1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পদ্মা সেতু : ফেরির ধাক্কা ও দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায় কী?

সুলাইমান নিলয়
২০ আগস্ট ২০২১

বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মাসেতুর পিলারে দুই মাসের ব্যবধানে পাঁচবার ফেরির ধাক্কার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের নৌ-দুর্ঘটনা।

Bangladesch Bootsunglück
ছবি: AA/picture alliance

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১৬ সালে দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে বসানো হয় প্রথম পিলার। সেই থেকে নির্মাণাধীন সেতুর নীচ দিয়ে চলাচল করছে ফেরি। আগে কখনোই না ঘটলেও এখন এতবার ধাক্কা লাগার কারণ কী?

চালকের অদক্ষতার কথা উঠে এসেছে নানাভাবে। এক পা এগিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চালকের অদক্ষতা, নাকি নাশকতা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে নৌপথ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের সন্তানরা এই খাতের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করলেও দেশে এর অবস্থা ভালো নয়। অদক্ষ জনবলের পাশাপাশি এই খাত ভারাক্রান্ত ঘুস-দুর্নীতিতেও।

দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৬ হাজার মানুষের'

পদ্মাসেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হলেও তাতে এখনো প্রাণহানি হয়নি। তবে প্রতি বছর যাত্রীবাহী, মালবাহী ও মাছ ধরা নৌযানে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) সাধারণ সম্পাদক আশীষ ‍কুমার দে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ১ হাজার দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৬ হাজার ৫৯১ জন মানুষ। দুর্ঘটনায় লাশ উদ্ধারের ভিত্তিতে এই হিসাবটি করা।

তার মতে, বাংলাদেশের নৌখাতে পরিসংখ্যান করতে গেলেও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। কারণ, নৌযানের সংখ্যার কোনো হিসাব নেই। অনেকে মনে করেন, এই সংখ্যাটি ৮০ হাজার। সঠিক সংখ্যা কেউ জানে না। নৌশুমারি করে এটা জানতে হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু নৌযানের হিসাব নেই, তাই তাদের উপর নিয়ম-কানুনও প্রয়োগ করা যায় না।

কে চালায় ফেরি? কীভাবে নিয়োগ হয়?

৪১ বছর জাহাজে চাকরি করে সম্প্রতি অবসরে গেছেন মো. ইউনুসুর রহমান। তিনি বলেন, জাহাজের ক্যাটাগরি ভাগ করা থাকে। একজন লোক মাস্টার হতে চাইলে তাকে প্রথমে ঢুকতে হবে খালাসি বা ক্রু পদে, বাস্তবে যদিও মাস্টারও একজন ক্রু। কিন্তু যারা জাহাজ বাঁধে, পরিষ্কার রাখে-তাদেরকে ক্রু বলি আমরা। ক্রু থেকে এরা হবে কোয়ার্টার মাস্টার। মানে চালক বা সুকানি। এরা হুইল পরিচালনা করেন। জাহাজ বা ফেরি-ডানে রাখা বামে রাখার কাজ করেন।

‘‘এরপর থার্ড ক্লাস মাস্টার, এরপর সেকেন্ড ক্লাস মাস্টার, ফার্স্ট ক্লাস মাস্টার। তিন বছর পরপর পরীক্ষা দিয়ে পাস করে এসব ধাপে পদোন্নতি নিতে হয়।” তিনি জানান, ফার্স্ট ক্লাস মাস্টার একটা ফার্স্ট ক্লাস জাহাজের দায়িত্বে থাকেন। তার সাথে একাধিক সেকেন্ড ক্লাস মাস্টার থাকেন।

তিনি বলেন, তবে যেহেতু একজন মাস্টার চালকের কাজ করে এসেছেন, তাই তাকেই জাহাজের সবচেয়ে দক্ষ চালক বলে মনে করা হয়। এ কারণে জরুরি সময়ে তাকেই চালানোর কাজ নিজ হাতে তুলে নিতে হয়।

পদ্মায় ফেরি চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা এই অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার বলেন, আমি এরকম সময়ে নিজ হাতেই দায়িত্ব তুলে নিতাম।

‘‘পদ্মায় যে ফেরি চলবে, সেটা অন্য জায়গায় না-ও চলতে পারে’’: রৌণক সাহা নিলয়

This browser does not support the audio element.

নিজের চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘‘এখানে লেখাপড়ার বিষয়টা অপশনাল। তবে লেখাপড়া জানা থাকলে সহজেই কাজটা শিখতে পারবে, লেখাপড়া জানা না থাকলে কষ্ট হবে।''

‘‘এখন লিখিত পরীক্ষা থাকায় কিছু না কিছু পড়ালেখা থাকতেই হয়। সেটাও অবশ্য অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট থাকলেই চলে। তাহলেই তিনি প্রথম শ্রেণির মাস্টার হতে পারেন।”

"লঞ্চে মাস্টাররা অশিক্ষিতই বেশি। আমরা তো ক্যাডেট ট্রেইনিং করে মাস্টার হয়েছি।”

এনসিপিএসআরআর সাধারণ সম্পাদক আশীষ ‍কুমার দে বলেন, ‘‘জনবল নিয়োগের সমস্যা পরীক্ষা থেকেই শুরু হয়। একদিনে লিখিত ও ভাইভা নিয়ে ফলাফল দিয়ে দেয়া হয়। যিনি প্রশ্ন করেন তিনি ভাইভাতেও থাকেন। পদ্ধতিটা আদর্শ না, দুর্নীতির সুযোগ থাকে।’’

তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাও ঘটেছে।’’

টাকায় মেলে পদোন্নতি, চালক-মাস্টার হওয়ার সনদ’

৪১ বছর চাকরি করা ইউনুসর রহমান বলেন, ‘‘যখন আমরা মাস্টার পদে উত্তীর্ণের পরীক্ষায় পাস করেছি, তখন কোনো ঘুস ছিল না। তখন ১০০ প্রশ্নের ১০০টারই জবাব দিতে হয়েছে।’’

দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার পদে উত্তর্ণের পরীক্ষার স্মৃতিচারণ করে তিনি জানান, তারা তখন ২৭১ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন, পাস করেছিলেন মাত্র পাঁচ জন, এখন ২৭১ জন পরীক্ষা দিলে পাস করবে ২৭০জন। অর্থাৎ, এখন পাস করে টাকায়, যার জন্য মাস্টারদের (বাস্তবিক দক্ষতা) অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। টাকার মাস্টার সব। অভিজ্ঞতা নেই।

তিনি বলেন, ‘‘সব পরীক্ষায় আপনি একটা-দুইটা প্রশ্নের জবাব ঠিকমতো না জানলেও হয়, কিন্তু তিন কাজে কোনো ছাড় নেই। বিমানের পাইলট, ডাক্তার, জাহাজের মাস্টার। কারণ, এগুলোতে একটা ভুল করলে মানুষের জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে।’’

ইউনুসুর বলেন, ‘‘তাই আমাদের সময়ে প্রত্যেক প্রশ্নের সঠিক জবাব দিলেই একজন মাস্টার হতো। সেই জিনিসটা এখন টোটালি নাই। এটা ধ্র্রুব সত্য। নাই, নাই. নাই। এটাই ইউনিভার্সেল ট্রুথ।’’

ঘুস নেয়ার এই সংস্কৃতি ১৫-২০ বছর আগে শুরু হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন যারা পরীক্ষা দেয়, টাকা ছাড়া কেউ পাস করতে পারবে না। ‘‘এটা একটা ধ্বংসের পাঁয়তারা। এগুলো যারা করে, এরা মানুষ নামের জানোয়ার, শিক্ষিত জানোয়ার। যে দেশের মানুষ খাদ্যে বিষ মেশায়, তারা আর কত ভালো হবে? আমি নিজে ভালো থাকবো, আর দুনিয়াদারি জাহান্নামে যাক...৷’’

"একজন মাস্টারের উপরে কোটি কোটি টাকার মাল আর কত অমূল্য জীবন থাকে। সেই মাস্টারকে যদি টাকা দিয়ে পাস করানো হয় সে তো জাহাজ অ্যাক্সিডেন্ট করবেই। এখন যারা এক্সামিনার, তারা কোটি কোটি টাকার মালিক।”

পদ্মাসেতুর পিলারের সাথে ধাক্কা লাগার দায় সংশ্লিষ্ট মাস্টারের, বলেন সাবেক এই মাস্টার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘স্রোত থাকবে, সবকিছু থাকবে, সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তাকে পরিচালনা করতে হবে।’’ ওই সময়ে চালক হুইল পরিচালনায় থাকলে সেটাকেও মাস্টারের ব্যর্থতা হিসাবে দেখতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘ক্রিটিকাল সময়ে মাস্টারের নিজ হাতে দায়িত্ব তুলে নেয়া উচিত।’’

বিদেশি জাহাজে হাজার হাজার বাংলাদেশি’

দেশের নৌপথে নানা অনিয়মের খবর এলেও বাংলাদেশের সন্তানরা দুনিয়াজুড়ে নানা দেশের জাহাজ চালাচ্ছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এই জনবলের সংখ্যা ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার। এরা বছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠায়।

সংগঠনটির সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. এনাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশিরা জাহাজ চালাচ্ছে দুনিয়াজুড়ে। অস্ট্রেলিয়া, ইউকে, বাহামা, সিঙ্গাপুর-বিভিন্ন দেশে বড় বড় কোম্পানিতে জাহাজ চালাচ্ছে তারা। এদের অনেকের বেতন ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার।’’

তিনি বলেন, ‘‘সমুদ্রগামী বাংলাদেশি জাহাজেও বেতন ভালো। তবে দেশি কোস্টাল ভেসেলে এই বেতন মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘পৃথিবীর অনেক দেশের এই খাতের নিজস্ব মান আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি। তবে আমরা সে রকম নই।

‘‘আমাদের কোস্টাল ভেসেলের বহর নানাভাবে ত্রুটিপূর্ণ’’: ক্যাপ্টেন মো. এনাম চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

আমাদের দেশে যে কোস্টাল ভেসেলের বিরাট বহর আছে, এগুলো নানাভাবে ত্রুটিপূর্ণ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নির্মাণ ত্রুটি। যারা এগুলো দেখেন, তাদের সংখ্যাও খুবই কম। তাই তারা এগুলো নিয়মিত মনিটরিং করতে পারেন না।’’

‘আনকোয়ালিফাইড' অনেক লোকজন নৌযান চালাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। তার মতে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে এই অযোগ্য লোকদের দ্বারা।

ফেরি ডিজাইনে চমক

বাংলাদেশে ফেরি দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে ব্রাজিলের একটি রুটের জন্য ফেরি ডিজাইন করে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশের বুয়েট ও মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল।

ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।

এই দলের প্রধান রৌনক সাহা নিলয় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে তারা একটা রুট ঠিক করে দেয়। সঙ্গে সেই রুটের পরিবেশ-পরিস্থিতি বর্ণনা করে দেয়। এইসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদেরকে ডিজাইন করতে হয়।’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যে নদীতে স্রোত কম সেখানে ফেরি হবে এক রকম, যে নদীতে স্রোত বেশি সেটা হবে আরেক রকম। মনে করেন, নদীর গভীরতায় কম বেশি আছে। পদ্মায় যে ফেরি চলবে, সেটা অন্য জায়গায় না-ও চলতে পারে। রুটের স্পেসিফিকেশন একটা ফেরির ডিজাইনে অনেক বড় রোল প্লে করে।’’

তিনি জানান, প্রতিযোগিতায় জার্মানির একটা দল প্রথম এবং ইন্দোনেশিয়ার একটা দল দ্বিতীয় হয়েছে। তৃতীয় হয়েছে নিলয়দের ডিজাইন। ব্রাজিলের একটি পাখির নামে তারা এর নাম রেখেছেন সিসনে হৌসা এক্সপ্রেস (Cisne Rosa Express)।

নিলয় বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।

একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবায়ের ইবনে আওয়াল এবং যুক্তরাজ্যের (সিঙ্গাপুর ক্যাম্পাস) নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান এই প্রকল্পে উপদেষ্টা হিসাবে যুক্ত ছিলেন।

সমাধান কোন পথে?

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. এনাম চৌধুরীর মনে করেন, পদ্মা সেতুকে নিরাপদ রাখতে হলে সরকারের রেগুলেটরি সংস্থার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। মাল্টিটাস্কিং লোকদের এখানে না এনে স্পেশালাইজড লোকদের নিয়ে আসতে হবে। মাল্টিটাস্কিং করে এই ইন্ডাস্ট্রি রান করা সম্ভব নয়।

পৃথিবীর অনেক দেশেই অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের জন্য নিয়ম-কানুন প্রায় এক রকম বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে যথেষ্ট শক্তিশালী নিয়ম থাকলেও সেটা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘এই খাত বুঝতে হলে আগে জাহাজ বুঝতে হবে।

‘‘এগুলো যারা করে, এরা মানুষ নামের শিক্ষিত জানোয়ার’’: মো. ইউনুসুর রহমান

This browser does not support the audio element.

এটা একটা পৃথক দেশের মতো। বাসায় আগুন লাগলে আপনি ফায়ার ব্রিগেডকে কল করতে পারেন, জাহাজে এ রকম যত দুর্যোগ হয়, সবকিছু নাবিকদেরকেই সামলাতে হয়।’’

‘‘একেকটা সার্টিফিকেটের জন্য এখানে ১৫-২০টা কোর্স করতে হয়। এগুলো শেষ করে লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়, মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয়। পাস করলে এরপর আপনি জাহাজে যেতে পারবেন।”

‘‘তবে এই সার্টিফিকেটগুলোকে সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি বলা হয়। মনে করেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে পাস করেছেন, পাস করে হয়ত আপনি কৃষি কাজ করেছেন। তবে অনেক পরে এসেও ওই সার্টিফিকেট দিয়েই আপনি একটা চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু আমাদের এখানে বিষয়টা সেরকম নয়। এখানে আপনাকে সব সময় সার্টিফিকেটটা আপগ্রেড করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরপর সার্টিফিকেট রিনিউ করতে হবে। পাস করে ছেড়ে চলে গেলেন, তাহলে আর ফিরতে পারবেন না।’’

বাংলাদেশের ভেতরে মান বাড়াতে হলে কী করতে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম কথা এনট্রি লেভেলে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়াতে হবে। ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। উন্নত কারিকুলাম এবং উচ্চ বেতনে যোগ্য শিক্ষকদের নিয়ে আসতে হবে।মিনিমাম ইন্টার পাস করে এখানে ঢুকতে হবে।’’

বাংলাদেশের পরীক্ষা পদ্ধতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যিনি পড়ান, তিনি প্রশ্ন করেন, তিনিই পরীক্ষা নেন, উনিই পাস করান। এ কারণে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রচুর দুর্নীতি হয়।’’

‘‘এটা বদলাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ শিক্ষা দেয়া। এক্জামিনারের কাজ পরীক্ষা নেয়া। এই সবগুলোর জন্য পৃথক বডি লাগবে।”

বাংলাদেশে জাহাজ পরিচালনার সাথে যুক্তদের কারিগরি দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক গৌতম কুমার সাহা।

তিনি বলেন, ‘‘উন্নত দেশে সুপ্রশিক্ষিত লোকদের দ্বারা অপারেট করাচ্ছে। সোফিস্টিকেটেড ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করছে।

‘‘ঘাটতি হলো আমাদের নাবিকদের ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ নেই’’: গৌতম কুমার সাহা

This browser does not support the audio element.

‘‘পদ্মার যে কারেন্ট আছে, সেখানে ইনক্যাপাবল ভেহিকেলগুলো অপরেট করা হচ্ছে। এগুলো সেখানে চলাচলের উপযোগী না। তারপরও হয়ত দেশের কথা চিন্তা করে তারা অপারেট করে।’’

তবে ডিজাইনের ত্রুটি দেশের নৌযানগুলো এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ঘাটতি যেটা আছে, এখানে নাবিকদের প্রোপার প্রশিক্ষণ নেই।’’

‘‘সারেং নাবিকদেরকে দেশের অবস্থা বিবেচনা করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যে ট্রেনিং অ্যাকেডেমিগুলো আছে, সেখানেও আমাদের লোকাল নাবিকরা যথাযথ প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না। এটা করা গেলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।”

‘‘প্রশিক্ষণ না নেয়ার আগে কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করা যাবে না।’’

‘‘এই বিষয়গুলো যাদের দেখার কথা, তাদের ঠিকমতো দেখতে হবে’’: এম খালেদ ইকবাল

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে একটি মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এর উপাচার্য হিসাবে রয়েছেন রিয়ার এডমিরাল (অব.) এম খালেদ ইকবাল।

নৌখাতের সামরিক-বেসামরিক নানা দায়িত্বে ছিলেন তিনি। উপাচার্য হিসাবে যোগ দেয়ার আগে তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন।

জাহাজ পরিচালনায় যুক্তদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। সেই সাথে ফিটনেসের কথাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়গুলো যাদের দেখার কথা, তাদের ঠিকমতো দেখতে হবে। দেখলে এগুলো সবকিছু অটোমেটিক ইমপ্রুভ করবে।’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ