1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পদ্মা সেতু হয়ে স্বপ্ন যাচ্ছে বাড়ি

৮ জুলাই ২০২২

‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব/ মা গো, বলো কবে শীতল হবো'­-বাঙালির বাড়ি ফেরার সঙ্গে এই গানটির আছে অদ্ভুত এক যোগাযোগ। ইট, কাঠ, কংক্রিটের নাগরিক যাঁতাকল ছেড়ে বাড়ি ফেরার উদ্বেলতা যেন অসাধারণ এক অনুভূতি।

‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব/ মা গো, বলো কবে শীতল হবো'­-বাঙালির বাড়ি ফেরার সঙ্গে এই গানটির আছে অদ্ভুত এক যোগাযোগ। ইট, কাঠ, কংক্রিটের নাগরিক যাঁতাকল ছেড়ে বাড়ি ফেরার উদ্বেলতা যেন অসাধারণ এক অনুভূতি।
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS

আর যদি হয় ঈদ ছুটিতে বাড়ি ফেরা, তাহলে আনন্দটাও যেন অপার্থিব৷

তবে কদিন আগেও বাড়ি ফেরার সুখানুভূতির চেয়ে ভোগান্তিটাই বেশি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের৷ ঢাকা শহরের যানজট পেরিয়ে ফেরিঘাট৷ তারপর দীর্ঘ অপেক্ষা৷ কখন আসবে ফেরি, আসলে যে ফেরিতে উঠা যাবে, তারও ছিল না কোনো নিশ্চয়তা৷ আবার খরস্রোতা পদ্মা উত্তাল হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেত ফেরি চলাচল৷ তাই বাড়ি ফেরার আনন্দটা ফেরিঘাটেই এসে যেন ফিকে হয়ে যায়৷

কেউ কেউ ফেরিঘাটের দুর্ভোগ পোহাতে পদ্মা পাড়ি দিতে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারকে বেছে নেন বিকল্প হিসেবে৷ এভাবে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে কত দুর্ঘটনা, কত প্রাণহানি তারও কোনো সঠিক হিসেবে নেই৷

কিন্তু দরজায় কড়া নাড়তে থাকা ঈদুল আজহা উদযাপনে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সেই ক্লান্তিময় বাড়ি ফেরার গল্প এবার ফুরালো৷ অন্তত দেশের গণমাধ্যমগুলো সেই খবরই জানাচ্ছে৷

দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক বাঁধা-সব ছাপিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু এখন দেশের ‘আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক’৷

সেই সেতুর জমকালো উদ্বোধনের আগে থেকেই নানা আয়োজনে সরব ছিল দেশের প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমগুলো, সেতু খুলে দেয়ার পরও সেই আকর্ষণে ভাটা নামেনি৷

প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব পাচ্ছে, পদ্মা সেতু দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষের সংবাদ৷ প্রিয়জনদের কাছে পাওয়ার আকুলতা সঙ্গে নিয়ে লঞ্চ, ট্রলার ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ যে এখন সড়কপথে ছুটছে সেই খবর ফেরি হচ্ছে গণমাধ্যমের পাতায় পাতায়, কিংবা টিভি পর্দায়৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পর পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হলো দক্ষিণবঙ্গ৷ গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, লঞ্চ ছেড়ে মানুষ এখন সেতু হয়ে সড়কপথে মাত্র ৩ ঘণ্টায় বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছেন৷ সাগরকন্যা কুয়াকাটা থেকেও রাজধানীতে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায়৷ অথচ ফেরির আমলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগে যেত৷ নৌপথেও লাগত প্রায় একই সময়৷ আর বৈপ্লবিক পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে পদ্মা সেতু৷

দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের বাড়ি ফেরা কিংবা ভোগান্তি ছাড়া ঈদযাত্রার খবর তুলে ধরতে সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলো তো ঢাকা থেকে লাইভ সম্প্রচারের ডিভাইসসহ রিপোর্টার পাঠাচ্ছে সেখানে৷ যেন আনন্দময় ঈদযাত্রায় উৎফুল্ল মানুষের হাসিটা দেখতে পান দেশের মানুষ৷

প্রতিদিন কত গাড়ি পারাপার হলো, তার পরিসংখ্যান যেমন আছে, এপার ওপার মিলে টোল আদায়ে কতো অর্থ জমা হলো পদ্মা সেতুর আয়ের খাতায় বাদ যাচ্ছে না সেই খবরও৷

তবে এই আনন্দের মধ্যেও বাইকারদের জন্য মন খারাপের খবর দিয়েছে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো৷ যানবাহন চলাচলে পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার প্রথম দিন, অর্থাৎ ২৬ জুন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার জের ধরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সেতুতে দুই চাকার এই যানবাহনটিকে নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এমনকি বুধবার দিন পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারের চেষ্টায় তিন ট্রাকচালককে জরিমানাও করেছে পুলিশ৷

আবার ঈদযাত্রাকে নিরাপদ করতে মহাসড়কেও ঈদের দিন ও ঈদের আগে এবং পরের তিনদিন মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ রাখতে হবে বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশ দিয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই খবর আরও ক্ষুব্ধ করেছে বাইকারদের৷ শুধু কি তাই, ঈদের পরের পাঁচদিন পর্যন্ত নৌযান বা লঞ্চে মোটর সাইকেল পারাপারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷

স্বপ্নের সেতু পাড়ি দিয়ে যারা গন্তব্যে যেতে পারছেন না, তেমন বাইকাররা মিলে পদ্মা সেতু সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধনও করেছে৷ মানববন্ধন করেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেও৷ সেই খবরগুলোও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে টিভিতে, পত্রিকায়, অনলাইন পোর্টালেও৷ বলা যায়, এই সেতু এতটাই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে যে, এখন যে কোনো গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট কোনো না কোন সংবাদ থাকছেই৷ সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, শুধু উপকারভোগীরাই নয়, এই সেতুটি দেখতে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকেও ছুটে আসছেন মানুষ৷

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আনন্দের সংবাদের সঙ্গে নিরানন্দ নেমে এসেছে লঞ্চ মালিকদের জন্য৷ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রী সংকটের শঙ্কায় থাকা রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে যাত্রী থাকলেও নেই ঈদযাত্রার সেই পুরনো আমেজ৷

তানজীর মেহেদী, সাংবাদিকছবি: Privat

বুধবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বরিশালের ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না৷ অথচ সদরঘাট মানেই তো ব্যস্ত চিত্র৷ আর ঈদ মৌসুম হলে তো কথাই নেই৷ কিন্তু এবার ঈদ যাত্রায় লঞ্চের সেই ‘তিল ঠাঁই আর নাহি রে' অবস্থা এখনও তৈরি হতে দেখা যায়নি৷

কেবিনে ভাড়া কমানো হয়েছে৷ হাঁকডাক করে লঞ্চে যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতাও করছেন কর্মচারীরা৷ তবুও যাত্রী খরা কাটছে না৷ লঞ্চ মালিক-কর্মচারীদের দুর্দশার চিত্রগুলোও উঠে আসছে প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমে৷

অবশ্য এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রায় বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা, দীর্ঘ যানজট, টিকিট না পাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি৷ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাসের ভাড়া বাড়তি আদায়ের চিরাচরিত অভিযোগের খবর দিয়েছে সংবাদপত্রগুলো৷ বুধবার পর্যন্ত মোটামুটি স্বস্তিতেই কেটেছে ঈদযাত্রা৷ রেলপথেও খুব একটা ঝামেলা হয়নি এখনও৷

তবে ঈদুল আজহার যে প্রধান বিষয় পশু, সেই পশুর হাট এখনও সেই অর্থ জমজমাট হয়নি৷ ধারণা করা হচ্ছে শুক্র ও শনিবার শেষ মুহূর্তে এসে জমে ওঠতে পারে হাট৷ তার অন্যতম কারণ ঢাকা শহরে আগে ভাগে পশু কিনে সেটা লালন পালন একটা কষ্টসাধ্য বিষয়৷

গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পর্যাপ্ত পশু থাকলেও হাটে ক্রেতার চেয়ে কিশোর-তরুণ দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল বেশি৷ কর্মব্যস্ত দিনে পরিবারের অভিভাবক ব্যস্ত, তাই হাট ঘুরে নিজেদের কোরবানির পশু পছন্দ করে রাখার দায়িত্ব পালন করছেন পরিবারের নবীন সদস্যরা৷ সবার আশা, শুক্র আর শনিবারে গরুর হাটে মানুষের ভিড় যেমন হবে উপচে পড়া, তেমনি বেচা-বিক্রিও জমে ওঠবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ