পঞ্চায়েতে সহিংসতা: মৃত ১৬, রাজ্যপাল দুষলেন কমিশনকে
৬ জুলাই ২০২৩পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে সহিংসতার কোনো বিরতি নেই। মঙ্গলবার রাতে বোমার আঘাতে মারা যায় ১৭ বছরের ইমরান হোসেন। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার ঘটনা। বাবার সঙ্গে তৃণমূলের মিছিলে গিয়েছিল সে। মিছিলে আইএসএফ ও সিপিএমের কর্মীরা বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। যদিও বিরোধীদের দাবি, যে এলাকায় এই ঘটনা, সেখানে তাদের প্রার্থী নেই। ভোটে লড়াই তৃণমূল ও শাসক দলের বিক্ষুব্ধদের মধ্যে। সেই দ্বন্দ্বেই কিশোরের মৃত্যু।
বোমা বাঁধতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। আজ সকালে মাঠে কামাল শেখের দেহ পড়ে তাকতে দেখা যায়। দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে বোমা তৈরির মশলা ও সরঞ্জাম। এদিন সকালে বীরভূমের মহম্মদবাজারে এক বিজেপি কর্মীর দেহ পাওয়া যায়। মৃত দিলীপ মাহারার স্ত্রী ছবি মাহারা নির্দল প্রার্থী। তৃণমূল খুন করেছে বলে অভিযোগ। শাসক দল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাজ্যপালের নিশানায় কমিশনার
এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নিশানা করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে। তিনি বলেছেন, ''রাজ্যে রক্ত ও আগুন নিয়ে খেলা চলছে। হিংসা দেখে আমি শঙ্কিত। সন্তান হারানো মায়ের কান্না দেখেছি। দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনার ব্যর্থ।''
এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি রাজীব। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ''বিজেপির দালালের ভূমিকা নিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি রাজনীতিই করছেন। ভোটের ফল বেরোনোর পর তাকে জনতা বলবে গো ব্যাক।''
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''গতবারের মতো এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ওয়াকভার পাবে না। বিরোধীরা প্রতিরোধ করছে বোমা-গুলি দিয়েই। তাই নির্বাচন যুদ্ধের চেহারা নিয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়িত্ব শাসক দলকেই নিতে হবে।''
বোসের শান্তি কমিটি
ভোটের মুখে রাজ্যে শান্তি কমিটি গড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বুধবার হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শান্তি ও সংহতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোট মিটলেও যে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার উপর রাজভবনের কড়া নজর থাকবে, কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে অনেকে সেই ইঙ্গিত পাচ্ছেন।
পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে রাজভবনে আগেই 'পিস রুম' খুলেছেন রাজ্যপাল। নিজে গিয়েছেন অশান্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কোচবিহারে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে হিংসা মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপের নির্দেশও দিয়েছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''অতীতের তুলনায় মৃতের সংখ্যা কম মানে হিংসাও কম হয়েছে, তা বলা যাবে না। আমরা তো খারাপের উত্তরাধিকার বহন করতে পারি না। এই পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল যে ভূমিকা নিয়েছেন সেটা খুবই সদর্থক।''
আইনি লড়াই অব্যাহত
নির্বাচনের আর ৪৮ ঘণ্টাও বাকি নেই। কিন্তু আদালতে নির্বাচন নিয়ে আইনি লড়াই চলছেই। আজ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলার শুনানি হয়। তার অভিযোগ, ''রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর' নামে যে কর্মসূচি চলছে, তাতে যে ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, তা অতীতে তৃণমূলের 'দিদিকে বলো' কর্মসূচির ফোন নম্বর। এটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।''
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা এই মামলা প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে পাঠান। এদিন প্রথম দফার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ''এই অভিযোগের পর কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?''
এরই সঙ্গে তৃণমূলের প্রার্থীর টাকার বিনিমিয়ে ভোটপ্রচার, পুলিশ সুপারের শাসকের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, পুলিশে বদলির অভিযোগেও মামলা করেছেন শুভেন্দু যার শুনানি হচ্ছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে।
এক দফাতেই ভোট
আগামী শনিবার ৮ জুলাই এক পর্যায়ে পঞ্চায়েত ভোট নেয়া হবে। ৮০০ কোম্পানির বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বিরোধীরা দফা বৃদ্ধির দাবিতে মামলা করে। আগেই আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির এই দাবি খারিজ করেছিল হাইকোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর একই দাবিতে দায়ের করা মামলা খারিজ করে দেয়।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, পর্যাপ্ত বাহিনী কমিশন হাতে পাচ্ছে। বাহিনী মোতায়েন নিয়ে একাধিক নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাই ভোট একাধিক দফায় নেয়ার প্রয়োজন নেই।
নওশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে 'ধর্ষণের' অভিযোগ তুলেছেন এক নারী। পঞ্চায়েত ভোটের তিন দিন আগে তিনি নিউ টাউন ও বৌবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ দায়েরের সময় তার সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত।
বিধায়কের প্রতিক্রিয়া, ''আমার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে এঁটে উঠতে না পেরে চক্রান্ত করছে শাসক দল। তাই অভিযোগ দায়েরের সময় সঙ্গে তৃণমূল নেতা ছিলেন।''