1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌পথে বসেছেন ওঁরা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছিল শহরের অন্যতম পুরনো জনবসতি এলাকার নিচে৷ হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে বাড়ি৷ রাতারাতি রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়েছে বাসিন্দাদের৷

Indien Bowbazar - Versinkende Stadt
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

‘‌জন্মের পর মায়ের কোলে চড়ে যে বাড়িতে ঢুকেছিলাম, রাতারাতি সেখান থেকে বেঘর হতে হল৷ কী আর বলব, বলুন!‌এখন কাজকর্ম ফেলে রোজ এসে এই উল্টোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকছি৷ বাড়িটার খেয়াল রাখছি৷ আর তো কিছু করার নেই এখন!‌'‌
কথাটা বলতে বলতে চোখ ছলছল করে উঠল সঞ্জীব বড়ালের৷ ছোটবেলা থেকে যে পাড়ায় বাস, ওঁর ছেলেরও জন্ম, বড় হয়ে ওঠা যেখানে, সেই গোটা এলাকাটা এখন ‘‌বিপজ্জনক'‌৷ পুলিস ব্যারিকেড করে রেখেছে পর পর চারটে গলির মুখ৷ বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে হেলে পড়া, ভেঙে যাওয়া বাড়িগুলো৷ কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷ তার পরেও খালি ব্যাগ হাতে গলির মুখে দাঁড়িয়ে আছেন প্রচুর মানুষ, বিশেষত মহিলারা৷ যদি একবার ভেতরে যেতে দেয়, যদি কিছু জিনিস বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করে আনা যায়৷ আর সঞ্জীবের মতো অসহায় লোকজন উল্টোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন বাড়িগুলোর দিকে৷ বাসিন্দাদের ঢুকতে না দিলেও যদি উটকো কেউ ঢুকে পড়ে ফাঁকতালে!‌ যদি কিছু চুরি হয়ে যায়৷ মাত্র পাঁচ মিনিটের নোটিসে বেরিয়ে আসতে হয়েছে এক কাপড়ে৷ প্রায় কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি৷
মধ্য কলকাতার বৌবাজার এলাকার বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট৷ দুধারে পর পর সোনার গহনার দোকান৷ বড় রাস্তা থেকে পর পর ঢুকে গেছে গলিগুলো৷ ঘন জনবসতি এলাকার পরিচিতি স্যাকরাপাড়া হিসেবে৷ বহু মানুষের বাস৷ এই এলাকারই মাটির নিচে মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছিল৷ হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওপরের কয়েকটা বাড়ি৷ বড় বড় ফাটল দেখা দেয় আরও বেশ কিছু বাড়িতে৷ মোট ৩২টা বাড়ি৷ গোটা একটা পাড়া৷ অনেকগুলো মানুষ৷ খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ আপাতত এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে এক একটি পরিবারকে৷ অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা হয়েছে কাছাকাছির হোটেলে৷
একটা কথা শোনা যাচ্ছে, যে হাওড়া এবং কলকাতাকে জুড়ে দেওয়ার জন্য হুগলি নদীর তলা দিয়ে যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছিল, তার মূল নকশায় বৌবাজারের এই পুরনো পাড়ার তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কথা ছিল না৷ কিন্তু যে রুট আগে ঠিক হয়েছিল, সেখানকার কিছু দোকানদার এবং ব্যবসায়ী আপত্তি তোলেন৷ আদালতে চলে যান ওঁরা৷ ২০১৩ সালের সেই বিরোধে বর্তমান রাজ্য সরকারের থেকেও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি৷ ফলে মেট্রোর রুট ঘোরাতে হয়৷ তার পর এই বিপত্তি৷
মামলার কথাটা তাঁদের জানা ছিল না৷ বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা আশিস সেন৷ কিন্তু তিনি বলছেন, এটা ‘‌ম্যান মেড ডিজাস্টার'‌৷ অর্থাৎ মেট্রো কর্তৃপক্ষের কারণেই এই বিপর্যয়৷ নয়ত মেট্রো ক'‌দিন আগে পাড়ায় এসে কেন বলেছিল, যে তিন-চারদিনের জন্যে বাড়ি খালি করে চলে যেতে?‌ওই অংশে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ হলে আবার ফিরে আসতে?‌ওরা নিশ্চয়ই আন্দাজ করেছিল যে কিছু একটা হতে পারে!‌বলছেন আশিস সেন৷ আর মেট্রো কর্তৃপক্ষ কী বলছে?‌কাছেই গোয়েঙ্কা কলেজের ভেতর মেট্রো রেল অস্থায়ী দপ্তর খুলে রোজ বসছেন মেট্রোর আধিকারিকরা৷ তাঁদের ঘিরে ধরে দিনভর এলাকার মানুষের লাগাতার বিক্ষোভ৷ আলাদা করে কিছু বলার অবস্থায় নেই ওঁরা৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত৷
স্যাকরাপাড়া লেন, দুর্গা পিতুরি লেন-এর মতো যে রাস্তা এবং এলাকা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত, তার আসপাশের এলাকা এখন একইরকম সন্ত্রস্ত৷ কারণ আরও ২২টা বাড়িতে ফাটল দেখা গেছে৷ এদিকে মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার যন্ত্রটি চাপা পড়ে আছে মাটির নিচে৷ বহু কোটি টাকা দামের সেই বিদেশি খননযন্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা করলে আরও বিপত্তি হতে পারে৷ আর এই সব মিলিয়ে আরও অন্তত এক বছর পিছিয়ে গেল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ, যা আগে থেকেই ঢিমে তালে চলছিল৷

আশিস সেন

This browser does not support the audio element.

সঞ্জীব বরাল

This browser does not support the audio element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ