বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী দেশগুলো ছায়াযুদ্ধের ফাঁদে ফেলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নেয়৷ সাধারণ মানুষের সামাজিক বা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে একজনকে লেলিয়ে দেয় অন্যের বিরুদ্ধে৷
বিজ্ঞাপন
পক্ষপাতিত্ব মানুষের বৈশিষ্ট্য৷ কেউই পক্ষপাতিত্বের বাইরে নন৷ সেটা কেমন? ধরুন, আপনার চোখের সামনে একটি মানবশিশু ও একটি কুকুরছানা ডুবে যাচ্ছে৷ আপনি একজনকে বাঁচাতে পারবেন৷ কাকে বাঁচাবেন? নিশ্চয় মানবশিশুকে৷ কিংবা আপনার চোখের সামনে দু'টি মানবশিশু মারা যাচ্ছে৷ একজনকে আপনি চেনেন, তিনি আপনার কোনো আত্মীয়ের ছেলে বা মেয়ে এবং একজনকে আপনি চেনেন না৷ একজনকে বাঁচাতে হলে আমি নিশ্চিত আপনি পরিচিত শিশুটিকেই বাঁচাবেন৷ আর এমন যদি হয়, এদের একজনের মা বা বাবা আপনিই, তাহলে আরো নিশ্চিত করে বলা যায়, আপনি নিজের শিশুটিকেই বাঁচাবেন৷ রিচার্ড ডকিন্স তাঁর ‘দ্য সেলফিশ জিন' বইতে এর জীববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ ডারউইনের বিবর্তনবাদের ব্যাখ্য দিতে গিয়ে জিনের ‘প্রপাগেশন অফ মিউটেশন' প্রবণতাকে দায়ী করেছেন৷ প্রায় সাড়ে চার দশক আগে প্রকাশিত তাঁর এই তত্ত্ব হয়তো তিনি আজও বিশ্বাস করেন৷ তবে এমন আচরণের সামাজিক মনস্তত্ত্বও আছে৷
ইরানের শত্রু-মিত্র
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সর্ম্পকের অবনতি ঘটে৷ প্রভাব পড়ে বাকি দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগেও৷ ছবিঘরে দেখুন ইরানের আজকের শত্রু-মিত্র কারা, কার সঙ্গে তার কেমন সম্পর্ক৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Taherkenareh
যুক্তরাষ্ট্র: বন্ধু থেকে শত্রু
১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় মোসাদ্দেক সরকার উৎখাত হওয়ার পর ইরানের ক্ষমতায় আসেন রেজা শাহ পাহলভি৷ পরর্বতী ২৬ বছর ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ছিল একে অপরের বন্ধু৷ ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবে শাহ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই সম্পর্ক শত্রুতায় রূপ নেয়৷ ১৯৮০ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ একে অপরকে তারা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবেও অ্যাখ্যায়িত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Barria
ইসরায়েল: আন্তরিকতা থেকে অবিশ্বাস
তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া ২য় মুসলিম দেশ ইরান (১৯৫০ সাল)৷ রেজা শাহের শাসনকালে দুই দেশের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক ছিল৷ ১৯৭৯ সালে খোমেনি ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইসরায়েলকেও শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন৷ তেহরান পরমানু অস্ত্র বানাচ্ছে বলে ১৯৯০ সালের পর থেকে অভিযোগ করছে ইসরায়েল৷ দেশটির বিরুদ্ধে হামাস ও হেজবোল্লাহকে মদদ দেয় ইরান৷ অন্যদিকে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেকে সমর্থন দেয় ইসরায়েল৷
ছবি: AP
সৌদি আরব: ঘাড়ের কাছে শত্রু
মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা বিস্তারের লড়াইয়ে ইরানের চিরশত্রু সৌদি আরব৷ ১৯৭৯ সালে তেহরানের ক্ষমতায় পরিবর্তন আসার পর থেকেই তা প্রকট আকার ধারণ করেছে৷ দুই দেশ কখনও সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও চলছে তাদের ছায়াযুদ্ধ৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিবদমান গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেয়৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদির দুইটি তেলক্ষেত্রে হামলার পেছনে ইরান রয়েছে বলে দাবি করেছে রিয়াদ৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz
রাশিয়া: দখলদার থেকে মিত্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইরানে আস্তানা গাড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও কয়েকবছর দখলদারি বজায় রাখে তারা৷ শাহের শাসনামলেও সম্পর্ক ভাল ছিল না৷ এমনকি ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দামকে সহায়তা দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ তবে ১৯৯১ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে ইরান হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদার৷
ছবি: AP GraphicsBank
ইউরোপ: আলোচনায় সমাধান
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইউরোপের সঙ্গেও তেহরানের সম্পর্ক শীতল হয়ে ওঠে ৷ তবে প্রেসিডেন্ট আলী আকবর রাফসানজানির সময়ে এই সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়৷ পরমাণুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইইউ বরাবরই ইরানের সঙ্গে আলোচনার উপর জোর দিয়ে আসছে৷ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পরমাণু কার্যক্রম স্থগিতকরণ চুক্তি বাতিল করলেও ইউরোপের দেশগুলো তা এখনও বজায় রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
চীন: অস্ত্র আর বাণিজ্যের সম্পর্ক
১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে তেহরানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল চীন৷ বেইজিংয়ের শীর্ষ তিনটি অস্ত্র ক্রেতা দেশের একটি ইরান৷ অন্যদিকে ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন৷ যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর সেখান থেকে তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিতে হয়েছে চীনকে৷ কাসেম সোলেইমানিকে হত্যাকাণ্ডের পর চীন জানিয়েছে তেহরানের সঙ্গে বেইজিংয়ে সম্পর্ক অটুট থাকবে৷
ছবি: AP / DW-Fotomontage
ইরাক: সর্ম্পকে নতুন মোড়
সাদ্দাম হোসেনের চালানো হামলা থেকে শুরু হওয়া ইরাক-ইরান যুদ্ধ অব্যাহত ছিল আট বছর৷ তবে বর্তমানে বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে তেহরানের৷ দেশটির একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে ইরান৷ এইসব গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে৷
কথিত আছে লেবাননের হেজবোল্লাহ গোষ্ঠীর উত্থান ইরানের মাধ্যমেই৷ তাদের মূল টার্গেট মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শত্রু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আস্তানাগুলো৷ ২০১৮ সালে হেজবোল্লাহ ও তাদের জোট দেশটির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ যার মধ্য দিয়ে লেবাননের সরকারে ইরানের প্রভাব আরো বেড়েছে৷ এছাড়াও ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী আর ফিলিস্তিনের হামাস ইরানের মিত্রশক্তি৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
ভেনেজুয়েলা: শত্রু যখন একই
অবরোধ, অর্থনৈতিক সঙ্কট আর দুই দেশের একই শত্রু, ইরান-ভেনেজুয়েলাকে নিয়ে এসেছে কাছাকাছি৷ ২০০১ সালে ইরানের মোহাম্মদ খাতামি আর ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক এই সম্পর্কের গোড়াপত্তন৷ আহমদিনেজাদ ক্ষমতায় আসার পর তা আরো নিবিড় হয়৷ একক শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে দুইদেশ বেশি কিছু চুক্তিও করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/ABACA/Iran Presidency
বাংলাদেশ: পাঁচ দশকের সম্পর্ক
১৯৭১ সালের পর থেকে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক৷ বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের রাষ্ট্রীয় সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ১৯৯৫ সালে প্রেসিডেন্ট রাফসানজানি ঢাকা এসেছিলেন৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ৷ অক্টোবরে বাকুতে ন্যাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসার রুহানি ‘সাইডলাইন বৈঠক’ করেন৷ গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ১.৭৭ কোটি ডলারেরর পণ্য রপ্তানি করেছে দেশটিতে৷
ছবি: Fars
10 ছবি1 | 10
ওপরের এই দুই শিশুকে যদি ধর্মে বিভাজন করা হয়, কিংবা ভাষায়, সংস্কৃতিতে, বর্ণে, তাহলেও মানুষের সাধারণ পছন্দগুলো যার যার বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি বা ধর্ম অনুযায়ীই হবে৷ সেখানে পক্ষপাতিত্ব থাকবে৷ আমাদের চারপাশের পৃথিবীতে এই পক্ষপাতিত্ব একদম স্পষ্ট৷ এটা আজ থেকে নয়৷ আদিকাল থেকে৷
মানুষের এই পক্ষপাতিত্বমূলক বৈশিষ্ট্যে সবচেয়ে বড় উপকার হয়েছে হয়তো কর্তৃত্ববাদীদের৷ খুব সহজেই তারা বিভাজন ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন এবং এর সুযোগে বেড়েছে তার প্রভাব৷ এই যেমন, শিয়া-সুন্নি বিভাজন৷ মুসলিমদের মাঝে এই বিভেদ মূলত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক৷ এর ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে৷ কিন্তু এই বিভাজন কেমন করে দেখুন ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিক আফগানিস্তানে কিংবা পাকিস্তানে৷ যেই বাংলাদেশে শিয়া-সুন্নি বিভাজন নিয়ে কখনো বিদ্বেষমূলক আলোচনা দেখিনি, সেখানেও ২০১৫ সালে হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ অর্থাৎ যুদ্ধ বা সংঘাত চলছে এক জায়গায়, তার কালো ছায়া পড়েছে অন্যখানে৷
পৃথিবীর এই মেরুকরণের রাজনীতির ফায়দা সবসময় নিয়েছে বড় বড় যুদ্ধবাজ ও কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রগুলো৷ এই যেমন মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি গোষ্ঠীর বিবাদ বা কর্তৃত্বের লড়াই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, যা শেষ পর্যন্ত এসে ঠেকেছে ইরান-সৌদিআরব লড়াইয়ে৷ একদিকে সুন্নি অধ্যুষিত রাষ্ট্র সৌদিআরব ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলো এবং অন্যপ্রান্তে শিয়া অধ্যুষিত রাষ্ট্র ইরান, গোষ্ঠী লেবাননের হেজবুল্লাহ ও ইরাকের শিয়াপ্রধান সরকার৷ এই মেরুকরণে সৌদিআরবের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অধিকাংশ সময়েই ইরানবিরোধী৷ তবে সাদ্দাম হোসেনের পতনের মধ্য দিয়ে ইরাকে শিয়া শক্তির উত্থানের পেছনে আবার যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আছে৷ এই সাদ্দাম হোসেনকে মদত দিয়েই অবশ্য ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহযোগিতা করেছিল সেই একই যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷
সে যাই হোক, জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে যখন এমন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে, তখন বাংলাদেশে শিশুদের নাম রাখা হচ্ছে ‘সাদ্দাম'৷ কাউকে পিঠ চাপড়ে বলা হচ্ছে, ‘বাপের ব্যাটা সাদ্দাম'৷ অর্থাৎ সুন্নি অধ্যুষিত বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই এই সুন্নি শাসককে একজন নায়কের মর্যাদা দিয়েছেন৷ সৌদি আরবের শাসকেরা যতই ইয়েমেনে মুসলিমদের হত্যা করুন না কেন, কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম ঐক্যে বাধা হয়ে দাঁড়াক না কেন, কিংবা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো উচ্চবাচ্য না করুন না কেন, তাদেরকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে রাজি নন বাংলাদেশের মুসলিমরা৷ এখন যখন ইরানের ওপর আঘাত এসেছে, তখনও শিয়া অধ্যুষিত রাষ্ট্র বলে হয়তো অনেকে এর বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করছেন না৷ অথচ ইতিহাস বলছে, শিয়া শাসকরাও এখানে ছিলেন৷ বলা হয়, সুলতানি আমল থেকে শুরু করে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পর্যন্ত অনেক শাসকই ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ের৷
তবে সুন্নি ইসলামের প্রভাবই বেশি এখানে, তবে তা প্রধানত সুফিদের হাত ধরে৷ হিন্দুধর্মের কাস্ট বা বর্ণপ্রথার যাঁতাকলে জর্জরিত এখানকার বাসিন্দারা মানুষ হিসেবে সবাই সমান হয়েছেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে৷ সুফি ইসলামের সহনশীলতা পরবর্তীতে কেমন করে অতিরক্ষণশীলতা ও অসহনশীলতায় পরিণত হয়েছে তা ভেবে দেখা দরকার৷ কারা তাদের অসহনশীলতার রাজনীতি এখানে রপ্তানি করছেন? তবে বাংলার মানুষ মোটা দাগে অসাম্প্রদায়িক৷ তারা শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে অন্য গ্রহের মানুষ বলে মনে করেন না৷ এটা শুধু শিয়াদের জন্য নয়, সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যই এই সহনশীলতা বজায় রাখা দরকার৷
সবাইকে যার যার ধর্ম পালন করতে যেমন দিতে হবে, তেমনি বেশি প্রয়োজন সকলকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা৷ কারণ পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র তাদের রাজনৈতিক বা কর্তৃত্বপরায়ণ মতবাদ ছড়িয়ে দিয়ে ফায়দা লোটার জন্য ধর্মের ওপর চেপে বসে৷ আর সাধারণ ধর্মপরায়ণ মানুষগুলো সহজমনে এই চক্রে বাধা পড়েন৷ তাই অন্য কোনো যুদ্ধের ছায়াযুদ্ধে আমরা যেন নিজেদের জড়িয়ে না ফেলি তাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে৷
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র: বন্ধু থেকে শত্রু
একটা সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু ছিল ইরান৷ সেখান থেকে চিরশত্রুতায় রূপ নিয়েছে তাদের সম্পর্ক৷ কীভাবে এই মেরুকরণ ঘটল দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: gemeinfrei
ইরানের সরকার উৎখাত
১৯৫১ সালে ইরানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মোসাদ্দেক৷ তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে দেশটির তেল সম্পদ জাতীয়করণ করেন৷ ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্স এবং এবং মার্কিন সিআইএ ক্যু ঘটিয়ে মোসাদ্দেককে উৎখাত করে৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media Co. Ltd
শাহের ক্ষমতা আরোহন
মোসাদ্দেকের পতনের পর ক্ষমতায় ফেরেন ইরানের নির্বাসিত শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভি৷ পরবর্তী দুই দশক ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গড়ে ওঠে নিবিড় বন্ধুত্ব৷ এক পর্যায়ে মার্কিন অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতায় পরিণত হয় পারস্য উপসাগরের দেশটি৷ যুক্তরাষ্ট্রের কোন অনুরোধই এসময় ফেলেননি শাহ, এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার৷
ছবি: gemeinfrei
ইসলামী বিপ্লব
শাহের আমলে ইরানের তেল ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলোর৷ ইরানি জনগণের মধ্যে রাজতন্ত্রবিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে৷ ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন রেজা শাহ পাহলভি৷
ছবি: Getty Images/Afp
খোমেনির ফেরা
দুই সপ্তাহ পর দেশে ফেরেন নির্বাসিত নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি৷ তিনি ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লবের’ নেতৃত্ব দেন৷ কিছুদিনের মধ্যেই দেশটির ছাত্ররা তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে৷ ৪৪৪ দিনের জন্য বন্দী হয় ৫২ অ্যামেরিকান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AFP/G. Duval
প্রথম অবরোধ
বন্দী সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় ইরানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার৷ দেশটিতে মার্কিন পণ্য রপ্তানি ও তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ জব্দ করা হয় ইরানের ১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ৷ বের করে দেয়া কূটনীতিকদের৷
ছবি: Imago/ZumaPress
ইরাক-ইরান যুদ্ধ
এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ইরান আক্রমণ করে সাদ্দাম হুসেন৷ যুদ্ধ চলাকালে ইরাককে গোয়েন্দা প্রতিবেদন, অর্থ, সামরিক প্রযুক্তি এমনকি রাসায়নিক অস্ত্রও সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এই যুদ্ধ চলে আট বছর৷ এসময় লেবাননে ইরানের সমর্থিত হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর হামলায় বৈরুতের একটি ব্যারাকে ২৪৪ অ্যামেরিকান নিহত হয়৷
ছবি: picture-alliance/Bildarchiv
ইরানের বিমানে হামলা
১৯৮৮ সালে পারস্য উপসাগরে ইরানের একটি যাত্রিবাহী বিমানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র৷ নিহত হয় ইরানের ২৯০ জন যাত্রী৷ একে দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান৷ এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক আরও তিক্ততায় রূপ নেয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Taherkenareh
নতুন অবরোধ
ইরান সন্ত্রাসীদের মদত দেয়ার পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, এমন অভিযোগে দেশটিকে একঘরে করার জন্য প্রচার চালায় ক্লিনটন প্রশাসন৷ ১৯৯৬ সালে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ইরানে বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন৷
ছবি: AP
সম্পর্ক সহজীকরণ
১৯৯৮ থেকে পরবর্তী দুই বছর মোহাম্মদ খাতামি সরকারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগ্রহ প্রকাশ করে ক্লিনটন প্রশাসন৷ এজন্য রোডম্যাপও ঘোষণা করা হয়৷ খাতামি দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রস্তাব দেন৷ ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়৷
ছবি: AP
পরমাণু আকাঙ্ক্ষা
২০০৫ সালে আহমদিনেজাদের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের আবারও অবনতি ঘটে৷ ইরান এসময় পরমাণু কার্যক্রম শুরু করে৷ বুশ ইরানকে সন্ত্রাসের রপ্তানিকারক হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন৷ তবে ২০১৫ সালে ওবামা যুক্তরাষ্ট্র ও জোট রাষ্ট্রগুলোর সাথে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম স্থগিতকরণ চুক্তিতে বৈরিতার সেই বরফ কিছুটা গলে৷
ছবি: AP
যুদ্ধের দামামা
২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে পরমানু চুক্তি বাতিল করে ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ইরানের উপর চাপ প্রয়োগ করতে নতুন করে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে ওয়াশিংটন৷ দুই দেশের প্রক্সি ওয়ার অনেকটাই যুদ্ধাবস্থায় রূপ নিয়েছে চলতি বছরের তিন জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জেনারেল কাসিম সোলেইমানিকে হত্যার পর৷