করোনার কারণে ইউরোপ, অ্যামেরিকায় পোশাক বিক্রি কমে গেছে৷ এখনও অনেক দেশে লকডাউনসহ কড়াকড়ি থাকায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকেরা অর্ডার কম পাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
মহামারির জন্য বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে নানান দেনদরবারে যাচ্ছেন৷ কেউ অর্ডার কমানোর দাবি জানাচ্ছেন, আবার কেউ দেরি করে পেমেন্ট করতে চাইছেন৷ এসব দাবি না মানলে ব্র্যান্ডগুলো অন্য দেশের অন্য কোনো কোম্পানির কাছে চলে যাবারও হুমকি দিচ্ছেন৷ ফলে ব্যবসা হারানোর আশঙ্কায় দাবি মানতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাক কারখানার মালিকরা৷ ঢাকার এক পোশাক প্রস্তুতকারক রয়টার্সকে জানান, ‘‘ক্রেতারা অর্ডার কমানোর কথা বলছে, পেমেন্ট দিতে দেরি করতে চাইছে... আমি যদি এতে রাজি না হই, তারা অন্যের কাছে চলে যাবে৷’’
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে নয়টি দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা এক হয়ে নিজেদের মধ্যে একটি নীতিমালা বা চুক্তি তৈরির চেষ্টা করছে৷ এ লক্ষ্যে একটি খসড়া ডকুমেন্টও প্রস্তুত করা হয়েছে৷ চলতি মাসের শেষ নাগাদ সেটি চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হতে পারে৷
বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, তুরস্ক, মরক্কো ও ইন্দোনেশিয়ার ১৩টি পোশাক সংগঠন এই উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে৷ জার্মানির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড-এর অর্থায়নে পরিচালিত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংস্থা ‘স্টার নেটওয়ার্ক' ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগ এটি৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স চুক্তির খসড়াটি দেখেছে৷ এর মধ্যে আছে, পোশাক তৈরি ও বিক্রির আলোচনায় কিছু মিনিমাম শর্ত মেনে চলা, সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে পেমেন্ট পাওয়ার দাবি করা, অর্ডার চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরে ডিসকাউন্টের সুযোগ দেয়ার রীতি বন্ধ করা ইত্যাদি৷
স্টার নেটওয়ার্কের মুখপাত্র মিরন আলী বলছেন, ‘‘আমরা এতদিন ক্রেতাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করতাম৷ যদি তারা বলতো, আমাদের কাছ থেকে তারা এক লাখ গজ কাপড় কিনতে চায়, কিন্তু আনুষ্ঠানিক অর্ডারটা তিন সপ্তাহ পর দিতে চায়, তাহলেই আমরা কাজ শুরু করে দিতাম৷ কিন্তু বর্তমানে সেই বিশ্বাসটা হারিয়ে গেছে৷’’
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পোশাক প্রস্তুতকারকদের নতুন এই উদ্যোগের কথা জানানো হয়৷ এতে বলা হয়,পোশাক প্রস্তুতকারকরা তাদের অসহায়ত্বের বিষয়টি বুঝতে পারছেন৷ এক্ষেত্রে এক হয়ে তাদের শক্ত ভূমিকায় যেতে হবে বলে মনে করছেন তারা৷
এই নীতিমালা বা চুক্তির পরবর্তী ধাপে ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া দুঃখ-দুর্দশার সমাধানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সালিস-নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে৷
জেডএইচ/কেএম (রয়টার্স)
কেমন আছেন পোশাক শ্রমিকরা
করোনার কারণে গত বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের আয়ে ধস নামে৷ বিপর্যয় নেমে আসে শ্রমিকদের জীবনেও৷ তবে সেই ধাক্কা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চাকরির খোঁজে
কে এ ডাব্লিউ গার্মেন্টসে প্রধান ফটকের বাইরে ফারজানা আক্তার দাঁড়িয়ে কথা বলছেন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে৷ করোনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের খরচ সামলাতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে এসেছেন তিনি চাকরির খোঁজে৷ কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে পরে আসতে বলে বিদায় দিলেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বেতন তুলতে পারেননি
আশিকুর রহমান পড়াশোনার পাশাপাশি রাজধানীর কচুক্ষেতের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেন৷ লকডাউনের সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের একটি নির্দিষ্ট দিনে ৬০ ভাগ বেতন দেওয়া হয়েছিল৷ সেদিন উপস্থিত হতে পারেননি তিনি৷ পরে আর বেতনই পাননি৷ ‘‘নিজের ঘাম ঝরানো পারিশ্রমিক কেন দেওয়া হবে না’’, এমন প্রশ্ন তার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ওভারটাইম কমপক্ষে ৪০ ঘন্টা
মিরপুর ১৩ নম্বরের জকি গার্মেন্টস লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ জানান, প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানাতেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় কাজের ব্যবস্থা আছে৷ এক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই লাভবান হন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাবি আদায়ে আন্দোলন
এটি ২০২০ সালের জুনের ছবি৷ মিরপুর ১২-র ‘জয়েনটেক্স নিট ওয়্যারস লিমিটেড’ এ করোনাকালীন সময়ে প্রায় ৫০০ শ্রমিককে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং বেতন-বকেয়া আদায়ের দাবিতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা সেসময় আন্দোলন করেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চাকরি গেছে পরিচিতদের
ডায়নামিক্স সোয়েটার ফ্যাক্টরি লিমিটেডে সুইং অপারেটর পদে কাজ করা মো. জসিম উদ্দিন জানান, লকডাউন চলাকালে তিনি নিজে চাকরিচ্যুত না হলেও পরিচিত বেশ কয়েকজনের চাকরি গেছে৷ তবে তার মতে কাজ জানা থাকলে এ শিল্পে বেশিদিন বেকার থাকতে হয় না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জমানো টাকা খরচ
লকডাউনের সময় পোশাকশ্রমিক রুবিনা আক্তার এবং তার স্বামী দুই মাস বেকার ছিলেন৷ প্রণোদনার ৬০% বেতন পেলেও তা দিয়ে ঢাকার ব্যয়বহুল জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় সমিতিতে জমানো টাকা খরচ করতে হয়েছে তাকে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পরিবারকে পাঠিয়েছেন গ্রামে
একাধিক পোশাকশ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার আগে পরিবারে আয়ের একাধিক সদস্য থাকলেও এখন আর তা নেই৷ পারিবারিক খরচ সামলাতে এখন যিনি কাজ করছেন, শুধু তিনি ছাড়া বাকি সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঋণ শোধের সময় বৃদ্ধি
করোনার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং পোশাকশ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য গত বছর উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছিল সরকার৷ সেটি পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে৷ অপরিশোধিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে আগামী মার্চ থেকে ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড পাবেন উদ্যোক্তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দুই মাস বেতন পাননি
এসনেহার আক্তার কাজ করেন মিরপুরের ভাই-বন্ধু ডিজাইন হাউজ নামের এক পোশাক কারখানাতে৷ তিনি জানান, লকডাউনের দুই মাস তাঁদের কোনো বেতন দেওয়া হয়নি, বরং বেতন চাইলে চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখানো হয়েছে৷ প্রতিবেশীদের সহযোগিতা না পেলে না খেয়ে মরতে হতো বলেও জানান তিনি৷