‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব/ মা গো, বলো কবে শীতল হবো'-বাঙালির বাড়ি ফেরার সঙ্গে এই গানটির আছে অদ্ভুত এক যোগাযোগ। ইট, কাঠ, কংক্রিটের নাগরিক যাঁতাকল ছেড়ে বাড়ি ফেরার উদ্বেলতা যেন অসাধারণ এক অনুভূতি।
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
বিজ্ঞাপন
আর যদি হয় ঈদ ছুটিতে বাড়ি ফেরা, তাহলে আনন্দটাও যেন অপার্থিব৷
তবে কদিন আগেও বাড়ি ফেরার সুখানুভূতির চেয়ে ভোগান্তিটাই বেশি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের৷ ঢাকা শহরের যানজট পেরিয়ে ফেরিঘাট৷ তারপর দীর্ঘ অপেক্ষা৷ কখন আসবে ফেরি, আসলে যে ফেরিতে উঠা যাবে, তারও ছিল না কোনো নিশ্চয়তা৷ আবার খরস্রোতা পদ্মা উত্তাল হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেত ফেরি চলাচল৷ তাই বাড়ি ফেরার আনন্দটা ফেরিঘাটেই এসে যেন ফিকে হয়ে যায়৷
কেউ কেউ ফেরিঘাটের দুর্ভোগ পোহাতে পদ্মা পাড়ি দিতে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারকে বেছে নেন বিকল্প হিসেবে৷ এভাবে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে কত দুর্ঘটনা, কত প্রাণহানি তারও কোনো সঠিক হিসেবে নেই৷
কিন্তু দরজায় কড়া নাড়তে থাকা ঈদুল আজহা উদযাপনে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সেই ক্লান্তিময় বাড়ি ফেরার গল্প এবার ফুরালো৷ অন্তত দেশের গণমাধ্যমগুলো সেই খবরই জানাচ্ছে৷
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক বাঁধা-সব ছাপিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু এখন দেশের ‘আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক’৷
প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব পাচ্ছে, পদ্মা সেতু দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষের সংবাদ৷ প্রিয়জনদের কাছে পাওয়ার আকুলতা সঙ্গে নিয়ে লঞ্চ, ট্রলার ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ যে এখন সড়কপথে ছুটছে সেই খবর ফেরি হচ্ছে গণমাধ্যমের পাতায় পাতায়, কিংবা টিভি পর্দায়৷
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পর পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হলো দক্ষিণবঙ্গ৷ গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, লঞ্চ ছেড়ে মানুষ এখন সেতু হয়ে সড়কপথে মাত্র ৩ ঘণ্টায় বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছেন৷ সাগরকন্যা কুয়াকাটা থেকেও রাজধানীতে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায়৷ অথচ ফেরির আমলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগে যেত৷ নৌপথেও লাগত প্রায় একই সময়৷ আর বৈপ্লবিক পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে পদ্মা সেতু৷
দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের বাড়ি ফেরা কিংবা ভোগান্তি ছাড়া ঈদযাত্রার খবর তুলে ধরতে সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলো তো ঢাকা থেকে লাইভ সম্প্রচারের ডিভাইসসহ রিপোর্টার পাঠাচ্ছে সেখানে৷ যেন আনন্দময় ঈদযাত্রায় উৎফুল্ল মানুষের হাসিটা দেখতে পান দেশের মানুষ৷
প্রতিদিন কত গাড়ি পারাপার হলো, তার পরিসংখ্যান যেমন আছে, এপার ওপার মিলে টোল আদায়ে কতো অর্থ জমা হলো পদ্মা সেতুর আয়ের খাতায় বাদ যাচ্ছে না সেই খবরও৷
তাদের ঈদ ভাবনা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন, প্রথমবারের মতো মহাসড়কের মোটরবাইক নিষিদ্ধকরণ, করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা৷ এর মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ঈদ ভাবনা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘মানুষ কেজি দরে গরুর দাম বলে’
বিক্রির উদ্দেশে ঢাকার গাবতলীতে পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে ছয়টি গরু এনেছেন মো. বিল্লাল মিয়া৷ তিনি জানান, ‘‘এবারের হাটে এখন পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা কম৷ ভোজ্য এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গো-খাদ্যের মূল্য ৫০ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে৷ অথচ হাটে মানুষ গরুর দাম বলছে মাংসের কেজির হিসাব করে৷’’ এতে গরু লালন-পালনের খরচও উঠবে না বলে দাবি করেন বিল্লাল মিয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কোরবানি দিতে পারতেসি না এইবার’
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে নতুন টাকার ব্যবসা করেন হারুনুর রশীদ৷ তিনি প্রায় ২০ বছর যাবত এই পেশায় আছেন৷ গত বছর কোরবানি দিলেও এবার সেই সামর্থ্য হচ্ছে না৷ বলেন, ‘‘মানুষের এইবারের মতো খারাপ অবস্থা আগে দেখি নাই৷ আমার নিজের অবস্থাই তো করুণ৷ গত বছর বাচ্চাদের শখ পূরণ কইরা একটা ছোট ছাগল কুরবানি দিসিলাম, কিন্তু এইবার কোনভাবেই সম্ভব হইতেসে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘পদ্মা সেতু দিয়ে পার হবো’
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের নোঙর করা ঢাকা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি তাসরিফ-১ এর কর্মচারী মোঃ নাসির হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালি৷ কিন্তু তিনি নিজেই পদ্মাসেতু দিয়ে বাসে করে এবার বাড়ি যাবেন৷ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মাসেতু হওয়ায় তিনি খুশি৷ আবার নিজের পেশায় এর নেতিবাচক প্রভাবও টের পাচ্ছেন৷ এবার ঈদে বোনাস পাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘এইবার বোনাস চাইলে মালিক নিশ্চিত মাইর দিবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তবুও লঞ্চেই যাচ্ছেন জুনায়েদ
ঈদ করতে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে সপরিবারে হাতিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন জুনায়েদ হোসেন৷ পদ্মা সেতু দিয়ে না গিয়ে কেন লঞ্চে যাচ্ছেন জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী জুনায়েদ জানান, বাসে যাওয়ার চেয়ে পরিবার নিয়ে লঞ্চে যাওয়াই তার জন্য সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’
ঢাকার কারওয়ান বাজার মোড়ে কথা হয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের একজন মোটরবাইক চালকের সাথে৷ শুরুতে পদ্মা সেতুতে, পরে ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে মোটরবাইক নিষিদ্ধে ক্ষুব্ধ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু হইলেই আমাদের উপর বিধিনিষেধ আসে৷ লকডাউনে সব চলছে, রাইড শেয়ারিং বন্ধ, ট্রাফিক পুলিশ কথায় কথায় জরিমানা করে, এখন আবার মহাসড়কে আমাদের চলাচল নিষেধ৷ আমাদের উপর কেন সব ঝড় আসে? দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এবার ঈদে আয় নাই’
মো. আবুল বাশার ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাথে দর্জির কাজ করে পরিবার চালান৷ ঈদ এলে তার কাজ বাড়ে, আয়ও বাড়ে৷ কিন্তু এবার খুশি নন তিনি৷ বাশার বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউন থাকলেও সাত দিনে যা আয় করেছি এবার ঈদ চলে আসলেও সেই তুলনায় তেমন আয়ই হয়নি৷ তেলের দাম বৃদ্ধি আর প্রতিদিনের খরচ দুইগুণ বেড়েছে৷ খরচ মেটানোর পর হাতে আর কোনো টাকা থাকে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
খুশি নন বাসচালক শরীফ
গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ রুটের শীতল পরিবহণের চালক মো. শরীফ বলেন, ‘‘দেশে সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হচ্ছে৷ এতে আমরা খুশি৷ কিন্তু রাস্তা-ঘাটে যানজট বেড়েই চলেছে৷ গত কোরবানির ঈদে লকডাউন থাকায় রাস্তায় গাড়ি কম ছিল, ট্রিপ বেশি মারতে পারায় বেতনও ছিল বেশি৷’’ রাস্তায় তীব্র জ্যামে এই ঈদে গতবারের তুলনায় আয় অর্ধেকও হবে না বলে জানান তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদের দিন বাড়ি যাবেন জব্বার
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে কুলির কাজ করেন মো. জব্বার৷ ঈদ নিয়ে তার বাড়তি কোনো ভাবনা নেই৷ কোরবানি দেয়ার সামর্থ্যও নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘গরিব মানুষের ঈদ নাই৷ ঈদ হলো ধনী মানুষের জন্য৷‘’ তার মতে, দেশে প্রতিবছর বড়লোক আরো বড়লোক হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে৷ ‘‘ঢাকায় যে কয়টা প্রাইভেট গাড়ি আছে, সে কয়জনই শুধু টাকাওয়ালা, বাকিদের অবস্থা খারাপ,’’ বলেন জব্বার৷ ঈদের দিন পর্যন্ত কাজ করে লঞ্চে বাড়ি ফিরবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা’
তৈয়ব মিয়া ঢাকার রাস্তায় ফেরি করে শুকনো খাবার বিক্রি করেন৷ করোনাকালীন সময়ের চেয়ে তার আয় বেড়েছে৷ কিন্তু তার চেয়েও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খরচ৷ তৈয়ব মিয়া বলেন, ‘‘করোনার সময় রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় আমাগো ইনকাম কম আছিল৷ কিন্তু এমনিতে আমগো ইনকাম প্রায় একই৷ তয় এই কথা ঠিক যে এহন মানুষের আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা৷’’ ঈদের আগের দিন পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ি যাবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ আগের মতো নেই’
ঢাকার মিরপুর ১০ সার্কেলের একটি পোশাক তৈরির কারখানার কর্মী সালেহা আক্তার৷ প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি দুই বছর যাবত কাজ করেন৷ এই মাসে তার বেতন বেড়েছে এক হাজার টাকা৷ কিন্তু সার্বিক খরচ বেড়েছে ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত৷ তাই বেতন কিছুটা বাড়লেও তিনি পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আগের বেতন দিয়ে যেভাবে ঈদ পালন করতাম এখন বেতন বাড়ার পরেও তা সম্ভব হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা নেই’
ঢাকার পল্টনের ফুটপাথের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়তি হইলেও সাধারণ মানুষের কথা ভাইবা হোটেলের খাবারের দাম বাড়াই নাই৷ কিন্তু তা-ও কাস্টমার আগের মতন নাই৷ মানুষ দুপুরে ভাতের জায়গায় চা-রুটি খায়, যে ১০-২০ টাকা বাঁচে, সেইটাই এখন অনেক টাকা৷’’ তিনি বলেন, গত বছরের ধার-দেনায় এখনও আটকে আছেন, তাই ঈদে বাড়তি কিছু করার পরিকল্পনা তার নেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদে নতুন জামা
ঈদ উপলক্ষে ফুটপাথ থেকে নতুন জামা কিনছেন মো. আল আমিন৷ নরসিংদী থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছেন দশম শ্রেণির এই ছাত্র৷ কেনাকাটা সেরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাবে সে৷ অন্যবার শপিং মল থেকে জামা-কাপড় কিনলেও এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফুটপাথেই কেনাকাটা সারছেন বলে জানান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদ কাটবে সড়কে
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে কথা হয় এই ট্রাফিক পুলিশের সাথে৷ ১৫ বছরের চাকরিজীবনে হাতেগোনা কয়েকটি ঈদ তিনি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন৷ এবারও তাকে ঈদের দিন রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারি চাকরি করি, কিছু বলতে পারি না৷ বেতন যা পাই, বউ-বাচ্চা গ্রামে রেখে পালতেও কষ্ট হয়া যায়৷ তা-ও তো আমরা নিয়মিত বেতন পাই, সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ কিভাবে চলে আল্লাহই ভালো জানেন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আমরাই সবচেয়ে হতাশাগ্রস্ত’
একটি সরকারি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু নাসের৷ ঈদ আসলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘খুব সম্প্রতি পত্রিকায় দেখলাম আমরা ১২২টি দেশের মধ্যে হতাশা ও দুঃখে সপ্তম অবস্থানে আছি, প্রথমে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান৷ আমার মতে, বাংদেশের যে সার্বিক পরিস্থিতি, আফগানিস্তান নয়, আমাদেরই তালিকায় এক নাম্বারে থাকা উচিত৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
14 ছবি1 | 14
তবে এই আনন্দের মধ্যেও বাইকারদের জন্য মন খারাপের খবর দিয়েছে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো৷ যানবাহন চলাচলে পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার প্রথম দিন, অর্থাৎ ২৬ জুন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার জের ধরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সেতুতে দুই চাকার এই যানবাহনটিকে নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এমনকি বুধবার দিন পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারের চেষ্টায় তিন ট্রাকচালককে জরিমানাও করেছে পুলিশ৷
আবার ঈদযাত্রাকে নিরাপদ করতে মহাসড়কেও ঈদের দিন ও ঈদের আগে এবং পরের তিনদিন মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ রাখতে হবে বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশ দিয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই খবর আরও ক্ষুব্ধ করেছে বাইকারদের৷ শুধু কি তাই, ঈদের পরের পাঁচদিন পর্যন্ত নৌযান বা লঞ্চে মোটর সাইকেল পারাপারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
স্বপ্নের সেতু পাড়ি দিয়ে যারা গন্তব্যে যেতে পারছেন না, তেমন বাইকাররা মিলে পদ্মা সেতু সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধনও করেছে৷ মানববন্ধন করেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেও৷ সেই খবরগুলোও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে টিভিতে, পত্রিকায়, অনলাইন পোর্টালেও৷ বলা যায়, এই সেতু এতটাই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে যে, এখন যে কোনো গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট কোনো না কোন সংবাদ থাকছেই৷ সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, শুধু উপকারভোগীরাই নয়, এই সেতুটি দেখতে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকেও ছুটে আসছেন মানুষ৷
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আনন্দের সংবাদের সঙ্গে নিরানন্দ নেমে এসেছে লঞ্চ মালিকদের জন্য৷ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রী সংকটের শঙ্কায় থাকা রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে যাত্রী থাকলেও নেই ঈদযাত্রার সেই পুরনো আমেজ৷
তানজীর মেহেদী, সাংবাদিকছবি: Privat
বুধবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বরিশালের ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না৷ অথচ সদরঘাট মানেই তো ব্যস্ত চিত্র৷ আর ঈদ মৌসুম হলে তো কথাই নেই৷ কিন্তু এবার ঈদ যাত্রায় লঞ্চের সেই ‘তিল ঠাঁই আর নাহি রে' অবস্থা এখনও তৈরি হতে দেখা যায়নি৷
অবশ্য এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রায় বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা, দীর্ঘ যানজট, টিকিট না পাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি৷ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাসের ভাড়া বাড়তি আদায়ের চিরাচরিত অভিযোগের খবর দিয়েছে সংবাদপত্রগুলো৷ বুধবার পর্যন্ত মোটামুটি স্বস্তিতেই কেটেছে ঈদযাত্রা৷ রেলপথেও খুব একটা ঝামেলা হয়নি এখনও৷
তবে ঈদুল আজহার যে প্রধান বিষয় পশু, সেই পশুর হাট এখনও সেই অর্থ জমজমাট হয়নি৷ ধারণা করা হচ্ছে শুক্র ও শনিবার শেষ মুহূর্তে এসে জমে ওঠতে পারে হাট৷ তার অন্যতম কারণ ঢাকা শহরে আগে ভাগে পশু কিনে সেটা লালন পালন একটা কষ্টসাধ্য বিষয়৷
গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পর্যাপ্ত পশু থাকলেও হাটে ক্রেতার চেয়ে কিশোর-তরুণ দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল বেশি৷ কর্মব্যস্ত দিনে পরিবারের অভিভাবক ব্যস্ত, তাই হাট ঘুরে নিজেদের কোরবানির পশু পছন্দ করে রাখার দায়িত্ব পালন করছেন পরিবারের নবীন সদস্যরা৷ সবার আশা, শুক্র আর শনিবারে গরুর হাটে মানুষের ভিড় যেমন হবে উপচে পড়া, তেমনি বেচা-বিক্রিও জমে ওঠবে৷