1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা নিয়ে কতটা বিপাকে সোনিয়া, রাহুল?

গৌতম হোড় দিল্লি
২৬ মে ২০২৫

আবার খবরের শিরোনামে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা। সোনিয়া ও রাহুল গান্থী কি এই মামলায় বিপাকে পড়তে পারেন?

সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী, ২০২৪ সালের ২৫ মে ভোট দেয়ার পর।
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা কি বিপাকে ফেলতে পারে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে?ছবি: Arun Sankar/AFP

গত বুধবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউয়ের আদালতে ইডি জানিয়েছে, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় অর্থ পাচার ও নয়-ছয় করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইডির তরফে আইনজীবী অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এস ভি রাজু আদালতে বলেন, এখানে অর্থপাচারের স্পষ্ট নিদর্শন আছে।

বিচারকের প্রশ্নের জবাবে ইডির স্পেশ্যাল কাউন্সেল জোহেব হোসেন আদালতে বলেছেন, এখানে যারা কংগ্রেস দলকে অর্থ সাহায্য করেছে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সদস্যরা চাঁদা দিয়েছেন, অন্যরা ডোনেশন দিয়েছেন, সেই টাকায় একটি সংস্থাকে বাণিজ্যিক কাজকর্ম চালাতে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস দলকে যারা অর্থ দিয়েছেন, তাদের প্রতারিত করা হয়েছে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, স্যাম পিত্রোদাসহ সাতজন এবং দুইটি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিচারক জানিয়েছেন, ২ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন এই মামলার শুনানি হবে।

কী অভিযোগ?

ন্যাশনাল হেরাল্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ১৯৩৮ সালে। এই খবরের কাগজ চালাবার জন্য তিনি অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল লিমিটেড(এজিএল) নামে একটা ট্রাস্ট তৈরি করেন। তারা ন্যাশনাল হেরাল্ড ছাড়াও হিন্দিতে নবজীবন এবং উর্দুতে কায়ামি আওয়াজ বলে খবরের কাগজও প্রকাশ করে।

২০০৮ সালে এজিএল আর্থিক অনটন এবং বিপুল ঋণের বোঝার  ন্যাশনাল হেরাল্ড প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। ২০১০ সালে অলাভজনক সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়া লিমিটেড(ওয়াইআইএল) তৈরি হয়। তার ৩৮ শতাংশ করে শেয়ার ছিল সোনিয়া ও রাহুলের কাছে। এজিএলকে বিনা সুদে ৯২ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেয় এআইসিসি বা অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি।

ওয়াইআইএল ২০১০ সালে এআইসিসি-কে ৫০ লাখ টাকা দেয়। এআইসিসি জানিয়ে দেয়, এজেএল দুর্দশায় পড়েছে। এই ৫০ লাখ টাকা পেয়ে তারা যে ৯২ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল, সেটা সেটল হয়ে গেলো। এজেএল নয় কোটি ২ লাখ শেয়ার ওয়াইআইএলকে দিয়ে দেয়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১০ টাকা। এভাবে ৯২ কোটি ৫০ লাখ টাকার হিসাব তারা করে ফেলে।

কোম্পানিগুলির মধ্যে এই ধরনের আদানপ্রদান হয়, তবে তা হয় ন্যাশনাল কম্পানি ল ট্রাইবুনালের তত্ত্বাবধানে।

বিজেপি নেতা সুব্রমণিয়ম স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা শুরু হয়। স্বামীর অভিযোগ ছিল, এজেএলের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আছে। এইভাবে পুরো সম্পত্তি সোনিয়া ও রাহুলের পরিচালিত সংস্থার হাতে চলে গেলো।

কী সম্পত্তি আছে আইজেএলের?

২০২৩ সালে ইডি এজেএলের ৭৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। এজেএলের সম্পত্তির মধ্যে দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর মার্গের বহতল ভবন, মুম্বইয়ের বান্দ্রায় দুইটি বেসমেন্টসহ নয়তলার বাড়ি, লখনউয়ে একটা বাড়ি, হরিয়ানায় পাঁচকুলায় একটি জমি, পাটনা ও ইন্দোরে সম্পত্তি আছে।

কংগ্রেস জানায়, ইডির হিসাব ভুল, এজেএলের সম্পত্তির পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকার মতো। কংগ্রেসের দাবি, এই সম্পত্তি এজিএলের হাতে আছে। ওয়াইআইএল তৈরি হয়েছিল, ন্যাশনাল হেরাল্ডকে বাঁচানোর জন্য, কোনো আর্থিক লাভ করার উদ্দেশ্য তাদের নেই। আর ওয়াইআইএল থেকে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর কোনো আর্থিক লাভ হয় না।

বিজেপি-র বক্তব্য

বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্র শাহজাদ পুনাওয়ালা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন,  এটা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রয়াস. তার অর্থ নয়-ছয় করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে সব আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। তারপর গান্ধী পরিবার এমন ভাব দেখাচ্ছেন, যেন এটা তাদের পারিবারিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।

বিজেপি নেতা সুধাংশু দ্বিবেদী বলেছেন, এই মামলা ২০১৩ সালে শুরু হয়, যখন মোদী সরকার ক্ষমতায় আসেনি। এটাই একমাত্র মামলা যেখানে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে জামিন নিতে হয়েছে। এখন ইডি যে চার্জশিট দিয়েছে, সেখানে তারা বলেছে, এই অপরাধের মূল্য ১৪২ কোটি টাকা ।

কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বারবার এই অভিয়োগ করা হচ্ছে, কোথা থেকে লাভ হবে? যে কাগজ চলে না, যেখান থেকে কোনো আয় নেই, সেখানে লাভ হওয়ার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? এর সঙ্গে কোনোরকম বেআইনি লেনদেন নেই।

সোনিয়া ও রাহুল কি বিপাকে পড়েছেন?

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বিষয়টি এখন আদালতের বিচার্য। সেখানে ইডিকে এটা প্রমাণ করতে হবে, সোনিয়া, রাহুলরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছেন। সেই প্রমাণ যদি তদন্তকারী সংস্থা করতে পারে, তাহলে সোনিয়া ও রাহুল বিপাকে পড়বেন।''

শরদের মতে, ''২০১৯ থেকে লোকসভা নির্বাচনের আগে ন্যাশনাল হেরাল্ডের বিষয়টি সামনে আসে। কংগ্রেস নেতাদের জেরা করা হয়। ভোটের পর আবার সব চুপচাপ হয়ে যায়। সোনিয়া বা রাহুল যদি অপরাধী সাব্য়স্ত হন, তাদের যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলেই তার বড় রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। নাহলে এ নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি চলতে থাকবে।''

দিল্লিতে টেলিগ্রাফের সাবেক অর্থনৈতিক সম্পাদক জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আদালতে ইডি-কে তাদের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে সোনিয়া ও রাহুল বিপাকে পড়বেন। তবে আইনি লড়াই দীর্ঘ হয়। নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত তা চলবে। কিন্তু এই ধরনের ক্ষেত্রে বিজেপি হাতে একটা প্রচারের হাতিয়ার পেয়ে যায়। সেখানেই অসুবিধায় পড়তে পারেন সোনিয়া ও রাহুল।''

জয়ন্তর মতে,  ''সোনিয়া ও রাহুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু আদালতে যখন উঠবে, তখন প্রতিদিন খবর হবে, বিষয়টি প্রচারের মধ্যে থাকবে। রাজনীতি তো ধারণা তৈরির খেলা। আর এই ক্ষেত্রে বিজেপি-র দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ