1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পণ্যের মান দেখবে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, শুভেচ্ছা দূত না’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

ই-অরেঞ্জ নামের একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের প্রায় ১১শ' কোটি টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ প্রতিষ্ঠানটির শুভেচ্ছা দূত ছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা৷ এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি৷

Cricket Spieler Bangladesch: Mashrafe Mortaza
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/A. Boyers

ডয়চে ভেলে: তারকারা যে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের মডেল হনতারা কি পণ্যের ব্যাপারে খোঁজ -খবর নিয়ে মডেল হন, নাকি খোঁজ না নিয়েই...?

মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা: এখন আপনি কোন পণ্যের খোঁজ নেবেন? ধরেন আপনার কাছে একটা ইলেকট্রিক কোম্পানি আসলো, সেখানে একটা এসি বা একটা মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপন করলেন৷ আপনি হয়ত ওই প্রোডাক্টটা সম্পর্কে জানলেন৷ আপনি যে পণ্যটার বিজ্ঞাপন করছেন, সেই পণ্যটা সম্পর্কেই জানবেন৷ এর বাইরে আপনি কিভাবে জানবেন?

সেই পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে কি জানার সুযোগ থাকে?

এটা কোনো শুভেচ্ছা দূতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না৷ কেউ যখন একটা দেশে ব্যবসা করছে, সেখানে তো গুণগত মান পরীক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে৷ কিন্তু তারা তো তাদের পণ্যের গুণগত মান বা পলিসি নিয়ে তো শুভেচ্ছা দূতের সঙ্গে আলোচনা করবে না৷ আজ পর্যন্ত তো শুনিনি৷

যে কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার আগে তারকাদের ওই পণ্যের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনাআপনি কী মনে করেন?

আসলে আপনি কী খোঁজ-খবর নেবেন? একটা কোম্পানির আপনি শুভেচ্ছা দূত হচ্ছেন, ওই কোম্পানির তো অনেক প্রোডাক্ট আছে৷

ধরেন আপনি একটা সাবানের বিজ্ঞাপন করবেনওই সাবানটি কিনে মানুষ প্রতারিত হবে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগ আছে কি-না?

তাহলে তো আপনাকে মালিকানায় ঢুকতে হবে৷ ম্যানুফেকচার যেখানে হচ্ছে, সেখানে যেতে হবে৷ একটা কোম্পানির সিইও যারা থাকে বা শেয়ার হোল্ডার যারা থাকে, তারা খোঁজ-খবর রাখতে পারে৷ যারা এই বিজনেসটা করছে, এটা তাদের বিষয়৷ শুভেচ্ছা দূতের কাজ হচ্ছে, আপনি আমাদের কোম্পানির শুভেচ্ছা দূত, আপনার সঙ্গে এত টাকার চুক্তি, আপনি ৬ মাসে তিন দিন, বছরে ৬ দিন সময় দেবেন৷ সারা পৃথিবীতে এটাই প্রচলিত৷ একটি মুদি দোকান দিতে হলেও লাইসেন্সের দরকার হয়৷ লাইসেন্স তো কোনো শুভেচ্ছা দূত দেয় না৷

‘এটা কোনো শুভেচ্ছা দূতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না’

This browser does not support the audio element.

আমরা কিন্তু এমনও দেখেছি, এভারেস্টজয়ী ওয়াসফিয়া নাজরীন একটি কোমল পানীয় প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন করেননি৷ তিনি বলেছেন, এটা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ আপনার ক্ষেত্রে কখনো এমন হয়েছে?

দুই-তিন মাস আগেই অ্যামেরিকা থেকে আমার কাছে পাপজি গেমের বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়ার অফার এসেছিল৷ অনেক টাকার অফার ছিল৷ কিন্তু আমি করিনি৷ এটা খেললে বাচ্চারা নষ্ট হবে, এজন্য আমি না করে দিয়েছি৷ আমি আসলে যেটা বুঝাতে চাচ্ছি, খালি চোখে আপনি যেটা চিন্তা করতে পারবেন৷ আমি দেখেছি, পাপজিতে অনেক বাচ্চা অংশ নিচ্ছে৷ তারা মোবাইল নিয়ে বসে আছে৷ তখন কিন্তু আপনি রিয়েলাইজ করতে পারেন বাচ্চারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এটাতে আসক্ত হয়ে গেছে৷ সেক্ষেত্রে আমি এটা করিনি৷ কিছু জিনিস আপনি ব্লাইন্ডলি বুঝতে পারবেন এই কাজটা খারাপ, সেটা করা যাবে না৷ কিন্তু আপনি একটি এসির বিজ্ঞাপন করলেন, সেটা ভালো না খারাপ, তা তো আপনি বুঝবেন না৷ সেটার জন্য তো ফ্যাক্টরিতে যেয়ে আপনার বসে থাকতে হবে৷ এটার জন্য লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ আছে৷ হ্যাঁ, আপনি যেটা দেখবেন, আপনি যার বিজ্ঞাপনে মডেল হচ্ছেন বা শুভেচ্ছা দূত তাদের এই দেশে ব্যবসা করার অনুমতি আছে কিনা৷ যদি না থাকে তাহলে আপনি হাজারো প্রশ্ন করতে পারবেন৷ এখন যারা লাইসেন্স দিচ্ছে, তাদেরই তো বিষয়টা দেখা উচিত৷ আমি তো কোম্পানির শুভেচ্ছা দূত, কোম্পানি তো আমার সঙ্গে এগুলো নিয়ে আলোচনা করবেই না৷

আপনি একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হলেন৷ আপনাকে দেখে বহু মানুষ ওই পণ্যটি কিনলো৷ সেটি কিনে মানুষ যদি প্রতারিত হন, তাহলে আপনার নৈতিক দায় আছে কিনা?   

সম্প্রতি যেটা হয়েছে, সে কারনেই নৈতিক দায় থেকেই আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের সহযোগিতা করেছি৷ নৈতিক দায় কিন্তু ডিপেন্ড করে, ধরেন আপনি একটা কোম্পানির কিছুই না, শুধু শুভেচ্ছা দূত৷ আপনি দায় এড়িয়ে যেতে পারেন৷ আমি তো ভাই কোম্পানির মালিকানায় নেই৷ আমি কেন এর দায় নিতে যাবো? আরেকটা বিষয় হলো, আমি শুভেচ্ছা দূত ছিলাম, আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা থাকতে পারে৷ আমি যদি পারি কিছু সহযোগিতা করবো৷ কিন্তু নৈতিক দায়ের কথা বললে আপনাকে গোড়ায় ফিরে যেতে হবে৷ যারা লাইসেন্স দিচ্ছে, তাদের এটা দেখতে হবে৷ শুভেচ্ছা দূতকে দায় দিয়ে শুধু শুধু লাভ কী?

ই-অরেঞ্জের ঘটনায় তাহলে আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নৈতিকতার জায়গা থেকে?

আমার যদি তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট থাকতো তাতেই বা কী? যেমন ধরেন, এসপিসি কোম্পানির সঙ্গে আমার কন্ট্রাক্ট ছিল৷ কন্ট্রাক্ট থাকা না থাকার বিষয়ে পরে আসেন৷ এসপিসিতে আমি কন্ট্রাক্ট শেষ করেছি৷ আমি নিজে লেটার দিয়ে৷ কন্ট্রাক্ট্রের বিষয়টা হচ্ছে, যে কোনো পক্ষ, মালিক বা শুভেচ্ছা দূত এক মাসের নোর্টিশ দিয়ে এটা শেষ করে দিতে পারে৷ ই-অরেঞ্জে ছিলাম, আছি যাই বলেন না কেন, মানুষগুলো এসে যখন বলছেন, আপনাকে দেখে গেছি, তাই তো? এখানে অনেক রকম কথা আমার দিক থেকে বলতে পারি৷ এগুলো বললে যারা ক্ষতিগ্রস্থ, তারা শুধু শুধু কষ্ট পাবেন৷ কিন্তু বাস্তবে যদি আপনি চিন্তা করেন একজন শুভেচ্ছা দূত আসলে কী করতে পারে? আমি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চিন্তা করি৷ আমি যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই, এই মানুষগুলো যাবে কোথায়? আমি এক স্টেপ উপরে চিন্তা করেছি, যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তারা তো আমার দেশের মানুষ৷ আমি ক্রিকেট খেলেছি, এরা কোনো সময় আমাকে গালি দিছে, কখনো তালি দিছে, অনেক কিছুই হয়েছে৷ ফলে আমি নৈতিক জায়গা থেকে, খারাপ লাগা থেকে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি৷ দ্বিতীয়ত, এরা তো অনেক আগে থেকেই ব্যবসা করছে৷ আমি শুভেচ্ছা দূত হওয়ার আগে পরে বা আমি থাকার সময়ও যে লাভ তারা করেছে, তখন কেউ তো আমাকে এসে মিষ্টি খাইয়ে যায়নি৷ গিয়েছে নাকি? এটা নিশ্চয়ই না৷ যখন লাভ করেছেন, তখন তো ভাই আপনারা এসব কথা বলেননি৷ এমন অনেক কথা আছে বলা যায়, কিন্তু আমার জায়গা থেকে বলা ঠিক হবে না৷ এজন্য হবে না যে, আমার ব্যক্তিত্বে বাধা দিচ্ছে৷ আমি যদি তাদের কোনো উপকারে আসতে পারি সেজন্যই চেষ্টা করছি৷ আমি যেহেতু তাদের মালিক না, ফলে আমার আইনগত কোনো বাধা নেই৷ আমি তো সরে আসতেই পারতাম৷ আমি খারাপ লাগা থেকেই তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি৷

আপনারা যখন কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন করার জন্য কোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, তখন কি বিজ্ঞাপনী সংস্থা পণ্যটির ব্যাপারে আপনাদের অবহিত করে?  

কোনো কোনো ক্ষেত্রে করে৷ যেমন ধরেন, আমি যখন ওয়ালটনে ছিলাম, তখন কী হয়েছে, ওদের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে বছরে আমি ওদের ৫ দিন সময় দেবো৷ এর মধ্যে দুইদিন শুটিং রাখে, একদিন রাখে সাইনিংয়ের জন্য, আরেকদিন রাখে হয়তো ফটোশুট, আরেকদিন কীভাবে ব্যবহার করে, যেমন কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়৷ বা কোম্পানিতে নিয়ে দেখায়৷ সর্বোচ্চ এটা হয়, তা-ও সব কোম্পানি এটা করে না৷ ওদের আমার ৫ দিন দেওয়ার দায়িত্ব, ওরা ৫ দিন আমার কাছ থেকে বুঝে নেবে৷ এখন এই ৫ দিন ওরা কীভাবে ব্যবহার করবে সেটা ওদের ব্যাপার৷  

পণ্যের বিজ্ঞাপনে তারকাকে দেখে মানুষ প্রতারিত হলে এর দায়টি আসলে কার হবে?

এখন কোনো তারকা যদি অনুমোদনহীন কোনো প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে যান, তাহলে ওই তারকাকে প্রশ্নের সমূখীন হতে হবে৷ আর যদি অনুমোদন পাওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানে যান. তাহলে এর উত্তর আমি জানি না৷ আপনি সাংবাদিক আপনার জানার কথা৷ যারা অনুমোদন দেন তাদের প্রশ্ন করলেই তারা বলতে পারবেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ