আবার খবরের শিরোনামে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা। সোনিয়া ও রাহুল গান্থী কি এই মামলায় বিপাকে পড়তে পারেন?
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা কি বিপাকে ফেলতে পারে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে?ছবি: Arun Sankar/AFP
বিজ্ঞাপন
গত বুধবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউয়ের আদালতে ইডি জানিয়েছে, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় অর্থ পাচার ও নয়-ছয় করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইডির তরফে আইনজীবী অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এস ভি রাজু আদালতে বলেন, এখানে অর্থপাচারের স্পষ্ট নিদর্শন আছে।
বিচারকের প্রশ্নের জবাবে ইডির স্পেশ্যাল কাউন্সেল জোহেব হোসেন আদালতে বলেছেন, এখানে যারা কংগ্রেস দলকে অর্থ সাহায্য করেছে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সদস্যরা চাঁদা দিয়েছেন, অন্যরা ডোনেশন দিয়েছেন, সেই টাকায় একটি সংস্থাকে বাণিজ্যিক কাজকর্ম চালাতে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস দলকে যারা অর্থ দিয়েছেন, তাদের প্রতারিত করা হয়েছে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, স্যাম পিত্রোদাসহ সাতজন এবং দুইটি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিচারক জানিয়েছেন, ২ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন এই মামলার শুনানি হবে।
কী অভিযোগ?
ন্যাশনাল হেরাল্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ১৯৩৮ সালে। এই খবরের কাগজ চালাবার জন্য তিনি অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল লিমিটেড(এজিএল) নামে একটা ট্রাস্ট তৈরি করেন। তারা ন্যাশনাল হেরাল্ড ছাড়াও হিন্দিতে নবজীবন এবং উর্দুতে কায়ামি আওয়াজ বলে খবরের কাগজও প্রকাশ করে।
২০০৮ সালে এজিএল আর্থিক অনটন এবং বিপুল ঋণের বোঝার ন্যাশনাল হেরাল্ড প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। ২০১০ সালে অলাভজনক সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়া লিমিটেড(ওয়াইআইএল) তৈরি হয়। তার ৩৮ শতাংশ করে শেয়ার ছিল সোনিয়া ও রাহুলের কাছে। এজিএলকে বিনা সুদে ৯২ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেয় এআইসিসি বা অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি।
কংগ্রেসের একাল-সেকাল
ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ২০১৯-এর নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বর্তমানে কিছুটা পিছিয়ে দলটি৷ ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আসার গল্প নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিষ্ঠা
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অফিসার অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউমের উদ্যোগে ১৮৮৫ সালে বোম্বে, অর্থাৎ আজকের মুম্বই শহরে জন্ম নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস৷ তৎকালীন বৃটিশ শাসকের সাথে সাধারণ ভারতীয় জনতার সংলাপের মঞ্চ হয়ে ওঠে কংগ্রেস৷ প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আইনজীবী উমেশচন্দ্র বনার্জী৷ তখন দলের প্রতীক ছিল চরকা৷
ছবি: DW/Payel Samanta
স্বাধীনতার লড়াইয়ে ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে কংগ্রেস৷ দলটি ছিল নানা মতের মিলনমেলা৷ একদিকে গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহ’র মধ্যপন্থা, বিপরীতে ঋষি অরবিন্দ, লালা লাজপত রাই, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক ও সুভাষচন্দ্র বসু’র চরমপন্থি জাতীয়তাবাদ — দলটি যেন দেশের মানুষের মতোই বিচিত্র, বহুমুখী৷
ছবি: picture alliance/AP Images
মতবিরোধ এবং সুভাষ বসুর দলত্যাগ
গান্ধী ও সুভাষের মধ্যেও মতবিরোধ ছিল৷ গান্ধী মনোনীত প্রার্থী, পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন সুভাষ৷নিরস্ত্র আন্দোলন না সশস্ত্র আন্দোলন — কোন পথে লড়বে কংগ্রেস? এই প্রশ্নে উত্তাল দলের অভ্যন্তর৷ মতাদর্শগত টানাপড়েনের মুখে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র দল, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষ৷ কংগ্রেসের সভাপতি হন রাজেন্দ্র প্রসাদ, যিনি পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন৷
ছবি: Public Domain
দাঙ্গা
ব্রিটিশরা সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করেছিল, তার ফলে শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা৷ ১৯৪৬ সালে জিন্নাহ’র নেতৃত্বে মুসলীম লীগ মুসলমানদের জন্য পৃথক অঞ্চলের দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়৷ এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক চাপ বাড়লে কলকাতায় ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়৷ ৪০০০-এরও বেশি লোক প্রাণ হারান ও লক্ষাধিক হন গৃহহীন৷ আস্তে আস্তে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য তৈরি হতে থাকে ভারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
কংগ্রেস ও দেশভাগ
দাঙ্গার দগদগে ঘা নিয়েই ১৯৪৭ সালে অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ তবে অখণ্ড ভারত থাকেনি৷ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় দেশ, জন্ম নেয় স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান৷ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন গান্ধীবাদী জওহরলাল নেহরু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আততায়ীর গুলিতে নিহত হলেন গান্ধী
স্বাধীনতার পরপরই ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার সদস্য, নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী৷ গান্ধী বেঁচে থাকাকালীন পাকিস্তান নিজেকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করলে হিন্দু মহাসভার মতো কিছু গোষ্ঠী ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার উদ্যোগ নেয়৷ গান্ধীর মৃত্যুকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে নেহরু বিভিন্ন চরমপন্থি হিন্দু গোষ্ঠীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/K. Gandhi
নেহরুর নেতৃত্বে ভারতবর্ষ
জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়৷ ১৯৬৪ পর্যন্ত দল ও দেশের নেতৃত্ব দেন নেহেরু৷ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম নেতা হিসেবে পরিচিত নেহরু ‘জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন’ ও ‘সবুজ বিপ্লব’-এর মতো ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বহির্বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷
ছবি: AP
ইন্দিরার হাত ধরে পরিবারতন্ত্রের শুরু
নেহরু-কন্যা ইন্দিরা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ অবধি তাঁর বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন ইন্দিরা৷ তবে ১৯৫৯ সালেই কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ নেহরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন লালবাহাদুর শাস্ত্রী৷ ১৯৬৬ সালে তাঁরও মৃত্যু হলে ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী৷
ছবি: picture-alliance/united archives
জরুরি অবস্থায় কংগ্রেস
১৯৭৫ সালের ভোটে কারচুপির অভিযোগে সারা দেশে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, ওঠে ইন্দিরা-বিরোধী আওয়াজ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯৭৭ সালে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ইন্দিরা৷ জরুরি অবস্থার শেষে পুনর্নিবাচনে কংগ্রেস হেরে যায়৷
ছবি: imago/ZUMA/Keystone
নতুন প্রতীক, নতুন আঙ্গিকের কংগ্রেস
১৯৫১ সাল পর্যন্ত দলের প্রতীক ছিল চরকা৷ ১৯৫২-৭১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রতীক ছিল হাল ও বাছুর৷ ১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পর ইন্দিরার নতুন দল কংগ্রেস (আই)-এর প্রতীক হয় হাত৷ পরে তা হয় একত্রিত কংগ্রেসের প্রতীক৷ বর্তমানে কংগ্রেসের প্রতীক ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে ডান হাত৷ ১৯৮০ সালে ইন্দিরার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস৷ পুত্র সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর ইন্দিরা রাজনীতিতে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় পুত্র রাজীবকে৷
ছবি: AP
ইন্দিরার প্রয়াণ, রাজীবের আগমন
১৯৮৪ সালে শিখ চরমপন্থিদের ঠেকাতে ইন্দিরা শুরু করেন ‘অপারেশন ব্লু-স্টার’৷ স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন, যা শিখ ধর্মাবলম্বীদের একাংশকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে৷ সে বছরের অক্টোবর মাসের শেষে দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা৷ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী ভারতের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/Sven Simon
রাজীব গান্ধীর অকালমৃত্যু
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজীব৷ ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়ে চরমপন্থি তামিল গোষ্ঠী লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর রোষের মুখে পড়েন৷ ১৯৯১ সালে নির্বাচনের প্রচার করার সময় এলটিটিই কর্মীদের আত্মঘাতী বোমায় মারা যান রাজীব৷ ফলে আবার নেতৃত্বের সংকটে পড়ে কংগ্রেস৷
ছবি: Getty Images/AFP
পরিবারতন্ত্রে সাময়িক ছেদ
রাজীবের মৃত্যুর পর কংগ্রেস সভাপতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন পিভি নরসিংহ রাও৷ পাশাপাশি চলতে থাকে রাজীব গান্ধীর ইটালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়াকে রাজনীতিতে আনার প্রস্তুতি৷ বিজেপির নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় আসে এনডিএ জোট সরকার৷ ২০০৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Hadebe
ক্ষমতায় আসা যাওয়া
২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি সোনিয়া৷ সেই দায়িত্ব পান মনমোহন সিং৷ কিন্তু ২০০৪ থেকে ২০১৪ অবধি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ইউপিএ জোট সরকারের সাথে জুড়তে থাকে ‘টু-জি মামলা’ বা কয়লা কেলেঙ্কারির মতো দুর্নীতির অভিযোগ৷ ২০১৪ সালে মাত্র ৪৪টি আসন জিতে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস৷ ২০১৭ সালের শেষে সোনিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নিলে দলের নেতৃত্ব নেন রাজীব-সোনিয়ার পুত্র রাহুল৷
ছবি: Reuters/B. Mathur
দলের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী
২০১৩ সালে উপ-সভাপতি হওয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসের নেতৃত্বে আগমনের পথ ধরেছিলেন রাহুল৷ ২০১৪’র নির্বাচনে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভরাডুবি হয়৷ এর জন্য তাঁর নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকেই দায়ী করেন অনেকে৷ তবে ২০১৯ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস৷
ছবি: IANS
15 ছবি1 | 15
ওয়াইআইএল ২০১০ সালে এআইসিসি-কে ৫০ লাখ টাকা দেয়। এআইসিসি জানিয়ে দেয়, এজেএল দুর্দশায় পড়েছে। এই ৫০ লাখ টাকা পেয়ে তারা যে ৯২ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল, সেটা সেটল হয়ে গেলো। এজেএল নয় কোটি ২ লাখ শেয়ার ওয়াইআইএলকে দিয়ে দেয়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১০ টাকা। এভাবে ৯২ কোটি ৫০ লাখ টাকার হিসাব তারা করে ফেলে।
কোম্পানিগুলির মধ্যে এই ধরনের আদানপ্রদান হয়, তবে তা হয় ন্যাশনাল কম্পানি ল ট্রাইবুনালের তত্ত্বাবধানে।
বিজেপি নেতা সুব্রমণিয়ম স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা শুরু হয়। স্বামীর অভিযোগ ছিল, এজেএলের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আছে। এইভাবে পুরো সম্পত্তি সোনিয়া ও রাহুলের পরিচালিত সংস্থার হাতে চলে গেলো।
কী সম্পত্তি আছে আইজেএলের?
২০২৩ সালে ইডি এজেএলের ৭৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। এজেএলের সম্পত্তির মধ্যে দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর মার্গের বহতল ভবন, মুম্বইয়ের বান্দ্রায় দুইটি বেসমেন্টসহ নয়তলার বাড়ি, লখনউয়ে একটা বাড়ি, হরিয়ানায় পাঁচকুলায় একটি জমি, পাটনা ও ইন্দোরে সম্পত্তি আছে।
কংগ্রেস জানায়, ইডির হিসাব ভুল, এজেএলের সম্পত্তির পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকার মতো। কংগ্রেসের দাবি, এই সম্পত্তি এজিএলের হাতে আছে। ওয়াইআইএল তৈরি হয়েছিল, ন্যাশনাল হেরাল্ডকে বাঁচানোর জন্য, কোনো আর্থিক লাভ করার উদ্দেশ্য তাদের নেই। আর ওয়াইআইএল থেকে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর কোনো আর্থিক লাভ হয় না।
বিজেপি-র বক্তব্য
বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্র শাহজাদ পুনাওয়ালা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এটা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রয়াস. তার অর্থ নয়-ছয় করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে সব আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। তারপর গান্ধী পরিবার এমন ভাব দেখাচ্ছেন, যেন এটা তাদের পারিবারিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।
বিজেপি নেতা সুধাংশু দ্বিবেদী বলেছেন, এই মামলা ২০১৩ সালে শুরু হয়, যখন মোদী সরকার ক্ষমতায় আসেনি। এটাই একমাত্র মামলা যেখানে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে জামিন নিতে হয়েছে। এখন ইডি যে চার্জশিট দিয়েছে, সেখানে তারা বলেছে, এই অপরাধের মূল্য ১৪২ কোটি টাকা ।
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বারবার এই অভিয়োগ করা হচ্ছে, কোথা থেকে লাভ হবে? যে কাগজ চলে না, যেখান থেকে কোনো আয় নেই, সেখানে লাভ হওয়ার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? এর সঙ্গে কোনোরকম বেআইনি লেনদেন নেই।
সোনিয়া ও রাহুল কি বিপাকে পড়েছেন?
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বিষয়টি এখন আদালতের বিচার্য। সেখানে ইডিকে এটা প্রমাণ করতে হবে, সোনিয়া, রাহুলরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছেন। সেই প্রমাণ যদি তদন্তকারী সংস্থা করতে পারে, তাহলে সোনিয়া ও রাহুল বিপাকে পড়বেন।''
শরদের মতে, ''২০১৯ থেকে লোকসভা নির্বাচনের আগে ন্যাশনাল হেরাল্ডের বিষয়টি সামনে আসে। কংগ্রেস নেতাদের জেরা করা হয়। ভোটের পর আবার সব চুপচাপ হয়ে যায়। সোনিয়া বা রাহুল যদি অপরাধী সাব্য়স্ত হন, তাদের যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলেই তার বড় রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। নাহলে এ নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি চলতে থাকবে।''
দিল্লিতে টেলিগ্রাফের সাবেক অর্থনৈতিক সম্পাদক জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আদালতে ইডি-কে তাদের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে সোনিয়া ও রাহুল বিপাকে পড়বেন। তবে আইনি লড়াই দীর্ঘ হয়। নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত তা চলবে। কিন্তু এই ধরনের ক্ষেত্রে বিজেপি হাতে একটা প্রচারের হাতিয়ার পেয়ে যায়। সেখানেই অসুবিধায় পড়তে পারেন সোনিয়া ও রাহুল।''
জয়ন্তর মতে, ''সোনিয়া ও রাহুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু আদালতে যখন উঠবে, তখন প্রতিদিন খবর হবে, বিষয়টি প্রচারের মধ্যে থাকবে। রাজনীতি তো ধারণা তৈরির খেলা। আর এই ক্ষেত্রে বিজেপি-র দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।''