আবার দুই দশক পরে পাকিস্তানে পঙ্গপালের ঝড়৷ পরিস্থিতির অবনতির ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জারি করেছেন জরুরি অবস্থা৷
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক হারে পঙ্গপাল এস পড়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানের চাষ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন৷ শুক্রবারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একটি বিবৃতিতে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছেন৷
তথ্যমন্ত্রী ফিরদৌস আশিক আওয়ান বলেন, ‘‘প্রায় দুই দশক পর আমরা আবার পঙ্গপালের উপদ্রবের মুখোমুখি৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি৷''
পাকিস্তানের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মন্ত্রী মখদুম খুসরো বখতিয়ার বলেন, ‘‘পঙ্গপাল ঠেকাতে আমরা তিন লাখ একর এলাকাজুড়ে কীটনাশক ছড়িয়েছি৷ জেলা কর্তৃপক্ষ ও নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে হাত মিলিয়ে সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনাও লড়ছে ফসল বাঁচাতে৷''
এর আগে, ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানে এরকমই একদল পঙ্গপাল ঢুকে পড়ে ও ফসলের ক্ষতি করে৷
পোকামাকড় যেভাবে আমাদের উপকার করছে
দুনিয়াতে যদি পোকামাকড় না থাকে তাহলে আমাদের জন্য কফি তো থাকবেই না, বরং ক্রমশ খাদ্যাভাবে আমরা হয়ে যাবো দুর্বল৷ গবেষকরা বলছেন পোকামাকড়ের দশ শতাংশ প্রজাতি আগামী কয়েক দশকের মধ্যে হারিয়ে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
পোকামাকড়ের পৃথিবী
সুন্দর প্রজাপতি থেকে বিরক্তিকর মশা অবধি পোকামাকড়ের জগতটা খুবই বৈচিত্র্যময়৷ এখন অবধি যতটা জানা গেছে তাতে পোকামাকড়ের প্রায় দশলাখ প্রজাতি রয়েছে এবং আরো অনেক প্রজাতি এখনো আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে৷ তবে সম্প্রতি বায়োলজিক্যাল কনজার্ভেশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, পোকামাকড়ের চল্লিশ শতাংশের বেশি প্রজাতি এখন হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Xinhua
দক্ষ পরাগবহণকারী
গমের মতো শষ্য পরাগায়নের জন্য বাতাসের উপর নির্ভরশীল হলেও অনেক খাদ্যশস্য আছে যেগুলো পরাগায়নের জন্য পোকামাকড়ের উপর নির্ভরশীল৷ ফলে তারা হারিয়ে গেলে কৃষকরা বিপাকে পড়বেন৷ বছরে বিশ্বের ২৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ খাদ্য উৎপাদন পরাগায়নের উপর নির্ভরশীল৷ বিপদের কথা হচ্ছে, মৌমাছির অভাবের কারণে চীনের কিছু খামারে এখন আপেলসহ বিভিন্ন গাছের পরাগায়নে শ্রমিক ব্যবহার করতে হচ্ছে৷ ফলে খাবারের দাম বেড়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
খাদ্যের অভাব দেখা দেবে
পরাগবাহী পোকামাকড় হারিয়ে গেলে অনেক শাকসবজি এবং ফলমূল উৎপাদন আর সম্ভব হবে না৷ ফলে আমাদের খাবার টেবিলে খাবারের পরিমাণ কমে আসবে৷ এমনকি চকলেট এবং কফির সংকটও দেখা দেবে৷
ছবি: AFP/R. Arboleda
প্রকৃতি পরিষ্কার রাখে যারা
গুবরে পোকার মতো অনেক পোকামাকড় মৃত গাছপালা, মরদেহ এবং মল পচতে সহায়তা করে৷ এই পোকামাকড় না থাকলে পচন প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘায়িত হবে, যা পরিবেশ এবং মানুষ - উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হবে৷
ছবি: Imago Images/blickwinkel
অন্য প্রাণীর খাবার
বিভিন্ন উভচর, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখির মূল খাবার পোকামাকড়৷ ফলে পোকামাকড় কমলে তাদের ওপর নির্ভরশীল প্রাণীও কমতে থাকবে৷ পক্ষীবিদরা মনে করেন, যুক্তরাজ্যে পাখির বিভিন্ন প্রজাতি কমে যাওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে পোকামাকড় কমে যাওয়া অন্যতম কারণ৷
ছবি: Imago Images/blickwinkel
কীটপতঙ্গ বাড়বে
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া অনেক পোকামাকড়ের জন্য কঠিন ব্যাপার৷ যেমন ভোমরা মূলত ঠান্ডা এবং স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে অভ্যস্ত৷ ফলে অপেক্ষাকৃত গরম আবহাওয়ায় টিকে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে৷ আবার ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যেতে পারে, যা কৃষকের বিপদ বাড়াবে৷
ছবি: Imago Images/Design Pics/J. Wigmore
পরাগবহণকারীদের কোনো স্থান নেই
ইউরোপে পোকামাকড় কমে যাওয়ার পেছনে অতিরিক্ত চাষাবাদ এক কারণ৷ সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পোকামাকড় কমে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/N. Safo
পোকামাকড়ের বসতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে একফসলী চাষের পোকামাকড়বান্ধব কৃষি নীতি গ্রহণ করলে পোকামাকড় রক্ষা সম্ভব হবে৷ পাশাপাশি বাগানে এবং শহুরে অঞ্চলে ফুল গাছ লাগিয়ে পোকামাকড় টিকিয়ে রাখায় ভূমিকা রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/fotototo
8 ছবি1 | 8
অনেকটা ঘাসফড়িঙের মতো দেখতে এই পঙ্গপালগুলি মূলত মরুভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায়৷ ইরান থেকে জুন মাসে এই পঙ্গপালের ঝাঁক এলে তা গম, ধান, পাট ও ভুট্টাক্ষেতগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি করে৷
ইতিমধ্যে, এমনই পঙ্গপালের উপদ্রবে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতেরও একাংশ৷ পাকিস্তান ছাড়া সোমালিয়াতেও জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা৷