জার্মানিতে ‘ফেয়ার ট্রেড’ বা ন্যায্য বাণিজ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তবে ইউরোপ ও অ্যামেরিকার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন৷
বিজ্ঞাপন
গত দশ বছরে ‘ফেয়ার ট্রেড' পণ্য বিক্রির পরিমাণ প্রায় আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০০৪ সালে জার্মানরা ৯৯ মিলিয়ন ইউরোর ফেয়ার ট্রেড পণ্য কিনেছেন৷ ২০১৩ সালে এই অঙ্কটা দাঁড়িয়েছে ৭৮৩ মিলিয়নে৷ ‘‘ন্যায়সংগত বাণিজ্যে মানুষের আস্থা অগাধ৷'' আনন্দের সাথে বলেন ন্যায্য বাণিজ্য ফোরামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানুয়েল ব্লেন্ডিন৷ তবে সামগ্রিকভাবে জার্মানিতে দক্ষিণের দেশগুলি থেকে ন্যায্য বাণিজ্য পণ্যের ক্ষুদ্র একটা অংশই আমদানি করা হয়৷ এক্ষেত্রে কফির কথা উল্লেখ করা যায়৷ ন্যায্য পণ্যের বাণিজ্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য হলো কফি৷ কিন্তু জার্মানিতে কেনা কফির মাত্র তিন শতাংশ ‘ফেয়ার ট্রেড' সিলযুক্ত৷
সেবিট-এ এক টুকরো বাংলাদেশ
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র উদ্যোগে ১৯৯৯ সাল থেকে সেবিট-এ অংশ নিতে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান৷ এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি৷ সফটওয়্যার নির্মাতারা নানা পণ্য নিয়ে হাজির এবার৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সেবিট-এ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সেবিট যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র উদ্যোগে৷ সেই যাত্রায় এবার হানোফারের মেলায় হাজির দশটির বেশি প্রতিষ্ঠান৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মেলায় বাংলাদেশি সফটওয়্যার নির্মাতা নিয়ে এসেছে গাড়ির জন্য অ্যাপস থেকে শুরু করে নিরাপদ ই-মেল ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পণ্য এবং সেবা৷
ছবি: DW/A. Islam
গাড়ির জন্য অ্যাপস
গাড়ির কোথাও সমস্যা হলে সহজেই তা জানার এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের এক অভিনব মুঠোফোন অ্যাপস তৈরি করেছে ডাটাসফট৷ সেবিট-এ এই অ্যাপসের কর্মকাণ্ড দর্শনার্থীদের প্রদর্শন করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এম. মনজুর মাহমুদ৷ ১৯৯৯ সাল থেকে নিয়মিত হানোফারের মেলায় অংশ নিচ্ছে ডাটাসফট৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
ওয়েবনির্ভর ই-গভর্নেন্স সফটওয়্যার
সেই ১৯৯৯ সাল থেকে নিয়মিত সেবিট-এ অংশ নিচ্ছে লিডসফট৷ মেলায় হাজির প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তার একজন রমিজুর রহমান খান জানান, এবার তারা ওয়েবনির্ভর ই-গভর্নেন্স সফটওয়্যারের দিকে বেশি মনযোগ দিচ্ছেন৷ পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস৷ ডেনমার্কের একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে লিডসফট৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
ই-মেলের নিরাপত্তায় বিশেষ সিস্টেম
গুগল কিংবা ইয়াহুর মতো ই-মেল সেবায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি নিয়ে গোটা বিশ্ব সোচ্চার এখন৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ই-মেল যোগাযোগকে গোয়েন্দাদের নজর থেকে বাইরে রাখার নতুন এক পদ্ধতি সেবিট-এ প্রদর্শন করছে বিয়ন্ড টেকনোলজিস৷ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সালাউদ্দিন পাশা জানান, তাদের ই-মেল সেবার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ব্যবহারকারীর কাছে৷ তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ব্যবস্থা থেকে তথ্য চুরির সুযোগ পাবে না৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি
সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসডিএসএল পণ্য কিংবা সেবা তৈরি করে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী৷ ক্রেতা সেই পণ্য চাইলে বিক্রি করতে পারেন নিজের নামে৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, মূলত জিআইএস নির্ভর ম্যাপ, নেভিগেশন অ্যাপস এবং সফটওয়্যার তৈরি করি আমরা৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
বছরে আয় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার
ব্রেইন স্টেশনের বয়স এখনো চার বছর হয়নি৷ তবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক আয় মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে৷ ব্রেইন স্টেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবির জানান, পার্টনার দেশের সন্ধানে সেবিট-এ এসেছেন তাঁরা৷ নিজের কর্মকাণ্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশীদার করতেও আগ্রহী তাঁরা৷ ছবিতে সেবিটে অংশ নেয়া ব্রেইন স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সিসটেক ডিজিটাল
ই-লার্নিংকে এখনো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে সিসটেক ডিজিটাল৷ তবে বিশ্বব্যাপী মোবাইল অ্যাপসের চাহিদার দিকেও নজর রয়েছে তাদের৷ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা এম. রাশেদুল হাসান সস্ত্রীক মেলায় অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সেবিট-এ হাইটেক পার্ক অথরিটি
বাংলাদেশে বহুল প্রত্যাশিত তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র হাইটেক পার্ক এখনো নির্মাণাধীন পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে সেবিট-এ প্রদর্শনরত হাইটেক পার্ক অথোরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যেই কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কের কার্যক্রম শুরু হবে৷ এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে এরকম পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
8 ছবি1 | 8
মুক্তবাণিজ্যচুক্তি উদ্বেগের কারণ
বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে ফেয়ার ট্রেড সংস্থাগুলি৷ বিশেষ করে ইউরোপ ও অ্যামেরিকার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা, সংক্ষেপে টিটিআইপি চিন্তার উদ্রেক করছে তাদের৷ অ্যামেরিকার শিল্পোন্নত কৃষিবিভাগের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা তাদের৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বাতিল হয়ে গেলে দক্ষিণের দেশগুলি দারুণ অসুবিধায় পড়বে৷
আফ্রিকা ও দক্ষিণ অ্যামেরিকার কিছু দেশকে ইউরোপ আমদানি ক্ষেত্রে যে সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে, সে সব অচল হয়ে যেতে পারে৷ বলেন পরিবেশ ও উন্নয়ন ফোরামের মুখপাত্র ইউর্গেন মায়ার৷ ‘‘এইরকম হলে আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে সরে এসে ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকে পড়বো৷''
ক্ষুদ্র চাষিদের সহায়তায় অঙ্গীকারবদ্ধ
ফেয়ার বাণিজ্য ফোরামের ছত্রতলে একত্রিত হয়েছে ওয়ার্ল্ড ফেয়ার ট্রেডের সার্টিফিকেটধারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, আমদানিকারক, ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও দোকানপাট৷ তারা বিশেষ করে ক্ষুদ্র চাষিদের তাঁদের উত্পাদিত পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট মূল্য দিতে ও সহায়তা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ৷ এর পরিবর্তে বিশেষ সিল ব্যবহার করতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলি৷ এইসব উত্পাদন দ্রব্য জার্মানির বিশেষ কিছু দোকানে ও সুপার মার্কেটেও পাওয়া যায়৷ বিশেষ করে হোটেল রেস্তোরাঁয় এই সব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ বলেন ব্লেন্ডিন৷ আট ভাগের এক ভাগ ন্যায্য বাণিজ্যের পণ্য সরাসরি রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেতে যায়৷ ফেয়ার ট্রেডের খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও পাওয়া যায় আসবাবপত্র ও পোশাক-আশাক৷ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হলো কৃষিজাত উত্পাদন৷ প্রথম স্থানে রয়েছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলমূল এরপরই কফি ও কোকোর স্থান৷