পঞ্চম রাতেও সীমান্তে গুলি, প্রচুর সেনা মোতায়েন ভারতের
২৯ এপ্রিল ২০২৫
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পঞ্চম রাতেও গুলি চললো। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের সেনা গুলি চালাতে শুরু করে। ভারত তার জবাব দিয়েছে।
কাশ্মীরের বিভিন্ন সেক্টরে প্রতি রাতে গুলির লড়াই চলছে। ভারতের অবিযোগ, পাকিস্তানই প্রথমে গুলি চালাচ্ছে। ছবি: Nasir Kachroo/NurPhoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় সেনার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনোরকম উসকানি ছাড়াই পাকিস্তানের সেনা স্মল আর্মস ফায়ারিং শুরু করে। কুপওয়ারা ও বারামুলায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এই গুলি চলে। আখনুরেরও গুলি চলে। ভারতীয় সেনা তার প্রত্যুত্তর দেয়।
গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি রাতেই কাশ্মীর সীমান্তে গুলি চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ হতাহত হননি। পহেলগামে ২৫ জন পর্যটক এবং একজন সহিসের মৃত্যুর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে ভারত। পাকিস্তানও জানিয়েছে, তারা সিমলা চুক্তি-সহ ভারতের সঙ্গে সব চুক্তি সাসপেন্ড করছে। তারপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখে প্রতিরাতে গুলির লড়াই চলছে।
কাশ্মীর থেকে ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, প্রতিদিন রাত বারোটার পর গুলি চলছে। ভোরে থেমে যাচ্ছে। তবে শুধু গুলিই চলেছে। এছাড়া সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করছে ভারত। ব্যাপক মুভমেন্ট হচ্ছে।
নিউজ১৮-র রিপোর্ট বলছে, ২১৯টি দেশের মধ্যে ভারত থেকে ওষুধ নেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান ৩৮তম স্থানে আছে। ২০২৪ সালে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ডলারের ওষুধ কিনেছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তান এই ওষুধ সরাসরি কেনে না। ভারত থেকে আমিরাতে ওষুধ যায়। সেখান থেকে তারা এই ওষুধ কেনে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা মনে করেন, পাকিস্তানে ওষুধ বিক্রি বন্ধ হলে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের খুব একটা ক্ষতি হবে না। কিন্তু পাকিস্তানে তার প্রভাব পড়বে। তাদের অনেক বেশি দাম দিয়ে ওষুধ কিনতে হবে।
সন্ত্রাসের ভয় উপেক্ষা করে আবার কাশ্মীরে পর্যটকরা
পহেলগামের ঘটনার পর দলে দলে কাশ্মীর ছেড়েছিলেন পর্যটকরা। আবার তারা কাশ্মীর যাচ্ছেন। আবার বুকিং শুরু হয়েছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সোনমার্গে বাঙালি পর্যটক
কাশ্মীরের সোনমার্গে গিয়ে দেখা হলো আশিস পাল, প্রিয়াঙ্কা পালদের সঙ্গে। পহেলগামের ঘটনার পর তারা কাশ্মীর এসেছেন। এর আগেও তারা কাশ্মীর এসেছেন। তারা বললেন, ''কাশ্মীরের মানুষ খুব ভালো। অতিথিবৎসল। দুর্ঘটনা যে কোনো জায়গাতেই ঘটতে পারে। তাই আমরা ভয় পাচ্ছি না। এখনো পর্যন্ত আমাদের কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটক
শুধু বাঙালি নয়, সোনমার্গে গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু থেকেও পর্যটকরা এসেছেন। সকলেই বলছেন, তারা কোনো সমস্যায় পড়েননি। তারা উপভোগ করছেন ভূস্বর্গকে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
প্রথমে বুকিং বাতিল হয়েছিল
পহেলগামে ২২ তারিখের ঘটনার পর সোনমার্গের হোটেলেও বহু বুকিং বাতিল হয়েছে। সোনমার্গও খৈালি হয়ে গেছিল। কিন্তু গত দুই তিন ধরে নতুন করে বুকিং হচ্ছে। পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। ঘটনার পর খালি হয়ে যাওয়া সোনমার্গ তাই আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে ।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ঘোড়াচালক ও ব্যবসায়ীরা যা বলছেন
ঘোড়াচালক ও ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন, অনেকদিনের জন্য তাদের রুটিরুজির পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পর্যটকরা আবার আসতে শুরু করায়, তারাও আশাবাদী, পরিস্থিতি আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ট্যাক্সিচালকরা যাত্রী পাচ্ছেন
পহেলগাম যেমন পুরো খালি হয়ে গেছে। ট্যাক্সিচালক, হোটেল ব্যবসায়ী-সহ পর্যটকদের উপর নির্ভর করা মানুষদের মাথায় হাত। কিন্তু সোনমার্গে ট্যাক্সিচালকরা যাত্রী পাচ্ছেন। আগের মতো না হলেও পাচ্ছেন। তারা কিছুটা স্বস্তিতে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ঘোড়া থেকে বাইক
ঘোড়াওয়ালারা যাত্রা পাচ্ছেন। ফলে তারাও খুশি। অনেকে বাইক ভাড়া করে ঘুরছেন। এমন একাধিক বাইক আরোহীকে দেখা যাচ্ছে সোনমার্গের রাস্তায়।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
অসাধারণ সোনমার্গ
সোনমার্গের প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ। চারপাশে বরফের পাহাড়। এখান থেকে চলে গেছে কার্গিলের রাস্তা। এখান থেকে অমরনাথ যাত্রাও হয়। জোজিলা পাসও ঘুরে আসেন কিছু পর্যটক।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
গুলমার্গ, খিলানমার্গেও পর্যটক
রোববার গুলমার্গেও পর্যটকদের দেখা গেছে। তবে শ্রীনগর এখনো ফাঁকা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
শ্রীনগর বিমানবন্দরের অধিকর্তা জাভেদ অঞ্জুম ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ২২ তারিখের পর শ্রীনগর বিমানবন্দরে পর্যটকদের আসা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তবে ২৭ এপ্রিল যাত্রীর সংখ্যা সামান্য বেড়েছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
9 ছবি1 | 9
জাতিসংঘে ভারতীয় দূতের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘে ভারতের সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি যোজনা প্যাটেল বলেছেন, ''পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার দেশ গত এক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করে। এই স্বীকারোক্তিতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে তার এই কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তান একটি দুবৃত্ত রাষ্ট্র এবং তারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহ দিচ্ছে।''
তিনি জানিয়েছেন, ''গোটা বিশ্ব শুনেছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কী বলেছেন। এই প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, তিনি পাকিস্তান আঞ্চলিক স্থিতি নষ্ট করতে চাইছে। বিশ্ব এখন চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না।''
তার অভিযোগ, ''পাকিস্তান বিশ্বজুড়ে ভারত-বিরোধী মিথ্যা প্রচারে নেমেছে।'' ভিকটিমস অফ টেররিজম অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্কের অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
কাশ্মীরে সক্রিয় প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো
বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরে প্রধান কোন কোন জঙ্গি গোষ্ঠী সংঘাতে জড়িত? এসব গোষ্ঠীর স্থানীয় প্রভাব কেমন এবং বিশ্বব্যাপী তাদের জিহাদি সংযোগই বা কতটা?
ছবি: Saqib Majeed/ZUMAPRESS/picture alliance
দ্য় রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)
২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়। এর পরই গড়ে ওঠে দ্য় রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট- টিআরএফ। 'কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স' নামে সাম্প্রতিক পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে গ্রুপটি। টিআরএফ নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন দাবি করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা মনে করে। টিআরএফ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
ছবি: Nasir Kachroo/NurPhoto/picture alliance
লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)
পাকিস্তান-ভিত্তিক ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা- এলইটি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের অবসান। ২০০২ সালে পাকিস্তান নিষিদ্ধ করলেও সংগঠনটি এখনও সক্রিয়। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলাসহ ভারতে বেশ কয়েকটি হামলায় দায়ী করা হয় এলইটি-কে। এলইটি নানা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করে এবং যোদ্ধাদের পাকিস্তান সরকারকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে নিষেধ করে।
ছবি: Rahat Dar/dpa/picture alliance
হিজবুল মুজাহিদীন (এইচএম)
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল মুজাহিদিন- এইচএম একসময় কাশ্মীরের সবচেয়ে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই গোষ্ঠীর প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানি এবং ২০১৭ সালে তার উত্তরসূরি সাবজার আহমেদ ভাটসহ প্রধান কমান্ডারদের মৃত্যুর পর থেকে এর কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে গেছে।
ছবি: picture-alliance/ dpa
জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম)
একটি হাইজ্যাক করা বিমানের ১৫৫ জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে ভারতীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান উগ্র ইসলামপন্থি মাসুদ আজহার। ২০০০ সালে পাকিস্তান-ভিত্তিক সুন্নি ইসলামপন্থি জেইএম প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান ছাড়াও জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ জইশ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য কাশ্মীরকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা। এলইটি, তালেবান এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জেইএম-এর।
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
আল বদর
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে হিজবুল মুজাহিদিন থেকে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী হিসেবে গঠিত হয় আল বদর (যার অর্থ 'পূর্ণিমা')। এই সংগঠনের অনেক সদস্য আগে আফগান মিলিশিয়া কমান্ডার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হিজব-ই-ইসলামির সাথে কাজ করেছেন। এই গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক জিহাদি নেটওয়ার্কের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষে লিপ্ত বলে জানা গেছে। তবে, এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা কঠিন।
ছবি: NurPhoto/picture alliance
আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ (এজিএইচ)
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ- এজিএইচ কাশ্মীর সংঘাতে আল-কায়েদার প্রতিনিধিত্ব করে। ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার একটি শাখা হিসেবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। শরিয়া আইনের অধীনে কাশ্মীরে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এজিএইচ এর। এর প্রতিষ্ঠাতা জাকির মুসা ছিলেন হিজবুল মুজাহিদিনের সাবেক কমান্ডার। আদর্শগত পার্থক্যের কারণে পদত্যাগ করে বিশুদ্ধবাদী জিহাদি গোষ্ঠী হিসেবে এজিএইচ গড়ে তুলেন।