পদ্মা সেতু এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর মানুষের ঈদযাত্রা সহজ করবে- এমনই আশা সবার৷ কিন্তু আশঙ্কাও আছে৷ আশঙ্কা তীব্র যানজটের এবং মহাসড়কে যানবাহনের বেপরোয়া গতির৷
ছবি: Md Manik/SOPA/ZUMA Press/picture alliance
বিজ্ঞাপন
আমনুর রহমান রাফাতের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়৷ তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন৷ চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে৷ তার ভাই-বোনরাও ঢাকায় থাকেন৷ এবার তিনি তার পরিবারের সব সদস্যদের সবাইকে নিয়ে ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন৷ এর কারণ দুইটি৷ পদ্মা সেতু দেখা এবং কম সময়ে ঝামেলা এড়িয়ে বাড়ি যাওয়া৷
তিনি বলেন, ‘‘আগে ১৪ ঘন্টার কমে যেতে পারতাম না৷ এবার আশা করি, সাত ঘটনায় যেতে পারবো৷ আর আগে ঈদের সময় কখনো কখনো ২২ ঘণ্টাও লাগতো৷ তাই ঈদে ভোগান্তির কথা ভেবে বাড়ি যাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম৷ তাই এবার ঈদে পদ্মা সেতু যেন ডাবল আনন্দ এনে দিচ্ছে৷’’
একই কথা বলেন বরিশালের জেসমিন লিপি৷ তার বাড়ি বরিশাল শহরে ৷ তার কথা, ‘‘এবার ঈদে পদ্মা সেতু পার হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যাবো আশা করি৷ মনে হচ্ছে ঢাকার কাছেই আমার বাড়ি৷’’
আর পিরোজপুরের সোহেল আহমেদ বলেন, ‘‘আমি এরইমধ্যে ঢাকা থেকে বাড়ি গিয়ে ঘুরে এসেছি৷ মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টা লেগেছে৷ ঈদে এবার সবাই মিলে বাড়ি যাবো৷’’
পদ্মা সেতুর দুই দিকে যানজট তৈরি হতে পারে: সাইদুর রহমান
This browser does not support the audio element.
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর ঢাকা থেকে দূরত্ব পদ্মা সেতুর কারণে বলতে গেলে অর্ধেক কমে গেছে৷ তাই ওই এলাকার লোকজন ঈদ যাত্রায় সড়ক পথকেই বেছে নিচ্ছেন৷ যারা ঈদে যেতেন না, তারাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ তাই এবার ঈদে ওই অঞ্চলে সড়কপথে যাত্রী কমপক্ষে আগের তুলনায় দুইগুণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এরইমধ্যে লাঞ্চে যাত্রী কমে গেছে৷ তাই ঈদের যাত্রী ধরতে লঞ্চে ভাড়া কমানো হয়েছে৷
দোলা পরিবহণের পিরোজপুরের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল হালিম বলেন, ‘‘এবার ঈদে বাস-যাত্রী বেড়ে গেছে৷ আগের চেয়ে বলতে গেলে দ্বিগুণ৷ সবাই এবার বাসে পদ্মা সেতু পার হতে চায়৷ আর এখন এক ঘন্টা পরপর বাস ছাড়ছে৷ ফলে টিকিটেরও কোনো সমস্যা নেই৷ আর নতুন নতুন পরিবহণ কোম্পানিও নামছে৷ একটা উৎসবের আমেজ চলছে৷’’
যাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও আশঙ্কার কথা জাানান পটুয়াখালি সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ব্যাপক আগ্রহের কারণে এখন ডাম্পিংয়ে থাকা চলাচলের অনুপযোগী বাসও রাস্তায় নামানো হচ্ছে৷ বড় বড় কোম্পানিও বাস নামাচ্ছে৷ ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘যত যানবাহন চলবে এখন, তত চওড়া সড়ক নেই৷ মাওয়ার পর থেকেই এক লেনের সড়ক৷ তাই ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে৷”
এদিকে বরিশাল শহর থেকে এখন প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বাস ছাড়ছে৷ ঢাকা থেকেও তাই৷ সাকুরা পরিবহণের এমডি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘মানুষের আগ্রহ আছে৷ আমরাও সেবা দিতে প্রস্তুত৷ তবে ঈদের আগে ও পরে যানবাহনের যে চাপ বাড়বে তা সামলানো যাবে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়৷ পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়েতে টোলের যে ব্যবস্থাপনা তাতে গতি কমে যাবে৷ ব্যাপক যানজট হতে পারে৷”
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার চাপ পড়ছে পদ্মা সেতুর ওপর৷ পদ্মা সেতু পার হয়ে যানবাহন ওই জেলাগুলোতে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনই তিন-চার ঘন্টা লেগে যাচ্ছে যাত্রাবাড়ি থেকে পোস্তগোলা যেতে৷ আসার পথে আরো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে৷ যাত্রাবাড়ি থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন হতে পারে৷”
তিনি মনে করেন, ‘‘এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের যে সিস্টেম, এই সিস্টেমের কারণেই যানজট বাড়বে৷ সেতু পার হলে দ্রুত চলে যাওয়া যাবে৷ কিন্তু সেতু তো পার হতে হবে৷”
তিনি জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ আগে সমীক্ষা করে বলেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু থেকে আট হাজার যানবাহন চলাচল করবে৷ কিন্তু এরইমধ্যে তা ১৫ হাজারে পৌঁছেছে৷ এটা ৫০ হজার পর্যন্ত যাবে৷ ফিডার রোডে এখনই যানজট হচ্ছে৷ এটা আরো বাড়বে৷ পদ্মা সেতুকে সামনে রেখে ঢাকার পরিবহন ও ওই জেলাগুলোর সড়ক পরিকল্পনা ঠিকভাবে করা হয়নি৷
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে এবার ৮০-৯০ লাখ মানুষ ঈদে ঢাকা ছাড়বেন৷ তারমধ্যে কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকার সড়ক পথে বাইরে যাবেন পদ্মাসেতু পার হয়ে সড়ক পথে৷ কোরবানির ঈদে ৮০ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে যান৷ এবার যে ১০ লাখ বেশি যাবেন তা পদ্মা সেতুর কারণে৷
তার কথা, ‘‘মহাসড়কে ঈদে মোটরবাইক চলাচল বন্ধ করায় বাস কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ভাড়া বাড়িয়েছে৷ মোটর বাইক কখনো গণপরিবহণের বিকল্প নয়৷ কিন্তু এখানে গণপরিবহণের নৈরাজ্যের কারণে মোটরবাইকনির্ভরতা বাড়ছে৷”
গন্তব্যের দিকে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটেনি: ড. শামসুল হক
This browser does not support the audio element.
বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করে, পদ্মা সেতুর কারণে যেমন বাসযাত্রী বাড়ছে তেমনি ঈদে মহাসড়কে মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ রাখার কারণেও বাসের ওপর চাপ বাড়বে৷ আর এই কারণে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে রাস্তায় চলাচলের অনুপোযোগী বাসও সুযোগ বুঝে নেমে পড়ছে৷ ফলে মহাসড়কে নতুন ঝুঁকি তৈরি হবে এবার ঈদে৷ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘এর বাইরে টোল ব্যবস্থাপনা আধুনিক না হওয়ায় পদ্মা সেতুর দুই দিকে যানজট তৈরি হতে পারে৷”
তিনি বলে, ‘‘এবার প্রচুর লোক বাসে দক্ষিণাঞ্চলে যাবেন৷ কিন্তু উপযুক্ত যানবাহন নেই৷ আমরা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলুক তা চাই না৷ কিন্তু গণপপরিবহণ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ঈদে অনেকেই মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যান৷ গত ঈদে গিয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ৷ এবার এরা তো বাসে যাবেন৷ ফলে পরিস্থিতি ততটা স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে৷’’
‘‘এবার পদ্মা সেতু ঈদযাত্রায় কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে৷ তবে সমস্যা হলো ব্রডব্যান্ড থেকে লোকাল কানেকশনে ঢোকার সমস্যা৷ কারণ, গন্তব্যের দিকে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটেনি’’-এই মন্তব্য বুয়েটের অধ্যাপক এবং সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হকের৷ তার কথা, ‘‘শুধু বিনিয়োগ করলেই উন্নন হয় না, উন্নয়ন হতে হয় পরিকল্পিত৷ যোগাযোগের সব মাধ্যমকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে হয়৷”
তিনি মনে করেন, ‘‘এবার পদ্মা সেতু দিয়ে ঈদ যাত্রা শুরুর দিকটা স্বস্তিরই হবে৷ শেষের দিকে গিয়ে সমস্যা হতে পারে৷ যে চাপ পড়বে তা ডিষ্ট্রিবিট হতে সময় লাগবে৷ গন্তব্যের কাছাকাছি যে ধরনের রোড নেটওয়ার্ক আছে তার উন্নয়ন প্রয়োজন৷ সড়ক ব্যাস্থাপনা এখনো সমন্বিত হয়নি৷ তাই ঢাকায় ফেরার পথে সেতুর ওপর চাপ বাড়বে৷ যানজট হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন আর ডেভেলপমেন্ট নয়, রিডেভেলপমেন্টের সময়৷ এখনই সময় সড়কগুলোকে সময়োপযোগী এবং আধুনিক করার৷ উপজেলা পর্যন্ত সড়কগুলো দখল হয়ে আছে৷ চওড়া করারও সুযোগ নেই৷”
তাদের ঈদ ভাবনা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন, প্রথমবারের মতো মহাসড়কের মোটরবাইক নিষিদ্ধকরণ, করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা৷ এর মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ঈদ ভাবনা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘মানুষ কেজি দরে গরুর দাম বলে’
বিক্রির উদ্দেশে ঢাকার গাবতলীতে পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে ছয়টি গরু এনেছেন মো. বিল্লাল মিয়া৷ তিনি জানান, ‘‘এবারের হাটে এখন পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা কম৷ ভোজ্য এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গো-খাদ্যের মূল্য ৫০ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে৷ অথচ হাটে মানুষ গরুর দাম বলছে মাংসের কেজির হিসাব করে৷’’ এতে গরু লালন-পালনের খরচও উঠবে না বলে দাবি করেন বিল্লাল মিয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কোরবানি দিতে পারতেসি না এইবার’
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে নতুন টাকার ব্যবসা করেন হারুনুর রশীদ৷ তিনি প্রায় ২০ বছর যাবত এই পেশায় আছেন৷ গত বছর কোরবানি দিলেও এবার সেই সামর্থ্য হচ্ছে না৷ বলেন, ‘‘মানুষের এইবারের মতো খারাপ অবস্থা আগে দেখি নাই৷ আমার নিজের অবস্থাই তো করুণ৷ গত বছর বাচ্চাদের শখ পূরণ কইরা একটা ছোট ছাগল কুরবানি দিসিলাম, কিন্তু এইবার কোনভাবেই সম্ভব হইতেসে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘পদ্মা সেতু দিয়ে পার হবো’
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের নোঙর করা ঢাকা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি তাসরিফ-১ এর কর্মচারী মোঃ নাসির হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালি৷ কিন্তু তিনি নিজেই পদ্মাসেতু দিয়ে বাসে করে এবার বাড়ি যাবেন৷ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মাসেতু হওয়ায় তিনি খুশি৷ আবার নিজের পেশায় এর নেতিবাচক প্রভাবও টের পাচ্ছেন৷ এবার ঈদে বোনাস পাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘এইবার বোনাস চাইলে মালিক নিশ্চিত মাইর দিবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তবুও লঞ্চেই যাচ্ছেন জুনায়েদ
ঈদ করতে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে সপরিবারে হাতিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন জুনায়েদ হোসেন৷ পদ্মা সেতু দিয়ে না গিয়ে কেন লঞ্চে যাচ্ছেন জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী জুনায়েদ জানান, বাসে যাওয়ার চেয়ে পরিবার নিয়ে লঞ্চে যাওয়াই তার জন্য সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’
ঢাকার কারওয়ান বাজার মোড়ে কথা হয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের একজন মোটরবাইক চালকের সাথে৷ শুরুতে পদ্মা সেতুতে, পরে ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে মোটরবাইক নিষিদ্ধে ক্ষুব্ধ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু হইলেই আমাদের উপর বিধিনিষেধ আসে৷ লকডাউনে সব চলছে, রাইড শেয়ারিং বন্ধ, ট্রাফিক পুলিশ কথায় কথায় জরিমানা করে, এখন আবার মহাসড়কে আমাদের চলাচল নিষেধ৷ আমাদের উপর কেন সব ঝড় আসে? দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এবার ঈদে আয় নাই’
মো. আবুল বাশার ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাথে দর্জির কাজ করে পরিবার চালান৷ ঈদ এলে তার কাজ বাড়ে, আয়ও বাড়ে৷ কিন্তু এবার খুশি নন তিনি৷ বাশার বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউন থাকলেও সাত দিনে যা আয় করেছি এবার ঈদ চলে আসলেও সেই তুলনায় তেমন আয়ই হয়নি৷ তেলের দাম বৃদ্ধি আর প্রতিদিনের খরচ দুইগুণ বেড়েছে৷ খরচ মেটানোর পর হাতে আর কোনো টাকা থাকে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
খুশি নন বাসচালক শরীফ
গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ রুটের শীতল পরিবহণের চালক মো. শরীফ বলেন, ‘‘দেশে সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হচ্ছে৷ এতে আমরা খুশি৷ কিন্তু রাস্তা-ঘাটে যানজট বেড়েই চলেছে৷ গত কোরবানির ঈদে লকডাউন থাকায় রাস্তায় গাড়ি কম ছিল, ট্রিপ বেশি মারতে পারায় বেতনও ছিল বেশি৷’’ রাস্তায় তীব্র জ্যামে এই ঈদে গতবারের তুলনায় আয় অর্ধেকও হবে না বলে জানান তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদের দিন বাড়ি যাবেন জব্বার
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে কুলির কাজ করেন মো. জব্বার৷ ঈদ নিয়ে তার বাড়তি কোনো ভাবনা নেই৷ কোরবানি দেয়ার সামর্থ্যও নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘গরিব মানুষের ঈদ নাই৷ ঈদ হলো ধনী মানুষের জন্য৷‘’ তার মতে, দেশে প্রতিবছর বড়লোক আরো বড়লোক হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে৷ ‘‘ঢাকায় যে কয়টা প্রাইভেট গাড়ি আছে, সে কয়জনই শুধু টাকাওয়ালা, বাকিদের অবস্থা খারাপ,’’ বলেন জব্বার৷ ঈদের দিন পর্যন্ত কাজ করে লঞ্চে বাড়ি ফিরবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা’
তৈয়ব মিয়া ঢাকার রাস্তায় ফেরি করে শুকনো খাবার বিক্রি করেন৷ করোনাকালীন সময়ের চেয়ে তার আয় বেড়েছে৷ কিন্তু তার চেয়েও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খরচ৷ তৈয়ব মিয়া বলেন, ‘‘করোনার সময় রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় আমাগো ইনকাম কম আছিল৷ কিন্তু এমনিতে আমগো ইনকাম প্রায় একই৷ তয় এই কথা ঠিক যে এহন মানুষের আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা৷’’ ঈদের আগের দিন পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ি যাবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ আগের মতো নেই’
ঢাকার মিরপুর ১০ সার্কেলের একটি পোশাক তৈরির কারখানার কর্মী সালেহা আক্তার৷ প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি দুই বছর যাবত কাজ করেন৷ এই মাসে তার বেতন বেড়েছে এক হাজার টাকা৷ কিন্তু সার্বিক খরচ বেড়েছে ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত৷ তাই বেতন কিছুটা বাড়লেও তিনি পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আগের বেতন দিয়ে যেভাবে ঈদ পালন করতাম এখন বেতন বাড়ার পরেও তা সম্ভব হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা নেই’
ঢাকার পল্টনের ফুটপাথের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়তি হইলেও সাধারণ মানুষের কথা ভাইবা হোটেলের খাবারের দাম বাড়াই নাই৷ কিন্তু তা-ও কাস্টমার আগের মতন নাই৷ মানুষ দুপুরে ভাতের জায়গায় চা-রুটি খায়, যে ১০-২০ টাকা বাঁচে, সেইটাই এখন অনেক টাকা৷’’ তিনি বলেন, গত বছরের ধার-দেনায় এখনও আটকে আছেন, তাই ঈদে বাড়তি কিছু করার পরিকল্পনা তার নেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদে নতুন জামা
ঈদ উপলক্ষে ফুটপাথ থেকে নতুন জামা কিনছেন মো. আল আমিন৷ নরসিংদী থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছেন দশম শ্রেণির এই ছাত্র৷ কেনাকাটা সেরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাবে সে৷ অন্যবার শপিং মল থেকে জামা-কাপড় কিনলেও এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফুটপাথেই কেনাকাটা সারছেন বলে জানান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদ কাটবে সড়কে
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে কথা হয় এই ট্রাফিক পুলিশের সাথে৷ ১৫ বছরের চাকরিজীবনে হাতেগোনা কয়েকটি ঈদ তিনি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন৷ এবারও তাকে ঈদের দিন রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারি চাকরি করি, কিছু বলতে পারি না৷ বেতন যা পাই, বউ-বাচ্চা গ্রামে রেখে পালতেও কষ্ট হয়া যায়৷ তা-ও তো আমরা নিয়মিত বেতন পাই, সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ কিভাবে চলে আল্লাহই ভালো জানেন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আমরাই সবচেয়ে হতাশাগ্রস্ত’
একটি সরকারি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু নাসের৷ ঈদ আসলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘খুব সম্প্রতি পত্রিকায় দেখলাম আমরা ১২২টি দেশের মধ্যে হতাশা ও দুঃখে সপ্তম অবস্থানে আছি, প্রথমে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান৷ আমার মতে, বাংদেশের যে সার্বিক পরিস্থিতি, আফগানিস্তান নয়, আমাদেরই তালিকায় এক নাম্বারে থাকা উচিত৷’’