একবিংশ শতাব্দীর সাচ্চা পপ আর্ট দেখতে চান? তবে চলুন নেথান ওয়াইবার্নের ছবির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই৷ কাদের প্রতিকৃতি তিনি আঁকেন, সেটা বলা সহজ; কী দিয়ে অথবা কীভাবে আঁকেন, সেটা শুনলে আশ্চর্য হতে হয়৷
বিজ্ঞাপন
ব্যতিক্রমী প্রতিকৃতি আঁকেন যিনি
03:02
ব্রিটিশ পপ গায়িকা আডেল-এর পোর্ট্রেট, ‘‘ভেরি ব্রিটিশ’’, কেননা তা ফিশ অ্যান্ড চিপস দিয়ে তৈরি! বা ব্রিটিশ পপ গায়ক টম জোন্সের প্রতিকৃতি – স্টুডিওর পুরনো টেপের রিল ব্যবহার করে তৈরি করা৷ অথবা সাবেক স্পাইস গার্ল মেল সি., শুধুমাত্র চকমকে গ্লিটার দিয়ে তৈরি৷
পপ আর্ট শিল্পী নেথান ওয়াইবার্ন বলেন, ‘‘পপ আর্ট আমার কাছে পপুলার কালচারের অংশ৷ এই মুহূর্তে মিডিয়ায় যা ঘটছে, সেলিব্রিটিদের নিয়ে, তাদের কেলেঙ্কারি অথবা হয়তো কোনো সেলিব্রিটির মৃত্যু – আমি এই সব বিষয় নিয়ে অ্যান্ডি ওয়ারহল-এর কায়দায় আর্ট সৃষ্টি করি৷’’
আবর্জনা থেকে বিস্ময় জাগানো শিল্পকর্ম
সমুদ্রসৈকত নোংরা করে ফেলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্যান্ডেল, খেলনা, টুথব্রাশসহ নানারকম পরিত্যক্ত জিনিস৷ সবার চোখে আবর্জনা হলেও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর কাছে এ সব অমূল্য বস্তু৷ তাই এগুলো দিয়েই দারুণ সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে তারা৷
ছবি: Washed Ashore
আবর্জনাই যখন শিল্পীর হাতে...
এই বিশাল মাছঠি তৈরি হয়েছে শুধু সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে৷ ভালো মনের শিল্পীর হাতে আবর্জনাও কত অপরূপ, কত অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে পারে – এ ছবিটা তারই নিদর্শন, তাই নয় কি?
ছবি: Washed Ashore
যেখানে দেখিবে প্লাস্টিক
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই/পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ – ছাই কুড়ালে রতন তো পায়ই অনেকে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সংগঠন প্লাস্টিক কুড়িয়েই তৈরি করছেন অমূল সব শিল্পকর্ম৷ শিল্প সৃষ্টির আগে ওরেগনের সমুদ্রসৈকত থেকে প্লাস্টিকের জিনিস সংগ্রহ করে, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পর সব জিনিস রং অনুযায়ী আলাদা করাও কিন্তু খুব শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ৷
ছবি: Washed Ashore
আসল উদ্যোক্তা
ছবির এই মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের প্রধান তিনি৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের নানা জিনিস দিয়ে নানা ধরনের প্রাণীর যে সব মূর্তি গড়া হয়, সেগুলোর সবচেয়ে কঠিন অংশটুকুও তিনিই করেন৷
ছবি: Washed Ashore
স্বেচ্ছাসেবা দিতে এসে শিক্ষার্থী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর উদ্যোগের অংশ হতে আজ অনেকেই আগ্রহী৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর হয়ে কাজও করছেন অনেকে৷ পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে শরিক হয়ে শিল্প সৃষ্টির নেশায়ও মেতেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Washed Ashore
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বড় প্রাণী তৈরি করেই কিন্তু কাজ শেষ নয়৷ শিল্পকর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে তারা৷ এ সব প্রদর্শনীর একটাই উদ্দেশ্য – পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি৷
ছবি: Washed Ashore
মনে দাগ কাটার মতো বড়
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সব সময় প্লাস্টিকের বড় বড় মূর্তিই তৈরি করে৷ বেশির ভাগ মূর্তিই সাড়ে তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং প্রায় তিন মিটার উঁচু৷ সবচেয়ে বড় একটি পাখির মূর্তি৷ সেই পাখির ডানার দৈর্ঘ্যই সাত মিটারের মতো!
ছবি: Washed Ashore
সবাই তাদের অনুসরণ করুন
অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি মনে করেন, ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ যে কাজটি করছে তা যদি বিশ্বের সব প্রান্তে অনেক মানুষ করতে শুরু করে তাহলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷ যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ফেলার প্রবণতা কমিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা তাহলেই যে সম্ভব৷
ছবি: Washed Ashore
7 ছবি1 | 7
এই সব সেলিব্রিটিদের ছবি ‘আঁকার’ জন্য ২৬ বছর বয়সের পপ আর্ট শিল্পী নেথান কেচাপ কিংবা চকোলেটও ব্যবহার করে থাকেন৷ ডেভিড বোওয়ি-র ‘জিগি স্টারডাস্ট’ চরিত্রটির ছবি তিনি এঁকেছেন স্রেফ মেক-আপ দিয়ে৷ নেথান বলেন, ‘‘প্রোট্রেট আঁকার উপাদানটা বেছে নেওয়ার সময়, সংশ্লিষ্ট সেলিব্রিটির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকে, যেমন তার কোনো হাস্যকর অভ্যেস বা মুদ্রাদোষ বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, এমনকি তার পদবী – যেমন কিথ লেমন থেকে লেমন, মানে লেবু৷ অথবা ডোনাল্ড ট্রাম্প আর মেক্সিকান খাবার কেননা তাতে হাস্যরস আর ব্যঙ্গ রয়েছে৷ কাজেই সম্পর্কটা সবসময়েই থাকে, হয় তার কমিক, নয়ত তার আইডিয়া৷’’
নেথান ওয়াইবার্নের ছবি আঁকার পদ্ধতিও অদ্ভুত৷ তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর একটি ছবি এঁকেছেন শুধু পা দিয়ে৷ মার্কিন পপ গায়িকা মাইলি সাইরাস জিভ বার করার জন্য বিখ্যাত – তাই নেথান মাইলির ছবি এঁকেছেন শুধু জিভ দিয়ে৷ তবে জাস্টিন বিবারের ‘বেবি ইউ ইউ লাইক দ্য ওয়ে' গানটি শুনে নেথান একটা সম্পূর্ণ নতুন প্রেরণা পান৷ হাজার হাজার চুমু খাওয়ার ঠোঁটের ছাপ দিয়ে টিনি-দের পাগল করা জাস্টিনের ছবি এঁকেছেন নেথান৷ এই ছবি আঁকার ভিডিওটি লক্ষ লক্ষ বার ক্লিক করা হয়েছে৷
নেথান শোনালেন, ‘‘লাভ ইওরসেল্ফ গানটি তখন বিরাট হিট হয়েছে৷ ওদিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে আসছে৷ বিবারের বহু ফ্যান, বিশেষ করে মেয়েরা – কাজেই আমি ভাবলাম, ওদের এমন কিছু একটা দিতে হবে, যা'তে ওরা সেটা দেখে ভাবে, আহা, আমি যদি ওটা আঁকতে পারতাম, কিংবা কিনতে পারতাম৷ কাজেই আমি ভাবলাম, জাস্টিনের একটা পোর্ট্রেট আঁকব শুধু চুমু দিয়ে৷’’
নেথান ওয়াইবার্ন কার্ডিফে ফাইন আর্টস নিয়ে পড়েছেন৷ দৈনন্দিন জীবনের সংস্কৃতি নিয়ে তিনি যা করে থাকেন, তাকে নিঃসন্দেহে একবিংশ শতাব্দীর সাচ্চা পপ আর্ট বলা চলে৷
পিয়ের প্রেচ/এসি
চা শিল্পীদের জীবন যেমন
সস্তা পানীয় চা৷ সেই পানীয়ের তৃপ্তি দিতে সবচেয়ে সস্তায় শ্রম দেন তাঁরা৷ তাঁরা চা শ্রমিক৷ চা শিল্পের প্রকৃত শিল্পী৷ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু ছবি তুলে এনেছেন খোকন সিং৷
ছবি: Khukon Thaunaujam
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি
চা গাছের এমন দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি থেকেই আমরা পাই সুপেয় চা৷ বাংলাদেশে এক সময় শুধু বৃহত্তর সিলেট জেলাতেই চা বাগান ছিল৷ সিলেটের অন্য নাম তাই ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ’৷ ধীরে ধীরে বাংলাদেশে চায়ের রাজ্য বেড়েছে৷ চা বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী, এখন মোট ১৬২টি চা বাগান রয়েছে বাংলাদেশে৷ এর মধ্যে ৯০টি মৌলভীবাজার জেলায়, ২৩টি হবিগঞ্জ, ১৮টি সিলেট, ২১টি চট্টগ্রাম এবং বাকি ৯টি পঞ্চগড় জেলায়৷
ছবি: Khukon Singha
চা শিল্পী
তাঁদের অক্লান্ত শ্রমেই গড়ে ওঠে চা বাগান, বাগান থেকে তাঁদের হাতই তুলে আনে ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’, তাঁদের শীর্ণ পিঠে চড়েই কারখানায় যায় সোঁদা গন্ধের পাতার বোঝা৷ তাঁরা চা শ্রমিক৷ চা শিল্পের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শিল্পীও তাঁরা৷ বাংলাদেশে এমন ‘শিল্পী’ এখন ১ লাখ ২২ হাজারের মতো৷
ছবি: DW/K. Thaunaujam
বেশি ঘাম, অল্প আয়
চা শিল্পের সূচনালগ্নে ফিরে যাওয়ার দরকার নেই৷ তিন দশক আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলেও চা শিল্পের বিস্তারের সঙ্গে শ্রমিকের অবস্থার উন্নতির দৃষ্টিকটু পার্থক্যটা স্পষ্ট হবে৷ তিন দশক আগে একজন চা শ্রমিক পাহাড়ি বাগানের রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সারাদিনের কাজ শেষে পেতেন সাত টাকা, এখন ‘হাজিরা’ বা মজুরি ৮৫ টাকা৷ এই দুর্মূল্যের বাজারে চা শ্রমিকের মাসিক আয় দু’হাজার টাকার চেয়ে সামান্য বেশি৷
ছবি: Khukon Thaunaujam
‘লেবার লাইনের’ ঘুপচি
চা বাগানেই চা শ্রমিকদের বাস৷ বাগানের ‘লেবারার’, অর্থাৎ শ্রমিকেরা এক পাড়ায় থাকেন বলে পাড়ার নাম হয়ে গেছে ‘লেবার লাইন’৷ ৮ হাত বাই ১২ হাতের এক টুকরো জমির ওপর গড়ে তোলা মাটির ঘরে গাদাগাদি করে থাকে শ্রমিক পরিবার৷ কোনো কোনো পরিবারে ৮ থেকে ১০ জন সদস্য৷ ওই ৮ বাই ১০ বাই ১২ হাতের জায়গাটুকুই কিন্তু সম্বল!
ছবি: Khukon Thaunaujam
শিশু শিক্ষায় শত দুর্ভোগ
২০০৭ সালেও চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ৩৫ টাকা৷ এখন তা বেড়ে ৮৫ টাকা হয়েছে৷ এ আয়ে সংসারই চলে না, সন্তানদের লেখাপড়া শেখাবেন কী! কোনো কোনো বাগানে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে৷ অনেকগুলোরই ছাদ আছে তো, দেয়াল নেই৷ প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষকও অনেক কম৷
ছবি: Khukon Thaunaujam
চিকিৎসাসেবা
বেশির ভাগ বাগানে শ্রমিকের চিকিৎসার সুব্যবস্থাও নেই৷ জটিল রোগের চিকিৎসা তো দূরের কথা, সর্দি-জ্বারের চিকিৎসাও সময়মতো পাওয়া মুশকিল৷ হাসপাতালের বারান্দায় বসে ডাক্তারের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে গুণতেই বেলা বয়ে যায়৷
ছবি: Khukon Thaunaujam
উৎসবের আনন্দে
রিলে, হাজরা, হারাম, সাঁওতাল, সাধু, টগর, মুন্ডাসহ অনেকগুলো নৃগোষ্ঠীর মানুষ আছে চা শ্রমিকদের মাঝে৷ তাই ছোট-বড় নানা ধরণের উৎসব লেগেই থাকে সারা বছর৷
ছবি: Khukon Thaunaujam
টিকে থাকার সংগ্রাম
চা বাগানের মজুরিতে সংসার চলে না বলে বাড়তি উপার্জনের জন্য শ্রমিকদের অবসর সময়েও কিছু না কিছু করতে হয়৷ ঘরে তৈরি বিভিন্ন পণ্য বাজারে বিক্রি করেও দ্রব্যমূ্ল্যের ঊর্ধগতির সময়ে টিকে থাকছেন অনেকে৷
ছবি: Khukon Thaunaujam
পরের জায়গা পরের জমি...
দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে চা-বাগান সংলগ্ন জমিকেই নিজের জমি মনে করে সেখানে বংশ পরম্পরায় চাষবাষ করে আসছে শ্রমিক৷ সেই জমিও হাতছাড়া হলে ৮৫ টাকা মজুরির শ্রমিক বাঁচবে কী করে? গত বছর তাই বাগানের লিজ নেয়া জমিতে সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করার পরিকল্পনা করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল হবিগঞ্জের কয়েকটি বাগানের শ্রমিক৷ মৌলভীবাজার এবং সিলেটের অনেক শ্রমিকও যোগ দিয়েছিল ভূমি রক্ষার সে আন্দোলনে৷