খরস্রোতা আর ভয়ঙ্কর পদ্মায় সেতু নির্মাণ নিয়ে গত এক দশক ধরে বহু আলোচনা-বিতর্ক হয়েছে, জন্ম দিয়েছে অসংখ্য সংবাদ ও গুজবের৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ১৯টি জেলার মেলবন্ধন ঘটানো এই সেতু এখন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশের সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস আর অর্জনের অনন্য বার্তা৷ এই সেতুর উদ্বোধনের বেশ কয়েকদিন আগে থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো সেতুটি নিয়ে ব্যাপক আকারে কাভারেজ দিয়েছিল৷ এত বেশি কাভারেজের কারণে কারো কারো কাছে বিষয়টি ‘মিডিয়ার অতিরঞ্জন'ও বলে মনে হয়েছিল৷ তাদের কাছে মনে হতে পারে, সমসাময়িক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর চেয়ে পদ্মা সেতুর বেশি কাভারেজ দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেতুটির নির্মাণের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য, নির্মাণকে ঘিরে নানা ঘটনাপ্রবাহ এবং এসব ঘটনাপ্রবাহের সাথে গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করলে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যাবে৷ ২০১০ সাল থেকে গত এক যুগে এই সেতু নিয়ে গণমাধ্যমের উপস্থাপনা বা পরিবেশনা, নানা সময়ে গণমাধ্যমের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং নীতির যে উত্থান-পতন হয়েছে তা দেশের গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভাল গবেষণার বিষয় হতে পারে৷ গণমাধ্যম ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে পাশ্চাত্যের যে প্রচলিত তাত্ত্বিক ধারণাগুলো আছে সেগুলো থেকে ভিন্ন ধর্মী কিছু ধারণা এসব গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে৷
জুনের শুরু থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে কাভারেজ বাড়তে থাকে৷ উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসে কাভারেজের পরিমাণ ততই বাড়ছিল৷ উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে থেকে গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও লক্ষ্য করা গেছে৷ সংবাদপত্র ও টেলিভিশনগুলো নিজেদের মত করে সংবাদ, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ এবং প্রচার করেছে৷ বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ২৪ ও ২৫ জুন এই দুই দিনে সেতু নিয়ে ১৭১টি আইটেম অনলাইনে প্রকাশ করেছে৷ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ ডট কমে এই দুই দিনে প্রকাশ পেয়েছে ৫৭টি আইটেম৷ দেশের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার তাদের অনলাইনে পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন ট্যাগ সংযোজন করেছে যেখানে ২০০৯ সালের ৬ মে থেকে পত্রিকাটিতে সেতু নিয়ে প্রকাশিত সব আইটেম স্থান পেয়েছে৷ পত্রিকাটির অনলাইনে উদ্বোধনের দিন সেতু নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ২৯টি আইটেম৷ উদ্বোধনের আগে ও পরের দিনগুলোতে টিভি সংবাদগুলোর বুলেটিন জুড়ে ছিল পদ্মা সেতুর নানা খবর, মতামত এবং বিশ্লেষণ৷ টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং অনলাইন পোর্টালে সেতুর নির্মাণ জটিলতা ও প্রাকৃতিক বিপত্তি, আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে নদী শাসন ও জমি অধিগ্রহণ, সেতুর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপযোগিতা, সেতুর কারণে নতুন নতুন সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে পাঠক-দর্শক আদ্যোপান্ত জানতে পেরেছে৷ সংবাদপত্র এবং কিছু অনলাইন পোর্টাল সেতু চালু হওয়ার পর সম্ভাব্য সমস্যা, বেসরকারি পরিবহন মালিকদের নৈরাজ্য ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু ভাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ পাশাপাশি এটিও সত্যি যে, অনাবশ্যক প্রতিযোগিতা, সামাজিক মাধ্যমের চাপ, আর অনলাইন হিটের লোভে অনেক গণমাধ্যম সেতু নিয়ে কাভারেজের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাভাবিক শিষ্ঠাচার নীতির বাইরে চলে গিয়েছিল৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব কোনো আচরণ বিধি কিংবা নীতিমালা বা কোড অব কনডাক্ট নেই৷ আবার বাইরের দেশগুলোর মতো পেশাজীবী সংগঠন বা রাষ্ট্রীয় কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ ধরনের আচরণ বিধির চর্চাও বাংলাদেশে নেই৷ উপরন্তু সামাজিক মাধ্যমের ভাইরালের চাপ যোগ হওয়ায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর নীতিহীনতার বিষয়টি স্পষ্টতই লক্ষ্য করা গেছে৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালগুলো নিজেদের সামাজিক মাধ্যমের কাতারে নামিয়ে নিয়ে আসে৷ দায়বদ্ধতার দিক থেকে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের তফাত বুঝতে না পারাটা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা পেশাদারিত্বের সঙ্কটকে দিনে দিনে বাড়িয়ে তুলছে৷ এজেন্ডা সেটিং আর গেটকিপিংয়ের মাত্রাজ্ঞানহীনতা বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে অনেক বেশি সঙ্কটের মুখে ফেলে দিবে৷ একটি সেতুতে কে আগে গেলো, কে মূত্রত্যাগ করলো ইত্যকার বিষয়গুলো একটি সংবাদমাধ্যমের এজেন্ডা হতে পারে না৷
শুধু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সক্ষমতা এবং সেতুটির সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিবেচনায় নয়, সেতুটির নির্মাণ নিয়ে আর্থিক ও রাজনৈতিক জটিলতা বিবেচনা করলে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কাছে সাদামাটা একটি বিষয় ছিল না৷ কারণ নানা ঘটনা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু বিষয়টি রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা ও সুনামের সাথে জড়িত একটি সংবেদনশীল বিষয়ে পরিণত হয়েছিল৷ এ কারণে পদ্মা সেতু নিয়ে গণমাধ্যমের দুই-এক দিনের কাভারেজের ভিত্তিতে মন্তব্য করলে সেটি একটি খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরবে৷ কারণ রাষ্ট্রীয় কোনো সংবেদনশীল বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর ও মতামত তুলে ধরার প্রবণতাকে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এবং বলয়ের মধ্যে বিবেচনা করতে হয়৷
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে পদ্মায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ, ‘দুর্নীতির আশঙ্কা'র অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, সাথে অন্য সহযোগীদের যোগ দেয়া, বিশ্বব্যাংকের সাথে সমঝোতার নানামুখী উদ্যোগ, বিশ্বব্যাংকের শর্ত সাপেক্ষে ফিরে আসার পক্ষে বিবৃতি দেয়ার পর সরকারের প্রত্যাখান, নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো নির্মাণের দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত এবং প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত সফল হওয়া – এই এক যুগের ঘটনা বলয়ে গণমাধ্যমের কাভারেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কাছে রাষ্ট্রীয় বিষয় ছিল না, ছিল সরকারি বা একটি রাজনৈতিক দলের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়৷
এক যুগের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য সঙ্কট কাল ছিল তিনটি, এক. বিশ্বব্যাংকের ‘দুর্নীতির আশঙ্কার' অভিযোগ এবং অর্থায়নের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, দুই. সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের পর নানা গুজব ছড়িয়ে পড়া, এবং তিন. প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট জটিলতায় সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়া৷ এই তিন সঙ্কটকালের মুহূর্তে বাংলাদেশের মূলসারির গণমাধ্যমগুলোর কাভারেজ, ভাষা ও শব্দের ব্যবহার পর্যালোচনা করলে তাদের মতাদর্শিক ভিত্তির দিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া যায়৷ একটি বিদেশি দাতা সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ উত্থাপনের পর সেটিকে সরকারের দুর্নীতি বা গাফিলতি হিসেবে না দেখে এটিকে রাষ্ট্রীয় বিষয় হিসেবে গণমাধ্যমের বিবেচনা করার উচিত ছিল৷ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ আসার পর থেকে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করেনি৷ বিষয়টি অনুসন্ধানের সক্ষমতা বাংলাদেশের মূল সারির কয়েকটি গণমাধ্যমের ছিল৷ উল্টো বিশ্বব্যাংকের ‘দুর্নীতির আশঙ্কার' অভিযোগকে বাংলাদেশের মূল সারির গণমাধ্যমগুলো সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ বলে উল্লেখ করেছিল৷ এমন একটি সংবাদপত্র ২০১৮ সালে ফরিদপুরে জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে সংবাদ প্রকাশ করেছিল, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশেষে স্বীকার করলেন যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টা হয়েছিল এবং সে কারণেই বিশ্বব্যাংকসহ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল”৷ কিন্তু এ ধরনের কোনো বক্তব্য অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ এই দুর্নীতির আশঙ্কার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো স্পষ্টতই দু'ভাগে বিভক্ত ছিল৷ একপক্ষ সরাসরি এর জন্য সরকারকে দায়ী করেছিল আরেকপক্ষ সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী একে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছিল৷ কিন্তু কোনো পক্ষই বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের অনুসন্ধানের চেষ্টাই করেনি৷ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিষয়টি অনুসন্ধান না করার ব্যর্থতা বাংলাদেশের গণমাধ্যম কোনোভাবে এড়াতে পারে না৷ অনেকে হয়তো যুক্তির খাতিরে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতার কথা টেনে আনতে পারে৷ কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি ওয়ান ইলেভেনের সরকারের চেয়ে ভাল ছিল৷
পদ্মা সেতু নিয়ে দুই পক্ষের সংবাদমাধ্যমই মতাদর্শিক কারণে সে সময়ে অনেক বিষয়ের সংবাদগুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও সেন্সরশিপ আরোপ করেছিল৷ যেমন সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের পিছু হটার ক্ষেত্রে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনুসকে দায়ী করলেও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়নি৷ ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিশ্বব্যাংকের প্রধান হিসেবে ড. ইউনুসের নাম প্রস্তাবের খবর এড়িয়ে গেছে এসব সংবাদমাধ্যম৷ আবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র তদন্ত পর্যবেক্ষণে বিশ্বব্যাংকের হয়ে বাংলাদেশে আসা প্রতিনিধি দলের প্রধান লুই গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছিল৷ পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকার বিরোধী অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ খবর প্রকাশিত হয়নি৷ আবার সরকারের পক্ষে থাকা সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিশ্বব্যাংক এবং সরকারবিরোধী পক্ষের অভিযোগ খুব একটা প্রকাশিত হতো না৷
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর একটি স্বাভাবিক চর্চা হলো যে কোনো ইস্যুতে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে ঢালাও মন্তব্য প্রকাশ করা৷ বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের মূল সারির সংবাদমাধ্যমগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের মন্তব্য৷ অথচ বিষয়টি অন্য কয়েকটি সাধারণ রাজনৈতিক ইস্যুর মত কোনো ইস্যু ছিল না৷ এমনকি প্রচার সংখ্যার শীর্ষে থাকা পত্রিকাগুলোও সাধারণ পাঠকের অতি সাধারণ রাজনৈতিক মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে ছাপিয়েছিল৷
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু তৈরির সিদ্ধান্তের পর এবং প্রাকৃতিক কারণে সেতু নির্মাণে দেরি হওয়ায় অনেক গুজব ছড়িয়েছিল৷ এ সময় প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকা যথাযথ ছিল না৷ দেখা গেছে, সেতুর নির্মাণ খরচ বাড়ার খবর ছাপা হয়েছে প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠায় কিন্তু নদীর তলদেশে নরম মাটির অস্তিত্ব থাকায় পাইলিংয়ে জটিলতা তৈরির খবর ছাপা হয়েছিল ভেতরের পাতায়৷ এ সময়ের গতানুগতিক ও একগেঁয়ে 'স্প্যান সাংবাদিকতা' পাঠক-দর্শকের কাছে বিশেষ কোনো বার্তা দিতে পারেনি৷ গণমাধ্যম যে পদ্মা সেতু নিয়ে পাঠক-দর্শকদের যথাযথ তথ্য দিতে পারেনি তা বুঝা যায় সংবাদের নিচে প্রকাশিত পাঠকের প্রতিক্রিয়ায়৷ গত ১০ জুন দৈনিক প্রথম আলো'র একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘দেশীয় অর্থায়নে দেশের সেতু'৷ এই খবরে সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হলেও বেশ কয়েকজন পাঠকের মন্তব্য সারবস্তু ছিল শুধু বাংলাদেশের টাকায় এত বড় সেতু হতে পারে না, চীনের একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে৷ সেতু নির্মাণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক বিভাজন এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেতুটি নিয়ে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তথ্য প্রকাশিত না হওয়ায় জনমনে এ ধরনের ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে৷
সমাজের একটি সিস্টেম হিসেবে গণমাধ্যম অন্যান্য সিস্টেম যেমন রাজনীতি, অর্থনীতির দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়৷ কখনও কখনও একটি সিস্টেমের সাথে আরেকটি সিস্টেমের সংঘাতও বাধে৷ কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করছে তার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় গণমাধ্যমের রাজনীতিকরণ আর রাজনীতির গণমাধ্যমীকরণ৷ কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংবেদনশীল ইস্যুতে গণমাধ্যম ও রাজনীতির এই সংঘাতকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়৷ কোনো সেতুর যেমন একটি ভিত্তি থাকে এবং নির্মিত সেতুর তাৎপর্য থাকে তেমনি সংবেদনশীল বিষয়ে গণমাধ্যমের কাভারেজেরও ভিত্তি এবং তাৎপর্য থাকে৷ কারণ গণমাধ্যম অশরীরি কোনো সত্তা নয়৷ এখানে গণমাধ্যমের কাভারেজের ভিত্তি হলো এর মতাদর্শিক ভিত্তি৷ রাষ্ট্রীয় সংবেদনশীল ইস্যুতে সরকারবিরোধী মতাদর্শের চেয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থটাই গণমাধ্যমকে আগে ভাবতে হয়৷ সেদিক থেকে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি ভাল শিক্ষা হয়ে থাকলো৷ কারণ এই ইস্যুতে
রাজনীতির কাছে গণমাধ্যম ব্যবস্থা পরাজিত হয়েছে৷ আর এই পরাজয়টা ঘটেছে গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকদের অক্ষমতায়৷