বাংলাদেশে কি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে? প্রচলিত তথ্য-উপাত্তে শিক্ষার হার বাড়লেও, ভিন্ন এক তথ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ আর তা হলো এবারের এসসসি পরীক্ষায় অন্তত ১০ লাখ শিক্ষার্থীর ‘ড্রপ আউট'৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
হিসাবটি এ রকম৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সোমবার থেকে যারা এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় বসেছে, তাদের সংখ্যা ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫২৩ জন৷ এরাই ২০১০ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল৷ তখন তাদের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ জন৷ দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বছরের দৌঁড় শেষে মাধ্যমিক, ভোকেশনাল ও দাখিল সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত ঝরে পড়েছে অন্তত লাখ ১১ হাজার ৩৯১ জন শিক্ষার্থী৷ তারা এক হয় এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না অথবা এ পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেননি তারা৷
বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য নানা ব্যবস্থা চালু আছে৷ তার মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, মেয়েদের জন্যে উপ-বৃত্তি অন্যতম৷
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এর বাইরে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় দেশের ৬১টি জেলার পিছিয়ে পড়া ১২৫টি উপজেলার ৫৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের প্রতি ভীতি দূর করতে অতিরিক্ত ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে৷ এছাড়া শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধ করতে বর্তমান সরকার আগের মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চালু করে৷ কিন্তু তাতেও এই ঝড়ে পড়া বন্ধ করা যাচ্ছে না৷
জীবনের জন্য শিক্ষা
পুরো ইউরোপে নতুন ক্লাসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা৷ শুরু হয়েছে নতুন বছর৷ লেবাননে সিরীয় শরণার্থী শিশুদের কি অবস্থা? দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে কেউ স্কুলে পড়ালেখা করলেও, অনেকের জীবনেই নেমে এসেছে বিপর্যয়৷
ছবি: Amy Leang
থেরাপি
বৈরুতের এই স্কুলে যে শিক্ষার্থীদের দেখছেন তারা সিরিয়ার শরণার্থী৷ স্কুলে গান গাইছে তারা৷ এটা একটা থেরাপি যাতে যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি এবং আতঙ্ক কাটাতে পারে তারা৷ এছাড়া এখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তারা৷
ছবি: Amy Leang
দ্বিতীয় জীবন
শিশুদের এমনভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যেন তারা লেবাননের সরকারি স্কুলে পড়তে পারে৷ এদের মধ্যে একজন সুজানে৷ বড় হয়ে শিল্পী হতে চায় সে৷ স্কুলে পড়ালেখা ছাড়া এই স্বপ্ন পূরণ হবে না, তাই শিক্ষাগ্রহণকে সুজানে ‘দ্বিতীয় জীবন’ বলে মনে করছে৷
ছবি: Amy Leang
পরিবারের সহায়তা নেই
বৈরুতের ঐ স্কুলটিতে অঙ্কের ক্লাসে দেখা যাচ্ছে ডায়নাকে৷ ডায়নার মতো সিরিয়ার এই শরণার্থী শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবারের কোনো সহায়তা পায় না তারা, এমনকি বাড়িতে পড়ানোর মতো কেউ নেই৷ স্কুলই পড়ার একমাত্র জায়গা৷
ছবি: Amy Leang
চিন্তার শক্তি
শিশুরা এই স্কুলে একবেলা খেতে পায়৷ যে বেসরকারি সংস্থাটি স্কুলটি পরিচালনা করছে, তার এক কর্মকর্তা জানালেন, একটি গির্জার সহায়তায় এই শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই শিশুরা ঐ এলাকার আশপাশেই থাকে এবং সেখানকার বাড়ি ভাড়া প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার৷ ফলে পরিবারের উপার্জনের প্রায় পুরোটাই বাড়ি ভাড়ায় চলে যায়৷ খাবারের জন্য অর্থ থাকে না৷
ছবি: Amy Leang
বাড়ি থেকে বাড়ি
এই শরণার্থী পরিবারগুলো এমন অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, যেখানে হয়ত সিঁড়ির নীচে বা ছাদের চিলেকোঠায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে তারা৷
ছবি: Amy Leang
সৃজনশীলতা
১২ বছর বয়সি আশতাকে সৃজনশীল লেখা লিখতে বলা হয়েছে৷ তাই হয়ত জানলার বাইরে তাকিয়ে সে চিন্তা করছে কি লেখা যায়৷ এর মাধ্যমে নিজের মানসিক চাহিদাগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে তারা৷
ছবি: Amy Leang
হারিয়ে যাওয়ার পথে যে প্রজন্ম
নিজেদের ভাড়া বাড়িতে শিশুদের অঙ্ক বাড়ির কাজ নিয়ে বসেছেন বাবা-মা৷ সিরিয়ার কৃষক বাবা জানালেন, ‘‘আমি তাদের এখানে নিয়ে এসেছি৷ কারণ আমার ধারণা তারা সিরিয়ায় থাকলে অশিক্ষিতই থেকে যেত৷ এটা একটা বড় ধরনের ভুল৷ এর সমাধান করতে না পারলে একটা পুরো প্রজন্ম হারিয়ে যাবে৷’’
ছবি: Amy Leang
সময়ের অপচয়
লেবাননে থাকা যেসব শরণার্থী শিশুরা স্কুলে যায় না, তাদের পুরো সময়টা কাটে টিভি দেখে বা খেলাধুলা করে৷ এনজিওটি জানালো বর্তমানে ৪ লাখ শরণার্থী শিশু রয়েছে৷ কিন্তু মাত্র ৯০ হাজার স্কুলে যায়৷
ছবি: Amy Leang
পথেই জীবন
নারিমান, বয়স ৭৷ এত অল্প বয়সেই সে জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে৷ রাস্তায় রাস্তায় টিস্যু পেপার বিক্রি করে সে৷ তার চাচা তাকে এগুলো বিক্রি করতে দিয়েছে, তবে শর্ত হলো সন্ধ্যা ৬ টার আগে চাচার হাতে ১২,০০০ লেবানিজ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৮ ডলার তুলে দিতে হবে৷ তাই দিনের প্রায় পুরোটা সময় রাস্তাতেই কাটে তার৷
ছবি: Amy Leang
লক্ষ্যভ্রষ্ট
লেবানন-সিরিয়া সীমান্তের কাছে আরো একটি স্কুল খুলেছে বেসরকারি সংস্থা সাওয়া৷ সংস্থার এক কর্মী বললেন, ‘‘এই শিশুগুলো এমন আতঙ্ক ও ভয়াবহ একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, এখন কোনো কিছুতেই তাদের কিছু যায় আসে না৷ পরোয়া করে না তারা৷
ছবি: Amy Leang
10 ছবি1 | 10
এমন কেন হচ্ছে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য৷ অভিভাবকদের বড় একটি অংশ প্রাথমিকের পর তাদের সন্তানদের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারছেন না৷ শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু তাদের ভরণপোষন তো আর সরকার দেবে না৷ তাই ছেলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজে ঢুকে যাচ্ছে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষা এখনো সেই অর্থে উপযোগিতা তৈরি করতে পারেনি৷ কারণ দেশের শিক্ষিতদের একটি অংশ বেকার৷ তাঁরা চাকরি পান না৷ তাই হয়ত অভিভাবকরা মনে করছেন, পড়াশোনা করে কী হবে, চাকরি তো পাবে না৷ তাই তাঁরা ছেলেদের অল্প বয়সেই কাজে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন৷''
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, ‘‘শিক্ষাব্যবস্থা এবং অর্থনীতির মধ্যে একটা ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ তাই শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমছে৷ শিক্ষা যে অর্থকরী এবং পড়াশুনা করলে চাকরি পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করতে হবে৷ নয়ত এই আগ্রহ কমতেই থাকবে৷''
জাদুঘর: শিশুরা যেখানে খেলে আর শেখে
অস্ট্রেলিয়ায় উদ্বোধন হয়েছে শিশুদের দারুণ এক জাদুঘর৷ শিশুরা সেখানে যাবে, মজার মজার জিনিস দেখবে, বড়দের মতো কাজ করবে, খেলবে আর শিখবে – এই হচ্ছে জাদুঘর নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য৷ খুব সাড়া জাগিয়েছে জাদুঘরটি৷
ছবি: DW/J.Macey
খেলো, করো, শেখো...
সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ ওলংগং-এর ভেতরে ৩০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তৈরি করা হয়েছে এই জাদুঘর৷ আর্লি স্টার্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর ভাবনার ফসল এই জাদুঘরে শিশুরা মন মতো খেলতে পারে, কাজও করতে পারে৷ খেলতে খেলতে, কাজ করতে করতেই শিখে নেয় অনেক কিছু৷ ছবির এই দুই শিশু খেলাচ্ছলেই ঘর বানাতে শিখছে৷
ছবি: DW/J.Macey
জলদস্যুর জাহাজ
সিডনির এই জাদুঘর শুধু ১ থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছরের শিশুদের জন্য৷ শিশুদের সঙ্গে তাদের বাবা-মা-ও আসতে পারেন৷ জাদুঘরে ঢোকার মুখেই রয়েছে একটি জলদস্যুদের জাহাজ৷ সেই জাহাজে গিয়েও শিশুরা খেলতে খেলতেই শেখে৷ পুঁচকেরা হামাগুড়ি দিতে দিতেই এক সময় হাঁটতে শেখে, যারা হাঁটতে জানে, কথা বলতে পারে তারা সেই জাহাজে ঘুরে ঘুরেই নেয় সাহিত্য, সংস্কৃতির সহজ পাঠ৷
ছবি: DW/J.Macey
বিশ্বের প্রথম...
কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শিশুদের জন্য বিশ্বের প্রথম জাদুঘর এটি৷ সেখানে খেলাচ্ছলে প্রত্নতত্ত্বের মতো কঠিন বিষয়ের সঙ্গেও পরিচিত হয় শিশুরা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতো কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু স্থানও সেখানে তৈরি করা হয়েছে৷ স্থানগুলোর কিছু অংশ পাথুরে, কিছু অংশ আবার গর্তে ভরা৷ মাটি খনন করার সরঞ্জামও আছে শিশুদের এই জাদুঘরে৷
ছবি: DW/J.Macey
জীবন্ত যন্ত্র
অদ্ভুত আর বিশাল এক যন্ত্রের হা করা মুখের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে খেলছে দু’টি শিশু৷ যন্ত্রটি জীবন্ত প্রাণীর মতো৷ প্রাণী যেমন শ্বাস নিয়ে শ্বাস ছাড়ে, এই যন্ত্রও সেভাবে বাতাস বের করে মুখ দিয়ে৷
ছবি: University of Wollongong
কেনাকাটা শেখা
জাদুঘরের এই অংশটির নাম ‘মার্কেট প্লেস’৷ এখানে শিশুরা কেনাকাটা সম্পর্কে ধারণা নেয়৷ বড় হয়ে এই কাজগুলো তো করতেই হবে, ভালো কাজ কম বয়সে শিখলে তো ক্ষতি নেই! ২০১৫ সালের মে মাসে উদ্বোধন হয়েছে সিডনির এই জাদুঘরটির৷ এ পর্যন্ত ১০ হাজার শিশু গিয়েছে সেখানে৷ অনেকের আবার দু-তিনবার গিয়েও সাধ মেটেনি৷
ছবি: DW/J.Macey
5 ছবি1 | 5
বন্ধুরা, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কিভাবে বাড়ানো যায়? জানান আপনার মত, নীচের ঘরে৷