৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি টিকে গেল চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশের। স্কুলের পঠনপাঠন ঘিরে সংকট কিছুটা কাটল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ সেরে ফেলতে হবে রাজ্যকে।
রাস্তায় চাকরিহারা শিক্ষকেরাছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজ্ঞাপন
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে গিয়েছিল। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে পঠনপাঠন চালানোর ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সেই সঙ্কট কিছুটা কাটতে চলেছে।
সুপ্রিম শুনানি
২০১৬ সালে এসএসসি-র গোটা প্যানেল সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেয়।
এই রায়ে যাদের চাকরি গিয়েছিল, তার মধ্যে ১৭ হাজারের বেশি শিক্ষক। বাকিরা শিক্ষা কর্মী হিসেবে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি বিভাগে কাজ করতেন। এই ১৭ হাজার শিক্ষকের মধ্যে একটা অংশকে দাগি বা অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে আদালত। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে কারা সত্যিই যোগ্য, সেটা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই সকলের চাকরি চলে গিয়েছিল।
এর ফলে স্কুলে স্কুলে পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনিতেই শিক্ষকের সংখ্যা ছাত্রের অনুপাতে অনেক কম। চাকরি বাতিলের ফলে সেটা আরো বেড়ে যায়। তাই ৭ এপ্রিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে মডিফিকেশন আবেদন দাখিল করে। সেই মামলার শুনানি হলো বৃহস্পতিবার।
এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকার, এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এক সুরে বলে, আদালতের ৩ এপ্রিলের রায়ের সঙ্গে তারা সহমত। কিন্তু পঠনপাঠনের কথা মাথায় রেখে ও নতুন নিয়োগের জন্য যথেষ্ট সময় প্রার্থনা করে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এসএসসি মামলার রায়ে আদালত বলেছিল, তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়সীমার মধ্যে তা সম্ভব নয় বলে আদালতে জানায় পর্ষদ।
কসবার ডিআই অফিস বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা পুলিশের। মারা হলো লাথিও।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
লজ্জাজনক
বুধবার চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ বেঝড়ক লাঠি চালালো। শিক্ষকদের লাথি মারা হলো। রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেন শিক্ষকরা। কসবার ডিআই অফিসে প্রতীকী তালাবন্ধ করে প্রতিবাদ দেখাতে গিয়ে এই হেনস্থার মুখে পড়তে হলো তাদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের কীর্তি
বিক্ষোভরত নিরস্ত্র শিক্ষকদের কাউকে গলাধাক্কা দেয়া হলো, কাউকে লাঠি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়া হলো, কাউকে দুই পাশ থেকে ধরে লাঠি মারা হলো, কারো হাত মুচড়ে দেয়া হলো। যোগ্য শিক্ষক মঞ্চ ২০১৬-র তরফে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ ছিল। কলকাতার কসবার বিক্ষোভে এই ঘটনা ঘটলো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হালকা বলপ্রয়োগ!
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, কসবায় একদল বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে আক্রমণ করে। সহিংসতা করে। দুই নারী পুলিশ কর্মী-সহ ছয়জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ হালকা বলপ্রয়োগ করে। পরে পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা দাবি করেছেন, বাধ্য হয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে লাথি মারা কাম্য ছিল না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মারের চোটে লাঠি ভাঙলো
বিক্ষোভরত শিক্ষকদের বক্তব্য, তারা ডেপুটেশন দিতে গিয়েছিলেন। পুলিশ প্রথম থেকে মারমুখি ছিল। এমনভাবে মেরেছে যে তাদের লাঠি পর্যন্ত ভেঙে যায়। চাকরিহারা নারী শিক্ষকরাও পুলিশের মারের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মুখ্যসচিবের বক্তব্য
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, এই ঘটনা কাম্য ছিল না। চাকরিহারাদের প্রতি সমবেদনা আছে। তারা যেন শান্ত থাকেন। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, কোনোরকম সমবেদনা থাকলে পুলিশ তাদের প্রতি এই ধরনের ব্যবহার করে না। পুলিশের এই আচরণ থেকে সরকার ও প্রশাসনের আসল মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জেলায় জেলায় বিক্ষোভ
শুধু কলকাতার কসবায় নয় জেলায় জেলায় শিক্ষকরা বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নামেন। তারা দাবি করতে থাকেন, কসবায় আটক চাকরিহারা শিক্ষকদের মুক্তি দিতে হবে। মেদিনীপুর, বহরমপুর, আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গায় ডিআই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ
কসবার ডিআই অফিসের সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু চাকরিহারা শিক্ষকরা এসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করতেই তারা মারমুখি হয়ে ওঠে বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এই বিক্ষোভ?
ক্যানিং ইটখোলা রাজনারায়ণ হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক অনিমেষ সামন্ত বলেন, ''আমাদের দাবি, যোগ্যদের তালিকা অবিলম্বে এসএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। যে মিরর ইমেজ যা সিবিআই উদ্ধার করেছে, তা প্রকাশ করতে হবে, যাতে গোটা দেশ ও রাজ্য জানতে পারে আমরা যোগ্য। আমরা যে ওএমআর শিটে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, সেটা প্রকাশ করুক। আমরা নতুন করে পরীক্ষায় বসব না। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামতো ভলেন্টিয়ারি সার্ভিসও দিতে রাজি নই।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'গুলি করে মারুক'
বাটানগড় জবতলা সূর্যকুমার বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা সাথী লাহা বলেন, 'আমরা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা। কোনোভাবেই কোথাও কখনো আমাদের দুর্নীতির নাম নেই। আমরা গোটা দেশকে জানাতে চাই আমরা যোগ্য। আমরা কেন ভলেন্টিয়ারি সার্ভিস দেব। আমাদের পূর্ণ সম্মান দিয়ে পদে ফেরানো হোক। আমাদের পরিবার, বাচ্চাদের স্কুলের ফিস বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। হয় আমাদের আত্মহত্যা করতে বলুক, নয়তো গুলি করে মেরে দিক।'
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'অসম্মানজনক প্রস্তাব'
রতনপুর গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা স্বর্ণালি বসু বলেন, 'মিরর ইমেজ না পাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট যোগ্য অযোগ্যদের একসঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল যাতে আমাদের চাকরি চলে যায়। এসএসসি অযোগ্যদের লিস্ট দিয়েছে যোগ্যদের তালিকা দেয়নি। যোগ্যদের লিস্ট প্রকাশ করা হোক। ভলেন্টিয়ারি সার্ভিস আমাদের জন্য অসম্মানজনক। আমরা যতদিন না যোগ্য সম্মান পাবো ততদিন এই সার্ভিস দিতে রাজি নই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'আমরা পথে বসে গেছি'
রায়দিঘি নরেন্দ্রপুর মিলন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কর্ণকুমার নস্কর বলেন, 'সরকার দুর্নীতি করেছে অযোগ্যদের লিস্টেই তা প্রমাণিত। আমরা সকলেই জানি কারা অযোগ্য। যোগ্যদের লিষ্ট সামনে আসা দরকার। সরকার আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে ২০২৫ সাল বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে তাতে একটাই মাত্র এই নিয়োগ হয়েছে। অথচ সরকারের মনে হচ্ছে না যে এদেরকে বাঁচানো দরকার। আমরা তো পথে বসে পড়েছি।'
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, চাকরিহারা শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে বসতে চাইছেন, আবার ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করছেন, দুটো একসঙ্গে হতে পারে না। শনিবার তিনি চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, লাথি, লাঠি মারা স রকার, আর নেই দরকার। বিজেপি এর বিরুদ্ধে রাস্তাতেও নামে। সিপিএমও বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ মিছিল করছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, রাস্তায় নামা দরকার। শিক্ষাকে বাঁচানোর জন্য। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার জানিয়েছেন, কংগ্রেস কর্মীরা কলেজ স্ট্রিটে মিছিল করবেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
13 ছবি1 | 13
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। তার নির্দেশ, যে শিক্ষকরা অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হননি, তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন। রাজ্য সরকারকে ৩১ মে-র মধ্যে নিয়োগের নতুন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে। এই বিজ্ঞাপনের কথা হলফনামার আকারে আদালতকে জানাতে হবে।
তবে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডির শিক্ষাকর্মীরা এই স্বস্তি পাচ্ছেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অনুযায়ী তারা চাকরিতে সাময়িকভাবে যোগ দিতে পারবেন না। আদালতের বক্তব্য, শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিপুল দুর্নীতি হয়েছে। শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্দেশের ফলে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে পঠনপাঠন চালিয়ে যাওয়ার সংকট কিছুটা মিটবে। কিন্তু যে শিক্ষকরা কাজ চালিয়ে যাবেন, তাদের চাকরি বাতিলই থাকছে। যারা অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হননি, তারা নতুনভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। সেই নতুন প্যানেলের ভিত্তিতে ২০২৬-এর পয়লা জানুয়ারি থেকে স্কুলে যোগ দেবেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
যোগ্য অযোগ্যের ভেদ
সুপ্রিম কোর্ট দাগি বা অযোগ্য হিসেবে ২৬ হাজারের মধ্যে একটি অংশকে চিহ্নিত করেছে। এই সংখ্যা ৬ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু এই ৬ হাজার শিক্ষক কারা, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। এই সংক্রান্ত তালিকা কমিশনের দেয়ার কথা। ফাঁকা ওএমআর শিট জমা দিয়ে এই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা চাকরি পেয়েছিলেন বলে সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে। এই সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত হার্ডডিস্ক রাজ্যের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সেই তালিকা সামনে এলে তবেই বোঝা যাবে, কারা টেন্টেড বা দাগি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে: হরিদাস ঘটক
This browser does not support the audio element.
এই তালিকা এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছে। কোন শিক্ষক স্কুলে যাবেন, আর কোন শিক্ষক যাবেন না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।। বল এখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের কোর্টে। তাদের চিহ্নিত করে দিতে হবে দাগি কারা। নইলে স্কুলে গিয়ে যারা পড়াবেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে বলে মনে করছে আইনজীবীদের একাংশ।
বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলাকারী আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বলেন, "তালিকা প্রকাশের কথা আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু রায় বেরনোর পর দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও সেই তালিকা সামনে আসেনি। ওএমআর শিট আপলোড করতে এত ইতস্তত করছে কেন রাজ্য সরকার? আসলে এই তালিকা সামনে এলেই চিহ্নিত হয়ে যাবে কারা দাগি বা টেন্ডেড। অনেক টাকার হাত বদল হয়েছে এই নিয়োগগুলির ক্ষেত্রে। সেটাকে আড়ালে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।"
মালদহ জেলার গাজল থানার সালাইডাঙা বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক পঙ্কজ রায় অন্যান্যদের সঙ্গে ধর্মতলায় অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই নির্দেশে একদম খুশি নই। আমাদের আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার পূর্ণ পরিকল্পনা চলছে। সুপ্রিম কোর্ট যদি যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকাটা এসএসসির কাছ থেকে চাপ দিয়ে নিত, তাহলে মেনে নেওয়া যেত। বারবার পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে কেন? ২২ লক্ষ ওএমআর শিট প্রকাশ করা গেল না কেন? সেখান থেকে রাজ্য বাছাই করতে পারতো।"
বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি ডিডাব্লিউকে বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। সাময়িক স্বস্তি তো বটেই, শিক্ষকদের অভাবে স্কুল চালাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। সে পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হলাম। পাশাপাশি অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। যারা ধর্মতলায় বসে আছেন, তাদের অযোগ্যদের জায়গায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।"
পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক হরিদাস ঘটক ডিডাব্লিউকে বলেন, "এসএসসির কাছে যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা আছে। ওরা আসলে একটু জল মাপছিল। অযোগ্যদের একটা তালিকা ওরা নিশ্চিতভাবে স্কুলের কাছে পাঠাবে। সম্ভবত কোনো চিঠিও দেবে, যাতে এদের বাদ দিয়ে বাকিদের বেতনের সুপারিশ পাঠানো যায়। সরকার যদি আগেই যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা তালিকা দিয়ে দিত, তাহলে আর এই সমস্যা থাকত না। আপাতত আমাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আশা করব, যোগ্যরা আবার নিজেদের প্রমাণ করে স্কুলে ফিরে আসবেন পাকাপাকিভাবে।"
চাকরি দুর্নীতি : যোগ্যদের পাশাপাশি অযোগ্যদেরও পাশে থাকতে চেয়ে তোপের মুখে মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যোগ্যদের চাকরির বিষয়টির ফয়সালা করে অযোগ্যদের বিষয়টিও দেখবেন। কিন্তু ‘স্বেচ্ছাশ্রম’ মানতে নারাজ যোগ্যরা৷ অযোগ্যদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েও তোপের মুখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী...
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সময় চাইলো এসএসসি
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, যেহেতু যোগ্য ও অযোগ্যর মধ্যে পার্থক্য করা যাচ্ছে না, তাই প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হবে। এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে বলেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষপর্যন্ত যোগ্যদের চাকরি করতে দেয়া হোক। এর জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মমতা যা বললেন
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের একাংশকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''কারো চাকরি যাবে না। আগে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্য়া চাইবে। সুপ্রিম কোর্টের নেতিবাচক উত্তর হলে সরকার যোগ্যদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবে। দুই মাসের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবো।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
স্বেচ্ছাশ্রমের প্রস্তাব
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আপনারা কি এখনো বরখাস্তের নোটিস পেয়েছেন? (না পেয়ে থাকলে) চাকরি করুন না! স্বেচ্ছায় তো সকলেই কাজ করতে পারেন।’’ তিনি আরো বলেন, ''আপনাদের সরকার বরখাস্ত করেনি। আপনারা স্কুলে যান। কাজ করুন।'' কিন্তু স্বেচ্ছায় কাজ করলে বেতন পাওয়া যাবে কিনা, স্বেচ্ছায় কাজ করলে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষকদের মতো অল্প বেতন দেয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেননি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রতিবাদ
মুখ্যমন্ত্রীর স্বেচ্ছাশ্রমের বিষয়টি উপস্থিত চাকরিহারা শিক্ষকরা মেনে নিতে পারেননি। তাদের অনেকেই বলতে থাকেন, এভাবে হয় না, স্বেচ্ছাশ্রম বিষয়টির ব্যাখ্যা চাই। তবে তারা স্কুলে ফিরতে চান। তারা বলেন, বেতনসহ চাকরি রাখা হলে তারা স্কুলে ফিরবেন। তবে তারা চুক্তিভিত্তিক চাকরি করতে চান না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অযোগ্যদের চাকরির প্রসঙ্গে মমতা
এ বিষয়ে মমতা বলেন, ''অযোগ্যদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পরীক্ষা করবো। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আমার কিছু বলার থাকবে না। কিন্তু অযোগ্য কাকে বলেছে, কেন বলেছে, কোন এজেন্সি বলেছে- সে সব দেখবো। নিশ্চিন্তে থাকুন। যোগ্য এবং অযোগ্যদের মধ্যে গন্ডগোল বাঁধাবেন না। মানুষকে শিক্ষা দিন। শিক্ষিত করুন। কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য তা আদালত বলেনি। ২০২২ থেকে খেলা শুরু করেছে। আমি জেনে-শুনে কারো চাকরি খাইনি।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অযোগ্যদের নিয়ে বক্তব্যের প্রতিবাদ
অযোগ্যদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার প্রতিবাদ করেন সভায় উপস্থিত চাকরি হারানো শিক্ষকরা। তারা বলেন, অযোগ্যদের চাকরি দেয়া যাবে না। তাদের প্রশ্ন- যোগ্যদের তালিকা তিনি কি সুপ্রিম কোর্টে দেবেন? সুপ্রিম কোর্ট তো তালিকা দেবে না। দেবে এসএসসি। সিবিআই রিপোর্ট মানলে যোগ্য ও অযোগ্যদের তো আগেই আলাদা করা যেতো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চাকরিহারাদের দাবি
চাকরিহারা শিক্ষকদের অনেকেই বলেছেন, রাজ্য সরকার ও এসএসসির জন্য এখন তাদের এই অবস্থা। তারা যোগ্য ও অযোগ্য আলাদা করেনি। চাকরি হারানো যোগ্য শিক্ষকরা মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রী সব গোলমাল পাকিয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিকাশ ভট্টাচার্য বনাম মমতা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''সিপিএমের কাছে প্রশ্ন করছি, কেন বিকাশ ভট্টাচার্য সব চাকরি বাতিল করালেন? তাকে আইসোলেট করুন।'' এর জবাবে বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, ''তিনি দুর্নীতি করেছেন। সকলে পেটাবে। মারের হাত থেকে বাঁচতে এসব বলছেন। তিনি বারবার যোগ্য অযোগ্য বলছেন। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে তো বললেন না। রায়ের পর লম্ফঝম্প করছেন।''
ছবি: Srijit Roy
বিরোধী নেতার বক্তব্য
রাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''সরকারের কাছে সুযোগ আছে চাকরি দেয়ার। সরকার রিভিশন পিটিশন করেছে। সরকার যোগ্যদের তালিকাটা ফেলে দিন। তাহলে দুধ ও জল আলাদা হবে। কোনো বিতর্ক থাকবে না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সরকার ও এসএসসির অসহযোগিতার জন্য যোগ্য ও অযোগ্য বাছতে পারলাম না। তিনি (মমতা) যদি বলেন, সবাইকে চাকরি দিলাম ১০ হাজার টাকা করে দেবো. সেটা মানবো না।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নবান্নর কাছে বিক্ষোভ
চাকরি না পাওয়া শিক্ষকদের একাংশ নবান্নর কাছে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাদের দাবি, যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তারা কেন চাকরি পাবেন না তাদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সারা রাত চাকরিহারা শিক্ষকদের অপেক্ষা
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাবেন বলে কলকাতার বাইরে থেকে আসা শিক্ষকরা সারা রাত শহিদ মিনারের পাশে মাঠে ছিলেন। ‘যোগ্য’ লেখা কার্ড সংগ্রহ করে সকালে নেতাজি ইন্ডোরে যান তারা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঢোকার সময় ঝামেলা
‘যোগ্য’ কার্ড না পাওয়ায় অনেক শিক্ষকই ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেননি। জোর করে ঢুকতে চাওয়ায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় তাদের।