২০১০ সালের পরমাণু ভারসাম্যের চুক্তি পুনর্নবীকরণ করতে চলেছে রাশিয়া এবং অ্যামেরিকা। ক্রেমলিন এই তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার সঙ্গে 'নিউ স্টার্ট' পরমাণু অস্ত্র চুক্তি পুনর্নবীকরণ করছে অ্যামেরিকা। মঙ্গলবার এই তথ্য দিয়েছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের সরকারি ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে সমস্ত তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার জো বাইডেনের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুটিনের বৈঠক হওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে অ্যামেরিকা এ বিষয়ে কিছু না জানালেও, পরে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানান, এ বিষয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সন্তোষজনক আলোচনা হয়েছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চুক্তির নবীকরণ করতে হবে।
২০১০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সেই সময়ের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ডিমিট্রি মেডভেডেভের মধ্যে এই চুক্তি প্রথম হয়েছিল। চুক্তির শর্ত ছিল, দুই দেশই পরমাণু শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে। কে কত পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র রাখতে পারবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা সুনিশ্চিত হয়েছিল ওই চুক্তিতে। এছাড়াও আরো একটি পরমাণু চুক্তি হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে।
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর একটি চুক্তি থেকে অ্যামেরিকাকে সরিয়ে নেন তিনি। অন্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে না গেলেও ওই চুক্তিতে বেজিংকে ঢোকানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। নিউ স্টার্ট চুক্তি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ তিনি কখনোই দেখাননি। বেজিংও ওই চুক্তিতে অংশ নিতে রাজি হয়নি।
নির্বাচনী প্রচারেই বাইডেন জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শক্তিসাম্যের বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি সে কাজ করলেন বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের সময়ে চুক্তির নবীকরণ হয়নি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চুক্তির পুনর্নবীকরণ না হলে তা তামাদি হয়ে যাবে বলে কূটনীতিকদের বক্তব্য। সে কারণেই ওই চুক্তির দ্রুত নবীকরণের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১০ এর চুক্তি যেমন ছিল, ২০২০ সালেও তা রক্ষা করা হবে ক্রেমলিন জানিয়েছে।
এই চুক্তির ফলে দুই দেশই ৭০০টির বেশি ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল রাখতে পারবে না। সাবমেরিন থেকে ব্যবহার করা যায় এমন ব্যালেস্টিক মিসাইলের সংখ্যাও ৭০০। ১৫৫০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডস রাখা যাবে। ৮০০টির বেশি ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল লঞ্চার রাখা যাবে না।