ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশ লকডাউন, কর্মহীন মানুষ, বিপর্যস্ত অর্থনীতি, অন্ধকার ভবিষ্যৎ, স্বাস্থ্যখাতের চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা, মৃত্যুভয়, প্রিয়জনকে হারানোর আতঙ্ক ইত্যাদি থেকে সরে খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে এ সময় মানুষ বিনোদন জগতে আশ্রয় খোঁজে৷ তাই তো নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন প্রাইমের মতো প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে৷
কিন্তু বাংলাদেশে সেই বিনোদন নিয়েও আছে নানা মত৷ একজনের কাছে যা বিনোদন, অন্যজনের কাছে তা হয়ত চরম বিরক্তিকর বিষয়৷ একজন যেটাকে নিছক বিনোদন বলছেন, অন্যজন সেটাকে রীতিমতো হুমকি মনে করছেন৷
সেক্ষেত্রে বিনোদন আসলে কী? বিনোদন কি কৌতুক, দুঃখ না শিক্ষা; নাকি এর চাইতেও বিস্তৃত অর্থের কিছু৷ বিনোদন মানে কি সৃজনশীলতা, নাকি শুধুই অর্থ?
এসব নিয়ে কথা বলতে ডয়চে ভেলের ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’-এ হাজির হন চলচ্চিত্র পরিচালক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী এবং ইউটিউব তারকা সালমান মুক্তাদির৷
অমিতাভ রেজা বলেন, ‘‘আমরা যা করি তার সবই আসলে বিনোদনের জন্য করি৷ তবে আমি কোনো কাজ করার সময় বিনোদন কতটা দিতে পারবো সেটা ভাবি না৷ আমার যে গল্পটা বলতে ভালো লাগে আমি সেটাই বলতে চাই৷ আমি মানুষের কাছে গল্পের ইমোশনটা পৌঁছাতে চাই৷ আর যে-কোনো ধরনের ইমোশন ইভোক করাই বিনোদন৷
বিনোদন হাসি, কান্না বা বিরহ হতে পারে৷ সেটাতে দর্শক বিনোদিত হবে কিনা বা পছন্দ করবে কিনা আমি সেটা ভাবি না৷ কারণ, পপুলার মানেই ভালো কিছু না৷ পপুলার হিসেবে বিনোদনকে বিচার করা ঠিক না৷ বরং সৃজনশীলতার উপর বিচার করা উচিত৷ যে কাজটি করছেন, যে পরিচালক কোনো কাজ করছেন, তার দায়িত্ব হলো কাজটা সৃজনশীলভাবে করা৷’’
সৃজনশীলতার প্রশ্নে বাংলাদেশের অনেকে সালমান মুক্তাদিরকে সৃজনশীল ব্যক্তি মনে করেন না৷ অথচ তিনি বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়৷ তার এক শ্রেণির দর্শক রয়েছেন, যারা ইউটিউবে তার ভিডিওগুলো দেখেন৷ ওইসব ভিডিওর জন্য সালমান দারুণভাবে সমালোচিতও৷
এ প্রসঙ্গে সালমান মুক্তাদির বলেন, ‘‘আমি অবশ্যই নিজেকে একজন সৃজনশীল মানুষ মনে করি৷ নিজেকে সৃজনশীল মনে না করলে আমি আমার কাজ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করতে পারবো না৷
‘‘আমি গণমানুষের জন্য কনটেন্ট বানাই না৷ আমার এক শ্রেণির দর্শক আছে, তাদের জন্যই আমি ভিডিও বানাই৷ জানি মানুষ গালি দিবে, তারপরও সমাজের প্রচলিত প্রথা আমি ভাঙতে চাই৷ এটাই আমার প্যাশন৷’’
শিক্ষার অভাবে বাংলাদেশের মানুষ সৃজনশীল হয়ে গড়ে উঠছেন না বলে মনে করেন অভিতাভ রেজা৷
বলেন, ‘‘আমাদের মোট বাজেটের খুব সামান্য অংশই শিক্ষাখাতে ব্যয় হয়৷ যেদেশে শিক্ষাখাতের এ অবস্থা সে দেশে সৃজনশীল জাতি গড়ে তোলা কঠিন৷’’
দেশে এখন বাকস্বাধীনতা একেবারে নেই বলেও দুই বক্তা মনে করেন৷
এসএনএল/এসিবি
গত ডিসেম্বরের ছবিঘর দেখুন...
বাংলাদেশে শিল্পীরা সঙ্গীত জীবনের শেষ দিকে এসে পড়ছেন আর্থিক সঙ্কটে৷ তাদেরকে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হয় শুভাকাঙ্খী অথবা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে৷ কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন সঙ্গীত শিল্পীরা? পড়ুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Arafatul Islamসঙ্গীতা বলেন, সাউন্ডটেক বলেন, এদের অ্যালবাম বিক্রির উপর কোনো ভাগ আমরা কোনোদিনও পাইনি৷ এককালীন একটা লামসাম দিয়ে দিতো৷ শিল্পীদের কোটি টাকা সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে৷ কারা খাচ্ছে আমি জানি না৷ আমাদের আয়ের কিছুই নাই এখন৷ ইউটিউবে আমার হাজার হাজার গান আছে, কোনেকিছুই জানি না কারা আপলোড করছে৷ রয়্যালটির টাকা মেরেকেটে না খেলে কি আমাদের কারো কাছে হাত পাততে হয়?
ছবি: bdnews24.comআমাদের দেশে কোন কপিরাইট সোসাইটি নাই, শিল্পীদের কোনো ঐক্য নাই৷ ৪৮ বছরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি নাই যে কারণেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে৷ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে যে রিয়েলিটি শো হয়, বিভিন্ন এফ এম চ্যানেলে আমাদের গান বাজে সেখান থেকে শিল্পী, সুরকার, গীতিকারের ভাগটা কী, সেটা নিয়ে আমাদের কোন নীতিমালা নাই৷ যতদিন পর্যন্ত শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ না হবে ততদিন কোন সমাধান হবে না৷
ছবি: bdnews24প্রত্যেকটা শিল্পী শেষ বয়সে এসে কষ্ট পায় এবং চিকিৎসার জন্য যখন অর্থ দরকার হয় তখন দুস্থ শিল্পী হয়ে যায়৷ সব শিল্পীরা মিলে তাকে সাহায্য করতে হয়, এটা খুবই দুঃখজনক, করুণ একটা ব্যাপার, আমাদের শিল্পীদের খুবই কষ্টের একটি জায়গা৷ আমাদের সৃষ্ট গানের কিছুই আমরা পাই না৷ কোম্পানিগুলোতে যারা আছে তারা হয়তো কিছু আয় করছে৷ আমাদের পাশের দেশে ভারতে শিল্পীরা রয়্যালটি পায়, সেজন্য তাদের এতো অভাব থাকে না৷
ছবি: Sazzad Hossainআমাদের শিল্পীরা মরলে পরে শহীদ মিনারে নিয়া ফুলের মালা দেয়৷ থাকলে দেখে না, কেউ নাই৷ এটা এখন প্রমাণিত৷ আমাদের শিল্পীদের এখন আয় নাই৷ মোবাইল, ইউটিউবের জন্য এক একজন আসে (গান রেকর্ড) করে দুই-তিন হাজার টাকা দেয়৷ ক্যামেরা করে তারা রেখে দেয়, তারপর ইউটিউবে চালায়৷ আমাদের লোকশিল্পীরা খুব কষ্টের মধ্যে আছে৷ যন্ত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে বাজিয়ে একটা গানের জন্য মাত্র দুই হাজার টাকা পায়৷
ছবি: DW/S. Kumar Deyঅনুদান নয় বরং অনিয়ম বন্ধ করার কার্যকর নির্দেশ প্রয়োজন৷ অন্তত একটি মামলার আদালতের রায় প্রয়োজন৷ অবৈধ ভাবে অনুমতিহীন গান বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা প্রয়োজন৷ তাহলেই অপরাধীরা শিল্পীদের টাকা লুট করা বন্ধ করবে৷ দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে শিল্পীদের ৭০% রয়েলিটি নিশ্চিত করতে হবে৷ তবেই একজন শিল্পী সুস্থ ও সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে৷
ছবি: Pritom Ahmedসিএনজি ওয়ালাদের সংগঠন আছে বলেই যখন ইচ্ছা তখন সিএনজি বন্ধ করে দিচ্ছে৷ বাস মালিকদের সংগঠন আছে, তারা যখন ইচ্ছা বাস বন্ধ করে দিচ্ছে৷ আমাদের সংগঠন নাই, আমরা পারছি না৷ আমাদের এভাবেই চলতে হবে৷ প্রেসিডেন্টের বেতন বাড়ে, প্রধানমন্ত্রীর বেতন বাড়ে, সচিবের বাড়ে, মন্ত্রীর বাড়ে, এমপির বাড়ে, প্রধান বিচারপতির বাড়ে, কিন্তু শিল্পীদের পেমেন্ট বাড়ানো হয় না৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একটা রেট দিয়ে গেছেন সেটাই এখানো চলছে৷
ছবি: Sazzad Hossainএকজন শিল্পী যখন গানের জন্য স্টুডিও’র সঙ্গে চুক্তি করেন তখন তারা এককালীন পেমেন্ট নিয়ে পুরো গানটাই দিয়ে দেন স্টুডিওকে৷ শিল্পীরা যদি আরেকটু বুদ্ধিমান হতেন তাহলে তারা একবারে টাকা না নিয়ে প্রতিবার প্লে’র জন্য তার সম্মানি চাইতে পারতেন৷ যেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে হয়৷ ওইসব দেশে কিন্তু পারফর্মিং আর্ট সোসাইটি স্টুডিও’র সঙ্গে শিল্পী নেগোসিয়েশনের কাজটা করে৷ আমাদের দেশের শিল্পীরা এই বিষয়ে অবগত না৷
ছবি: financeasia.com