স্বামী রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে ‘মিন্নির সংশ্লিষ্টতার’ তথ্য পেয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সকাল ১০টার একটু আগে মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি মাইঠা গ্রাম থেকে পুলিশ লাইনে আনার কথা জানিয়েছিলেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন৷ মামলার প্রধান সাক্ষী হিসেবে মিন্নির জবানবন্দি নেওয়া হয় তখন৷
রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রিফাত হত্যায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ভালো কথা৷
প্রশ্ন হচ্ছে, অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় কী করে মারা গেলো তার তদন্ত কি হবে?
আমরা বারবার বলছি, বিচার কাজে কোনো গাফিলতি থাকলে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করুন, সেই সমস্যার সমাধান করুন৷ অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে কাউকে মেরে ফেলা এর বিকল্প হতে পারে না৷
ধারাবাহিকভাবে যদি বলি, দিনের আলোতে রিফাতের হত্যা, তার স্ত্রীর করুণ আর্তি সামাজিক গণমাধ্যমের চাপ আর নয়ন বন্ডকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া আবার সামাজিক গণমাধ্যমে নানারকম দাবির প্রেক্ষাপটে মিন্নির গ্রেপ্তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কী ভয়ংকর দেশে আমরা বাস করি আর আমরা নিজেরাও কতটা ভয়ংকর? মনে পড়ে নয়ন বন্ড মারা যাওয়ার পরে মিষ্টি বিতরণ ও খাওয়ার দৃশ্য৷
মিন্নি অপরাধী কিনা, তা আমরা এখনো জানি না৷ পুলিশ বলছে, তারা তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে৷ কিন্তু দুটো বিষয় আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, এক নয়ন দিনের আলোতে কুপিয়ে রিফাতকে খুন করেছে আর দুই তার মৃত্যু হয়েছে পুলিশ হেফাজতে৷ দুটো ঘটনাই অপরাধ৷ আমরা এই দুই অপরাধের বিচার দাবি করি৷ আমাদের দুর্ভাগ্য এই, প্রথম অপরাধীকে আর বিচারের সম্মুখীন করা সম্ভব নয়৷ কিন্তু দ্বিতীয় অপরাধের বিচার না হলে আমাদের কপালে আরও অনেক বেশি দুর্ভোগ রয়েছে৷
গত ২৬শে জুন বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাতকে তার স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করে কয়েকজন৷ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিফাতের মৃত্যু হয়৷
ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ আক্রমণকারীদের একজন, নয়ন বন্ডকে পুলিশ আটক করে৷
পরে পুলিশের ভাষায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তার মৃত্যু হয়৷
মামলা যখন হয়রানির জন্য
কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে৷ সে অনুযায়ী তদন্ত ও বিচার হবে এমনটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু এর ব্যতিক্রমও হয়৷ অপরাধ না করেও মামলায় ফাঁসছেন অনেকে৷ এমন অনেক অভিযোগ আছে৷ অনেক মামলার অভিযোগ হাস্যরসও তৈরি করে৷
ছবি: bdnews24.com
হাস্যকর মামলার একাল-সেকাল
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গভবনের কাপ, পিরিচ চুরির মামলা দেন মোশতাকের বিরুদ্ধে৷ ট্রাইব্যুনালের বিচারে তাঁর তিন বছরের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা হয়৷ অব্যাহতি পান ১৯৭৯ সালে ৷ জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিল প্লেট চুরির মামলা৷ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ভ্যানিটি ব্যাগ, স্বর্ণের নেকলেস ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল মহাজোট সরকারের আমলে৷
ছবি: Fotolia/Mehmet Dilsiz
মৃত ব্যক্তিও আসামি!
২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান চট্টগ্রামের বিএনপি কর্মী জসিম৷ ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুলিশের উপর ককটেল ছুড়ে মারার মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে৷ ঢাকার চকবাজার থানা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল আজিজুল্লাহ মারা গেছেন ২০১৬ সালের মে মাসে৷ প্রায় আড়াই বছর পর তাঁর বিরুদ্ধেও ককটেল ছোড়ার অভিযোগ আনে পুলিশ৷
ছবি: bdnews24.com
অন্ধ প্রবীণের অগ্নিসংযোগ, পঙ্গু ব্যক্তির হামলা!
৭০ বছর বয়স, নেই দৃষ্টিশক্তি৷ তবুও জাতীয় নির্বাচনের আগে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় গাড়ি পোড়ানো মামলার আসামি করা হয়েছিল কেরামত আলীকে৷ শারীরিক প্রতিবন্ধী সুনামগঞ্জের তারা মিয়ার বিরুদ্ধেও চাপাতি হকস্টিক নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল প্রায় একই সময়ে৷ ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে আশি বছরের প্রৌঢ়ের বিরুদ্ধেও৷ নির্বাচনের আগে পরে এমন অনেক মামলার খবরই এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে৷
ছবি: Reuters
অজ্ঞাতনামা মামলা
কোনো একটি ঘটনা ঘটলে সেখানে চিহ্নিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি নামহীন সংখ্যা দিয়েও অনেককে আসামি করা হয়, যা পরিচিত অজ্ঞাতনামা মামলা হিসেবে৷ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এমন অনেক মামলা হয়েছে৷ এধরণের মামলায় বিরোধী দলের কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও পুলিশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ আছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Shariful Islam
নির্বাচনের আগে মামলা
সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ৪,৪২৯টি মামলা করা হয়েছে৷ যাতে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৫ জনকে আসামি করা হয় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
কোটা বিরোধী আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলন তুঙ্গে উঠে বাংলাদেশে৷ এসময় ৭০০ জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত মামলা করা হয় বলে খবর বের হয় গণমাধ্যমে৷ পরে অনেককে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ৷
ছবি: bdnews24
সড়ক নিরাপত্তার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হয়রানি
স্কুল ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ এই আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা নিয়ে ঢাকা মহানগরে ৪৩টি সহ ৯৫টি মামলা দায়েরের বিষয়ে খবর বের হয় গণমাধ্যমে৷ এই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমকে৷ তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে পুলিশ৷
ছবি: bdnews24
অজ্ঞাত মামলা পোশাক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে
ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর সমন্বয়ের দাবিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে রাস্তায় নামেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এসময় এক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়৷ এই ঘটনায় ২৯টি মামলা করা হয়েছে৷ যেখানে ৫৫১ জনের নামে আর ৩,০০০ অজ্ঞাতনামা শ্রমিককে আসামি করা হয়, যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
ছবি: AFP/Getty Images
মিথ্যা মামলা, সাজানো আসামি
অনেক সময় নাটক সাজিয়েও অনেককে আসামি বানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ একুশে আগস্ট মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জজ মিয়া৷ সাতটি মামলায় ভুয়া পরোয়ানায় এক কৃষকের ১০০ দিন হাজতবাসের খবরও সম্প্রতি গণমাধ্যমে বেরিয়েছে৷