ভিসুভিয়াস বললেই সেই হলিউডের ছবি – দ্য লাস্ট ডেজ অফ পম্পেই৷ অথচ দু'হাজার বছর আগে রোমানদের জীবন সম্পর্কে ধারণা করার জন্য নেপলস-এর কাছে হারকুলেনিয়ামে গেলেই চলে৷
বিজ্ঞাপন
হারকুলেনিয়ামে রোমানদের জীবন
03:58
ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির পাদদেশে নেপলস শহর৷ ভিসুভিয়াস নেপলসের প্রেক্ষাপট, আবার এক অকল্পনীয় বিপদের প্রতীক৷ ভিসুভিয়াসের শেষ বিস্ফোরণ ঘটেছিল ৭২ বছর আগে৷ তবে নেপলসের মানুষ জানেন, বিপদের সঙ্গে কিভাবে ঘর করতে হয়৷ নেপলস শহরের প্রাচীন অংশটা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড কালচারাল হেরিটেজ৷ যে কারণে বছরে দশ লক্ষ পর্যটক এখানে আসেন৷ বিশেষ করে মিউজিয়ামগুলো টুরিস্টদের টানে: যেমন মিউজিও দি কাপোদিমন্তে, যেখানে মধ্যযুগ থেকে রেনেসাঁস অবধি বিভিন্ন শিল্পকর্ম রাখা আছে৷ তবে এই এলাকার ইতিহাস আরো ভালোভাবে বুঝতে গেলে যেতে হবে হারকুলেনিয়ামে – ভিসুভিয়াসের কোপে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি শহর – নেপলস থেকে ট্রেনে আধ ঘণ্টা৷
খ্রিষ্টজন্মের ৭৯ বছর পরে ভিসুভিয়াসের একটি বিস্ফোরণে শহরটি চাপা পড়ে – আর ঠিক সেই কারণেই আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকে৷ প্রত্নতত্ত্ববিদ দোমেনিকো কামার্দো বলেন, ‘‘আমরা এখানে রোমক আমলের নানা বাড়ি দেখি, যেগুলো তিনতলা অবধি অক্ষত অবস্থায় আছে৷ আশ্চর্য হলো যে, কাঠের জানলা-দরজার কপাট পর্যন্ত আগের অবস্থায় রয়েছে৷ যার ফলে আমরা দু'হাজার বছর আগের জীবনযাত্রা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা করতে পারি৷''
শুধু খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে একটি গ্রাম
পুরো খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে ঘানার একটি গ্রাম৷ নাম এনজুলেজো৷ সেখানে আছে ঘরবাড়ি, স্কুল থেকে শুরু করে টয়লেট, মন্দির সবই৷ ছবিঘরে থাকছে তার কথা৷
ছবি: DW/G. Hilse
ঘানার ভেনিস!
ইটালির ভেনিসের কথা কে না জানে! পানির উপর যেন পুরো একটি শহর দাঁড়িয়ে আছে৷ ঘানাতে এনজুলেজো নামে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানকার ঘরবাড়ি, স্কুল থেকে শুরু করে টয়লেট, মন্দির সবই খুঁটির সহায়তায় টানডানে লেকের পানির উপর অবস্থান করছে৷ তাই তো মাঝেমধ্যেই তাকে ‘ঘানার ভেনিস’ নামে ডাকা হয়৷ রাজধানী আক্রা থেকে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই গ্রামে প্রায় ৫০০ লোক বাস করে৷
ছবি: DW/G. Hilse
ইউনেস্কো-তে নাম পাঠানো হয়েছে
এনজুলেজোর নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ওঠাতে নাম প্রস্তাব করেছে ঘানা৷ প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এনজুলেজোতে মানুষ আর পরিবেশ যেন একে অন্যের সঙ্গে একেবারে মিশে আছে৷ সেখানকার ইকোসিস্টেম এখনও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অবস্থায় আছে৷ এছাড়া এলাকায় বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি, বানর, কুমির আর কচ্ছপের দেখা পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/G. Hilse
মালি থেকে আসা
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুযায়ী, এনজুলেজোর বর্তমান বাসিন্দাদের পূর্বপুরুষদের বাস ছিল বর্তমানে আফ্রিকার আরেকটি দেশ মালিতে৷ পঞ্চদশ শতকে সেখানকার মানডে সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ায় তাদের পালাতে হয়েছিল৷ সেই থেকে তাদের বিভিন্ন জায়গায় সাময়িকভাবে বসতি গড়তে হয়েছে এবং মাঝেমধ্যেই উৎখাতের শিকার হতে হয়েছে৷
ছবি: DW/G. Hilse
অবশেষে নিরাপদ জায়গায়
মালি থেকে পালানোর পর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে অবশেষে বর্তমান স্থানে তারা নিরাপদভাবে বসতি স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে৷ টানডানে লেকের উপর বসবাসের কারণে তারা মনে করছে এই লেকই তাদের শত্রু ও আগুনের হাত থেকে রক্ষা করবে৷ এছাড়া তাদের জীবিকারও উৎস হয়ে উঠবে এই লেক৷
ছবি: DW/G. Hilse
পানি দেবতা
লেকই যেহেতু তাদের বাঁচাচ্ছে বলে মনে করছে এনজুলেজোর মানুষ, সেই থেকে তারা পানিকে দেবতা মেনে নিয়ে তার পূজা করে৷ ছবিতে যে ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি একটি মন্দির৷ পানি দেবতাকে সম্মান জানাতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার সেখানে পবিত্র দিন হিসেবে পালিত হয়৷ নারীদের যাদের রজঃস্রাব হয়েছে তারা সেদিন পানিতে নামতে পারে না৷
ছবি: DW/G. Hilse
আধুনিক গ্রাম
এনজুলেজো গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে৷ আছে স্যাটেলাইট টিভি আর মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক৷ বিদেশি এক তেল কোম্পানির সহযোগিতায় আছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা৷ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি কাঠ দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে সংযুক্ত৷ প্রতিটি পরিবারের রয়েছে নিজস্ব রাস্তা৷
ছবি: DW/G. Hilse
শিক্ষক প্রশিক্ষণ
আগে সরকারের পক্ষ থেকে এনজুলেজোর স্কুলের জন্য শিক্ষক পাঠানো হতো৷ কিন্তু এই গ্রামে থাকাটা ‘বিরক্তিকর’ মনে হওয়ায় শিক্ষকরা বেশি দিন সেখানে থাকতেন না৷ তাই এখন গ্রামের সন্তানদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে স্কুল চালানো হচ্ছে৷
ছবি: DW/G. Hilse
আগুন থেকে সাবধান
এনজুলেজোর বাড়ির মেঝেগুলো কাঠ দিয়ে তৈরি হওয়ায় সেগুলোতে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে৷ তাই রান্নার কাজে কাদামাটি দিয়ে তৈরি চুলা ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: DW/G. Hilse
মাছ ধরা
লেকে পাওয়া যাওয়া মাছই এনজুলেজো গ্রামের মানুষের প্রোটিনের প্রধান উৎস৷ তাই সেখানকার ছেলেরা অল্প বয়সেই মাছ ধরা, জাল তৈরি ও সেটা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শিখে যায়৷
ছবি: DW/G. Hilse
উর্বর জমি
এনজুলেজো গ্রামের পাশে থাকা দুই হেক্টর জমিতে চাষবাস করে থাকে সেখানকার মানুষ৷ উৎপাদিত পণ্য মূলত নিজেরাই ভোগ করে থাকে৷ কিছু যা উদ্বৃত্ত থাকে সেগুলো ছয় কিলোমিটার দূরের বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷ ছবিতে বাবা ও ছেলেকে জমিতে চাষের কাজে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/G. Hilse
ইউরোপীয়দের নজর
যে বাড়িটি দেখতে পাচ্ছেন সেটির মালিক স্প্যানিশ এক দম্পতি৷ এনজুলেজোর সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে অনেক বছর আগে সেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা৷ বর্তমানে তারা একটি রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছেন৷ অনেক ইউরোপীয় এখন সেখানে যান ঘুরতে৷
ছবি: DW/G. Hilse
গ্রামবাসীর মতো বসবাস
এনজুলেজো গিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের মতো কয়েকদিন জীবনযাপন করে দেখতে আগ্রহী হন অনেক পর্যটক৷ তাদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই বাড়িটি৷
ছবি: DW/G. Hilse
12 ছবি1 | 12
বুলওয়ার-লিটনের দ্য লাস্ট ডেজ অফ পম্পেই খ্যাত পম্পেয়েই শহরের বহু বাড়ি আগ্নেয়গিরির ছাইতে ধ্বংস হয়েছিল – হারকুলেনিয়াম কিন্তু পুরোপুরি লাভায় ঢাকা পড়ে৷ যে কারণে এখানকার বহু মোজেইক আর ফ্রেস্কো প্রায় দু'হাজার বছর পরেও, ঠিক আগের মতোই আছে৷
কামার্দো বলেন, ‘‘রোমানদের জীবনযাত্রা আরো ভালোভাবে বোঝা যায় এই হারকুলেনিয়ামে৷ এখানে প্রাসাদোপম বাড়িগুলির দেয়ালে মোজেইক আর দেয়ালচিত্র দেখতে পাওয়া যায়৷ আমরা দেখি, ধনি-দরিদ্র কিভাবে পাশাপাশি বাস করেছে৷ সকলেই এই সব দোকানে কেনাকাটা করতে আসত৷ দোকানিরা এখানে শুধু সুরা নয়, খাদ্যশস্য বেচত – যার অবশিষ্ট এখনও সংরক্ষিত আছে৷ এখানে খাবার কিনতে পাওয়া যেত, আবার দোকানে বসে খাওয়াও যেত৷''
ভিসুভিয়াসের বিস্ফেোরণের আগে হারকুলেনিয়াম কিরকম দেখতে ছিল, তা দেখা যায় সাইটের পাশে ভার্চুয়াল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়ামে৷ ত্রিমাত্রিক প্যানোরামা ফিল্মে অতীতের সেই বিপর্যয় যেন আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে৷ মিউজিয়ামের কিউরেটর চিরো কাচ্চিওলা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এই মিউজিয়াম একটা এক্সপেরিমেন্ট – একটা সফল এক্সপেরিমেন্ট৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে হারকুলেনিয়ামের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্য তুলে ধরার একটা সহজ-সরল পন্থা৷''
নেপলসের সান গ্রেগোরিও আর্মেনো গলিতে খ্রিষ্টীয় ‘ম্যাঞ্জার', অর্থাৎ যে গোয়ালঘরে খ্রিষ্টের জন্ম হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত নানা মূর্তি ও পুতুল বিক্রি হয় – সারা বছর ধরেই – যদিও এগুলো কাজে লাগে বড়দিনের সময়৷ তবুও – সঙ্গে নিয়ে যেতে আপত্তি কী?
ভেনিসে ধরা পড়লো ‘সারা বিশ্বের ভবিষ্যৎ’
৯ই মে সাড়ম্বরে দ্বার খুললো ৫৬তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী বিয়েনালে৷ চলবে ২২শে নভেম্বর পর্যন্ত৷ বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্মের প্রদর্শনী এই বিয়েনালে, যার এ বছরের শিরোনাম ‘সারা বিশ্বের ভবিষ্যৎ’৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hörhager
‘অকুপেশন/ডিসকাভারিস’
দেখে মনে হতে পারে ভাঙা দেয়াল, কিন্তু আসলে এটি একটি ‘ইনস্টলেশন আর্ট’৷ বাংলায় অনুবাদ করলে ব্রাজিলীয় শিল্পী আন্টোনিয়ো মানুয়েলের এই ইনস্টলেশন শিল্পের নাম ‘জীবিকা/আবিষ্কার’৷ ক্যামেরা হাতে এক দর্শনার্থী সেই শিল্পবস্তুটির মধ্যেই প্রবেশ করছেন৷ তবে শুধু মানুয়েল নন, এবারের ভেনিস বিয়েনালেতে ৮৯টি দেশের অসংখ্য শিল্পী উপস্থিত তাঁদের নানা ধরনের কাজ নিয়ে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই এবারের প্রদর্শনীতে রয়েছে আগামীর ছোঁয়া৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/A. Merola
‘দ্য কি ইন দ্য হ্যান্ড’
প্রাচীন কিন্তু উত্তম৷ এই আইডিয়া থেকেই ইটালির ভেনিসে শিল্পকলার প্রদর্শনী বিয়েনালের যাত্রা শুরু ১৮৯৫ সালের ৩০শে এপ্রিল৷ আর আজ সেই ভেনিস বিয়েনালের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে৷ এ বছর ‘চাবিগুচ্ছ’ – এই শিল্পকর্মটি নিয়ে জাপানি প্যাভিলিয়নে রয়েছেন জাপানি শিল্পী চিহারু শিওতা৷ ওসাকায় জন্মগ্রহণ করলেও আজকাল তিনি বার্লিনে থাকেন৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hörhager
হলুদ সাগর
দূর থেকে দেখলে ভুট্টার ক্ষেত মনে হতে পারে, অথবা শরীর পরিষ্কার করার ছোবড়া দিয়ে তৈরি একটা কার্পেট৷ ইটালির শিল্পী মারসিয়া মিলিওরার সৃষ্টি এটি৷ নাম – ‘সি অফ ইয়েলো’৷ শোনা যায় এই শিল্পকর্মটি নাকি ভেনিস আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী বিয়েনালের এ বছরের ‘কিউরেটর’ নাইজেরিয়ার প্রখ্যাত লেখক এবং শিল্প সমালোচক ওকুয়ি এনভেসরের খুব প্রিয়৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/A. Merola
সাদা-কালো
ভেনিস বিয়েনালেতে আর এক ইটালীয় শিল্পীর শিল্পকর্ম আবারো সবার নজর কেড়েছে৷ শিল্পবস্তুটির নাম ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’৷ আর শিল্পীর – মিমো পালাদিনো৷ তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ভেনিস বিয়েনালেতে অংশগ্রহণ করছেন৷ ‘বিয়েনালে’ কথাটির অর্থ প্রতি দু’বছর৷ অর্থাৎ প্রতি দু’বছর অন্তর অন্তর স্থপতি ও চিত্রকর মিমোর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/A. Merola
ভেনিসে জার্মান শিল্প
ভেনিসে জার্মানির জন্যও একটি আলাদা প্যাভিলিয়ন আছে৷ আর সেই প্যাভিলয়নে এবার নজর কেড়েছে হিটো স্টায়ার্ল৷ তাঁর ‘ইনস্টলেশন আর্ট’ বা শিল্পবস্তুর নাম ‘ফ্যাক্টরি ইন দ্য সান, ২০১৫’ বা সূর্যের কারখানা৷ বার্লিনের শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এই প্রফেসারের জন্ম মিউনিখ শহরে৷ তিনি আদতে অবশ্য একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা৷