মাটির তলায় বর্জ্য জমা হবে বলে জানিয়েছে সুইডেন। এক লাখ বছর পর্যন্ত তা সুরক্ষিত থাকবে বলে তাদের দাবি।
বিজ্ঞাপন
১৯৭০ সাল থেকে পরমাণু বিদ্যুতের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল সুইডেন। তিনটি পরমাণু চুল্লিতে দেশের বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি হয়। কিন্তু সেখান থেকে যে বর্জ্য তৈরি হয়, তা ফেলার জন্য এতদিন নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পরমাণু বর্জ্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কারণ তা রেডিওঅ্যাকটিভ হয়। সম্প্রতি সুইডেন জানিয়েছে, রাজধানী থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় পরমাণু বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী ৭০ বছর যেখানে নিশ্চিন্তে বর্জ্য জমা করা যাবে।
পরমাণু বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ কী?
১৯৮৬ সালে চেরনোবিল এবং ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর পরমাণু শক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে৷
ছবি: Kerry Skyring
সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেন, বেলারুশ ও রাশিয়ার বাতাসে ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও চিন্তিত হওয়ার মতো তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গিয়েছিল৷ দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে এখনও ‘এক্সক্লুশন জোন’ আছে, যেখানে মানুষজনকে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয় না৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
পরের শিকার জাপান
২০১১ সালের মার্চে জাপানে প্রথমে নয় মাত্রার ভূমিকম্প ও তারপর সুনামির কারণে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি রিঅ্যাক্টর দুর্ঘটনায় পড়ে৷ ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় নিউক্লিয়ার বোমা ফেলার কারণে যে পরিমাণ সিজিয়াম-১৩৭ বের হয়েছিল, ফুকুশিমার ঘটনায় তার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুন বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব
চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ জাপানেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ ঐ অঞ্চলের শিশুদের টাইফয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা জাপানের অন্যান্য অঞ্চলের শিশুদের তুলনায় প্রায় ২০ গুন বেশি৷
ছবি: Reuters
৩০ থেকে ১ শতাংশ
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার আগে জাপানের বিদ্যুৎ চাহিদার ৩০ শতাংশ আসত পরমাণু শক্তি থেকে৷ তবে ২০১১ সালের পর সেটি নেমে এসেছে মাত্র এক শতাংশে৷
ছবি: REUTERS
সংকটে পরমাণু শক্তি শিল্প
বর্তমানে এই শিল্প আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ক্ষতি গুনছে৷ আর নতুন করে রিঅ্যাক্টর তৈরির কাজও স্থগিত আছে৷
ছবি: Reuters
ফ্রান্সে বাধা
‘প্রেসারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর’ বা পিডাব্লিউআর নামে দেশটির সর্বাধুনিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর নিয়ে ফ্রান্সের অনেক আশা ছিল৷ প্রকল্পটি বেশ নিরাপদ বলেই তারা মনে করেছিল৷ কিন্তু ২০১২ সালে এটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ২০১৮ সালে সেটি চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ব্যয় হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ইউরো - প্রকৃত খরচের চেয়ে প্রায় তিন গুন বেশি৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Triballeau
নতুন রিঅ্যাক্টর তৈরি করবে ব্রিটেন
অনেক বছর ধরে দেশটি দুটি নতুন পিডাব্লিউআর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে৷ এতে খরচ হতে পারে ৩৩ বিলিয়ন ইউরো৷ তবে আর্থিকভাবে এটি লাভজনক হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ কারণ, ঐ রিঅ্যাক্টরগুলো থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তার দাম সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের চেয়ে বেশি হবে৷ ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভর্তুকি দিতে হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/J. Tallis
দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা
২০২২ সালের মধ্যে সব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে একটি আইন পাস করেছিল জার্মানি৷ তবে বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ২০০৫ সালে ক্ষমতায় এসে সেই আইন থেকে সরে এসেছিলেন৷ তবে ২০১১ সালে জাপানে দুর্ঘটনার পর ম্যার্কেল তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener
একে একে বন্ধ হচ্ছে
এখন পর্যন্ত জার্মানির নয়টি রিঅ্যাক্টর বন্ধ হয়েছে৷ বাকি আছে আটটি৷ সেগুলোও ২০২২ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener
দুর্ঘটনার আশঙ্কা
ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখনও ১৩২টি রিঅ্যাক্টর চালু আছে৷ ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত এগুলো কার্যকর থাকার কথা৷ এদের গড় বয়স এখন ৩২৷ ফলে মাঝেমধ্যেই ত্রুটি ধরা পড়ছে৷ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে বিক্ষোভকারীরা এগুলো এখনই বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷
ছবি: DW/G. Rueter
চীন এখনও পরমাণু বিদ্যুৎ চায়
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও রাশিয়ায় এখনও নতুন কোনো পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়নি৷ তবে চীন এখনও এর থেকে সরে আসেনি৷ বরং কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প হিসেবে পরমাণু শক্তির কথা চিন্তা করছে তারা৷ পাশাপাশি সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের প্রসার ঘটানোরও পরিকল্পনা আছে তাদের৷
ছবি: Imago/China Foto Press
11 ছবি1 | 11
পাইপের মাধ্যমে মাটির তলায় পাথরের নীচে ৫০০ মিটার গভীরে ওই বর্জ্য নিরাপদে রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। জায়গাটি ভরে গেলে তা বিশেষ ধরনের মাটি দিয়ে সিল করে দেওয়া হবে। এরফলে আগামী এক লাখ বছরের মধ্যে ওই বর্জ্য থেকে কোনো বিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
২০২৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে জায়গাটিতে কাজ শুরু হবে বলে সুইডেনের পরিবেশমন্ত্রী জানিয়েছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে জায়গাটিকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কাজ শেষ হতে আরো বেশি সময় লাগতে পারে। পরিবেশ মন্ত্রীর দাবি, পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই ওই জায়গাটি চিহ্নিত কার হয়েছে। নতুন এই প্রকল্প শুরু হলে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। আপাতত পরিবেশ আদালতের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় প্রশাসন।
প্রতি বছর সুইডেনে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টন পরমাণু বর্জ্য তৈরি হয়। নতুন জায়গায় ওই বর্জ্য জমা করা যাবে বলে প্রশাসনের আশা। বস্তুত, জার্মানির মতো দেশেরও পরমাণু বর্জ্য জমানোর মতো কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। রেডিওঅ্যাক্টিভ বর্জ্য নিয়ে কী করা হবে, তা বহু পরিবেশবিদের চিন্তার অন্যতম কারণ।