ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তার দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অনেক সাংসদ৷
বিজ্ঞাপন
বড়দিন ও নববর্ষের ছুটিতে ট্রুডো নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন বলে জানিয়েছে তার দলের একটি সূত্র৷
নয় বছর ধরে ক্ষমতায় আছে ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি৷ এই দলের প্রতি ভোটারদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে বলে সাম্প্রতিক জরিপ বলছে৷ এছাড়া সবকিছুর দাম বাড়া এবং আবাসন সংকটের কারণে ট্রুডো সরকারের জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে৷
এই অবস্থায় সরকারি ব্যয় নিয়ে ট্রুডোর সঙ্গে মতভেদের জেরে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড৷
এরপরই সব বিরোধী দল জানিয়ে দেয় যে, ট্রুডোর সরকারকে হটাতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে৷ শুল্ক আরোপ সংক্রান্ত মার্কিন হুমকি মোকাবিলার জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা৷
সবশেষ ২০২১ সালের নির্বাচনে ৩৩৮ আসনের মধ্যে ১৬০টি জেতে ট্রুডোর দল৷ কিন্তু এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭০ আসন৷ তাই মাইনোরিটি সরকার পরিচালনা করছেন ট্রুডো৷ ২০২৫ সালের ২০ অক্টোবরের আগে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা৷
তার আগে দলকে শক্তিশালী করতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মনে করছেন লিবারের পার্টির নেতারা৷ সেই পথ তৈরি করতে ট্রুডোর পদত্যাগ করা উচিত বলে একমত হয়েছেন দেশটির ১০টি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল অন্টারিও রাজ্যের ৫০-এর বেশি লিবারেল সাংসদ৷ শনিবার তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছান বলে জানিয়েছে ক্যানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন সিবিসি৷ ‘‘এই মুহূর্তে নেতৃত্ব পরিবর্তন আনা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই,'' বলে রোববার সিবিসিকে জানান লিবারেল সাংসদ চন্দ্রা আরিয়া৷ ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তিনি৷
জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবন
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৩ সালে দলের নেতা নির্বাচিত হন৷ দুবছর পর তার দল সরকার গঠনে সমর্থ হয়৷ বর্তমানে ট্রুডোর দলের প্রতি সমর্থন অনেক কমে গেছে৷ ছবিঘরে ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা থাকছে৷
ছবি: Sean Kilpatrick/The Canadian Press/AP/picture alliance
অক্টোবর, ২০১৩
লিবারেল দলের নেতা নির্বাচিত হন৷ সেই সময় দলটি জনপ্রিয়তার বিচারে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল৷ কারণ, দুই বছর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে লিবারেলরা প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে নেমে গিয়েছিল৷ লিবারেল দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর ছেলে জাস্টিন ট্রুডো৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Vaughan
অক্টোবর, ২০১৫
দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ট্রুডোর দল সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়৷ প্রথমবারের মতো হাউস অফ কমন্সে তিন নম্বরে থাকা একটি দল নির্বাচনে জয়ী হয়৷
ছবি: Reuters/C. Wattie
ডিসেম্বর ২০১৭
২০১৬ সালে আগা খানের কাছ থেকে ভ্রমণ, উপহার ও ফ্লাইট সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে ট্রুডো স্বার্থের দ্বন্দ্ব আইন ভঙ্গ করেছেন বলে রায় দিয়েছিল ক্যানাডার এথিকস কমিশনার৷ কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন রায় ওটাই প্রথম ছিল৷
ছবি: Reuters/C. Wattie
ফেব্রুয়ারি ২০১৯
সাবেক বিচারমন্ত্রী জোডি উইলসন-রেবোল্ড (ছবি) অভিযোগ করেন, এসএনসি-লাভালিন কোম্পানির বিরুদ্ধে যেন দুর্নীতির অভিযোগে বিচার করা না হয় সেজন্য তাকে চাপ দিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা৷ এই ঘটনায় পদত্যাগ করেছিলেন তিনি৷ পাবলিক ওয়ার্কস মন্ত্রী জেন ফিলপটও ট্রুডোর প্রতি আস্থা হারানোর অভিযোগে পদত্যাগ করেন৷ ট্রুডো সবসময় নিজেকে ফেমিনিস্ট হিসেবে উপস্থাপন করেন৷ তাই তাদের পদত্যাগ ট্রুডোর জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর ছিল৷
ছবি: picture-alliance/H. Ruckemann
সেপ্টেম্বর, ২০১৯
ট্রুডো যখন তরুণ ছিলেন তখন কৃষ্ণাঙ্গর রূপ ধারণ করতে মুখে কালো রং লাগিয়েছিলেন৷ ২০১৯ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের আগে এমন কিছু ছবি প্রকাশ হয়ে গেলে বিতর্ক শুরু হয়৷ ট্রুডো ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, তিনি একজন সব সুবিধা পাওয়া ছেলে হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন এবং সে কারণে একটি ‘কালো দাগ’ ছিল৷
ছবি: Reuters/CBC
অক্টোবর, ২০১৯
নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও মেজরিটি সরকার গঠনের মতো আসন পায়নি ট্রুডোর দল৷ সে কারণে তাকে জোট সরকার গঠন করতে হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
আগস্ট, ২০২০
করোনা মহামারি থেকে ক্যানাডারে উদ্ধার করতে কত অর্থ প্রয়োজন তা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পদত্যাগ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী বিল মরনৌ (ছবি)৷
ছবি: picture-alliance/J. Tang
সেপ্টেম্বর, ২০২১
ক্যানাডায় প্রতি চার বছর পর পর নির্বাচন হওয়ার কথা৷ তবে ট্রুডো ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ তার আশা ছিল, করোনা মোকাবিলায় সরকার ভালো করায় নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি মেজরিটি সরকার গঠন করতে পারবেন৷ কিন্তু তা হয়নি৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ট্রুডোর দলের জনপ্রিয়তা অনেক কমছে৷ সবশেষ জরিপ বলছে, এখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি মাত্র ২১ শতাংশ ভোট পাবে৷ বর্তমানের বিরোধী দল কনজারভেটিভরা পাবে ৪৩ শতাংশ ভোট৷ আর নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি এনডিপি পাবে ১৯ শতাংশ৷ এই অবস্থায় বুধবার সরকারের উপর থেকে স্বয়ংক্রিয় সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে এনডিপি৷ তাই ট্রুডোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: Sean Kilpatrick/The Canadian Press/AP/picture alliance
9 ছবি1 | 9
ট্রুডো পদত্যাগ করলে লিবারেল পার্টির দায়িত্বে যারা আসতে পারেন, তাদের মধ্যে আছেন সদ্য পদত্যাগ করা অর্থমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ড, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি, উদ্ভাবন বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রঁসোয়া-ফিলিপ শম্পানিয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি৷
তবে পদত্যাগের ব্যাপারে এখনও আগ্রহ দেখাননি ট্রুডো৷ লিবারেল পার্টির একটি সূত্রের বরাতে দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল পত্রিকা জানিয়েছে, পরিবারের সঙ্গে বড়দিন পালনের পর ট্রুডো ছুটি কাটাতে ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে যাবেন৷
লিবারেল পার্টির একটি সূত্র গতসপ্তাহে রয়টার্সকে জানিয়েছে, বড়দিন ও নববর্ষের ছুটিতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন ট্রুডো৷
জরিপ বলছে, নির্বাচনে বর্তমান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির কাছে ট্রুডোর লিবারেল পার্টির ভরাডুবি হবে৷
ট্রুডো পদত্যাগ না করলে অনাস্থা ভোটের ডাক দেওয়া হতে পারে৷ মার্চেই সেটি হতে পারে৷ সেই ভোটে ট্রুডোর হারা প্রায় নিশ্চিত৷