ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ন্যাটোয় ইউক্রেনের স্থায়ী আসনের জন্য চাপ তৈরি করছেন দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। বস্তুত, ন্যাটোর সদস্যদের মধ্যেও এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোর স্থায়ী সদস্য করার জন্য যদি তাকে পদত্যাগ করতে হয়, তিনি রাজি আছেন।
এদিন ট্রাম্পকেও এক হাত নিয়েছেন জেলেনস্কি। জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন ডনাল্ড ট্রাম্পের অ্যামেরিকা ইউক্রেনের সঙ্গী হিসেবে কাজ করবে। কেবলমাত্র যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবে না।
জেলেনস্কি একথা বলেছেন কারণ, সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, ইউক্রেনই এই যুদ্ধ শুরু করেছে। জেলেনস্কিকে স্বৈরাচারী বলেও অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, সে কারণেই ইউক্রেনে এবার নির্বাচন হতে দেননি দেশের প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
জেলেনস্কি এদিন বলেছেন, ''ট্রাম্পের অ্যামেরিকা কেবলমাত্র এক মধ্যস্থাকারীর ভূমিকা পালন করলে চলবে না। আপাতত ট্রাম্প সে কাজটিই করছেন।''
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন যে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে তিনি রাজি নন। কিন্তু ট্রাম্পের বক্তব্য,ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসে যুদ্ধ বন্ধ করার রাস্তা খোঁজা এবং একটি সমঝোতায় পৌঁছানো।
নিরাপত্তা প্রয়োজন
রোববার ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বছর। সাংবাদিক বৈঠকে জেলেনস্কি বলেছেন, অ্যামেরিকাকে বুঝতে হবে যে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা প্রয়োজন। ইউক্রেনকে বাঁচানোর জন্য অ্যামেরিকার সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ। জেলেনস্কির দাবি, অ্যামেরিকা তার বদলে ইউক্রেনের কাছ থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ নেয়। এটাই দুই দেশের চুক্তি। বস্তুত, ট্রাম্পের প্রতিনিধি সম্প্রতি ইউক্রেন গেছিলেন। রোববার সেই স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে সম্প্রতি অ্যামেরিকার একটি চুক্তি হয়েছে। অ্যামেরিকাকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ দিতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে উইটকফের বক্তব্য, ''রফাসূত্র খুঁজে বার করতে হলে দুই পক্ষকেই নমনীয় হতে হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই কাজটিই করার চেষ্টা করছেন। তিনি দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসানোর চেষ্টা করছেন।''
জেলেনস্কির বক্তব্য, অ্যামেরিকাকে ইউক্রেনের পক্ষে থাকতে হবে। এবং সেই মতোই সাম্প্রতিক চুক্তি সই হয়েছে।