পদ্মায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করেছিল বলে জানান বাংলাদেশের নৌমন্ত্রী স্বয়ং শাহজাহান খান৷ এদিকে নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে পদ্মাপাড়ে চলছে স্বজনদের আহাজারি৷ ডুবে যাওয়া লঞ্চটি অবশ্য চিহ্নিত হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার দুপুরে ‘পিনাক-৬'-এর উদ্ধার কাজ দেখতে যান নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান৷ তিনি মাওয়া এলাকায় অবস্থানকালে জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চে তাঁর তিনজন ভাগ্নি ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা হলেও, অন্য দু'জন এখনো নিখোঁজ৷ ঐ তিনজন নৌমন্ত্রীর খালাতো বোনের মেয়ে৷ তাঁদের মধ্যে একজন শিকদার মেডিকেলের ছাত্রী, আরেকজন একটি কলেজের ছাত্রী৷ অন্যজন গ্রামে পড়াশোনা করেন৷ তাঁদের নাম স্বর্ণা, হিরা ও লাকি৷ এই কথা সংবাদিকদের বলতে গিয়ে নৌমন্ত্রী কেঁদে ফেলেন৷ জানান, ‘‘লঞ্চডুবির ঘটনায় কোনো কোনো পরিবারের ১০ জন পর্যন্ত লোক নিখোঁজ হয়েছে৷''
শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘লঞ্চটিতে কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে দেড়শ' বা ১৬০ জন যাত্রী ওঠে৷ যদি ওই যাত্রী না নিয়ে আসত, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না৷ কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে আবার ৮০ থেকে ১০০ জন যাত্রী লঞ্চে ওঠানো হয়৷ এতে সব মিলিয়ে ২৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল ওই লঞ্চে৷ এর মধ্যে নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা ১২৫ জন, উদ্ধার হওয়া যাত্রীর সংখ্যা ১১০ জন৷ অর্থাৎ ডুবে যাওয়া লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০ জন হবে৷''
নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ৷ আর নিহতদের দাফনের জন্য তাঁদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসন৷
ঈদফেরত যাত্রীদের নিয়ে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটের কাছাকাছি এসে সোমবার বেলা ১১টার দিকে ডুবে যায় লঞ্চটি৷
এর পর থেকে পদ্মার তীরে স্বজন হারানোদের ভিড় আর আহাজারি৷ তাঁরা লাশের অপেক্ষা করছেন৷ কম-বেশি দেড়শ' যাত্রীর সলিল সমাধির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ উদ্ধারকারী ডুবুরিরা জানান যে, প্রচণ্ড স্রোত আর গভীরতার কারণে তাঁরা নদীর তলদেশে পৌঁছাতে পারছেন না৷ তাঁদের ধারণা, স্রোতের টানে বহু লাশ ভেসে গেছে৷
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা
ঈদ মানেই আনন্দ আর এই আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতেই বাড়ি ফেরেন মানুষ৷ সেজন্য অনেকেই সারারাত অপেক্ষা করেন ট্রেনের টিকেটের জন্য কিংবা লঞ্চে ওঠেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে৷ সেরকমই কিছু ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
টিকিটের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগাম টিকেট সংগ্রহের জন্য মানুষের ভিড়৷ আগের দিন রাত থেকে এসব মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন টিকেটের জন্য৷ তবে যাত্রীর তুলনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আসন সংখ্যা কম হওয়ায় দিনভর অপেক্ষা শেষে অনেককেই ফিরতে হয় খালি হাতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঘরমুখো মানুষ
ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ ঈদের সময়ে যাত্রীর চাপের কারণে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ চিত্র আগের বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভালো৷
ছবি: DW/M. Mamun
আনন্দ ভাগাভাগি
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠছে হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এতো কষ্ট করে বাড়ি ফেরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাড়ির টান
ঈদের ছুটিতে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ৷ জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও ছাদে চেপে বসেছেন এসব মানুষ৷ ছাদে যাত্রী পরিবহণ নিষিদ্ধ হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাকুল মানুষের কাছে সকল নিষেধাজ্ঞাই উপেক্ষিত৷
ছবি: DW/M. Mamun
মানুষের ভিড়
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ৷ অন্যান্য পথের মতো নদীপথেও তাই ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষের ভিড় বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অন্যরকম আনন্দ
লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে বাড়ি ফিরছেন মানুষ৷ ঈদের সময় লঞ্চগুলোর ডেকে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ও শিশু
ঢাকার সদরঘাটে নৌকা থেকে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা৷ এভাবে উঠতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা৷ এরপরেও নারী ও শিশুদের নিয়ে এভাবেই লঞ্চে উঠতে দেখা যায় যাত্রীদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
খোলা ছাদে
লঞ্চের ডেকে জায়গা না পেয়ে খোলা ছাদে উঠে পড়েছেন হাজারো মানুষ৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ফলে প্রতিবছরই ঈদ মৌসুমে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক নৌযান, প্রাণ হারান অনেকেই৷ তারপরেও থেমে থাকে না অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঝুঁকির মধ্যেও আনন্দ
পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন এসব মানুষ৷ ভুলে গেছেন সরকারের নিষেধাজ্ঞা, নিজ জীবনের নিরাপত্তা৷ ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর চিত্র ছিল একই৷ এ যেন ঝুঁকির মধ্যে আনন্দ যাত্রা!
ছবি: DW/M. Mamun
এই যানজটের শেষ কোথায়?
নৌ ও রেলপথের মতোই সড়ক পথেও যাত্রীর চাপ বেশি৷ অনেকেই তাই বাড়ি ফিরছেন বাসের ছাদে চড়ে৷ তবে এতো কষ্টের পরও কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন যাত্রীরা এর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ বাংলাদেশের সড়কপথে ঈদের আগে যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় যানজট৷
ছবি: DW/M. Mamun
মূল লক্ষ্য একসাথে ঈদ করা
ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে ট্রাকে চড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ এসব মানুষের বেশিরভাগই দিনমজুর৷ তবে টিকেট না পাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্তকেও দেখা যায় ট্রাকে উঠতে৷ এভাবেই ট্রাকে চড়ে ৪০০-৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন তাঁরা৷