ঘণ্টা প্রতি ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে আইন পাস হয়েছে জার্মান পার্লামেন্টে৷ এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও পূর্ণ করলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে ঘণ্টা প্রতি মজুরি বাড়িয়ে ১২ ইউরো অর্থাৎ প্রায় ১২শ টাকা করা হয়েছে৷ শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টের নিম্মকক্ষে মজুরি বৃদ্ধির এই প্রস্তাব পাস হয়৷
আইন অনুযায়ী, ন্যূনতম মজুরি দুই ধাপে বাড়ানো হবে৷ সেক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বর্তমান মজুরি নয় ইউরো ৮২ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ১০ ইউরো ৪৫ সেন্ট করা হবে যা আসছে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে কার্যকর হবে৷
এরপর ঘণ্টা প্রতি মজুরি ১০ ইউরো ৪৫ সেন্ট থেকে বেড়ে ১২ ইউরো হবে যা ১লা অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে৷
শ্রমমন্ত্রী হুবের্টুস হাইল বলেন, ‘‘সরকারের এই উদ্যোগের ফলে কঠোর পরিশ্রম যারা করেন তাদের প্রতি সম্মান জানানো হলো৷’’
মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি গত সেপ্টম্বেরে নির্বাচনী প্রচারণায় ওলাফ শলৎসের দলের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল৷ আর তাই মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি সবার কাছেই প্রত্যাশিত ছিল৷
এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর জার্মানিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম বাড়তে থাকে৷ গত মে মাসে দ্রব্যমূল্য শতকরা সাত দশমিক নয় ভাগ বৃদ্ধি পায়৷ চলমান পরিস্থিতিতে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির এ ঘোষণা কম পারিশ্রমিকে কাজ করা চাকরিজীবীদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির৷
তবে মজুরি বৃদ্ধির ফলে নানা খাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন৷
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি: অতীত-বর্তমান
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে৷ পোশাক খাতই দেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল শিল্প খাত৷ অথচ এই খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বারবার নামতে হয় রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুতে মাত্র ৬৩০ টাকা
পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়৷ ওই সময় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দশ বছরে বাড়ে ৩০০ টাকা
১৯৯৪ সালে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি করা হয় ৯৩০টাকা৷ এরপর ১২ বছর এই খাতে কোনো বেতন কাঠামো ঘোষিত হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
দুই দশক পর হাজারের ঘরে বেতন!
গত ৪০ বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বাইরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আয়ই প্রধান৷ অথচ এই খাতে মজুরি এখনো কম৷ ২০০৬ সালে ন্যূনতম বেতন হাজারের ঘর স্পর্শ করে৷ ১৯৯৪ সালের ঘোষিত ৯৩০ টাকা ২০০৬ সালে বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৬২ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রায় দ্বিগুণ, কিন্তু অপ্রতুল
২০১০ সালে মজুরি বাড়িয়ে করা হয় তিন হাজার টাকা৷ কিন্তু তখন ন্যূনতম ৮ হাজার টাকার দাবি ছিল শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৩ সালেও প্রত্যাশার চেয়ে কম
২০১৩ সালের জুন মাসে গঠিত মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি নির্ধারণ করে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা৷ দ্রব্যমূল্য বাড়লেও শ্রমিকরা ২০১০ সালের দাবি অনুযায়ীও মজুরি পায়নি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
২০১৮ সালে ১১ গ্রেডের বেতন কাঠামো
গত বছর নতুন করে পোশাক শ্রমিকদের বেতনের ১১টি গ্রেড করা হয়৷ এর মধ্যে শ্রমিকদের জন্য সাতটি ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয় চারটি গ্রেড৷ শ্রমিকদের প্রথম গ্রেডে মজুরি ধরা হয় ১৭ হাজার ৫১০ টাকা৷ এর মধ্যে শিক্ষানবিশ গ্রেডও রয়েছে৷ শিক্ষানবিশ শ্রমিকরা মাসে পাঁচ হাজার ৯৭৫ টাকা পাবেন৷
ছবি: bdnews24.com
কী হয় এ বেতনে!
শ্রমিকদের সপ্তম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার টাকা৷ এর মধ্যে মূল মজুরি চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা৷ তবে বলা বাহুল্য, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি বা বর্তমান মজুরি কাঠামোকে পোশাক শ্রমিকরা সঙ্গতিপূর্ণ মনে করছেন না৷
ছবি: Taslima Akhter/Hygienemuseum Dresden
টাকার অংকে মজুরি বেড়েছে মাত্র ২৭১ টাকা
বাংলাদেশ মজুরি বোর্ডের আইন অনুযায়ী মূল মজুরি প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ে৷ পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার আইনও রয়েছে৷ সে অনুযায়ী সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের ২০১৩ সালের মূল ছিল ৩ হাজার ৮২৯ টাকা৷ আর এখন নতুন মূল মজুরি ঘোষিত হলো ৪ হাজার ১০০ টাকা৷ অর্থাৎ, এই গ্রেডের মজুরি বেড়েছে ২৭১ টাকা মাত্র!
ছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi
অন্য খাতের মজুরি
২০১৮ সালে চামড়া খাতে নতুন যে মজুরি কাঠামো ঘোষিত হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন গ্রেডের শ্রমিকদের মোট মজুরি ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা৷ শিপব্রেকিং খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকা৷ অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যানামেল শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার ৭০০ টাকা৷ পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে অনেক কম৷