পথ ছেড়ে আঁকার ক্লাসে করাচির পথশিশুরা
১২ জুলাই ২০১০তানভিরের বয়স যখন ১১ তখন সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়৷ এবং করাচির রাস্তাঘাটে এক যৌনকর্মী হিসেবে শুরু হয় তার জীবন৷ কিন্তু এখন সে ছবি আঁকা শিখছে এবং স্বপ্ন দেখছে সুন্দর এক ভবিষ্যতের৷ একটি আর্ট স্টুডিওতে বসে তানভির জানায়, করাচির রাস্তায় চার বছর অত্যন্ত কদর্য জীবনযাপন করেছে সে৷ যা ছিল জীবনেরই অবমাননা৷ সে বলে, আমি জানতাম না কী হবে৷ আমি পড়ালেখা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার পরিবার আমাকে কাজ করার জন্যে চাপ দিতে থাকে৷ তাদের অত্যাচারে পালিয়ে যাই আমি৷
রানা আসিফ হাবিবের দেখা পাবার আগে, তানভিরের জীবন ছিল লাগামহীন৷ দুঃস্থ শিশুদের পুনর্বাসনের জন্যে রানা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন৷ দাতব্য সংস্থাটি শুধু দুঃস্থ শিশুদের পুনর্বাসনই করে না, ধীরে ধীরে তাদের পরিবারের সঙ্গেও পুনর্মিলনের ব্যাবস্থা করে৷
তানভির বললো, আমি এখন ছবি আঁকি এবং ছবি তুলি৷ রাতের স্কুলে পড়ালেখা শিখছি এবং দিনে একটি দোকানে কাজ করছি৷ সে জানালো, বাবা-মা এবং তিনটি ছোট ভাইবোনের সঙ্গে সে এখন ভালোই আছে৷ তানভির তার অতীতের অবমাননাকর জীবন নিয়ে জনসমক্ষে কথা বলতে চায় না৷ রানা বলেন, যৌন ব্যবসার অনেক ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তার জীবনের ওপর ছায়াপাত করে৷ তিনি বলেন, বহু দুঃস্থ শিশুর জীবনই এই ব্যবসার ফাঁদে পড়ছে৷ তিনি জানান, তানভির তাদেরই একজন, যারা আমাদের উপদেশ গ্রহণ করেছে৷ এরকম অনেকেই রয়েছে যারা সহজে এই পথ ছেড়ে আসেনি৷ তবে শেষ পর্যন্ত তানভির নিজেকে সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে প্রমাণ করেছে৷ রানা বলেন, অপরিকল্পিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, যুদ্ধ, দারিদ্র্য, অভ্যন্তরীণ সংঘাত, এবং স্কুলে মাদ্রাসায় সহিংসতার শিকার হয়েছে এই শিশুরা৷ তাদের স্থান হয়েছে রাস্তায়৷
করাচি শহরের হাজার হাজার পথশিশু নিরক্ষরতা, অশিক্ষা এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কারণেই পরিণত হচ্ছে সত্যিকার অপরাধীতে৷ হচ্ছে মাদকাসক্ত এবং পড়ে যাচ্ছে ইসলামি জঙ্গিদের কবলে৷ রানা আসিফ হাবিবের আইএইচডিএফ দাতব্য প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য সুস্থ এক জীবনের সম্ভাবনা তুলে ধরেছে৷ এই ফাউন্ডেশনেই ১৫ জন পথশিশু আঁকা আর ফোটোগ্রাফির শিক্ষা পাচ্ছে৷ তানভির তাদেরই একজন৷
প্রতিবেদনঃ ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনাঃ আব্দুল্লাহ আল-ফারূক