ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই বললেন, অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা তুললেই ইরান পরমাণু চুক্তিতে ফিরবে৷
বিজ্ঞাপন
পদক্ষেপটা আগে অ্যামেরিকাকে নিতে হবে৷ ট্রাম্পের আমলে ইরানের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করতে হবে৷ তাহলেই ইরান পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে পারে৷ জানিয়ে দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই৷
টেলিভিশন ভাষণে খামেনেই বলেছেন, ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটা বড় অপরাধ করেছিলেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প ভুল পথ নিয়েছিলেন৷ এর ফলে তার দেশেরই বদনাম হয়েছে। ওদের উপরই এখন সব চেয়ে বেশি চাপ তৈরি হয়েছে৷ যদি অ্যামেরিকার বর্তমান প্রশাসন একই পথে চলে, তা হলে সেই নীতিও ব্যর্থ হবে৷’’
ট্রাম্প কী করেছিলেন
ট্রাম্প প্রশাসন ইরান সহ একাধিক দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ তারা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকেও বেরিয়ে আসে৷ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর তেহরানও সিদ্ধান্ত নেয়, ২০১৫-র পরমাণু চুক্তি মানা হবে না৷ তারাও সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম মজুত করেছে বলে অভিযোগ৷
২০১৫ সালের চুক্তিতে অ্যামেরিকা ও ইরান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীনও সই করেছিল৷ সেখানে বলা হয়েছিল, ইরান তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে৷ কিন্তু তারা এখন সাড়ে চার শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে৷ ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার পর তারা ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম পরিশোধন করা হবে বলে জানিয়েছে৷
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
বাইডেন কী করবেন
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আবার এই চুক্তিতে ফিরতে চান৷ তবে প্রশ্ন হলো এই ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ কে নেবে?
আইএইএ-র ডিরেক্টর জেনারেল দুই দেশের সঙ্গেই কথা বলছেন৷ তিনি এই মাসের গোড়ায় বলেছিলেন, অ্যামেরিকা এই চুক্তিতে ফিরতে পারে৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেকগুলি বিষয় এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে৷ তবে এটুকুই বলতে পারি, এই চুক্তি বজায় রাখা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়৷’’
ইরান তাড়াহুড়ো করবে না
খামেনেই জানিয়েছেন, ইরান সরকার কোনো তাড়াহুড়ো করবে না৷ নিষেধাজ্ঞার ফলে স্থানীয় স্তরে জিনিসগুলি তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা যে ঘোষণা করেছি, তা যদি অ্যামেরিকা মেনে নেয়, তা হলে সব সমস্যা মিটবে৷’’
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলি খুবই সন্দিগ্ধ৷ তারা মনে করে, ইরান আসলে পরমাণু বোমা তৈরি করতে চাইছে৷ কিন্তু ইরানের দাবি, তাদের পরমাণু প্রকল্প শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই৷