১৭ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার পঞ্চম দফায় ১২টি রাজ্যের ১২১টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ শেষ হয় মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে৷ ভোটের এই পর্বে যে দল বেশি আসন দখল করতে পারবে দিল্লির মসনদ দখলে তারা এগিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
নয় দফা ভোটের পঞ্চম দফায় ১২টি রাজ্যের ১২১টি আসনে ভোট হয় বৃহস্পতিবার৷ ১২টি রাজ্য হলো: হিন্দি বলয়ের বিহার ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, মনিপুর, ওড়িষা, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু-কাশ্মীর৷ ভোটদাতার সংখ্যা ১৯ কোটি ৭০ লাখ৷ ভোট পড়ে দ্রুত ও চটপট৷ ২০০৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনের চেয়ে এবারে ভোটের হার বেশি হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে ভোটের হার প্রাথমিক হিসেবে ৭৪ শতাংশের মতো৷ মনিপুরে ৮০ শতাংশ৷ ওড়িষায় ৫৫ শতাংশের মতো৷ উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশে যথাক্রমে ৫৩ ও ৫২ শতাংশের মতো৷ ভোট পর্ব একেবারে নির্বিঘ্নে হয়েছে বলা যায় না৷ ঝাড়খন্ডে মাওবাদীদের বিস্ফোরণে পাঁচ ব্যক্তি আহত হন, তার মধ্যে চারজন নিরাপত্তা কর্মী৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
নির্বাচনে ‘মোদী-হাওয়া' ভূমিগত বাস্তবতায় কতটা প্রতিফলিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ যেমন, কর্নাটকে মোদী হাওয়া শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ, গ্রামাঞ্চলে নয়৷ গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দল বিজেপি ধরাশায়ী হয়৷ এবার সংসদীয় নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে বড় ভূমিকা নিয়েছে সংঘপরিবার অন্তত গোড়ার দিকে৷ ফলে ভোটযুদ্ধের মেরুকরণ উঠে এসেছে পাদপ্রদীপে৷ বিজেপির নির্বাচনি ইশতাহারে পুরানো বিতর্কিত ইস্যুগুলি স্থান পেয়েছে৷ যেমন জম্মু-কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা রদ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং রাম মন্দির ইস্যু৷ কর্নাটক তাই হবে মোদী হাওয়ার পরীক্ষাভূমি৷ কংগ্রেসের হয়ে মোদী বধে ময়দান তোলপাড় করে চলেছেন গান্ধী পরিবারে তিন মহারথী৷ সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা বাড্রা৷ গলা ফাটিয়ে বলছেন মোদীর ধর্মীয় মেরুকরণকে প্রশ্রয় দেবেন না৷ ভারতের আমজনতা চায় ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী দেশ৷ আর মোদীর রাজনীতি চায় দেশকে ভাগ করতে৷ প্রচার এখন ব্যক্তিমুখী৷ দলীয় নীতি বা মতবাদের চেয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ বড় হয়ে উঠেছে৷
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী৷ আঙুল তুলে বলেছেন রাজীব গান্ধীর জমানায় পঞ্চায়েত থেকে সংসদ সবই ছিল কংগ্রেসের দখলে৷ অথচ তিনিই বলে গেছেন দিল্লি এক টাকা খরচ কলে গরিবদের হাতে পৌঁছাতো মাত্র ১৫ পয়সা৷ তাহলে ৮৫ পয়সা কোথায় যেত? কার পকেটে যেত? প্রশ্ন তোলেন মোদী৷
তবে পঞ্চম দফার ভোটপর্ব যেহেতু সংখ্যার দিক থেকে সর্ব বৃহৎ, তাই এই পর্বে যে দল বেশি আসন পাবে সেই দল দিল্লির মসনদ দখলে অনেকটা এগিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷ দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অমিতাভ দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, বিজেপি ভালো না কংগ্রেস ভালো – এই প্রশ্ন অবান্তর৷ আসলে মানুষ চায় একটা পরিবর্তন৷ ১০ বছরের কংগ্রেস শাসনের পরীক্ষা হয়ে গেছে৷ এবার বিজেপিকে পরীক্ষা করতে দোষ কী? যেমনটা পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে৷ মমতাকে ক্ষমতায় আনা হয়েছে, তার অর্থ এই নয় যে মমতার সবই ভালো৷ আসলে বামফ্রন্টের আর কিছু দেবার ছিল না৷