিয়েছেন, চিঠির বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঠিক সময়ে উত্তরও দেওয়া হবে। কিন্তু চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, চিঠিতে রাশিয়ার আশঙ্কার বিষয়গুলি ধরা হয়নি।
পশ্চিমা দেশগুলির অভিযোগ, পূর্ব ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। যুদ্ধের মহড়া চলছে। যে কোনোদিন তারা ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। রাশিয়া অবশ্য বরাবরই বলে এসেছে, ইউক্রেন আক্রমণ করার জন্য ওই সেনা মোতায়েন করা হয়নি। নিজেদের আত্মরক্ষার্থে সেনা সাজিয়েছে রাশিয়া। তবে পূর্ব ইউক্রেনের বিতর্কিত অঞ্চলে রাশিয়া সেনা ঢুকিয়ে দিতে পারে, এ আশঙ্কা আছে। রাশিয়া আগ্রাসী হলে তার ফল ভালো হবে না বলে স্পষ্ট হুমকি দিয়ে রেখেছে ন্যাটো-সহ অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ এবং অ্যামেরিকা। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এতদিন এর উত্তর দিচ্ছিলেন। এবার মুখ খুললেন প্রেসিডেন্ট।
পূর্ব ইউক্রেনের বিভাজন রেখায় বাড়ছে উত্তেজনা
রাশিয়ার সঙ্গে চরমে উঠেছে ইউক্রেনের সংঘাত৷ রাশিয়া সীমান্তে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷ ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক তত্পরতা বাড়িয়েছে মস্কো৷ অন্যদিকে ইউক্রেনও পিছিয়ে নেই৷ প্রস্তুত রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনা
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একজন সেনাকে দেখা যাচ্ছে৷ দনেত্স্ক এলাকার হরলিভকাতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত তিনি৷ রুশপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিভাজন রেখার কাছে বন্দুকধারী সেনার ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন একজন আলোকচিত্রী৷
ছবি: Anna Kudriavtseva/REUTERS
সেনার প্রস্তুতি
রাশিয়ার গুপ্তচররা ইউক্রেনের ভিতরে ঢুকে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ৷ যদিও রাশিয়া এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ দনেত্স্ক এলাকায় রাশিয়াকে রুখতে প্রস্তুত রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷
প্রত্যেক ইউক্রেনীয় সেনাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত৷ যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু হতে পারে, মানসিকভাবে এমন প্রস্তুতি রয়েছে তাদের৷
ছবি: Anna Kudriavtseva/REUTERS
প্রস্তুত ‘নোঁ দ্য গ্যার ইয়াকুট’
লুহানস্ক এলাকায় পোপাসনা শহরে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী ভোলোদিয়ার সেনারাও প্রস্তুত৷ এরা ‘নোঁ দ্য গ্যার ইয়াকুট’ নামে পরিচিত৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
সামরিক অবস্থান শনাক্ত
দনেত্স্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিএনআর) এক অস্ত্রধারী জঙ্গির (মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী) ছবিও ধরা পড়েছে চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরায়৷ সামরিক অবস্থান খতিয়ে দেখে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারাও৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
প্রতিপক্ষের মোকাবিলায়
লুহানস্ক এলাকায় পোপাসনায় রয়েছেন ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনা আন্দ্রে৷ নোঁ দ্য গ্যার দ্রুইদ হিসেবে পরিচিত আন্দ্রেও মানসিকভাবে প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনা
লুহানস্কে বরফ ঢাকা পথে হেঁটে চলেছেন ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা৷ সামরিক বিন্যাস নিয়ে তৈরি তারা৷ একদিকে জারি হাই অ্যালার্ট, অন্যদিকে সেনা মোতায়েন৷ যুদ্ধের দামামা কি বেজে গেল? রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী? উঠে আসছে এই প্রশ্নগুলি৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
8 ছবি1 | 8
পুটিন জানিয়েছেন, রাশিয়া বরাবরই শান্তিপূর্ণ আলোচনার পক্ষপাতী। তারা যুদ্ধের বিরোধী। সাম্প্রতিক বিষয়টি নিয়েও তারা আলোচনা করতে আগ্রহী। কিন্তু সেখানে রাশিয়ার স্বার্থের কথাও আলোচনায় রাখতে হবে। এ কথা বলেই পুটিন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, সাম্প্রতিক বিষয়টি নিয়ে সমাধানসূত্রে পৌঁছানো কঠিন।
ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হবে কি না, এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টালবাহানা চলছে। ২০০৮ সালে ন্যাটো জানিয়েছিল, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হতে পারে। কিন্তু গত ১৩ বছরে তা বাস্তবে করা সম্ভব হয়নি। বরাবরই রাশিয়া এর বিরোধিতা করে এসেছে। সাম্প্রতিক বিতর্কে রাশিয়া এই বিষয়টিকে বড় করে দেখছে। এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করলে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই পুটিনের সঙ্গে দেখা করেছেন হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট। হাঙ্গেরি রাশিয়াকে সমর্থন করছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। তারপরেই এদিন সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুললেন পুটিন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁকে আলোচনায় আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।