পিপলস আর্মির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক অনুশীলন সম্প্রসারণ ও আরো জোরদার করার প্রতিজ্ঞা করেছে তারা।

পিয়ংইয়ংয়ের সামরিক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে বিশেষ করে তাদের রেকর্ডসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ। কিন্তু তাদের সমালোচনায় বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয়নি কিম জং উনের দেশ। রীতিমতো জাঁকজমক করে সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে তারা।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ বিমান মহড়া করে। সেই মহড়ার পর পিয়ংইয়ংয়ের তরফে পাল্টা জবাব ছিল এই সামরিক মহড়া। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের প্রদর্শনের মাধ্যমে হুমকি দিয়েছে তারা।

এই কুচকাওয়াজে শাসক কিমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দেশের দুই সামরিক কর্তাও। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণই শুধু নয় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের এক বৈঠকে কিম বলেছেন সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই এই কুচকাওয়াজ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের প্রতিটি বাহিনীর কর্তা ও কর্মীরা অংশ নিয়েছেন এই মেগা কুচকাওয়াজে। সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছে 'তুলে ধরতে' কিমের এই আয়োজন।

৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একাধিক সুবিশাল সাঁজোয়া যান এই সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। সেই ছবি ধরা পড়েছে আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়

সামরিক কুচকাওয়াজের সময় ক্ষেপণাস্ত্রগুলি প্রদর্শিত হয়েছে একাধিকবার।

কিম তার দেশের পারমাণবিক অস্ত্রাগারে "এক্সপোনেনশিয়াল ইনক্রিস"-এর আহ্বান জানানোর দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এই সর্ববৃহৎ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার রাতের সামরিক কুচকাওয়াজে প্রায় এক ডজন উন্নত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে উত্তর কোরিয়া, যাকে রাষ্ট্র-চালিত মিডিয়ায় পিয়ংইয়ংয়ের "পারমাণবিক হামলার ক্ষমতা" হিসাবে বর্ণনা করেছে।

সামরিক মহড়ার সময় কিম জং উনের চোখেমুখে ছিল হাসি। মহড়ায় প্রদর্শিত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, তাত্ত্বিকভাবে এসব ক্ষেপণাস্ত্রের অনেকগুলোরই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত করার ক্ষমতা রয়েছে।

বুধবার রাতের কুচকাওয়াজের মহড়ায় কিমের সঙ্গে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে সেই হলো কিমের মেয়ে জু আয়ে। তাকে সম্ভবত কিমের চূড়ান্ত উত্তরসূরি হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে। কিমের মেয়ের স্পটলাইটে আসা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

এই ট্রেনে চেপে ২০ ঘণ্টায় ৬৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পিয়ং ইয়ং থেকে রাশিয়ায় ভ্লাদিভোস্তকে পৌঁছান কিম জং উন৷ উত্তর কোরিয়ার নিজেদের তৈরি এই ট্রেনটিকে ‘চলমান দুর্গ’ বলা চলে৷ সম্ভাব্য সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা তো আছেই, সেই সঙ্গে ভেতরের বিলাসবহুল ব্যবস্থাও অবাক করার মতো৷

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর উদযাপন করেছে উত্তর কোরিয়া৷ প্রথম দেশ হিসেবে পিয়ং ইয়ংকে স্বীকৃতি দেয় তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া৷ সেই হিসাবে দুই দেশের সম্পর্কও ৭৫-এ পা দিয়েছে৷ বুধবার কিমের সঙ্গে পুটিনের বৈঠকে সেই কথাই মনে করিয়ে দেন পুটিন৷

উত্তর কোরিয়ায় কিম জং উনের পরে তার বোন কিম ইয়ো জং-কে সবচেয়ে ক্ষমতাধর বলে মনে করা হয়৷ রাশিয়ার আমুর অঞ্চলে ভস্তচনিতে পুটিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে তাকে দেখা যায়৷

বুধবার কিম জং উনকে ভস্তচনি কসমড্রোম মহাকাশ উড্ডয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যান পুটিন৷ এ সময় রকেট উড্ডয়ন প্রযুক্তি নিয়ে নানা তথ্য জানতে চান কৌতুহলী কিম৷ মস্কো কিমকে স্যাটেলাইট নির্মাণে সহায়তা করবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুটিন বলেন, ‘‘এই কারণেই এখানে আসা৷’’

মহাকাশে সামরিক নজরদারি স্যাটেলাইট স্থাপনে পিয়ং ইয়ং ক্রেমলিনের সহায়তা চায় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে৷ দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, এই সফরে কিমের সঙ্গী হয়েছেন উত্তর কোরিয়ায় মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটির চেয়ারম্যান পাক থাই সং ও অ্যাডমিরাল মিয়ং সিক৷ তারা নজরদারি স্যাটেলাইট ও নিউক্লিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম সাবমেরিন তৈরির প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত৷

মহাকাশ উড্ডয়ন কেন্দ্রের কম্পাউন্ডে পার্ক করা ছিল পুটিনের ব্যবহৃত রাশিয়ার আউরুস লিমুজিন কার৷ দুই নেতার আলাপকালে কাছাকাছি পৌঁছাতে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকান গাড়িপ্রেমী কিম৷ বিষয়টি লক্ষ্য করে পুটিন তাকে গাড়িতে বসার আমন্ত্রণ জানান৷ সুযোগ হাতছাড়া করেননি কিম জং৷

সফরে ইউক্রেন যুদ্ধে পুটিনকে ‘শর্তহীনভাবে পূর্ণ সমর্থন’ দিয়ে যাওয়ার কথা জানান কিম৷ নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার কথাও বলেন তারা৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ‘সাম্র্রাজ্যবাদী শক্তির সামরিক হুমকি ও উস্কানি বানচাল করতে’ একমত হয়েছেন দুই নেতা৷

রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ বৃহস্পতিবার উদ্বেগ জানিয়েছে জাপানও৷ তবে পিয়ং ইয়ংয়ের কাছ থেকে নিষিদ্ধ অস্ত্র নেয়ার আলোচনার কথা অস্বীকার করেছে মস্কো৷

উত্তর কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পুটিনকে উত্তর কোরিয়া ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কিম৷ সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন পুটিন৷

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার ১২ বছরের শাসনামলে এখন পর্যন্ত সাতবার দেশের বাইরে সফরে বেরিয়েছেন৷ এর মধ্যে দুই কোরিয়ার মধ্যে সীমান্ত পেরিয়েছেন দুইবার৷ আর বাকি চারবার গেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রধান রাজনৈতিক মিত্র চীনে৷

কিম যেখানেই যান না কেন সঙ্গে থাকে তার চৌকশ নিরাপত্তা দল৷ রাশিয়ায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ ছবিতে ভস্তচনিতে পরিদর্শন শেষে ট্রেনে কিমের সফরসঙ্গীদের ট্রেনে উঠতে দেখা যাচ্ছে৷ বাইরে নজরদারিতে নিরপত্তারক্ষীরা৷