করোনা ভাইরাস নিয়ে গোটা দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন ক্যানাডার অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিল মরনো। তবে তাঁর পদত্যাগের কারণ এখনো পর্যন্ত খুব স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা একটি চ্যারিটি প্রকল্পের সঙ্গে তিনি যুক্ত। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায়, প্রধানমন্ত্রীর চাপে পদত্যাগ করেছেন তিনি। তবে বিল মরনো নিজে সে কথা স্বীকার করেননি।
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Ozbilici
9 ছবি1 | 9
সোমবার নিজেই পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, নিজের ইচ্ছেতেই প্রধানমন্ত্রী কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেছেন। ফলে আপাতত তিনি আর মন্ত্রিসভার অংশ নন। নিজের কেন্দ্র থেকেও সাংসদ হিসেবে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পদত্যাগের কারণ ব্যক্তিগত বলেই জানিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, দ্বিতীয়বার নির্বাচনে লড়াইয়ের কোনও ইচ্ছা তাঁর ছিল না। সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। সে কারণেই দ্রুত পদত্যাগ করলেন। ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও জানিয়েছেন, বিলের সঙ্গে তাঁর পেশাদার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। তা বজায় থাকবে। ক্যানাডার অর্থনীতিতে বিলের ্বদানের কথাও স্বীকার করেছেন ট্রুডো।
উই চ্যারিটি দুর্নীতি
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই অস্থির সময়ে বিলের আচমকা পদত্যাগের নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে। করোনাকালে একটি চ্যারিটি প্রকল্প শুরু হয়েছে ক্যানাডায়। বহু তারকা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। উই চ্যারিটির উদ্দেশ্য বিশ্ব জুড়ে ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করা। বিশেষ করে করোনা-কালে যে সব দেশে ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়েছে, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাদের সাহায্য করা উই চ্যারিটির অন্যতম লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এবং অর্থমন্ত্রী বিল দুই জনেই এই চ্যারিটির সঙ্গে যুক্ত। শুধু তাই নয়, অর্থমন্ত্রী দুই মেয়েও এই চ্যারিটির অংশ বলে শোনা গিয়েছে। একজন বেতন পান সেখান থেকে। অভিযোগ এই চ্যারিটির টাকায় পরিবার নিয়ে কেনিয়ায় গিয়েছিলেন উই। সেই টাকা ফেরত দেননি তিনি। এটা একপ্রকার দুর্নীতি। এই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
তবে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, শুধু বিল নন, প্রধানমন্ত্রীও আতসকাচের বাইরে নন। তিনি কী ভাবে এই চ্যারিটির সঙ্গে যুক্ত, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরব বিরোধীরা
ক্যানাডার শাসক বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। নিউ ডেমোক্যাটিক দলের নেতা জগমিত সিং বলেছেন, ''ক্যানাডার এমন এক শাসক দরকার, যারা দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলবে, নিজেদের দুর্নীতি নিয়ে নয়।'' কনসারভেটিভ দল এর জন্য সরাসরি ট্রুডোকেই দায়ী করেছেন। তাদের বক্তব্য, বিলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন ট্রুডো। বস্তুত, বিরোধীরা প্রায় সকলেই ট্রুডোকেই এর জন্য দায়ী করছেন।
সরকারপন্থীদের একটি অংশের বক্তব্য, ট্রুডোর সঙ্গে বিলের মতবিরোধ চলছিল। সম্প্রতি ট্রুডো ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড এবং ব্যাঙ্ক অফ ক্যানাডার প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। করোনা-কালে তাঁর কাছে পরামর্শ চেয়েছেন। যা ভালো চোখে দেখেননি বিল। শুধু তাই নয়, অনেকের বক্তব্য, মার্ককেই পরবর্তী অর্থমন্ত্রী করার পরিকল্পনা করছিলেন ট্রুডো। যদিও বিল জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনও পরিকল্পনাই ছিল না তাঁর। ট্রুডো তাঁকে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো অপারেশন এবং ডেভেলপমেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল হওয়ার অনুরোধ করেছেন বলেও জানিয়েছেন বিল। তাঁর সঙ্গে ট্রুডোর দূরত্ব তৈরি হওয়ার যে আলোচনা বিভিন্ন মহলে হচ্ছে তা ঠিক নয় বলেই দাবি করেছেন বিল।