পদ্মা সেতু এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর মানুষের ঈদযাত্রা সহজ করবে- এমনই আশা সবার৷ কিন্তু আশঙ্কাও আছে৷ আশঙ্কা তীব্র যানজটের এবং মহাসড়কে যানবাহনের বেপরোয়া গতির৷
বিজ্ঞাপন
আমনুর রহমান রাফাতের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়৷ তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন৷ চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে৷ তার ভাই-বোনরাও ঢাকায় থাকেন৷ এবার তিনি তার পরিবারের সব সদস্যদের সবাইকে নিয়ে ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন৷ এর কারণ দুইটি৷ পদ্মা সেতু দেখা এবং কম সময়ে ঝামেলা এড়িয়ে বাড়ি যাওয়া৷
তিনি বলেন, ‘‘আগে ১৪ ঘন্টার কমে যেতে পারতাম না৷ এবার আশা করি, সাত ঘটনায় যেতে পারবো৷ আর আগে ঈদের সময় কখনো কখনো ২২ ঘণ্টাও লাগতো৷ তাই ঈদে ভোগান্তির কথা ভেবে বাড়ি যাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম৷ তাই এবার ঈদে পদ্মা সেতু যেন ডাবল আনন্দ এনে দিচ্ছে৷’’
একই কথা বলেন বরিশালের জেসমিন লিপি৷ তার বাড়ি বরিশাল শহরে ৷ তার কথা, ‘‘এবার ঈদে পদ্মা সেতু পার হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যাবো আশা করি৷ মনে হচ্ছে ঢাকার কাছেই আমার বাড়ি৷’’
আর পিরোজপুরের সোহেল আহমেদ বলেন, ‘‘আমি এরইমধ্যে ঢাকা থেকে বাড়ি গিয়ে ঘুরে এসেছি৷ মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টা লেগেছে৷ ঈদে এবার সবাই মিলে বাড়ি যাবো৷’’
পদ্মা সেতুর দুই দিকে যানজট তৈরি হতে পারে: সাইদুর রহমান
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর ঢাকা থেকে দূরত্ব পদ্মা সেতুর কারণে বলতে গেলে অর্ধেক কমে গেছে৷ তাই ওই এলাকার লোকজন ঈদ যাত্রায় সড়ক পথকেই বেছে নিচ্ছেন৷ যারা ঈদে যেতেন না, তারাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ তাই এবার ঈদে ওই অঞ্চলে সড়কপথে যাত্রী কমপক্ষে আগের তুলনায় দুইগুণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এরইমধ্যে লাঞ্চে যাত্রী কমে গেছে৷ তাই ঈদের যাত্রী ধরতে লঞ্চে ভাড়া কমানো হয়েছে৷
দোলা পরিবহণের পিরোজপুরের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল হালিম বলেন, ‘‘এবার ঈদে বাস-যাত্রী বেড়ে গেছে৷ আগের চেয়ে বলতে গেলে দ্বিগুণ৷ সবাই এবার বাসে পদ্মা সেতু পার হতে চায়৷ আর এখন এক ঘন্টা পরপর বাস ছাড়ছে৷ ফলে টিকিটেরও কোনো সমস্যা নেই৷ আর নতুন নতুন পরিবহণ কোম্পানিও নামছে৷ একটা উৎসবের আমেজ চলছে৷’’
যাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও আশঙ্কার কথা জাানান পটুয়াখালি সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ব্যাপক আগ্রহের কারণে এখন ডাম্পিংয়ে থাকা চলাচলের অনুপযোগী বাসও রাস্তায় নামানো হচ্ছে৷ বড় বড় কোম্পানিও বাস নামাচ্ছে৷ ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘যত যানবাহন চলবে এখন, তত চওড়া সড়ক নেই৷ মাওয়ার পর থেকেই এক লেনের সড়ক৷ তাই ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে৷”
এদিকে বরিশাল শহর থেকে এখন প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বাস ছাড়ছে৷ ঢাকা থেকেও তাই৷ সাকুরা পরিবহণের এমডি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘মানুষের আগ্রহ আছে৷ আমরাও সেবা দিতে প্রস্তুত৷ তবে ঈদের আগে ও পরে যানবাহনের যে চাপ বাড়বে তা সামলানো যাবে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়৷ পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়েতে টোলের যে ব্যবস্থাপনা তাতে গতি কমে যাবে৷ ব্যাপক যানজট হতে পারে৷”
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার চাপ পড়ছে পদ্মা সেতুর ওপর৷ পদ্মা সেতু পার হয়ে যানবাহন ওই জেলাগুলোতে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনই তিন-চার ঘন্টা লেগে যাচ্ছে যাত্রাবাড়ি থেকে পোস্তগোলা যেতে৷ আসার পথে আরো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে৷ যাত্রাবাড়ি থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন হতে পারে৷”
তিনি মনে করেন, ‘‘এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের যে সিস্টেম, এই সিস্টেমের কারণেই যানজট বাড়বে৷ সেতু পার হলে দ্রুত চলে যাওয়া যাবে৷ কিন্তু সেতু তো পার হতে হবে৷”
তিনি জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ আগে সমীক্ষা করে বলেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু থেকে আট হাজার যানবাহন চলাচল করবে৷ কিন্তু এরইমধ্যে তা ১৫ হাজারে পৌঁছেছে৷ এটা ৫০ হজার পর্যন্ত যাবে৷ ফিডার রোডে এখনই যানজট হচ্ছে৷ এটা আরো বাড়বে৷ পদ্মা সেতুকে সামনে রেখে ঢাকার পরিবহন ও ওই জেলাগুলোর সড়ক পরিকল্পনা ঠিকভাবে করা হয়নি৷
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে এবার ৮০-৯০ লাখ মানুষ ঈদে ঢাকা ছাড়বেন৷ তারমধ্যে কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকার সড়ক পথে বাইরে যাবেন পদ্মাসেতু পার হয়ে সড়ক পথে৷ কোরবানির ঈদে ৮০ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে যান৷ এবার যে ১০ লাখ বেশি যাবেন তা পদ্মা সেতুর কারণে৷
তার কথা, ‘‘মহাসড়কে ঈদে মোটরবাইক চলাচল বন্ধ করায় বাস কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ভাড়া বাড়িয়েছে৷ মোটর বাইক কখনো গণপরিবহণের বিকল্প নয়৷ কিন্তু এখানে গণপরিবহণের নৈরাজ্যের কারণে মোটরবাইকনির্ভরতা বাড়ছে৷”
গন্তব্যের দিকে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটেনি: ড. শামসুল হক
বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করে, পদ্মা সেতুর কারণে যেমন বাসযাত্রী বাড়ছে তেমনি ঈদে মহাসড়কে মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ রাখার কারণেও বাসের ওপর চাপ বাড়বে৷ আর এই কারণে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে রাস্তায় চলাচলের অনুপোযোগী বাসও সুযোগ বুঝে নেমে পড়ছে৷ ফলে মহাসড়কে নতুন ঝুঁকি তৈরি হবে এবার ঈদে৷ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘এর বাইরে টোল ব্যবস্থাপনা আধুনিক না হওয়ায় পদ্মা সেতুর দুই দিকে যানজট তৈরি হতে পারে৷”
তিনি বলে, ‘‘এবার প্রচুর লোক বাসে দক্ষিণাঞ্চলে যাবেন৷ কিন্তু উপযুক্ত যানবাহন নেই৷ আমরা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলুক তা চাই না৷ কিন্তু গণপপরিবহণ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ঈদে অনেকেই মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যান৷ গত ঈদে গিয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ৷ এবার এরা তো বাসে যাবেন৷ ফলে পরিস্থিতি ততটা স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে৷’’
‘‘এবার পদ্মা সেতু ঈদযাত্রায় কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে৷ তবে সমস্যা হলো ব্রডব্যান্ড থেকে লোকাল কানেকশনে ঢোকার সমস্যা৷ কারণ, গন্তব্যের দিকে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটেনি’’-এই মন্তব্য বুয়েটের অধ্যাপক এবং সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হকের৷ তার কথা, ‘‘শুধু বিনিয়োগ করলেই উন্নন হয় না, উন্নয়ন হতে হয় পরিকল্পিত৷ যোগাযোগের সব মাধ্যমকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে হয়৷”
তিনি মনে করেন, ‘‘এবার পদ্মা সেতু দিয়ে ঈদ যাত্রা শুরুর দিকটা স্বস্তিরই হবে৷ শেষের দিকে গিয়ে সমস্যা হতে পারে৷ যে চাপ পড়বে তা ডিষ্ট্রিবিট হতে সময় লাগবে৷ গন্তব্যের কাছাকাছি যে ধরনের রোড নেটওয়ার্ক আছে তার উন্নয়ন প্রয়োজন৷ সড়ক ব্যাস্থাপনা এখনো সমন্বিত হয়নি৷ তাই ঢাকায় ফেরার পথে সেতুর ওপর চাপ বাড়বে৷ যানজট হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন আর ডেভেলপমেন্ট নয়, রিডেভেলপমেন্টের সময়৷ এখনই সময় সড়কগুলোকে সময়োপযোগী এবং আধুনিক করার৷ উপজেলা পর্যন্ত সড়কগুলো দখল হয়ে আছে৷ চওড়া করারও সুযোগ নেই৷”
তাদের ঈদ ভাবনা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন, প্রথমবারের মতো মহাসড়কের মোটরবাইক নিষিদ্ধকরণ, করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা৷ এর মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ঈদ ভাবনা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘মানুষ কেজি দরে গরুর দাম বলে’
বিক্রির উদ্দেশে ঢাকার গাবতলীতে পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে ছয়টি গরু এনেছেন মো. বিল্লাল মিয়া৷ তিনি জানান, ‘‘এবারের হাটে এখন পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা কম৷ ভোজ্য এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গো-খাদ্যের মূল্য ৫০ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে৷ অথচ হাটে মানুষ গরুর দাম বলছে মাংসের কেজির হিসাব করে৷’’ এতে গরু লালন-পালনের খরচও উঠবে না বলে দাবি করেন বিল্লাল মিয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কোরবানি দিতে পারতেসি না এইবার’
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে নতুন টাকার ব্যবসা করেন হারুনুর রশীদ৷ তিনি প্রায় ২০ বছর যাবত এই পেশায় আছেন৷ গত বছর কোরবানি দিলেও এবার সেই সামর্থ্য হচ্ছে না৷ বলেন, ‘‘মানুষের এইবারের মতো খারাপ অবস্থা আগে দেখি নাই৷ আমার নিজের অবস্থাই তো করুণ৷ গত বছর বাচ্চাদের শখ পূরণ কইরা একটা ছোট ছাগল কুরবানি দিসিলাম, কিন্তু এইবার কোনভাবেই সম্ভব হইতেসে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘পদ্মা সেতু দিয়ে পার হবো’
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের নোঙর করা ঢাকা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি তাসরিফ-১ এর কর্মচারী মোঃ নাসির হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালি৷ কিন্তু তিনি নিজেই পদ্মাসেতু দিয়ে বাসে করে এবার বাড়ি যাবেন৷ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মাসেতু হওয়ায় তিনি খুশি৷ আবার নিজের পেশায় এর নেতিবাচক প্রভাবও টের পাচ্ছেন৷ এবার ঈদে বোনাস পাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘এইবার বোনাস চাইলে মালিক নিশ্চিত মাইর দিবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তবুও লঞ্চেই যাচ্ছেন জুনায়েদ
ঈদ করতে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে সপরিবারে হাতিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন জুনায়েদ হোসেন৷ পদ্মা সেতু দিয়ে না গিয়ে কেন লঞ্চে যাচ্ছেন জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী জুনায়েদ জানান, বাসে যাওয়ার চেয়ে পরিবার নিয়ে লঞ্চে যাওয়াই তার জন্য সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’
ঢাকার কারওয়ান বাজার মোড়ে কথা হয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের একজন মোটরবাইক চালকের সাথে৷ শুরুতে পদ্মা সেতুতে, পরে ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে মোটরবাইক নিষিদ্ধে ক্ষুব্ধ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু হইলেই আমাদের উপর বিধিনিষেধ আসে৷ লকডাউনে সব চলছে, রাইড শেয়ারিং বন্ধ, ট্রাফিক পুলিশ কথায় কথায় জরিমানা করে, এখন আবার মহাসড়কে আমাদের চলাচল নিষেধ৷ আমাদের উপর কেন সব ঝড় আসে? দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এবার ঈদে আয় নাই’
মো. আবুল বাশার ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাথে দর্জির কাজ করে পরিবার চালান৷ ঈদ এলে তার কাজ বাড়ে, আয়ও বাড়ে৷ কিন্তু এবার খুশি নন তিনি৷ বাশার বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউন থাকলেও সাত দিনে যা আয় করেছি এবার ঈদ চলে আসলেও সেই তুলনায় তেমন আয়ই হয়নি৷ তেলের দাম বৃদ্ধি আর প্রতিদিনের খরচ দুইগুণ বেড়েছে৷ খরচ মেটানোর পর হাতে আর কোনো টাকা থাকে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
খুশি নন বাসচালক শরীফ
গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ রুটের শীতল পরিবহণের চালক মো. শরীফ বলেন, ‘‘দেশে সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হচ্ছে৷ এতে আমরা খুশি৷ কিন্তু রাস্তা-ঘাটে যানজট বেড়েই চলেছে৷ গত কোরবানির ঈদে লকডাউন থাকায় রাস্তায় গাড়ি কম ছিল, ট্রিপ বেশি মারতে পারায় বেতনও ছিল বেশি৷’’ রাস্তায় তীব্র জ্যামে এই ঈদে গতবারের তুলনায় আয় অর্ধেকও হবে না বলে জানান তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদের দিন বাড়ি যাবেন জব্বার
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে কুলির কাজ করেন মো. জব্বার৷ ঈদ নিয়ে তার বাড়তি কোনো ভাবনা নেই৷ কোরবানি দেয়ার সামর্থ্যও নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘গরিব মানুষের ঈদ নাই৷ ঈদ হলো ধনী মানুষের জন্য৷‘’ তার মতে, দেশে প্রতিবছর বড়লোক আরো বড়লোক হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে৷ ‘‘ঢাকায় যে কয়টা প্রাইভেট গাড়ি আছে, সে কয়জনই শুধু টাকাওয়ালা, বাকিদের অবস্থা খারাপ,’’ বলেন জব্বার৷ ঈদের দিন পর্যন্ত কাজ করে লঞ্চে বাড়ি ফিরবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা’
তৈয়ব মিয়া ঢাকার রাস্তায় ফেরি করে শুকনো খাবার বিক্রি করেন৷ করোনাকালীন সময়ের চেয়ে তার আয় বেড়েছে৷ কিন্তু তার চেয়েও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খরচ৷ তৈয়ব মিয়া বলেন, ‘‘করোনার সময় রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় আমাগো ইনকাম কম আছিল৷ কিন্তু এমনিতে আমগো ইনকাম প্রায় একই৷ তয় এই কথা ঠিক যে এহন মানুষের আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা৷’’ ঈদের আগের দিন পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ি যাবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ আগের মতো নেই’
ঢাকার মিরপুর ১০ সার্কেলের একটি পোশাক তৈরির কারখানার কর্মী সালেহা আক্তার৷ প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি দুই বছর যাবত কাজ করেন৷ এই মাসে তার বেতন বেড়েছে এক হাজার টাকা৷ কিন্তু সার্বিক খরচ বেড়েছে ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত৷ তাই বেতন কিছুটা বাড়লেও তিনি পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আগের বেতন দিয়ে যেভাবে ঈদ পালন করতাম এখন বেতন বাড়ার পরেও তা সম্ভব হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা নেই’
ঢাকার পল্টনের ফুটপাথের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়তি হইলেও সাধারণ মানুষের কথা ভাইবা হোটেলের খাবারের দাম বাড়াই নাই৷ কিন্তু তা-ও কাস্টমার আগের মতন নাই৷ মানুষ দুপুরে ভাতের জায়গায় চা-রুটি খায়, যে ১০-২০ টাকা বাঁচে, সেইটাই এখন অনেক টাকা৷’’ তিনি বলেন, গত বছরের ধার-দেনায় এখনও আটকে আছেন, তাই ঈদে বাড়তি কিছু করার পরিকল্পনা তার নেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদে নতুন জামা
ঈদ উপলক্ষে ফুটপাথ থেকে নতুন জামা কিনছেন মো. আল আমিন৷ নরসিংদী থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছেন দশম শ্রেণির এই ছাত্র৷ কেনাকাটা সেরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাবে সে৷ অন্যবার শপিং মল থেকে জামা-কাপড় কিনলেও এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফুটপাথেই কেনাকাটা সারছেন বলে জানান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদ কাটবে সড়কে
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে কথা হয় এই ট্রাফিক পুলিশের সাথে৷ ১৫ বছরের চাকরিজীবনে হাতেগোনা কয়েকটি ঈদ তিনি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন৷ এবারও তাকে ঈদের দিন রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারি চাকরি করি, কিছু বলতে পারি না৷ বেতন যা পাই, বউ-বাচ্চা গ্রামে রেখে পালতেও কষ্ট হয়া যায়৷ তা-ও তো আমরা নিয়মিত বেতন পাই, সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ কিভাবে চলে আল্লাহই ভালো জানেন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আমরাই সবচেয়ে হতাশাগ্রস্ত’
একটি সরকারি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু নাসের৷ ঈদ আসলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘খুব সম্প্রতি পত্রিকায় দেখলাম আমরা ১২২টি দেশের মধ্যে হতাশা ও দুঃখে সপ্তম অবস্থানে আছি, প্রথমে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান৷ আমার মতে, বাংদেশের যে সার্বিক পরিস্থিতি, আফগানিস্তান নয়, আমাদেরই তালিকায় এক নাম্বারে থাকা উচিত৷’’