যিশুখ্রিষ্ট আর হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন এবার একই দিনে৷ মানে বড়দিন আর ঈদ-ই মিলাদুন্নবী হয়েছে একাকার৷ কেউ কেউ একে হয়ত বিরল ঘটনা বলবেন, কিন্তু এটা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রতি, পরধর্ম সহিষ্ণুতার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত নয় কি?
বিজ্ঞাপন
আমি তো বলবো ‘অবশ্যই'৷ যদিও নেহাতই বর্ষচক্রের পরিক্রমায় আজ বড়দিন আর ঈদ-ই মিলাদুন্নবী এক সঙ্গে পালন করছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুটি ধর্মের মানুষ৷ কিন্তু এটা এমন একটা সময় ঘটলো, যখন ধর্মের নামে, ধর্মকে মুখোশ বানিয়ে চলেছে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, হত্যা, বারে বারে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে জঙ্গিবাদ৷
অথচ নিজের যে ধর্মের প্রতি বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস থাকুক না কেন, অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া কথাই বলেছিলেন যিশু৷ আর ইসলাম শব্দের একটি অর্থও শান্তি৷ তাই অন্যের ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতাকেই বারবার শ্রেয় মনে হয়েছে, মনে হয়েছে মানুষ, মানবতা, মানবিকতার প্রতি আস্থাই পরম ‘ধর্ম'৷
‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই' – এই ভিডিও-টিতেও যেন ঠিক সেই কথাটাই উঠে এসেছে৷ বড়দিনের গানগুলোকে সুফি ঘরানায় পরিবেশন করা হয়েছে এখানে৷ মোমবাতির আলোয়, সংগীতের মূর্ছনায় সৃষ্টি হয়েছে এক মহাজাগতিক পরিবেশ৷
ভিডিও-টা দেখলে তাই আপনিও আপ্লুত হবেন৷ এত হাহাকার, ত্রাস আর বৈরিতার মধ্যে খুঁজে পাবেন শান্তির নীড়, যেন দেখতে পাবেন আশার আলো৷ আমার মতো আপনারও মনে হবে – না, এই ঘন তামসেও আলোর দেখা পাওয়া যায়, একটু চেষ্টা করলেই৷ এখনও যে সবটা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়নি, মানবিকতা যায়নি হারিয়ে৷
প্রসঙ্গত, যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরকে বড়দিন বা ক্রিস্টমাস ডে হিসাবে পালন করে থাকেন খ্রিষ্টানরা৷ ইসলাম ধর্মে তিনিই হযরত ঈসা (আ.) নামে পরিচিত৷ আর হিজরি সালের রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ (৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিনকে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে আসছেন বিশ্বের মুসলমানরা৷
ভিডিও-টা দেখে কেমন লাগলো? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷