পঞ্চায়েত: কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ আদালতের
১৪ জুন ২০২৩
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্টের। তবে ভোটের দিনবদল করা হলো না।
বিজ্ঞাপন
পঞ্চায়েত ভোটের দিন ও মনোনয়নপত্র জমা দেয়া নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ বহাল রাখলো কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে, তা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে। আদালত জানিয়েছে, স্পর্শকাতর জেলায় মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইবে রাজ্য সরকার। তার জন্য তাদের কোনো অর্থ দিতে হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার এর খরচ দেবে।
বিরোধীদের দাবি, রাজ্যের সাতটি জেলা খুবই স্পর্শকাতর। আদালতে করা আবেদনেও তার উল্লেখ ছিল। এই জেলাগুলি হলো, দুই ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, বীরভূম , পূর্ব মেদিনীপুর ও হুগলি। হাইকোর্ট বলেছে, রাজ্যে সব বুথে পুলিশ দেয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজ্য সরকার বলেছে, তারা অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ আনছে। কিন্তু তার জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা ভালো। তার খরচও রাজ্যকে দিতে হবে না।
হাইকোর্টের বক্তব্য, স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা উচিত। তাতে ভোটদাতারা ভরসা পাবে। ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট হওয়া উচিত। রাজ্য যা বাহিনী চাইবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের দেয়া উচিত।
বিস্ফোরণের গ্রাম বলছে, বোমা তৈরি হতো বাজি কারখানায়
এগরা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে খাদিকুল গ্রাম। সেখানেই বাজি তৈরির কারখানায় মঙ্গলবার ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়েছে। কারখানাটি ভানু বাগের। অভিযোগ, তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। উপরের ছবিটি ভানু বাগের কারখানার। এই কারখানায় বেআইনিভাবে বাজি বানানো হতো বলে অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মৃতদেহ ছিটকে পড়ে রাস্তায়
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, মৃতদেহগুলি ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। কারখানা থেকে বেশ কিছুটা দূরে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাজি না বোমা?
বিস্ফোরণের তীব্রতা দেখে সাবেক পুলিশ কর্তা সলিল ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, বাজি থেকে এরকম হয় না। বোমা থেকে হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'বোমা তৈরি হতো'
স্বামী শক্তিপদ বাগের সঙ্গে মালতী বাগ ওই কারখানায় কাজ করতেন। স্বামী মারা গেছেন। সেদিন মালতী দেরি করে যাবেন ঠিক করেছিলেন বলে বেঁচে গেছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''ওরা সবরকম বোমা বানাতো। অভিযুক্ত ভানু বাগও আগে বোমা বানাতো। আমি চাই দোষীদের শাস্তি হোক।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একই কথা প্রাণকৃষ্ণের
গ্রামবাসী প্রাণকৃষ্ণ মাইতি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, বিশাল আওয়াজ হয়। আমরা তো প্রথমে ঢুকতে পারিনি। পরে দেখি, পুকুরে দেহ ভাসছে। তার দাবি, এখানে আগেও তিনবার আগুন লেগেছে। মানুষ মারা গেছে। কারখানায় বোমা বানানো হতো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চৈতন্য ভুইঞাঁর অভিযোগ
গ্রামবাসী চৈতন্য ভুইঞাঁ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, পুকুরে দেহ পড়ে। এক দেড় ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেলারানি যা বললেন
গ্রামের বাসিন্দা বেলারানি মাইতি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, আমাদের বাড়ির কাচ ভেঙেছে। প্রচণ্ড শব্দের পর শুধু কালো ধোঁয়া দেখতে পাই। আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভানু বাগ গ্রেপ্তার
বিস্ফোরণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ভানু বাগকে ওড়িশার কটক থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার ভাইপো এবং ছেলেকেও। গত ৩০ বছর ধরে সে বাজি বানাতো। ২০১১-র পর থেকে তার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় বলে অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাংলাদেশে যেত ভানুর বাজি
ভানু বাগ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভানু বাগকে কালীপুজোর সময় গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সে জামিন পেয়ে যায়। ওড়িশা সীমানার কাছে সে বেআইনিভাবে বাজি কারখানা চালাত। মমতা বলেছেন, আমি শুনেছি, ও বাংলাদেশে এবং ওড়িশাতে বাজি সরবরাহ করতো। উপরের ছবিতে ভানু বাগের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজনীতি চলছে
বিস্ফোরণের পরেই রাজনৈতিক নেতারা আসছেন এই গ্রামে। বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার এগরায় যান। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভানু তৃণমূলের বড় নেতা। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সদস্য ছিল। ২০১৮ সালে বৌমাকে সদস্য করে সে। শুভেন্দু এনআইএ তদন্ত দাবি করেন। বৃহস্পতিবার খাদিকুল যেতে পারেন দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারেরা। উপরের ছবিতে এগরা হাসপাতাল। আহতদের নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের নেতারা
বিজেপি-র পরেই তৃণমূলের নেতারা গ্রামে যান। মন্ত্রী মানস ভুইঞাঁ, বিপ্লব রায়চৌধুরী, বিধায়ক তরুণ মাইতি, দোলা সেন, সৌমেন মহাপাত্ররা যেতেই তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মানস জানান, দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে। ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের পর গ্রামের বাড়ির কাচ ভেঙে গেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেমন করে চলে বেআইনি কারখানা?
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারখানাটি বেআইনি ছিল। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, তাহলে কী করে এই কারখানা চলতো? কোনো লাইসেন্স ছিল না। তারা বাজি না বোমা বানাচ্ছে, সেটা দেখার জন্যও কোনো নজরদারি ছিল না। উপরে থানার ছবি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আরো আছে
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এরকম বাজি কারখানা ওই এলাকায় আরো আছে। বাজির চাহিদা আছে। এখন প্রায় সব উৎসবেই বাজি ফাটে। গ্রামের ভিতরে প্রায় কোনো কারখানাতেই লাইসেন্স নেই। এগরার বিস্ফোরণের পর কি এইসব কারখানা বন্ধ হবে? উপরের ছবিতে খাদিকুল গ্রাম।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
13 ছবি1 | 13
সিসিটিভি লাগানো নিয়ে হাইকোর্ট জানিয়েছে, সব বুথের ভিতরে ও বাইরে সিসিটিভি লাগাবে কমিশন। যেখানে তারা সিসিটিভি লাগাতে পারবে না, সেখানে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিরোধীদের দাবি ছিল, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য খুবই কম সময় দিয়েছে কমিশন। গতবারের তুলনায় দুই দিন কম সময় দেয়া হয়েছে। শুনানির সময় বিচারপতিরা আরো সময় দেয়া নিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু রায়ে তার কোনো উল্লেখ নেই।
রায়ে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া নিয়ে সহিংসতার কথা বিচারপতিরা জেনেছেন। শান্তি বজায় রাখা কমিশনের কর্তব্য। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও কমিশনকে বলা হয়েছে।
এই রায়ের পর আবেদনকারী ও রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অদিকারী বলেছেন, আংশিক হলেও তাদের জয় হয়েছে। তাছাড়া বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্ট মনোনয়ন নিয়ে তারা যে ্ভিয়োগ করেছিলেন তা সত্যি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি আদালত মেনে নিয়েছে। সবমিলিয়ে তাই খুশি শুভেন্দু।