1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পণ্ডিত রবি শঙ্করের প্রয়াণ

১২ ডিসেম্বর ২০১২

পণ্ডিত রবি শঙ্কর আর নেই! মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়েগোয় ৯২ বছর বয়সে দেহ রেখেছেন ভারতীয় মার্গসংগীতের, বিশেষ করে সেতারের এই কিংবদন্তী৷ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তাঁর অবদান কোনোদিন ভোলার নয়৷

Renown Indian Sitar maestro, Pandit Ravi Shankar plays during the "Premaanjali Festival 2012" a musical concert held at the Palace Grounds in Bangalore on February 7, 2012. Pandit Ravi shankar performed with his daughter Anoushka Shankar in what is said to be his last concert in the city of Bangalore. AFP PHOTO/Manjunath KIRAN (Photo credit should read Manjunath Kiran/AFP/Getty Images)
ছবি: Manjunath Kiran/AFP/Getty Images

রবীন্দ্র শঙ্করের জন্ম ১৯২০ সালে, বারাণসীতে, এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে৷ চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট৷ বাবা এক বিশ্ব-ভবঘুরে, উকিল, দার্শনিক, লেখক৷ আট বছর বয়স হবার আগে রবি শঙ্কর তাঁকে চাক্ষুষ দেখেনইনি! মা-ই কষ্টেসৃষ্টে মানুষ করেছেন রবি শঙ্করকে৷

১৯৩০ সালে বড় ভাই উদয় শঙ্কর তাঁর নাচের দলের সঙ্গে গোটা পরিবারটিকে উঠিয়ে নিয়ে যান প্যারিসে৷ প্রায় আট বছর রবি শঙ্কর ছিলেন দাদার নাচের দলের সঙ্গে যুক্ত: উদয় শঙ্করের গোষ্ঠী তখন দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলেছে৷ সেতারে রবি শঙ্করের বাজনশৈলীর একটি বিশেষত্ব ছিল: তাঁর সেতার শুধু গাইতো না, যেন নাচতোও৷ ওস্তাদ আলী আকবর খানের সঙ্গে সিন্ধু ভৈরবী কি শ্রী গোত্রীয় রাগে গোড়ার দিকের কোনো যুগলবন্দি শুনলেই তা আজও স্পষ্ট হয়ে উঠবে৷ কে জানে, দাদার নাচের দল থেকেই হয়ত রবি শঙ্করের এই তাল-লয়ের প্রতি নটসুলভ অনুরাগ এসেছে!

২০০৬ সালে কন্যা অনুশকার সঙ্গে একই মঞ্চে রবি শঙ্কর

আলী আকবরের পিতা, স্বনামধন্য ওস্তাদ আলাউদ্দীন খানের শিষ্য ছিলেন রবি শঙ্কর৷ সেই সূত্রেই গুরুকন্যা অন্নপূর্ণার সঙ্গে প্রথম বিবাহ৷ এভাবে ভারতীয় মার্গ সংগীতের খানদান থেকে বিটলস গোষ্ঠীর জর্জ হ্যারিসন অবধি বিস্তার এবং বিচরণ ছিল রবি শঙ্করের৷ হিপ্পি আমলে ‘রাভি শাংকার' – এ যখন ব্যাপক উন্মাদনা, তখন একটি কনসার্টে রবি শঙ্কর খরজের তারগুলো মেলানোর পর উপস্থিত মার্কিন জনতা করতালি দিয়ে ওঠে৷ রবি শঙ্কর মাইক টেনে নিয়ে তাঁর বিদেশি বন্ধুদের বললেন, ‘তার মেলানোই যদি এত ভালো লাগে, তবে বাজনাটা নিশ্চয় আরো ভালো লাগবে৷' একেই বলে রসবোধ৷

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময় বিদেশি বন্ধুদের নিয়েই রবি শঙ্কর নেমে পড়েছিলেন মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষে প্রচার এবং ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বন্ধু জর্জ হ্যারিসনকে নিয়ে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'৷ বিশ্ব সংগীতের বিখ্যাত এই দুই বন্ধু ছাড়াও সেখানে অংশ নিয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেস্টন, জোয়ান বায়েজ, আলী আকবর খানের মতো শিল্পীরা৷ তাই বাংলাদেশ চিরকাল মনে রাখবে তাঁকে৷

রবি শঙ্করের এক মেয়ে নোরা জোন্স, অন্যজন অনুশকা৷ একজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নামকরা জ্যাজ গায়িকা, অন্যজন বাবার মতোই সেতার বাজান৷ গত নভেম্বরে মেয়ে অনুশকার সঙ্গে শেষবার স্টেজে বসেন রবি শঙ্কর৷ প্রচারপত্রে লেখা ছিল – শিল্পীর শিল্পসাধনার দশম দশকের সূচনা উদযাপনে এই কনসার্ট!

সত্যাজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি', রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী'-র মতো ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন৷ ইয়েহুদ মেনুহিনের মতো বেহালাবাদকের সঙ্গে যুগলবন্দি বাজিয়েছেন – ভারতীয় রাগে৷ জঁ পিয়ের রামপালের মতো পশ্চিমি বাঁশি-বাদকের জন্য সুর করেছেন, লিখেছেন শাকুকাচি এবং কোতো-র মতো জাপানি সুরযন্ত্রের জন্য সংগীত৷ সেই সঙ্গে আছে এবং থাকবে রবি শঙ্করের স্বরচিত, স্বসৃষ্ট ৩১টি রাগ৷

রবি শঙ্কর চলে গেলেন৷ যেন বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় মার্গ সংগীতের ধারাটিকে একবিংশ শতাব্দীর জন্য সযত্নে সাজিয়ে-গুছিয়ে, নোঙর তুলে, পাল উঠিয়ে দিয়ে গেলেন৷ যেন এক্ষুনি আবার আলি আকবর খানের সঙ্গে যুগলবন্দিতে বসবেন, যেমন শুনেছি কোন কালে কলকাতার আশুতোষ কলেজের কোনো কনসার্টে: স্টেজের ওপর বসে ছিলেন নাকি আলাউদ্দীন খান স্বয়ং, খেয়াল রাখছিলেন, আগামীকালের দিকপাল তরুণ শিল্পীরা বেচাল কিছু যেন বাজিয়ে না ফেলে...

এসি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি, পিটিআই)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ