চারদিনের ব্যবধানে আবারো পদ্মা সেতুর একটি পিয়ারে ধাক্কা দিয়েছে একটি ফেরি৷ এর আগের ঘটনাগুলোর জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফেরির চালকদের অসতর্কতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটগামী ‘কাকলী' নামের একটি ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিয়ারে ধাক্কা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "ফেরির ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর খুঁটির পাইল ক্যাপের সামান্য কিছু অংশের কংক্রিট উঠে গেছে৷ এতে সেতুর তেমন ক্ষতি না হলেও এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়৷ এতে যাত্রী ও যানবাহনের বড় ক্ষতি হতে পারতো৷” যাত্রীরা জানান, যানবাহনগুলো একটির সঙ্গে আরেকটির প্রচণ্ড ধাক্কায় অনেকেই পড়ে যান এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷
ফেরি কাকলির চালক মো. বাদল হোসেন বলেন, " পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ১০ নম্বর পিয়ারে ধাক্কা খায়৷ ফেরির একপাশে ফাটল ধরে, তবে ফাটল পানির স্তরের ওপরে থাকায় ফেরিতে পানি ওঠেনি৷” এ ঘটনায় কেউ আহত হননি৷
গত ৯ আগস্ট রাতে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিয়ারে ধাক্কা দিলে ফেরিতে থাকা দুটি প্রাইভেট কার ও একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাঁচ যাত্রী আহত হন৷ এছাড়া গত ২৩ জুলাই মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়ায় আসার পথে একটি ফেরি সেতুর ১৭ নম্বর পিয়ারে আঘাত করেছিল৷
ফেরির সেসব ঘটনায় থানায় জিডিসহ চালকদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷ এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনাগুলোর জন্য চালকদের অসতর্কতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
পদ্মা সেতুর জানা-অজানা
দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে রাজধানীর সাথে যুক্ত করবে, গতি আনবে অর্থনীতির- এক যুগ আগে এমন স্বপ্ন নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ৷ দিন যায়, বছর গড়ায়, সেই সাথে বাড়ে নির্মাণ ব্যয়...
ছবি: bdnews24.com
যেখান থেকে শুরু
১৯৯৮-১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই করে৷ পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়৷
ছবি: bdnews24.com
সহযোগীদের আশ্বাস
পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে সংস্থাটি৷ জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাইকা ৪০ কোটি , এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক ৬৪ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে বলেও চুক্তি স্বাক্ষর করে৷
ছবি: DW
দুর্নীতির অভিযোগ, সরে গেল দাতারা
ক্যানাডার এসএনসি লাভালিন কোম্পানি পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ পায়৷ কিন্তু ক্যানাডার আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠলে দাতা সংস্থাগুলো প্রকল্প অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়৷
ছবি: imago/Rainer Unkel
আঙুল নোবেল বিজয়ীর দিকে
অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে গেলে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের দিকে আঙুল তোলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেউ কেউ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমাদের দেশের একজন নোবেলজয়ী জড়িত৷’’
ছবি: Getty Images/S. Vlasic
যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগ
সেতুর কাজ নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ উঠার পর সরকার সে সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়৷ কিন্তু সমালোচনার মুখে সেখান থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
দূর্নীতির অভিযোগ খারিজ
প্রায় পাঁচ বছর তদন্তের পর দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি ক্যানাডার আদালত৷ এ অভিযোগকে আদালত ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজব’ বলে আখ্যায়িত করে৷
ছবি: picture-alliance/empics/P. Chiasson
নিজস্ব অর্থায়নে তৈরির ঘোষণা
বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থা প্রকল্প থেকে সরে গেলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি হবে এমন ঘোষণা দেয় সরকার৷
ছবি: bdnews24.com
অবশেষে শুরু হলো কাজ
দীর্ঘ প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন৷ এ কাজের দায়িত্ব পায় চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংকন্সট্রাকশন কোম্পানি৷ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয় কাজ৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
কাজ পেছালো
প্রথম দফায় ডিসেম্বর ২০১৫ সালে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়৷ নদীশাসন, নকশায় পরিবর্তন আনাসহ নানা কারণে আবারো প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়৷ এবার ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলা হয়৷ এদিকে করোনার কারণে কাজের ধীরগতি প্রকল্পকে আবারো পিছিয়ে দিচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের৷
ছবি: bdnews24.com
ব্যয় বেড়েছে তিনশ’ ভাগ
এক যুগেরও বেশি সময় আগে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে একনেক-এ পাশ হয় পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার একশ’ ৬২ কোটি টাকা৷ ২০১৮ সালে এ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ত্রিশ হাজার একশ’ ৯৩ কোটি টাকা৷ এক যুগে ব্যয় বাড়লো তিনশ’ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
বেড়েছে কয়েক দফায়
২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনের পর ২০১১ সালে তা সংশোধন করা হয়৷ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ৷ ২০১৬ সালে আরেক সংশোধনীতে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা৷ সর্বশেষ হিসেবে খরচ ধরা হয়েছে ত্রিশ হাজার একশ’ ৯৩ কোটি টাকা৷
ছবি: bdnews24.com
কেন বাড়ছে ব্যায়?
ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ হলো নকশায় পরিবর্তন আনা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রকল্পের শুরুতেই ত্রুটি ধরা পড়ে নকশায়৷ তাছাড়া নানা সময়ে নতুন পরিকল্পনাও যুক্ত করা হয়েছে৷ নদীশাসনে ধীরগতিও ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷
ছবি: bdnews24.com
কাজ এগিয়েছে যতদূর
গত বছর ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যানটি বসানো হয়৷ আর দৃশ্যমান হয় ছয় হাজার একশ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি৷ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যানটি বসানোর পর এর শেষ স্প্যানটি বসানো পর্যন্ত সময় লেগেছে তিন বছর৷