এনপিটি চুক্তি সংক্রান্ত সম্মেলনে বিশ্বনেতারা পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের আশঙ্কা সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ অন্যান্য চলমান সংকটের পাশাপাশি এই হুমকিও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি এনপিটি সংক্রান্ত দশম সম্মেলনে বক্তারা বর্তমানে পৃথিবীর বুকে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের আশঙ্কা সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ বিশেষ করে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এমন ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে বলে তাঁরা মনে করছেন৷
পাঁচ বছর অন্তর ‘এনপিটি রিভিউ' সম্মেলনে ঐতিহাসিক এই চুক্তির অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়৷ পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধের পাশাপাশি এই চুক্তির আওতায় পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও তরান্বিত করা হয়৷ করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে নির্ধারিত সময়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয় নি৷ বাধ্য হয়ে সম্মেলনের দিনক্ষণ ২০২২ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে হয়েছিল৷
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় সমস্যা ও ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এনপিটি রিভিউ সম্মেলন বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, রাশিয়া যেভাবে ‘বেপরোয়া ও বিপজ্জনকভাবে' পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে চলেছে, তা অন্তন্ত নিন্দনীয়৷ তার মতে, বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র সম্বল করে বলপ্রয়োগ, হুমকি ও ব্ল্যাকমেলের কোনো জায়গা থাকতে পারে না৷ ঐক্যবদ্ধভাবে এমন আচরণের বিরোধিতার ডাক দেন ব্লিংকেন৷
ইউক্রেনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিকোলা টচিটস্কি তার দেশে যুদ্ধের সময়ে পরোক্ষভাবে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুমকিরকারণে রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন৷ ত পরমাণু শক্তিধর এক দেশ কীভাবে পরমাণু সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় নিচ্ছে, গোটা বিশ্ব সেই বাস্তবের সাক্ষী হচ্ছে৷ বৈশ্বিক মাত্রায় পরমাণু বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে টচিটস্কি সম্মিলিতভাবে জোরালো পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷ রাশিয়ার এমন আচরণের শাস্তিরও দাবি করেন তিনি৷
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেশ বলেন, জলবায়ু সংকট, সমতার অভাব, হিংসাত্মক সংঘাতের পাশাপাশি করোনা মহামারির মতো ঘটনা গোটা বিশ্বের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে৷ তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের এমন আশঙ্কা দেখে নি৷ হিরোশিমা ও নাগাসাকির শিক্ষা ভুলে মানবজাতি এমন বিপদের দিকে এগিয়ে চলেছে বলে গুতেরেশ সতর্ক করে দেন৷ তার মতে, এমনটা চলতে থাকলে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রকে হুমকি হিসেবে অপব্যবহারের অভিযোগ করেন৷ তাছাড়া পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাবার জন্য তিনি ইরানেরও সমালোচনা করেন৷ তার মতে, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরমাণু অস্ত্রের বাস্তবতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন তার লিখিত বার্তায় বলেছেন, যে পরমাণু যুদ্ধে কেউ জয়ী হতে পারে না বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ তাই কাউকে সেই যুদ্ধ শুরু করার অনুমতি দেওয়া চলে না৷ এনপিটি চুক্তির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে রাশিয়া তার দায়িত্ব পালন করে যাবে বলে পুটিন আশ্বাস দেন৷
পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কি আসন্ন!
ভূরাজনীতি কি আবার ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে? বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা?
ছবি: KCNA via KNS/AP Photo/picture alliance
সময়ের চাকা
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শনের আস্ফালনও ছিল চরম। সোভিয়েতের পতনের পর তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বর্তমান সময়ে ফের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
ছবি: Pavel Golovkin/AP/picture alliance
রাশিয়ার অবস্থান
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ফোর্সের জন্য বিশেষ অ্যালার্ট জারি করেছেন। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ।
ছবি: Mark Schiefelbein/AP/picture alliance
রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ক্ষমতা
রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র আছে। সবমিলিয়ে তাদের পরমাণু ওয়ারহেড ছয় হাজার ৩০০।
ছবি: Oleg Kuleshov/TASS/dpa/picture alliance
অ্যামেরিকার পারমাণবিক শক্তি
ন্যাটোর সঙ্গে যৌথভাবে অ্যামেরিকার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০। যদিও এই সংখ্যা আরো বেশ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যামেরিকা সব অস্ত্রের খতিয়ান দেয়নি বলেই মনে করা হয়।
ছবি: picture-alliance/AP/US Navy/R. Rebarich
ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য
ফ্রান্সের হাতে আছে ৩০০ এবং যুক্তরাজ্যের হাতে ২১৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে।
ছবি: Ludovic Marin/AFP/Getty Images
চীনের শক্তি
বেজিংয়ের কাছে ৩২০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। তবে চীনও গোপনে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার বাড়িয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা।
ছবি: Stephen Shaver/UPI Photo/Newscom/picture alliance
পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মানসিকতা
পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানসিকতা আলাদা। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়। তাদের বক্তব্য, পরমাণু শক্তিকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
ছবি: Takuya Yoshino/AP/picture alliance
মার্কিন অভিমত
অ্যামেরিকা মনে করে, প্রয়োজনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তার মাত্রা হবে কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তা পৌঁছে যাবে। এ কারণে, কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে অ্যামেরিকা। মার্কিন প্রশাসন মনে করে, কোনো না কোনো সময়ে কম শক্তির পরমাণু যুদ্ধ হবে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জার্মানির কুচকাওয়াজ
জার্মানির টর্নেডো যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলটদের পরমাণু বোমা ফেলার ট্রেনিং দেওয়া হয়। জার্মানিতে সঞ্চিত মার্কিন পরমাণু বোমা যে কোনো সময় টর্নেডো বিমানের সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ফেলতে পারেন এই পাইলটরা। বছরে একবার নকল বোমা নিয়ে তারা কুচকাওয়াজ করে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Gallup
নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইটালি
এই তিন দেশও ন্যাটোর পরমাণু প্রকল্পের অংশ। এখানেও অ্যামেরিকার ১০০ থেকে ১৫০টি পরমাণু পরমাণু বোমা রাখা আছে। টর্নেডো বিমানে যা বহন করা যায়।
ছবি: Michael Varaklas/AP Photo/picture alliance
পরমাণু অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক আইন
কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ আছে। এর শাস্তি চরম হতে পারে। তবে কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র সমুদ্রে ব্যবহার করার সুযোগ এখনো আছে। এমনকী, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করতেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে।