‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব/ মা গো, বলো কবে শীতল হবো'-বাঙালির বাড়ি ফেরার সঙ্গে এই গানটির আছে অদ্ভুত এক যোগাযোগ। ইট, কাঠ, কংক্রিটের নাগরিক যাঁতাকল ছেড়ে বাড়ি ফেরার উদ্বেলতা যেন অসাধারণ এক অনুভূতি।
বিজ্ঞাপন
আর যদি হয় ঈদ ছুটিতে বাড়ি ফেরা, তাহলে আনন্দটাও যেন অপার্থিব৷
তবে কদিন আগেও বাড়ি ফেরার সুখানুভূতির চেয়ে ভোগান্তিটাই বেশি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের৷ ঢাকা শহরের যানজট পেরিয়ে ফেরিঘাট৷ তারপর দীর্ঘ অপেক্ষা৷ কখন আসবে ফেরি, আসলে যে ফেরিতে উঠা যাবে, তারও ছিল না কোনো নিশ্চয়তা৷ আবার খরস্রোতা পদ্মা উত্তাল হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেত ফেরি চলাচল৷ তাই বাড়ি ফেরার আনন্দটা ফেরিঘাটেই এসে যেন ফিকে হয়ে যায়৷
কেউ কেউ ফেরিঘাটের দুর্ভোগ পোহাতে পদ্মা পাড়ি দিতে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারকে বেছে নেন বিকল্প হিসেবে৷ এভাবে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে কত দুর্ঘটনা, কত প্রাণহানি তারও কোনো সঠিক হিসেবে নেই৷
কিন্তু দরজায় কড়া নাড়তে থাকা ঈদুল আজহা উদযাপনে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সেই ক্লান্তিময় বাড়ি ফেরার গল্প এবার ফুরালো৷ অন্তত দেশের গণমাধ্যমগুলো সেই খবরই জানাচ্ছে৷
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক বাঁধা-সব ছাপিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু এখন দেশের ‘আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক’৷
প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব পাচ্ছে, পদ্মা সেতু দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষের সংবাদ৷ প্রিয়জনদের কাছে পাওয়ার আকুলতা সঙ্গে নিয়ে লঞ্চ, ট্রলার ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ যে এখন সড়কপথে ছুটছে সেই খবর ফেরি হচ্ছে গণমাধ্যমের পাতায় পাতায়, কিংবা টিভি পর্দায়৷
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পর পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হলো দক্ষিণবঙ্গ৷ গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, লঞ্চ ছেড়ে মানুষ এখন সেতু হয়ে সড়কপথে মাত্র ৩ ঘণ্টায় বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছেন৷ সাগরকন্যা কুয়াকাটা থেকেও রাজধানীতে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায়৷ অথচ ফেরির আমলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগে যেত৷ নৌপথেও লাগত প্রায় একই সময়৷ আর বৈপ্লবিক পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে পদ্মা সেতু৷
দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের বাড়ি ফেরা কিংবা ভোগান্তি ছাড়া ঈদযাত্রার খবর তুলে ধরতে সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলো তো ঢাকা থেকে লাইভ সম্প্রচারের ডিভাইসসহ রিপোর্টার পাঠাচ্ছে সেখানে৷ যেন আনন্দময় ঈদযাত্রায় উৎফুল্ল মানুষের হাসিটা দেখতে পান দেশের মানুষ৷
প্রতিদিন কত গাড়ি পারাপার হলো, তার পরিসংখ্যান যেমন আছে, এপার ওপার মিলে টোল আদায়ে কতো অর্থ জমা হলো পদ্মা সেতুর আয়ের খাতায় বাদ যাচ্ছে না সেই খবরও৷
তাদের ঈদ ভাবনা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন, প্রথমবারের মতো মহাসড়কের মোটরবাইক নিষিদ্ধকরণ, করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা৷ এর মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ঈদ ভাবনা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘মানুষ কেজি দরে গরুর দাম বলে’
বিক্রির উদ্দেশে ঢাকার গাবতলীতে পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে ছয়টি গরু এনেছেন মো. বিল্লাল মিয়া৷ তিনি জানান, ‘‘এবারের হাটে এখন পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা কম৷ ভোজ্য এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গো-খাদ্যের মূল্য ৫০ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে৷ অথচ হাটে মানুষ গরুর দাম বলছে মাংসের কেজির হিসাব করে৷’’ এতে গরু লালন-পালনের খরচও উঠবে না বলে দাবি করেন বিল্লাল মিয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কোরবানি দিতে পারতেসি না এইবার’
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে নতুন টাকার ব্যবসা করেন হারুনুর রশীদ৷ তিনি প্রায় ২০ বছর যাবত এই পেশায় আছেন৷ গত বছর কোরবানি দিলেও এবার সেই সামর্থ্য হচ্ছে না৷ বলেন, ‘‘মানুষের এইবারের মতো খারাপ অবস্থা আগে দেখি নাই৷ আমার নিজের অবস্থাই তো করুণ৷ গত বছর বাচ্চাদের শখ পূরণ কইরা একটা ছোট ছাগল কুরবানি দিসিলাম, কিন্তু এইবার কোনভাবেই সম্ভব হইতেসে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘পদ্মা সেতু দিয়ে পার হবো’
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের নোঙর করা ঢাকা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি তাসরিফ-১ এর কর্মচারী মোঃ নাসির হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালি৷ কিন্তু তিনি নিজেই পদ্মাসেতু দিয়ে বাসে করে এবার বাড়ি যাবেন৷ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মাসেতু হওয়ায় তিনি খুশি৷ আবার নিজের পেশায় এর নেতিবাচক প্রভাবও টের পাচ্ছেন৷ এবার ঈদে বোনাস পাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘এইবার বোনাস চাইলে মালিক নিশ্চিত মাইর দিবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তবুও লঞ্চেই যাচ্ছেন জুনায়েদ
ঈদ করতে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে সপরিবারে হাতিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন জুনায়েদ হোসেন৷ পদ্মা সেতু দিয়ে না গিয়ে কেন লঞ্চে যাচ্ছেন জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী জুনায়েদ জানান, বাসে যাওয়ার চেয়ে পরিবার নিয়ে লঞ্চে যাওয়াই তার জন্য সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’
ঢাকার কারওয়ান বাজার মোড়ে কথা হয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের একজন মোটরবাইক চালকের সাথে৷ শুরুতে পদ্মা সেতুতে, পরে ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে মোটরবাইক নিষিদ্ধে ক্ষুব্ধ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু হইলেই আমাদের উপর বিধিনিষেধ আসে৷ লকডাউনে সব চলছে, রাইড শেয়ারিং বন্ধ, ট্রাফিক পুলিশ কথায় কথায় জরিমানা করে, এখন আবার মহাসড়কে আমাদের চলাচল নিষেধ৷ আমাদের উপর কেন সব ঝড় আসে? দুইটা টাকা কামাই করে সংসার চালানো কি অন্যায়?’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এবার ঈদে আয় নাই’
মো. আবুল বাশার ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাথে দর্জির কাজ করে পরিবার চালান৷ ঈদ এলে তার কাজ বাড়ে, আয়ও বাড়ে৷ কিন্তু এবার খুশি নন তিনি৷ বাশার বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউন থাকলেও সাত দিনে যা আয় করেছি এবার ঈদ চলে আসলেও সেই তুলনায় তেমন আয়ই হয়নি৷ তেলের দাম বৃদ্ধি আর প্রতিদিনের খরচ দুইগুণ বেড়েছে৷ খরচ মেটানোর পর হাতে আর কোনো টাকা থাকে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
খুশি নন বাসচালক শরীফ
গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ রুটের শীতল পরিবহণের চালক মো. শরীফ বলেন, ‘‘দেশে সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হচ্ছে৷ এতে আমরা খুশি৷ কিন্তু রাস্তা-ঘাটে যানজট বেড়েই চলেছে৷ গত কোরবানির ঈদে লকডাউন থাকায় রাস্তায় গাড়ি কম ছিল, ট্রিপ বেশি মারতে পারায় বেতনও ছিল বেশি৷’’ রাস্তায় তীব্র জ্যামে এই ঈদে গতবারের তুলনায় আয় অর্ধেকও হবে না বলে জানান তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদের দিন বাড়ি যাবেন জব্বার
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে কুলির কাজ করেন মো. জব্বার৷ ঈদ নিয়ে তার বাড়তি কোনো ভাবনা নেই৷ কোরবানি দেয়ার সামর্থ্যও নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘গরিব মানুষের ঈদ নাই৷ ঈদ হলো ধনী মানুষের জন্য৷‘’ তার মতে, দেশে প্রতিবছর বড়লোক আরো বড়লোক হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে৷ ‘‘ঢাকায় যে কয়টা প্রাইভেট গাড়ি আছে, সে কয়জনই শুধু টাকাওয়ালা, বাকিদের অবস্থা খারাপ,’’ বলেন জব্বার৷ ঈদের দিন পর্যন্ত কাজ করে লঞ্চে বাড়ি ফিরবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা’
তৈয়ব মিয়া ঢাকার রাস্তায় ফেরি করে শুকনো খাবার বিক্রি করেন৷ করোনাকালীন সময়ের চেয়ে তার আয় বেড়েছে৷ কিন্তু তার চেয়েও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খরচ৷ তৈয়ব মিয়া বলেন, ‘‘করোনার সময় রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় আমাগো ইনকাম কম আছিল৷ কিন্তু এমনিতে আমগো ইনকাম প্রায় একই৷ তয় এই কথা ঠিক যে এহন মানুষের আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে ম্যালা৷’’ ঈদের আগের দিন পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ি যাবেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ আগের মতো নেই’
ঢাকার মিরপুর ১০ সার্কেলের একটি পোশাক তৈরির কারখানার কর্মী সালেহা আক্তার৷ প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি দুই বছর যাবত কাজ করেন৷ এই মাসে তার বেতন বেড়েছে এক হাজার টাকা৷ কিন্তু সার্বিক খরচ বেড়েছে ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত৷ তাই বেতন কিছুটা বাড়লেও তিনি পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আগের বেতন দিয়ে যেভাবে ঈদ পালন করতাম এখন বেতন বাড়ার পরেও তা সম্ভব হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ঈদ নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা নেই’
ঢাকার পল্টনের ফুটপাথের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়তি হইলেও সাধারণ মানুষের কথা ভাইবা হোটেলের খাবারের দাম বাড়াই নাই৷ কিন্তু তা-ও কাস্টমার আগের মতন নাই৷ মানুষ দুপুরে ভাতের জায়গায় চা-রুটি খায়, যে ১০-২০ টাকা বাঁচে, সেইটাই এখন অনেক টাকা৷’’ তিনি বলেন, গত বছরের ধার-দেনায় এখনও আটকে আছেন, তাই ঈদে বাড়তি কিছু করার পরিকল্পনা তার নেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদে নতুন জামা
ঈদ উপলক্ষে ফুটপাথ থেকে নতুন জামা কিনছেন মো. আল আমিন৷ নরসিংদী থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছেন দশম শ্রেণির এই ছাত্র৷ কেনাকাটা সেরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাবে সে৷ অন্যবার শপিং মল থেকে জামা-কাপড় কিনলেও এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফুটপাথেই কেনাকাটা সারছেন বলে জানান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঈদ কাটবে সড়কে
ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে কথা হয় এই ট্রাফিক পুলিশের সাথে৷ ১৫ বছরের চাকরিজীবনে হাতেগোনা কয়েকটি ঈদ তিনি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন৷ এবারও তাকে ঈদের দিন রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারি চাকরি করি, কিছু বলতে পারি না৷ বেতন যা পাই, বউ-বাচ্চা গ্রামে রেখে পালতেও কষ্ট হয়া যায়৷ তা-ও তো আমরা নিয়মিত বেতন পাই, সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ কিভাবে চলে আল্লাহই ভালো জানেন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আমরাই সবচেয়ে হতাশাগ্রস্ত’
একটি সরকারি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু নাসের৷ ঈদ আসলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘খুব সম্প্রতি পত্রিকায় দেখলাম আমরা ১২২টি দেশের মধ্যে হতাশা ও দুঃখে সপ্তম অবস্থানে আছি, প্রথমে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান৷ আমার মতে, বাংদেশের যে সার্বিক পরিস্থিতি, আফগানিস্তান নয়, আমাদেরই তালিকায় এক নাম্বারে থাকা উচিত৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
14 ছবি1 | 14
তবে এই আনন্দের মধ্যেও বাইকারদের জন্য মন খারাপের খবর দিয়েছে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো৷ যানবাহন চলাচলে পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার প্রথম দিন, অর্থাৎ ২৬ জুন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার জের ধরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সেতুতে দুই চাকার এই যানবাহনটিকে নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এমনকি বুধবার দিন পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারের চেষ্টায় তিন ট্রাকচালককে জরিমানাও করেছে পুলিশ৷
আবার ঈদযাত্রাকে নিরাপদ করতে মহাসড়কেও ঈদের দিন ও ঈদের আগে এবং পরের তিনদিন মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ রাখতে হবে বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশ দিয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই খবর আরও ক্ষুব্ধ করেছে বাইকারদের৷ শুধু কি তাই, ঈদের পরের পাঁচদিন পর্যন্ত নৌযান বা লঞ্চে মোটর সাইকেল পারাপারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
স্বপ্নের সেতু পাড়ি দিয়ে যারা গন্তব্যে যেতে পারছেন না, তেমন বাইকাররা মিলে পদ্মা সেতু সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধনও করেছে৷ মানববন্ধন করেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেও৷ সেই খবরগুলোও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে টিভিতে, পত্রিকায়, অনলাইন পোর্টালেও৷ বলা যায়, এই সেতু এতটাই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে যে, এখন যে কোনো গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট কোনো না কোন সংবাদ থাকছেই৷ সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, শুধু উপকারভোগীরাই নয়, এই সেতুটি দেখতে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকেও ছুটে আসছেন মানুষ৷
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আনন্দের সংবাদের সঙ্গে নিরানন্দ নেমে এসেছে লঞ্চ মালিকদের জন্য৷ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রী সংকটের শঙ্কায় থাকা রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে যাত্রী থাকলেও নেই ঈদযাত্রার সেই পুরনো আমেজ৷
বুধবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বরিশালের ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না৷ অথচ সদরঘাট মানেই তো ব্যস্ত চিত্র৷ আর ঈদ মৌসুম হলে তো কথাই নেই৷ কিন্তু এবার ঈদ যাত্রায় লঞ্চের সেই ‘তিল ঠাঁই আর নাহি রে' অবস্থা এখনও তৈরি হতে দেখা যায়নি৷
অবশ্য এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রায় বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা, দীর্ঘ যানজট, টিকিট না পাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি৷ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাসের ভাড়া বাড়তি আদায়ের চিরাচরিত অভিযোগের খবর দিয়েছে সংবাদপত্রগুলো৷ বুধবার পর্যন্ত মোটামুটি স্বস্তিতেই কেটেছে ঈদযাত্রা৷ রেলপথেও খুব একটা ঝামেলা হয়নি এখনও৷
তবে ঈদুল আজহার যে প্রধান বিষয় পশু, সেই পশুর হাট এখনও সেই অর্থ জমজমাট হয়নি৷ ধারণা করা হচ্ছে শুক্র ও শনিবার শেষ মুহূর্তে এসে জমে ওঠতে পারে হাট৷ তার অন্যতম কারণ ঢাকা শহরে আগে ভাগে পশু কিনে সেটা লালন পালন একটা কষ্টসাধ্য বিষয়৷
গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পর্যাপ্ত পশু থাকলেও হাটে ক্রেতার চেয়ে কিশোর-তরুণ দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল বেশি৷ কর্মব্যস্ত দিনে পরিবারের অভিভাবক ব্যস্ত, তাই হাট ঘুরে নিজেদের কোরবানির পশু পছন্দ করে রাখার দায়িত্ব পালন করছেন পরিবারের নবীন সদস্যরা৷ সবার আশা, শুক্র আর শনিবারে গরুর হাটে মানুষের ভিড় যেমন হবে উপচে পড়া, তেমনি বেচা-বিক্রিও জমে ওঠবে৷