পরমাণু প্রশ্নে বাধা
১২ নভেম্বর ২০১৩প্রথমেই সাফল্যের একটা খতিয়ান নেয়া যাক৷ জেনিভায় গত সপ্তাহান্তে ইরানের সঙ্গে সে দেশের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত আলোচনার গুরুত্ব আচমকা এতটা বেড়ে যায় যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি ও জার্মানি – অর্থাৎ ‘পি-৫+১'-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একে একে তাতে যোগ দিতে থাকেন৷ কয়েক মাস আগেও এমন ঘটনা অকল্পনীয় ছিল৷ প্রায় একই সময় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ-র প্রধান ইয়ুকিয়া আমানো-র তেহরান সফরও ইরানের বর্তমান সরকারের প্রতি নতুন আস্থার পরিচয় দেয়৷ অতীতের বিবাদ ভুলে ইরান ও আইএইএ-র মধ্যে সমঝোতার এক ‘রোডম্যাপ'-এর কথা শোনা গেছে সোমবার৷ একই দিনে ব্রিটেন ও ইরানের মধ্যে আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ আপাতত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কূটনীতিক অজয় শর্মা ঘন ঘন ইরান সফর করবেন৷ ভবিষ্যতে আবার লন্ডন ও তেহরানে দূতাবাস খোলা হবে বলে আশা করছে দুই পক্ষ৷
প্রতীকী অর্থে এমন সব ঘটনাকে ঘিরে উৎসাহ দেখা দিলেও ইরানের সরকারের সদিচ্ছার স্পষ্ট পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি – অথবা বলা যায় তার সময় এখনো আসেনি৷ প্রেসিডেন্ট রোহানির প্রশাসন এ বিষয়ে আন্তরিক – এমনটা ধরে নিলেও দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই এই প্রয়াসকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন করবেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপে তেহরান বাধ্য হয়ে কিছুটা নতি স্বীকার করছে, নাকি শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির প্রতি সম্পূর্ণ অঙ্গীকার দেখাচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তরও এখনো পাওয়া যায়নি৷ ‘পি-৫+১' এবং আইএইএ-র সঙ্গে বোঝাপড়া অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা যদি বিনা-বাধায় ইরানের সব পরমাণু স্থাপনায় প্রবেশের অধিকার পান, সেটা একটা আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হতে পারে৷ তারপর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের মাত্রা নিয়ে বোঝাপড়ায় আসতে হবে৷ ইরান সেই বোঝাপড়া মেনে চলছে কিনা, তা যাচাই করার গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া চালু হলে তখনই ইরানের প্রতি সামগ্রিক আস্থা ফিরে আসতে পারে৷ অর্থাৎ ইরান যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না, তেহরানের এমন দাবির সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ চাই৷
এদিকে ইরানের প্রতি পশ্চিমা জগতের ‘নরম' মনোভাবের কড়া সমালোচনা শোনা যাচ্ছে অ্যামেরিকার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইসরায়েল ও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে৷ তাদের মতে, তেমন কিছু না দিয়েই ইরান বড় বেশি প্রতিদান পাচ্ছে৷ ইসরায়েল এ নিয়ে বেশ সোচ্চার থাকলেও সুন্নি-প্রধান সৌদি আরব ইরানের সম্ভাব্য পুনর্বাসন নিয়ে প্রকাশ্যে তেমন বক্তব্য রাখছে না৷ গোটা অঞ্চলে ইরানের শিয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাব আরও বেড়ে যাক, এমনটা রিয়াধ মোটেই চায় না৷
ইরানকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যেও বিভাজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ব্রিটেন বর্তমান প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে৷ এমনকি সব শর্ত মানলে ইরানের উপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সম্ভাবনাও কথাও বলছে সে দেশ৷ অন্যদিকে ফ্রান্স তেহরানের প্রতি অত্যন্ত কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে৷ এমনকি ইরানের সংবাদ মাধ্যমে জেনিভা আলোচনায় সাফল্যের অভাবের জন্য সরাসরি ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোরঁ ফাবিউসকে দায়ী করা হয়েছে৷ মার্কিন প্রশাসন সতর্কতার সঙ্গে ধাপে ধাপে সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে এগোনোর পক্ষপাতি৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সোমবার আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)