উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র নিয়ে গোপন রিপোর্ট জাতিসংঘে। সংবাদসংস্থা রয়টার্স সেই রিপোর্ট দেখেছে বলে দাবি।
বিজ্ঞাপন
২০২০ সাল জুড়ে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে গেছে। সেই পরীক্ষার প্রয়োজনে সাইবার ক্রাইম করে অর্থ চুরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ইরান উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু পরীক্ষায় সাহায্য করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি গোপন রিপোর্ট লেখা হয়েছে। সংবাদসংস্থা রয়টার্সের দাবি, তারা ওই গোপন নথি দেখেছে।
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
২০২০ সালে উত্তর কোরিয়া যে পরমাণু অস্ত্র এবং ব্যালেস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে এবং নতুন অস্ত্র তৈরি করেছে, তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। কিছুদিন আগে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস শেষ হওয়ার পরে সেনা বাহিনী একটি কুচকাওয়াজ করে। সেখানে নতুন ব্যালেস্টিক মিসাইল দেখানো হয় প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওই ব্যালেস্টিক মিসাইলের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্রও যুক্ত করা ছিল।
জাতিসংঘের রিপোর্টে অবশ্য আরো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাইবার হ্যাক করে জোগার করেছে উত্তর কোরিয়া। তারই সাহায্যে কংম দূরত্বের, বেশি দূরত্বের এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরি করেছে তারা। বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই এ কাজ তারা করেছে।
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷
ছবি: Tourism DPRK
6 ছবি1 | 6
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, সম্প্রতি তারা জাতিসংঘের একটি গোপন রিপোর্ট দেখেছে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে।
২০১৮-১৯ সালে তিনবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য তাঁদের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উত্তর কোরিয়া নিয়ে নতুন স্ট্র্যাটেজি পরিকল্পনা করছেন। কী ভাবে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে তিনি ভাবনাচিন্তা করছেন।
এদিকে জাতিসংঘের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরান উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে সাহায্য করছে। দুইটি দেশই গোপনে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ইরান অবশ্য এতদিন পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সম্প্রতি তাদের পার্লামেন্টে একটি আইন প্রণয়ন হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ইউরোনিয়াম মজুতের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো হবে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামেরিকা।