1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পদ্মা সেতু, ঈদযাত্রার আনন্দ ও আশঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ জুলাই ২০২২

পদ্মা সেতু এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর মানুষের ঈদযাত্রা সহজ করবে- এমনই আশা সবার৷ কিন্তু আশঙ্কাও আছে৷ আশঙ্কা তীব্র যানজটের এবং মহাসড়কে যানবাহনের বেপরোয়া গতির৷

পদ্মা সেতু এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর মানুষের ঈদযাত্রা সহজ করবে- এমনই আশা সবার৷ কিন্তু আশঙ্কাও আছে৷ আশঙ্কা তীব্র যানজটের এবং মহাসড়কে যানবাহনের বেপরোয়া গতির৷
ছবি: Md Manik/SOPA/ZUMA Press/picture alliance

আমনুর রহমান রাফাতের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়৷ তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন৷ চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে৷ তার ভাই-বোনরাও ঢাকায় থাকেন৷ এবার তিনি তার পরিবারের সব সদস্যদের সবাইকে নিয়ে ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন৷ এর কারণ দুইটি৷ পদ্মা সেতু দেখা এবং কম সময়ে ঝামেলা এড়িয়ে বাড়ি যাওয়া৷

তিনি বলেন, ‘‘আগে ১৪ ঘন্টার কমে যেতে পারতাম না৷ এবার আশা করি, সাত ঘটনায় যেতে পারবো৷ আর আগে ঈদের সময় কখনো কখনো ২২ ঘণ্টাও লাগতো৷ তাই ঈদে ভোগান্তির কথা ভেবে বাড়ি যাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম৷ তাই এবার ঈদে পদ্মা সেতু যেন ডাবল আনন্দ এনে দিচ্ছে৷’’

একই কথা বলেন বরিশালের জেসমিন লিপি৷ তার বাড়ি বরিশাল শহরে ৷ তার কথা, ‘‘এবার ঈদে পদ্মা সেতু পার হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যাবো আশা করি৷ মনে হচ্ছে ঢাকার কাছেই আমার বাড়ি৷’’

আর পিরোজপুরের সোহেল আহমেদ বলেন, ‘‘আমি এরইমধ্যে ঢাকা থেকে বাড়ি গিয়ে ঘুরে এসেছি৷ মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টা লেগেছে৷ ঈদে এবার সবাই মিলে বাড়ি যাবো৷’’

পদ্মা সেতুর দুই দিকে যানজট তৈরি হতে পারে: সাইদুর রহমান

This browser does not support the audio element.

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর ঢাকা থেকে দূরত্ব পদ্মা সেতুর কারণে বলতে গেলে অর্ধেক কমে গেছে৷ তাই ওই এলাকার লোকজন ঈদ যাত্রায় সড়ক পথকেই বেছে নিচ্ছেন৷ যারা ঈদে যেতেন না, তারাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ তাই এবার ঈদে ওই অঞ্চলে সড়কপথে যাত্রী কমপক্ষে আগের তুলনায় দুইগুণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এরইমধ্যে লাঞ্চে যাত্রী কমে গেছে৷ তাই ঈদের যাত্রী ধরতে লঞ্চে ভাড়া কমানো হয়েছে৷

দোলা পরিবহণের পিরোজপুরের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল হালিম বলেন, ‘‘এবার ঈদে বাস-যাত্রী বেড়ে গেছে৷ আগের চেয়ে বলতে গেলে দ্বিগুণ৷ সবাই এবার বাসে পদ্মা সেতু পার হতে চায়৷ আর এখন এক ঘন্টা পরপর বাস ছাড়ছে৷ ফলে টিকিটেরও কোনো সমস্যা নেই৷ আর নতুন নতুন পরিবহণ কোম্পানিও নামছে৷ একটা উৎসবের আমেজ চলছে৷’’

যাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও আশঙ্কার কথা জাানান পটুয়াখালি সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ব্যাপক আগ্রহের কারণে এখন ডাম্পিংয়ে থাকা চলাচলের অনুপযোগী বাসও রাস্তায় নামানো হচ্ছে৷ বড় বড় কোম্পানিও বাস নামাচ্ছে৷ ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে৷”

তিনি বলেন, ‘‘যত যানবাহন চলবে এখন, তত চওড়া সড়ক নেই৷  মাওয়ার পর থেকেই এক লেনের সড়ক৷ তাই ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে৷”

এদিকে বরিশাল শহর থেকে এখন প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বাস ছাড়ছে৷ ঢাকা থেকেও তাই৷ সাকুরা পরিবহণের এমডি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘মানুষের আগ্রহ আছে৷ আমরাও সেবা দিতে প্রস্তুত৷ তবে ঈদের আগে ও পরে যানবাহনের যে চাপ বাড়বে তা সামলানো যাবে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়৷ পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়েতে টোলের যে ব্যবস্থাপনা তাতে গতি কমে যাবে৷ ব্যাপক যানজট হতে পারে৷”

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার চাপ পড়ছে পদ্মা সেতুর ওপর৷ পদ্মা সেতু পার হয়ে যানবাহন ওই জেলাগুলোতে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনই তিন-চার ঘন্টা লেগে যাচ্ছে যাত্রাবাড়ি থেকে পোস্তগোলা যেতে৷ আসার পথে আরো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে৷ যাত্রাবাড়ি থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন হতে পারে৷”

তিনি মনে করেন, ‘‘এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের যে সিস্টেম, এই সিস্টেমের কারণেই যানজট বাড়বে৷ সেতু পার হলে দ্রুত চলে যাওয়া যাবে৷ কিন্তু সেতু তো পার হতে হবে৷”

তিনি জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ আগে সমীক্ষা করে বলেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু থেকে আট হাজার যানবাহন চলাচল করবে৷ কিন্তু এরইমধ্যে তা ১৫ হাজারে পৌঁছেছে৷ এটা ৫০ হজার পর্যন্ত যাবে৷ ফিডার রোডে এখনই  যানজট হচ্ছে৷ এটা আরো বাড়বে৷ পদ্মা সেতুকে সামনে রেখে ঢাকার পরিবহন ও ওই জেলাগুলোর সড়ক পরিকল্পনা ঠিকভাবে করা হয়নি৷

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে  এবার ৮০-৯০ লাখ মানুষ ঈদে ঢাকা ছাড়বেন৷ তারমধ্যে কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকার সড়ক পথে বাইরে যাবেন পদ্মাসেতু পার হয়ে সড়ক পথে৷ কোরবানির ঈদে ৮০ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে যান৷ এবার যে ১০ লাখ বেশি যাবেন তা পদ্মা সেতুর কারণে৷

তার কথা, ‘‘মহাসড়কে ঈদে মোটরবাইক চলাচল বন্ধ করায় বাস কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ভাড়া বাড়িয়েছে৷ মোটর বাইক কখনো গণপরিবহণের বিকল্প নয়৷ কিন্তু এখানে গণপরিবহণের নৈরাজ্যের কারণে মোটরবাইকনির্ভরতা বাড়ছে৷”

গন্তব্যের দিকে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটেনি: ড. শামসুল হক

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করে, পদ্মা সেতুর কারণে যেমন বাসযাত্রী বাড়ছে তেমনি ঈদে মহাসড়কে মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ রাখার কারণেও বাসের ওপর চাপ বাড়বে৷ আর এই কারণে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে রাস্তায় চলাচলের অনুপোযোগী বাসও সুযোগ বুঝে নেমে পড়ছে৷ ফলে মহাসড়কে নতুন ঝুঁকি তৈরি হবে এবার ঈদে৷ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘এর বাইরে টোল ব্যবস্থাপনা আধুনিক না হওয়ায় পদ্মা সেতুর দুই দিকে যানজট তৈরি হতে পারে৷”

তিনি বলে, ‘‘এবার প্রচুর লোক বাসে দক্ষিণাঞ্চলে যাবেন৷ কিন্তু উপযুক্ত যানবাহন নেই৷ আমরা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলুক তা চাই না৷ কিন্তু গণপপরিবহণ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ঈদে অনেকেই মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যান৷ গত ঈদে গিয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ৷ এবার এরা তো বাসে যাবেন৷ ফলে পরিস্থিতি ততটা স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে৷’’

‘‘এবার পদ্মা সেতু ঈদযাত্রায় কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে৷ তবে সমস্যা হলো ব্রডব্যান্ড থেকে লোকাল কানেকশনে ঢোকার সমস্যা৷ কারণ, গন্তব্যের দিকে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটেনি’’-এই মন্তব্য বুয়েটের অধ্যাপক এবং সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হকের৷ তার কথা, ‘‘শুধু বিনিয়োগ করলেই উন্নন হয় না, উন্নয়ন হতে হয় পরিকল্পিত৷ যোগাযোগের সব মাধ্যমকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে হয়৷”

তিনি মনে করেন, ‘‘এবার পদ্মা সেতু দিয়ে ঈদ যাত্রা শুরুর দিকটা স্বস্তিরই হবে৷ শেষের দিকে গিয়ে সমস্যা হতে পারে৷ যে চাপ পড়বে তা ডিষ্ট্রিবিট হতে সময় লাগবে৷ গন্তব্যের কাছাকাছি যে ধরনের রোড নেটওয়ার্ক আছে তার উন্নয়ন প্রয়োজন৷ সড়ক ব্যাস্থাপনা এখনো সমন্বিত হয়নি৷ তাই ঢাকায় ফেরার পথে সেতুর ওপর চাপ বাড়বে৷ যানজট হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন আর ডেভেলপমেন্ট নয়, রিডেভেলপমেন্টের সময়৷ এখনই সময় সড়কগুলোকে সময়োপযোগী এবং আধুনিক করার৷  উপজেলা পর্যন্ত সড়কগুলো দখল হয়ে আছে৷ চওড়া করারও সুযোগ নেই৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ