প্রায় ১৩ ঘণ্টা বিতর্কের পরে পাশ হলো ওয়াকফ বিল। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা হবে।
লোকরসভায় পাস হলো ওয়াকফ বিল। ছবি: Ravi Batra/Zuma/IMAGO
বিজ্ঞাপন
লোকসভায় ৫৬ ভোটের ব্যবধানে পাস হলো সংশোধিত ওয়াকফ বিল। ২৮৮ জন সাংসদ বিলের পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে দেন ২৩২ জন সাংসদ। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা হবে।
বিতর্কিত সংশোধন
বুধবার লোকসভায় বিলটি পেশ করেন সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু। তার আগে সরকারের অবস্থানের কথা ব্যাখ্যা করেন অমিত শাহ। এই ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ১৯৯৫-এর ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত আইন সংশোধন করবে। ২০১৩তেও এই আইনের সংশোধন হয়। মনমোহন সিং-এর মন্ত্রিসভায় বিনা বিতর্কে সর্বসম্মতিতে সেই বিল পাশ হয়।
এখন বিতর্ক এই বিলটির পিছু ছাড়ছে না। সংশোধিত বিল অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে এবং ওয়াকফ বোর্ডে দুই জন মুসলমান নন এমন সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও সম্পত্তি প্রদানের আরেকটি প্রাথমিক শর্ত হলো, অন্তত পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলে একমাত্র ওয়াকফকে সম্পত্তি দেয়া যাবে।
বিরোধীরা একজোট
বিরোধীরা এই বিলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিরোধী ইন্ডিয়া জোট এককাট্টা হয়ে এই বিলের বিরোধিতা করেছে। তারা সংশোধিত বিলটিকে 'অসাংবিধানিক' আখ্যা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি বা জেপিসি বিরোধীদের মতামতে কর্ণপাত করেনি।
কংগ্রেস জানিয়েছে, সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এআইএমআইএম-এর আসাদউদ্দিন ওয়াইসি জানান, তিনি প্রতীকী পদক্ষেপে মহাত্মা গান্ধীর অনুসরণে এই আইন ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানালেন। তিনি বলেন, "২০১৩তে যখন লালকৃষ্ণ আডবানি, সুষমা স্বরাজের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে বিলের সংশোধনী পাশ হয় তখন কোনো বিতর্ক হয়নি।" তার প্রশ্ন, "তারা কি ভুল ছিলেন?"
বিক্ষোভ সত্ত্বেও ওয়াকফ বিল পাস করাতে চায় মোদী সরকার
সংসদের বাজেট অধিবেশন চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তার মধ্যে ওয়াকফ বিল পাস করাতে চায় সরকার। দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু।
নরেন্দ্র মোদী সরকার বর্তমান বাজেট অধিবেশনেই ওয়াকফ বিল পাস করাতে চায়। সংসদের অধিবেশন চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তার মধ্যেই বিল পাস হয়ে যেতে পারে। সম্ভবত ঈদের পরই বিল পাস করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।
ছবি: Indian National Congress party
দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু
ওয়াকফ বিল নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড(এআইএমপিএলবি)। বুধবার পাটনায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। ২৯ তারিখ অন্ধ্রপ্রদেশে আন্দোলন হবে। কিছুদিন আগে দিল্লিতে এই আন্দোলন হয়েছে।
ছবি: Sonu Mehta/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance
আমন্ত্রণ সত্ত্বেও নীতীশ কুমার যাননি
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এআইএমপিএলবি নেতারা। কিন্তু নীতীশ কুমার যাননি। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে জোটসঙ্গি বিজেপি-কে চটাতে চাননি নীতীশ। তিনি মুসলিম ভোট পেতে আগ্রহী হলেও বিক্ষোভে যাননি বা দলের কাউকে পাঠাননি।
ছবি: Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance
ছিলেন লালুপ্রসাদ ও তেজস্বী
বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব ও তার ছেলে তেজস্বী যাদব বিক্ষোভে গিয়েছিলেন। তেজস্বী বলেন, অসুস্থ শরীরেও লালুপ্রসাদ যাদব তার সমর্থন জানাতে এসেছেন। আরজেডি সংসদে এবং বিহারে এই বিলের বিরোধিতা করবে। তারা এই অসাংবিধানিক বিল মানবে না। জনসুরাজ পার্টির নেতা প্রশান্ত কিশোরও বিক্ষোভে অংশ নেন।
ছবি: Hindustan Times/picture alliance
কংগ্রেসের বিরোধিতা
কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই বিলের বিরোধিতা করবে। কারণ, তারাও মনে করে, এই বিল সংবিধানসম্মত নয়। দিল্লির বিক্ষোভে কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ-সহ একাধিক নেতা যোগ দিয়েছিলেন।
ছবি: Sonu Mehta/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance
আপত্তি কোথায়
ওয়াকফ বিলে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে অন্ততপক্ষে দুই জন মুসলিম নন, এমন সদস্য থাকবেন। তাছাড়া অন্তত একজন করে শিয়া, সুন্নী এবং অনগ্রসর মুসলিমদের প্রতিনিধি থাকবেন। সার্ভে কমিশনারের পদটি বাতিল করা হয়েছে। তার জায়গায় জেলার কালেক্টরকে সার্ভে বা সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফের তালিকা থেকে বাদ যাবে। এই বিষয়ে কালক্টর সিদ্ধান্ত নেবেন। এই নিয়ে আপত্তি বিরোধীদের।
ওয়াকফ নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির প্রধান ও বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল বলেছেন, এআইএমপিএলবি ওয়াকফ বিল নিয়ে রাজনীতি করছে। তারা মুসলিমদের ভুল বোঝাচ্ছে। বিল পাস করার জন্য পেশ করা হয়নি। তারা পাটনায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
ছবি: AFP
বিল কি পাস হবে?
ওয়াকফ বিল পাস করাতে সরকারের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগে। লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই জায়গাতেই এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে সরকারের পক্ষে বিল পাস করাতে অসুবিধা হবে না। নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু বিলের বিরোধিতা করলে সরকার অসুবিধায় পড়তো। তারা প্রকাশ্যে তা করছেন না।
ছবি: Mahesh Kumar A./AP Photo/picture alliance
মোদীর ঈদ উপহার
বিজেপি ইতিমধ্যে গরিব মুসলিমদের মোদী কা সওগাত বা মোদীর উপহার দিতে শুরু করেছে। ৩২ লাখ পরিবারকে এই উপহার দেওয়া হবে। একটি প্যাকেটে খেজুর, শুকনো ফল, পুরুষদের কুর্তা-পাজামা ও মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের পিস থাকছে সেই উপহারে।
ছবি: Hindustan Times/Sipa/picture alliance
ওয়াকফের সম্পত্তির পরিমাণ
ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে আট দশমিক সাত লাখ সম্পত্তি আছে। নয় দশমিক চার লক্ষ একর জমি ওয়াকফ সম্পত্তি। তার বর্তমান দাম আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ভারতে মোট ৩২টি ওয়াকফ বোর্ড আছে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে দুইটি শিয়া ওয়াকফ বোর্ড আছে।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
10 ছবি1 | 10
অন্যদিকে, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ন্ত ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলমান সদস্য এবং ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের সিইও পদে আমলা নিযুক্ত করার সমালোচনা করে বলেছেন, "সরকার কি মন্দির কমিটিতে অ-হিন্দুদের থাকার অনুমতি দেবে?"
সরকারের দাবি
সরকার দাবি করে এই বিলটি সম্পত্তি সংক্রান্ত আইন সংশোধন করবে। এর সঙ্গে 'ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই'। বক্তব্য রাখার সময় অমিত শাহ একটি ওয়াকফ সম্পত্তির একটি দীর্ঘ তালিকা দেখান। তাতে মন্দির বা অন্যান্য ধর্মের জমি প্রদানের খতিয়ান আছে। তিনি বলেন, "আপনি অন্যায় করে কারো সম্পত্তি দান করতে পারেন না। নিজের সম্পত্তিও দান করতে পারেন।"
কিরণ রিজিজু বলেন, "আমরা যদি আজ এই আইনের সংস্কার না করি তাহলে যেখানে এই বিতর্ক হচ্ছে, সেই সম্পত্তি ওয়াকফের কাছে চলে যাবে।"