আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দুদকের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু৷ সংসদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তিনিই বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে৷
বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুছবি: Privat
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলে কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, রোববার সকালে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের সই করা মনোনয়নপত্র জমা দেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু৷ তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য৷
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম প্রস্তাব করেন, আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ তা সমর্থন করেন৷
আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবউদ্দিন চপ্পুকে মনোনয়ন প্রদান করেছে৷ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু কন্য শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে৷''
অন্যদিকে সাংবাদিকদের অনুরোধের সাহাবুদ্দিন চুপ্পু শুধু বলেন, ‘‘সবই আল্লাহর ইচ্ছা৷''
কে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
রাষ্ট্রপতি পদের এই প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্তও সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের৷ তিনি জানান, ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান৷
ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷ ছিলেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বও৷ ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক চুপ্পু মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন৷
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর দলের অনেকের সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও কারাবরণ করতে হয়৷
বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে তিনি অবসর নেন৷
জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এই মহাসচিব বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷
তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ পরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়৷ দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন৷ বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য৷
এফএস/এডিকে
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা: জিয়াউর রহমান থেকে আব্দুল হামিদ
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একজন আসামিকে সাধারণ ক্ষমা করতে পারেন৷ অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় কয়েকজন আসামিকে দেয়া মুক্তি আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
শফিউল আলম প্রধান
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সাত ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ঐ মামলার বিচারে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম প্রধানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল বলে ২০১৯ সালে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেনের লেখা এক প্রবন্ধ থেকে জানা যায়৷ পরে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান তার দণ্ডাদেশ মওকুফ করে দেন বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়৷ প্রবন্ধটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Youtube/Boishakhi TV News
আবুল কাসেম মানিক
রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমা পেয়েছিলেন তিনি৷ পুরান ঢাকার দুই ব্যবসায়ী আবদুল খালেক রানা ও ফিরোজ আল মামুন হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়েছিল৷ একই মামলায় ২৮ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল৷ ১৯৮২ সালে দুজনের ফাঁসি কার্যকর হয়৷ আবুল কাসেম মানিক ১৯৮৭ সালে আত্মসমর্পণ করেন৷ পরে এরশাদ তাকে ক্ষমা করে দেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abed
মহিউদ্দিন জিন্টু
পুরান ঢাকার দুই ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় ফাঁসি হওয়া আসামিদের একজন ছিলেন জিন্টু৷ বিদেশে পালিয়ে থেকে ২০০৫ সালে দেশে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন৷ তারপর রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তাকে ক্ষমা করে দেন৷ জানা যায়, পালিয়ে গিয়ে তিনি সুইডেনে ছিলেন৷ সেখান বিএনপির সুইডেন শাখার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন জিন্টু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nabil
একসঙ্গে ২০ জনকে ক্ষমা
নাটোরে ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকারের ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাতিজা যুবদল নেতা সাব্বির আহম্মদ গামাকে হত্যা করা হয়৷ ঐ মামলায় ২০০৬ সালে ২১ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়৷ ২০১০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ২০ জনকে ক্ষমা করে দেন৷ একজন আসামি পলাতক ছিলেন৷
ছবি: The Daily Star
এএইচএম বিপ্লব
২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদকে জানান, গত পাঁচ বছরে ২৬ জন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামির সাজা মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি৷ এদের একজন লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লব৷ ২০০০ সালে লক্ষ্মীপুর বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে এই রায় হয়৷ ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করেন৷ পরে আরেক হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়৷ ২০১৮ সালে তিনি মুক্ত হন৷
ছবি: Prothom
আসলাম ফকির
ফরিদপুরের আসলাম ফকির ২০০৩ সালে এ কে এম সাহেদ আলীকে হত্যা করেন৷ সেজন্য তার মৃত্যুদণ্ড হয়৷ ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগের দিন তিনি এমন আচরণ শুরু করেন, কারাগারের নথির ভাষায় যা ছিল ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘অসুস্থতা’৷ ফলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করা হয়৷ ২০১৫ সালে তার প্রাণভিক্ষার আবেদন গ্রহণ করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১৭ সালে তিনি মুক্তি পান৷ গতবছর আবারও এক হত্যা মামলার প্রধান আসামি হন তিনি৷
ছবি: Prothom Alo
তোফায়েল আহমেদ জোসেফ
১৯৯৬ সালে ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ঢাকার জজ আদালত৷ ২০১৫ সালে আপিল বিভাগ তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷ এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ক্ষমা পেয়ে তিনি মুক্তি পান৷ সেই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘তিনি আবেদন করেছিলেন ভয়ানক অসুস্থ, তার এক কিংবা দেড় বছর বাকি ছিল সাজা ভোগের৷ সেটার জন্য তিনি মারসি পিটশন করেছিলেন৷’’