1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পণ্য ও পরিষেবা করের এক বছর

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৪ জুলাই ২০১৮

পণ্য ও পরিষেবা করের বর্ষপূর্তি হলো ৩০ জুন৷ ঠিক এক বছর আগে সংসদের সেন্ট্রাল হলে জাঁকজমক করে মধ্যরাতে ঘন্টা বাজিয়ে নতুন ‌কর‌ ‌বন্দোবস্ত চালু করে মোদী সরকার৷ সবারই এক প্রশ্ন, কতটুকু ফলদায়ী হলো এই কর ব্যবস্থা?

Indien indischer Buchhändler zeigt Broschüren über Mehrwertsteuer
ছবি: Getty Images/AFP/D. Y. Chowdhury

জিএসটি'‌র বর্ষপূর্তি উদযাপন করলো মোদী সরকার৷ নতুন এই কর ব্যবস্থার সাফল্য ও বিফলতা নিয়ে গোটা ভারতের রাজনীতি উত্তাল৷ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিরোধীরা৷ বিশেষত কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ অন্যান্য দলগুলি৷ কংগ্রেস দলের পেশ করা এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশের বেশিরভাগ (‌৬৩ শতাংশ)‌ মানুষ মনে করছেন, জিএসটি চালু হওয়ার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এতটুকু কমেনি৷ বরং বেড়েছে৷ ৫৭ শতাংশ মানুষের মতে, রেস্তোরাঁয় খাবারের খরচ অনেকাংশে বেড়েছে৷ আবার, ৬১ শতাংশ মানুষের মতে, কর আদায় করা ও জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত জটিলতায় আটকা পড়ছেন ব্যবসায়ীরা৷ খরচও কয়েকগুন বেড়েছে৷ এদিকে, বসে নেইশাসক দল বিজেপি৷ এই ইস্যুতে কংগ্রেসকে পালটা আক্রমণ করে চলেছে তারাও৷ বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য, ‘‘‌মার্সিডিজ গাড়ি এবং দুধের ওপর একই হারে কর বসতে পারে না৷ ‌কংগ্রেসের দাবি মেনে নিলে রাতারাতি খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে৷''

গতবছর ১ জুলাই থেকে শুরু হয় জিএসটি৷ পণ্য বিক্রি ও পরিষেবার ওপর একটাই কর৷ সরকারের দাবি ছিল, জিএসটি আনার লক্ষ্য, দেশে চালু থাকা প্রায় ২০-‌২৫টি (‌‌সিএসটি, ভ্যাট, সার্ভিস ট্যাক্স)‌ কর বাতিল করে একটি মাত্র কর চালু করা৷ বর্তমানে বিশেষজ্ঞতের মত, জিএসটি-‌র সঙ্গে যুক্ত প্রশাসনিক কর্মীরা এখনও অপ্রশিক্ষিত৷ তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে আপ-‌টু-‌ডেট করার পরিবর্তে জোর করে কর আদায় করতে শুরু করেছে সরকার৷ এতে ঘুরিয়ে প্রসাসনিক কর্তাদের ‘‌দাদাগিরি'‌ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এছাড়াও জিএসটিএন বা জিএসটি নেটওয়ার্কের আগাম পরীক্ষা করা হয়নি৷ তা সত্ত্বেও ভারত সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, দেশে জিএসটি চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ৭০ শতাংশ পরোক্ষ করদাতা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ১৭টি কর ও ২৩টি সেস এক জায়গায় এসে মিশেছে৷ চেকপোস্টের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে৷

পোড় খাওয়া রাজনীতিক এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পালানিআপ্পান চিদাম্বরমের সরাসরি অভিযোগ, ‌জিএসটি হলো মোদী সরকারের অপরিকল্পিত ও হঠকারী সিদ্ধান্তের ফসল, যার কুফল ভোগ করছে গোটা দেশ৷ নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের মতোই জিএসটি চালু করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি৷ ছোট-‌বড় ব্যবসায়ী থেকে রপ্তানিকারকম সবাই পথে বসেছেন জিএসটি'‌র জন্য৷ তাঁর কথায়, ‌‘‘‌জনগণ ও ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্কের শব্দ পণ্য ও পরিষেবা কর৷ জিএসটি'‌র জন্য দেশ তৈরি ছিল না৷ জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অপরিকল্পিত ও হঠকারীভাবে চালু করা হয়েছে এই কর ব্যবস্থা৷ প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়ে আবার একবার ‘‌ইউটার্ণ'‌ নিচ্ছেন মোদিী৷'‌'‌ তামিলনাড়ু বিধানসভায় সে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর এক বিবৃতির উল্লেখ করে চিদাম্বরম বললেন, ‘‌‘‌২০১৭-‌১৮ সালে ৫০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বন্ধ হয়েছে৷ কর্মহীন হয়েছে ৫ লাখ লোক৷ জিএসটি-‌তে একাধিক হার আছে৷ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত করের হার রাখা হয়েছে৷ ইচ্ছেমতো কর নির্ধারণ করায় জিএসটি-‌র মূল উদ্দেশ্যটিই বিকৃত হয়েছে৷''‌

ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে জিএসটি চালু হওয়ার পরেও মুদ্রাস্ফীতির উপর কোনো প্রভাব পড়েনি৷ ক্রেতাদের কাছে অনেক পণ্য বা পরিষেবার দাম আপেক্ষিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ উদাহরণ হিসেব বলা যেতে পারে, আগে ইন্টারনেটে সিনেমার টিকিট ক্রয় করলে বুকিং চার্জের ১৪ শতাংশ সার্ভিস ট্যাক্স, ০ দশমিক ৫ শতাংশ স্বচ্ছ ভারত সেস এবং ০ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষি কল্যাণ সেস দিতে হতো৷ অর্থাৎ মোট ১৫ শতাংশ৷ এখন তাঁর জায়গায় ‘‌এক দেশ এক কর'‌-‌এর নামে দিতে হচ্ছে ১৮ শতাংশ জিএসটি৷ তাছাড়া পেট্রোপণ্য ও বিদ্যুৎ পরিষেবাকে জিএসটি-র আওতায় আনা হয়নি কেন?‌ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ কারণ, দেশের অর্থনীতির প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রিত হয় এই পেট্রোপণ্য ও বিদ্যুতের আয়-‌ব্যায়ে৷ অথচ, এই দু'টি বিষয়কে জিএসটি'র আওতায় থেকে বাদ রেখে দেশজুড়ে একক কর ব্যবস্থার দামামা বাজাচ্ছে সরকার!

ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিষেবা নিলে জিএসটি থাকছে৷ সরকার ১৫ শতাংশ সার্ভিস ট্যাক্স থেকে এক লাফে ১৮ শতাংশ জিএসটি করার ফলে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে৷ এই তালিকায় পড়ছে ক্রেডিট কার্ড৷ আগে ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্টে যদি ১৫ শতাংশ হারে ৫০২ টাকা ট্যাক্স বাবদ আসতো, এখন আসে ৬০২ টাকা৷ কারণ, ১৮ শতাংশ জিএসটি৷ একইভাবে এটিএম ব্যবহারে খরচ বেড়েছে৷

পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী জিএসটি নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ৷ তিনি জানালেন, ‘‌‘‌বিশ্বে ১১৫টি দেশে জিএসটি চালু আছে৷ নকল করতে হলে তাতেও দক্ষতা লাগে৷ এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সরকার অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে৷ শতকে একবারই এমন সুযোগ আসে সরকারের হাতে৷ আমাদের বলা হয়েছিল, এই কর চালু হলে কেন্দ্র, রাজ্য, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের উপকার হবে৷ করের হার অনেক কমে যাবে৷ কিন্তু, বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটা৷ এর কারণ, মোদী সরকার এই করের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা পর্যন্ত করেনি৷ কোনো রাজ্যই খুশি নয়৷'‌'

‌জিএসটি চালু হওয়ার পর তৈরি হচ্ছে এমন বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনলে কর, সরকারি স্ট্যাম্প ডিউটি ও পঞ্জিকরণের খরচ মিলিয়ে অতিরিক্ত ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২১ দশমিক ১ শতাংশ দিতে হচ্ছে৷ জিএসটি ১২ শতাংশ, ৪ থেকে ৮ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি এবং পঞ্জিকরণের খরচ ০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত৷ গত বছর ১ জুলাইয়ের আগে এজন্য দিতে হতো ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ৷ আগে পরিষেবা কর ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ৷ ভ্যাট ছিল ০ থেকে ৫ শতাংশ৷ স্ট্যাম্প ডিউটি ছিল ৪ থেকে ৮ শতাংশ৷ পঞ্জিকরণের খরচ ছিল ০ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ