মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বলছে, ১৯৬৭ সাল থেকে পদ্মার কারণে ৬০ হাজার হেক্টরের (২৫৬ বর্গমাইল) বেশি জমি ভাঙনের শিকার হয়েছে৷ আগস্ট মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে নাসা আর্থ অবজারভেটরি৷
বিজ্ঞাপন
নাসার প্রতিবেদনে ভাঙনের জন্য দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে৷ এক, পদ্মা প্রাকৃতিকভাবে নিজের মতো চলতে পারা একটি নদী, যার তীর বাঁধার তেমন চেষ্টা করা হয়নি৷ শুধু মাঝেমধ্যে বালুর বস্তা ফেলে ঘর-বাড়ি রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে৷ দুই, পদ্মার তীর এলাকায় বালুর পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পেরেছে৷
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে নাসার পর্যবেক্ষকরা পদ্মা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছেন৷ নাসার ল্যান্ডস্যাট কর্মসূচির আওতায় থাকা বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে বছরের পর বছরের পদ্মার ছবি তোলা হয়েছে৷ এরপর ইউটিউবে আপলোড করা এক ভিডিওতে ১৯৮৮ সালের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পদ্মার বিভিন্ন ছবি দেখানো হয়েছে৷
ছবি বিশ্লেষণ করে নাসার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত তিন দশকে পদ্মা একটি সরু ও সোজাসুজি চলা নদী থেকে সর্পিল আকৃতি ধারণ করে অতি সম্প্রতি আবার সোজা চলা নদীতে পরিণত হয়েছে৷
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, ১৯৯২ সালে পদ্মা প্রথম বাঁক নেয়া শুরু করেছিল৷ এরপর ২০০২ সাল থেকে সেটি কমতে শুরু করে৷ আর এখন সেটি থেমে গেছে৷
চলার পথে বাঁক নেয়ার সময় পদ্মা তার আশেপাশের জমি, ঘরবাড়ি সব ভেঙে নিয়ে গেছে৷ ফলে ঐসময় নদী ভাঙনের ঘটনা বেশি ঘটেছে৷ আর এখন পদ্মা আবার সোজা চলা নদী হয়ে যাওয়ায় ভাঙনের হার একটু কমেছে বলে মনে করছেন নাসার পর্যবেক্ষকরা৷
জেডএইচ/এসিবি (ইউএনবি, নাসা)
২০১৪ সালের ছবঘরটি দেখুন...
পদ্মায় ভাঙন
পদ্মানদীর ভাঙনে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় বহু মানুষ তাঁদের বাড়িঘর, ভিটেমাটি, জমিজমা হারিয়ে কয়েকশ মানুষ এখন নিঃস্ব৷ চারিদিকে এখন শুধু জল আর জল, মানুষ এখন দিশেহারা৷ দোহার উপজেলার নদীভাঙনের কিছু চিত্র দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আতঙ্কে আছেন কয়েক’শ পরিবার
ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা পদ্ম নদী৷ গত পনের দিনের ভাঙনে এ উপজেলার মেঘুলা, রানিপুর, নারিশা ও পশ্চিম চর গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে৷ ভিটেমাটি হারিয়ে এসব মানুষ এখন অনেকটাই নিঃস্ব৷ এখনো আতঙ্কে আছেন আরো কয়েক’শ পরিবার৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফিরোজা বেগমের সঙ্গী শুধুই চোখের পানি
রানিপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ফিরোজা বেগম৷ এ গ্রামের অস্তিত্ব এখন কেবল মানচিত্রেই৷ পদ্মার মাঝামাঝি জায়গাটা দেখিয়ে ডুকরে কেঁদে ফেললেন এই নারী৷ দশ দিন আগেও নিজের ভিটেমাটি ছিল৷ এখন তিনি নিঃস্ব৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিনিদ্র রাত কাটে মিসির আলীর
মেঘুলা গ্রামের বাসিন্দা শেখ মিসির আলী৷ ভাঙনের চিন্তায় বিনিদ্র রাত কাটে তার, চাষের জমিজমা ইতিমধ্যেই পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে৷ একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও এখন হুমকির মুখে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পদ্মাপাড়ের অবুঝ শিশুদের দুরন্তপনা
একদিকে ভাঙন, আরেকদিকে পদ্মাপাড়ের শিশুদের দুরন্তপনা৷ শিশু মন, তাই বোঝারও সাধ্য নেই এই পদ্মার করাল গ্রাসই ভিটেমাটিহীন করেছে তাদের৷ এ ছবিটিও মেঘুলা গ্রামের৷
ছবি: DW/M. Mamun
আতঙ্ক
দোহারের মেঘুলা গ্রামে পদ্মার পাড়ে একটি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ৷ নদী ভাঙনে গ্রামে গামের পর বিলীন হবার পর কাঠের তৈরি ঘরটিকে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন এর মালিক৷ এখন যে কোনো সময় হয়ত ভেঙে পড়বে বাড়ির জায়গাটুকু৷
ছবি: DW/M. Mamun
খোলা আকাশের নীচে আশ্রয়
ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন ছালমা আক্তার৷ ভিক্ষা করেও দুই বেলা খাবার দিতে পারছেন না নিজ সন্তানদের৷ এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্যও জোটেনি হতভাগ্য এ নারীর কপালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সাহায্যের অপ্রতুলতা
নদী ভাঙনের শিকার অনেকেই অভিযোগ তুললেন সরকারি সাহায্যের অপ্রতুলতার কথা৷ সামান্য যেটুকু সাহায্য এসেছে তার বণ্টনে স্বজন প্রীতির অভিযোগও পাওয়া গেল স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি৷ কোথাও কোথাও নদী ভাঙনে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত সচ্ছলদেরও সাহায্য দেওয়ার কথা শোনা গেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিদ্যুতের লাইনও পদ্মায় বিলীন
ভাঙনের কারণে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে নারিশা এলাকার কিছু জায়গা৷ কোথাও কোথাও বিদ্যুতের লাইন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে৷