পুরনো একটি বিয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়৷ দাবি করা হচ্ছে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও চীনা সাংবাদিক হু শিজিনের৷ কিন্তু ছবিটি আসলে ভুয়া৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান ভ্রমণে গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গন নড়েচড়ে উঠেছে৷ চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এবং তাইওয়ান ঘিরে উত্তেজনা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা৷ এর মধ্যে ছড়াচ্ছে নানা ভুয়া খবরও৷ তেমনই একটি ন্যান্সি পেলোসি ও চীনের গ্লোবাল টাইম সংবাদপত্রের সাবেক প্রধান সম্পাদকের বিয়ের ভুয়া ছবি৷ টুইটারে ছবিটি দিয়ে একজন লিখেছেন, ‘‘যখন তারা তরুণ ছিলেন: ন্যান্সি পেলোসি এবং হু শিজিন৷''
সত্যতা যাচাই
ডয়চে ভেলের সত্যতা যাচাই অনুসন্ধানে দেখা গেছে পুরনো দুইটি ছবিকে জোড়া দিয়ে এই ছবিটি তৈরি করা৷ মূল ছবির একটিতে ন্যান্সি পেলোসি বসে আছেন তার পরিবারের সঙ্গে৷ অন্যদের সঙ্গে সেই ছবিতে ছিলেন তার বাবা রাজনীতিবিদ থমাস ডি' আলেসান্দ্রো জুনিয়রও৷ পেলোসি এই ছবি পোস্ট করেছিলে ফ্লিকারে৷ ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘‘তরুণ বয়সে পরিবারের সঙ্গে''৷ তার একটি প্রাচারমূলক পেইজেও এই ছবিটি রয়েছে৷
হু শিজিনকে পাওয়া যায় ভিন্ন আরেকটি ছবিতে৷ গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে এই সাংবাদিকের নিজের একটি টুইট মিলে৷ যেখানে তিনি চীনের সামরিক বাহিনীতে থাকার সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন৷ সেই টুইটে সাংবাদিকের এই ছবিটিও রয়েছে, যা পেলোসির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে৷
পেলোসি ও শিজিনের বয়সের পার্থক্য
ফরেনসিক ইমেজ বিশ্লেষণেও ছবির দুই অংশে রংয়ের ভিন্নতা পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে দুইজন আসলে এক ছবিতে ছিলেন না৷
পেলোসি ও শিজিনের বয়সের তফাতও প্রমাণ করে যে ছবিটি ভুয়া৷ মার্কিন রাজনীতিবিদের বয়স ৮২ বছর৷ হু শিজিন তার চেয়ে ২০ বছরের ছোট৷
পেলোসির ছবিটি ১৯৬০ সালের৷ পরিবর্তিত ছবইতে দুইজনকে একই বয়সি দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু ১৯৬০ সালে শিজিন কেবল জন্ম নিয়েছেন৷
ছবিটি যে ভুয়া ইন্টারনেট দুনিয়ায় তা অনেকেই বুঝতে পেরেছেন৷ অনেকে এটিকে স্যাটায়ার হিসেবে দেখছেন৷ কিন্তু অনেকেই আবার ভাবছেন তাদের বিয়ের তথ্যটি সত্যি৷
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কৌতুক
হু শিজিন ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের কড়া সমালোচকদের একজন৷ এজন্য চীনের জবাবে সামরিক জবাব দেয়ার পক্ষে তিনি৷ তার মতে এটিই যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানকে বোঝানোর একমাত্র উপায়৷ এ নিয়ে তিনি লিখেছেন চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবোতে৷ অন্যদিকে টুইটারে তিনি লিখেছেন চীনের পিপল'স লিবারেশন আর্মির উচিৎ পেলোসির বিমান তাইওয়ানে আসার পথে ‘গুলি করে' ভূপাতিত করা৷ এরইধ্যে টুইটার তাকে সাময়িক ব্লক করেছে৷ শিজিন তার টুইট পরে মুছে ফেলেছেন৷
এমন বাস্তবতায় পেলোসি ও শিজিনের বিয়ের ভুয়া ছবিকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে কৌতুক হিসেবেই দেখছেন৷
ভুয়া তথ্য বা খবর বুঝব কীভাবে?
গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে বিশ্বে অন্তত ৮০০ জন বা তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ ফলে খবর, তথ্য শেয়ারের সময় সতর্ক থাকতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে?
ছবি: Facebook
তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন
ভুয়া তথ্য ও খবর দ্রুত খুঁজে পাবার উপায় জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘ফুল ফ্যাক্ট’৷ ফেসবুকে কিছু শেয়ারের আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছে তারা৷
প্রথম প্রশ্ন
খবরটি কে দিয়েছে? প্রথমে নিজেকে এই প্রশ্নটিই করুন৷ সূত্র বিশ্বস্ত না হলে সেটা শেয়ার করবেন না৷ আর সূত্র নতুন হলে তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন৷
ছবি: imago images / ZUMA Press
দ্বিতীয় প্রশ্ন
কি যেন নেই? লিংকে ঢুকে পুরো খবরটা পড়ুন৷ ছবি, ব্যবহার করা নম্বর, কারও মন্তব্য এসব খেয়াল করুন৷ অনেক সময় সূত্রের উল্লেখ না করে মন্তব্য ব্যবহার করা হয় কিংবা কনটেক্সট ছাড়াই মন্তব্য দেয়া হয়৷ খবরের সঙ্গে থাকা ছবি কিংবা ভিডিও ভুয়া হতে পারে৷ ভিডিওতে ব্যবহৃত কণ্ঠ পরিবর্তিত থাকতে পারে৷
ছবি: Facebook/G.M. Masud Rana
তৃতীয় প্রশ্ন
খবরটি পড়ার পর আপনি কেমন অনুভব করছেন? যারা ভুয়া খবর ছড়ায় তারা মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে চায়৷ তারা জানে আপনাকে রাগিয়ে তুলতে পারলে কিংবা চিন্তিত করতে পারলে আপনি খবরটিতে ক্লিক করবেন৷ তাই শেয়ারের আগে নিজের অনুভূতিটা জানার চেষ্টা করুন৷ ভাল অনুভব করলে শেয়ার করুন৷ আর খটকা লাগলে অন্যান্য সূত্র দেখে যাচাইয়ের চেষ্টা করুন৷ ছবিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের শেয়ার করা একটি ভুয়া খবর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Facebook
ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট
ভারতের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘বুম লাইভ’কে বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে বিদ্যমান ছবি ও ভিডিওর যথার্থতা পর্যালোচনার দায়িত্ব দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে৷ www.boombd.com/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও (https://www.facebook.com/Boombangladeshnews) তাদের কাজ দেখা যায়৷
বিডি ফ্যাক্ট চেক
২০১৭ সালে কাজ শুরু করে এই ওয়েবসাইট (https://bdfactcheck.com/)৷ ফেসবুকেও তাদের একটি পাতা (https://www.facebook.com/bdfactcheck/) আছে৷ আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন, জনসভা ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বিডি ফ্যাক্ট চেক৷ এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভুয়া সংবাদ, ছবি কিংবা ভিডিও ভাইরাল হয় সেগুলোরও ফ্যাক্টচেক করে তারা৷
Fact খুঁজি
এটি বাংলাদেশের আরেকটি ফ্যাক্ট-চেক করা ওয়েবসাইট৷ http://factkhuji.org/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি তাদের একটি ফেসবুক পাতাও (https://www.facebook.com/factkhuji/) আছে৷
সতর্ক হন
করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসেই বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০০ জন বা তার চেয়েও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে ‘অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে৷ ফলে সামাজিক মাধ্যমে খবর বা তথ্য শেয়ারের আগে সবার একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/SOPA Images/A. K. Sing