পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। হাইকোর্টের আদেশ বহাল।
বিজ্ঞাপন
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট হবে। হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখলো সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয় রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নাগরত্ন ও বিচারপতি মনোজ মিশ্র বলেছেন, ''সহিংসতারপরিবেশে ভোট হতে পারে না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে।''
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ডাকা তাদের কাজ নয়। তারা রাজ্যে যখন স্পর্শকাতর কেন্দ্র ও জেলা চিহ্নিত করছিলেন, তখনই হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে।
আর রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, তারা পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের পাশাপাশি অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ এনে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন। তাদের পরিকল্পনা তৈরি। এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে পুরোটা আবার নতুন করে করতে হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত খবরের শিরোনামে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকা। মনোনয়নের দিনগুলিতে ভাঙড়-২ নম্বর বিডিওর চেহারা শাসক-বিরোধীদের যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়েছিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বোমা, গুলি, গাড়ি পোড়ানো
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে প্রতি দিনই বোমাবাজি, গুলি, ইটবৃষ্টি, পুলিশের উপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এলাকা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দোকানে আগুন
মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন অশান্তির আঁচ পেয়ে অনেকেই দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু দুষ্কৃতিরা বন্ধ দোকানেও আগুন লাগিয়ে দেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্ধ দোকান লুট
বিজয়গঞ্জ বাজারে পান-বিড়ির দোকান চালান মেহেতাব আলি। তার বন্ধ দোকানেও লুটপাট চালানো হয়ে বলে জানান তিনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছড়িয়ে আছে সহিংসতার চিহ্ন
মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও এলাকায় ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বোমা, কার্তুজের বাক্স, বন্দুকের অংশ। পড়ে আছে পোড়া গাড়িগুলি। দেখেই বোঝা যায়, কী হয়েছে ভাঙড়ে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সহিংসতার শীর্যে ভাঙড়
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে অশান্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা। তবে অশান্তিতে শীর্ষে উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। ছবিতে উদ্ধার হওয়া বোমা ও কার্তুজের প্যাকেট।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মৃত তিন
এই অশান্তিতে তিন জনের প্রাণ গিয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁদের মধ্যে এক জন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) কর্মী, অন্য দু’জন শাসক তৃণমূলের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। মতান্তরে দুইজন আইএসএফ এবং একজন তৃণমূল কর্মী মারা গেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এই সেই বিডিও অফিস
এখানেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হচ্ছিল। কিন্তু অভিযোগ, এই অফিস-চত্বরের মধ্যে ও বাইরের জায়গা শাসক দলের কর্মীরা শাসন করেছে। কাউকে ঢুকতে দেয়নি। ফলে অনেক বিরোধী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ব্যবস্থা ছিল, তাও অভিযোগের অন্ত নেই
সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, পুলিশ ছিল, তাও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ফলে অনেক জায়গায় তৃণমূল কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া জিতে গেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দোকানপাট এবার খুলছে
গত কয়েকদিন বন্ধই ছিল দোকানপাট থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য। রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছিলেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তবে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পর শুক্রবার থেকে ভাঙড়ের পরিস্থিতিতে সামান্য বদল এসেছে বলছে স্থানীয় মানুষ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজ্যপাল ভাঙড়ে
শুক্রবার দুপুরে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তার পর যান ভাঙড় ২ নং ব্লক অফিসে। সেখানে কথা বলেন আধিকারিকদের সঙ্গে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাধারণ মানুষের সঙ্গে
রাজ্যপাল কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গেও। বোঝার চেষ্টা করেন অশান্তির কারণ। পরে রাজভবনে একটা হেলপলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারলে ফোন করে জানানো যাচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজ্যপালের বৈঠক
এরপর রাজ্যপাল পৌঁছান ভাঙড় কলেজে। কলেজে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কলেজের বাইরে আইএসএফ কর্মীরা রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মনোনয়ন দিতে পারেনি
বহু আইএসএফ কর্মীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তারা মনোনয়নপত্র হাতে নিয়ে জমায়েত করেন কলেজের ক্যাম্পাসে। রাজ্যপালের বেরনোর অপেক্ষা করতে থাকেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, ''অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ যদি আনা যায়, তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্ষেত্রে কেন আপত্তি জানানো হচ্ছে? বাহিনীর খরচও কেন্দ্রীয় সরকার দেবে, তাহলে আপত্তিটা কীসের ?''
বিচারপতিরা বলেছেন, ''২০১৩ ও ২০১৮ সালের ভোটে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে।''
বিচারপতিরা বলেছেন, ''নির্বাচন পরিচালনা মানে কাউকে সহিংসতা করার অনুমতি দেয়া নয়। সহিংসতার পরিবেশে নির্বাচন হয় না। ''
বিচারপতি নাগরত্ন রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলেন, ''নিরাপত্তা দেয়ার কাজ যখন আপনাদের নয়, তখন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আপনারা চিন্তিত কেন? আপনারা নিজেদের কাজ করুন। যেখান থেকেই বাহিনী আসুক, তা আপনাদের অসুবিধার কারণ হতে পারে না।''
রাজ্যজুড়েই সহিংসতা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকে। ভাঙড়, চোপড়া, বাঁকুড়া-সহ রজ্যের বহু জায়গায় রক্ত ঝড়েছে মনোনয়নপর্বে। অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় মনোননপত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি বিরোধী প্রার্থীদের। বিজেপি-র এই প্রার্থী সহিংসতার শিকার। বাঁশ, রড দিয়ে মারা হয়েছে তাকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আহত মানুষেরা
আরেকজন আহত মানুষ। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়ন ঘিরে এতটাই সংঘর্ষ হয়েছে যে, প্রচুর মানুষ আহত। ভাঙড়ে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ও গুলি চলেছে। চোপড়ায় সিপিএমের মিছিলের উপর লাঠি, রড, বন্দুক নিয়ে আক্রমণ করা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দীনেশ মণ্ডলের দাবি
দীনেশ মণ্ডল জানিয়েছেন, তার স্ত্রী সোনামণি মণ্ডল মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেছিলেন। সেখানেই ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাদের আক্রমণ করে। তার বুকে একের পর এক ঘুষি মারা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
উত্তম বাগ মার খেয়েছেন
উত্তম বাগের স্ত্রী ঝুমা বাগ বিজেপি-র হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র পেশ করতে যেতেই শুরু হয় ব্যাপক মার। রীতিমতো আহত উত্তম। রাজ্যের ৫০ শতাংশ পঞ্চায়েত আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। তাই প্রার্থীর সঙ্গে তার স্বামী বা পরিবারের সদস্যরাও মনোনয়ন পেশের সময় যান।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মার অতীন্দ্র হালদারকে
অতীন্দ্র হালদার ডায়মন্ড হারবার দুই নম্বর ব্লকের প্রার্থী ছিলেন। তাকে বিডিও অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বেধড়ক মারা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিমান বসুর নেতৃত্বে
চোপড়ায় সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা মিছিল করে মনোনয়নপত্র দিতে যাচ্ছিলেন। সেসময় তাদের মিছিলে হামলা হয়। একজন মাথায় গুলি লেগে মারা যান। গুরুতর আহত দুইজন। এরপর বিমান বসুর নেতৃত্বে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিসে যান। নির্বাচন কমিশনারকে স্মারকলিপি দেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের সঙ্গে বিরোধ
নেতারা ভিতরে গিয়েছিলেন স্মারকলিপি জমা দিতে। বাইরে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা। পুলিশ তাদের সরাতে যায়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। কর্মীরা সেই ব্যারিকেড ফেলে দিয়ে এগোতে চায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি
সিপিএমের এই নারী কর্মী পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি জুড়ে দেন। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, চোপড়ায় গুলিতে আমাদের সহকর্মীরা মারা যাচ্ছেন, ভাঙড়ে সহযোগী দলের কর্মীরা মারা যাচ্ছেন। আপনারা কোথায় ছিলেন?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তায় বসে প্রতিবাদ
সিপিএমের এই বয়স্ক মানুষটি রাস্তায় বসে পতাকা হাতে নিয়ে প্রতিবাদ দেখালেন। দলের সহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য। সহিংসতা বন্ধের দাবিতে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আইএসএফ নেতার দাবি
ভাঙড়ে মনোনয়ন জমা দেয়া নিয়ে তৃণমূল ও আইএসএফের মধ্যে ব্যাপক গোলমাল হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশি নিরাপত্তায় শেষ পর্যন্ত আইএসএফ প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকি এসেছিলেন নির্বাচন কমিশনে, গ্রামবাসী ও কর্মীদের নিরাপত্তার দাবি নিয়ে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপি নারী মোর্চার প্রতিবাদ
পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতার প্রতিবাদে বিজেপি নারী মোর্চার সদস্যরা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রতিবাদে কংগ্রেসও
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে কংগ্রেস কর্মীরাও প্রতিবাদ জানান। চোপড়া, ভাঙড়, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস কর্মীরাও সহিংসতার শিকার হয়েছেন, একজন মারা গেছেন বলে অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দাঙ্গাবিরোধী পুলিশ
বিরোধীদের প্রতিবাদ সামলাতে নামানো হয়েছিল দাঙ্গাবিরোধী পুলিশও। অথচ, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যখন সহিংসতা হয়েছে, তখন উপযুক্ত সংখ্য়ায় পুলিশ ছিল না বা থাকলেও তারা নীরব দর্শক ছিল বলে অভিযোগ বিরোধী দলগুলির।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
13 ছবি1 | 13
বিচারপতি বলেছেন, ‘'ভোটে অশান্তি হবে তা আশা করা যায় না। অতীতে রাজ্যে সহিংসতার প্রচুর ঘটনা ঘটেছে। হাইকোর্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা সেখানে অসুবিধার কিছু দেখছি না।''
রাজ্যের আইনজীবী বলেন, পুরো রাজ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হবে। বিচারপতি নাগরত্নে বলেন, ''এটা তো নির্বাচনের সময় হবে। এটাকে অন্যভাবে দেখার দরকার নেই।''