ঠান্ডা যুদ্ধের পরে সোভিয়েত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হওয়া মাঝারি পাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণের চুক্তি আইএনএফ থেকে সরে যাবার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প৷ এ নিয়ে রাশিয়া ও চীনের বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, পুরো বিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে সরে এসেছে৷ মস্কো চুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করেনি বলেও দাবি করেছেন তিনি৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক আন্দ্রেই বেলৌসভ জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ কমিটিকে জানান যে,পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ট্রাম্পপ্রশাসনের নতুন ভাবনা নিয়ে তারা ‘বিশেষভাবে শঙ্কিত'৷
তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র স্বল্প পরিসরে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে এ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বাধা তা-ও ক্ষীণ হয়ে আসবে৷ এতে করে ‘সীমিত আকারের পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা' আবার তৈরি হবে৷
‘‘২০০৭ সালের অক্টোবরে পুটিন জনসমক্ষে বলেছিলেন যে, চুক্তিটি দ্বিপাক্ষিক না রেখে আন্তর্জাতিক না করা হলে রাশিয়া সরে যাবে চুক্তি থেকে৷ কারণ, যে ধরনের মিসাইলের কথা বলা আছে চুক্তিতে, তা রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র কারোরই নেই৷ কিন্তু চীনের আছে৷ চীনকে জড়িয়ে ঠিক সেই যুক্তিই এখন যুক্তরাষ্ট্র তুলে এনে চুক্তি থেকে সরে যাবার কথা বলছে,'' ডিডাব্লিউকে বলেন পাভেল৷
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
পাভেল আরো বলেন, ‘‘এই চুক্তি থেকে সরে গেলে অদূর ভবিষ্যতে লাভটা আসলে রাশিয়ারই৷ রাশিয়া এরই মধ্যে এমন সব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে এবং বসিয়েছেও৷ আইএনএফ চুক্তি থেকে সরে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই তারা এগুলো পরীক্ষা করতে নেমে পড়বে৷ তারা এরই মধ্যে সাবমেরিন, ফ্রিগেট এসবের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে৷ কিন্তু চুক্তি উঠে গেলে বসাতে পারবে ট্রাকের মধ্যে, যা অনেক বেশি সাশ্রয়ী হবে এবং লুকিয়ে রাখা সহজ হবে৷''
‘‘যুক্তরাষ্ট্র যতদিনে এসব ক্ষেপণাস্ত্র আবার তৈরি করবে, ততদিনে কয়েক বছর পেরিয়ে যাবে৷ তাই আদতে লাভ হবে রাশিয়ারই,'' বলেন পাভেল৷
চীনের ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই চুক্তিতে উল্লেখ করা মাঝারি পাল্লার৷ তাই তারা চুক্তিতে এলে ৯০ শতাংশ পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করতে হবে, যা তারা কখনোই করবে না বলে মনে করেন এই রাশিয়ান বিশ্লেষক৷
এদিকে, চীনে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শি ইংহোং ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইএনএফ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এমন অস্ত্র তৈরির এক নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি হবে৷
‘‘ যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্টেশন তৈরি করে, যেমন গুয়ামে করতে পারে, তাহলে চীনও সেভাবেই তাদের পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করবে,'' ডিডাব্লিউকে বলেন শি৷
‘‘সব মিলিয়ে এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়া মানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আবারো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া,'' বলেন তিনি৷
জেডএ/এসিবি
মানুষের হাতেই পৃথিবীর ধ্বংসের উপায়
জলবায়ু পরিবর্তন বা বিশাল আকারের উল্কা পতন নয়, এমন কিছু বিষয় আছে যা মনুষ্যসৃষ্ট এবং তাতেই পৃথিবীকে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷ theconversation.com কী বলছে দেখুন৷
ছবি: picture-alliance/PIXSELL/Puklavec
পারমাণবিক যুদ্ধ
পারমাণবিক যুদ্ধে আণবিক অস্ত্রের ফলে প্রাণ হারাতে পারে কোটি কোটি মানুষ৷ তবে সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় পরমাণু যুদ্ধের প্রভাব, যাকে বলা হচ্ছে নিউক্লিয়ার উইনটার৷ এর প্রভাবে শত শত বছর ধরে তাপমাত্রা নীচে নেমে যাবে অথবা প্রচণ্ড খরা দেখা দেবে৷ বিশ্ব জুড়ে দেখা দেবে খাদ্যের অভাব৷
ছবি: Getty Images/AFP
বায়ো টেকনোলজি বা জীব প্রযুক্তি
জীব প্রযুক্তির নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণেও মানুষের জীবন এখন হুমকির মুখে৷ যেমন একট্রোমেলিয়া ভাইরাসের কথাই ধরা যাক৷ এই ভাইরাসের কারণে জলবসন্ত হয়ে থাকে৷ গবেষণাগারে এই ভাইরাসটি তৈরি করে ইঁদুরের উপর সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ এই ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে৷
ছবি: imago/Science Photo Library
বুদ্ধিমত্তা
যে কোনো লক্ষ্য পূরণের জন্য বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো জরুরি৷ কিন্তু এমন মানুষের হাতে যদি বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ক্ষমতা থাকে , যারা পৃথিবীর মানুষের অনিষ্ঠ করতে চায়, তাহলে বিপর্যয় ঠেকানো খুব মুশকিল৷
ছবি: Fotolia/DOC RABE Media
ন্যানো প্রযুক্তি
এই প্রযুক্তিতে পদার্থকে অণু বা আণবিক পদার্থ তৈরি হয়৷ এটা অবশ্যই ক্ষতিকর নয় বরং কার্যকরী৷ সমস্যা হলো এ ধরনের জৈব প্রযুক্তিকে খারাপ ভাবে ব্যবহার করা হতে পারে৷ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলো যে, এর সাহায্যে খুব দ্রুত এবং অল্প খরচে অস্ত্র উৎপাদন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অজানা কিছু
আর একটা সম্ভাব্য বিষয় হলো – পৃথিবীতে জীবনকে ধ্বংস করতে পারে, এমন বিধ্বংসী কিছু জানিস আছে, যার অস্তিত্ব আমাদের জানা নেই৷ কিন্তু সেটা লুকিয়ে আছে৷ অজানা কিছু ঘটার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়৷